বৈদিক কালের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া দুর্লভ। কারণ শুরুতে বৈদিক সভ্যতা ছিল যাযাবার, পশুপালন নির্ভর ও পরবর্তীতে গ্রামীণ সভ্যতা। আদিম লোকজীবনের অনেক উপাদানই ঢুকে পড়েছিল বৈদিক জীবনে। বাড়ি তৈরি, মাটির পাত্র তৈরির প্রাথমিক প্রয়াসের শুরু ভারতবর্ষে প্রবেশেরও অনেক পরে। তার আগে আর্যভাষীরা যাযাবর জীবনে মুক্ত আকাশের নীচে বা চামড়ার আচ্ছাদনের তলায় রাত কাটিয়েছে। জল বহন করতে ব্যবহার করছে চামড়ার ভিস্তিজাতীয় পাত্র।

আমরা যে আর্যভাষীদের ইতিহাস, জীবনচর্যা, ঈশ্বরবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনায় যেতে পারছি, তার মূলে রয়েছেন আমাদের পূর্বসূরী বিভিন্ন নৃতত্ত্ববিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, সমাজবিজ্ঞানী, লোকপুরাণবিশেষজ্ঞ, উপাসনা-ধর্ম গবেষকদের অবদান। তাঁরা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোকপাত করেছেন। সেই সঙ্গে আদিম পর্যায় থেকে বিবর্তনের নানা মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা অনুধাবন করে আমরা বৈদিক যুগের নানা অবস্থা নিয়ে আলোচানায় যেতে পারছি।

আর্যভাষীদের এ’দেশে পদার্পণের পর কয়েক শতাব্দীর ব্যবধানে সমাজ জীবন অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিল। আর্যভাষীরা ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতি অঞ্চলেই আর্যভাষীরা ভূমিপুত্রদের পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখে নিজ নিজ গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এইসব ছোট ছোট স্বতন্ত্র রাজ্যের গোষ্ঠীপতিরা ‘রাজা’ হলেন। শুরু হল রাজার শাসন। রাজার শাসনের সহায়ক মানুষজনও ছিল আর্যভাষী। সংখ্যালঘু আর্যভাষী জনগোষ্ঠী দ্বারা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে শাসন করা  হল। রাজাদের চাষ বা পশুপালন করে সম্পদ বৃদ্ধি করতে হত না। বরং বৈদিক যুগের ধর্মীয় আইনগ্রন্থে উচ্চবর্ণের  অর্থাৎ  আর্যভাষীদের শ্রম বিনিয়োগ করে আয় করাটাই ছিল নিষিদ্ধ কাজ।  সংখ্যাগুরুর শ্রমজীবীদের শোষণ করে সম্পদের পাহার গড়ে তোলাটাই প্রচিত প্রথা।

এইসব ছোট ছোট রাজাদের আরও ধন, সম্পদের তৃষ্ণা, পররাজ্য আক্রমণ করতে উদ্‌বুদ্ধ করেছিল। সেই সঙ্গে নিজের রাজ্যের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার কথাও ভেবেছিল।

স্কুল ভোগ তৃষ্ণাই রাজাদের টেনে এনেছিল ‘শাসন’ বা জাদু পুরোহিতদের

দিকে, কোনও অধ্যাত্মিক চেতনা নয়। জাদু-পুরোহিতরাও রাজাদের

বুঝিয়েছিল, তাদের জাদু-ক্ষমতায় রাজাদের সম্পদ বাড়বে,

যুদ্ধে জয় হবে, নারী ভোগের ক্ষমতা বাড়াবে। সুরা-

নারীতে নগ্ন উচ্ছৃঙ্খল জীবনের কারণে

শরীরে বাসা বাঁধা রোগকে

আরোগ্য করবে।

রাজারা সমৃদ্ধি ও রাজ্যসীমানা বাড়াবার প্রচেষ্টাকে নিশ্চিত করতে এইসব জাদু- পুরোহিতদের দিয়ে অশ্বমেধ, বাজপেয় ও রাজসূরের মত বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ বঙ্গ করেছে। পাশাপাশি প্রতিটি কামনা-বাসনা পূর্ণ করার জন্য নিত্য-নতুন বঙ্গের প্রবর্তন করতে লাগলো এইসব জাদু-পুরোহিতরা। যজ্ঞের প্রয়োজনে ‘ব্রাহ্মণ’ সাহিত্যের এই সূচনা হল।

ঋকবেদ রচনার শেষ পর্বে ‘ব্রাহ্মণ’ সাহিত্যের সৃষ্টি হল। বিভিন্ন যজ্ঞ করার নিয়ম-কানুন, এইসব নিয়ম বা ক্রিয়ার ব্যাখ্যা, তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করাই ব্রাহ্মণগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য। ব্রাহ্মণের তিনটি করে ভাগ আছে। (১) যজ্ঞ প্রণালী, (২) অর্থবাদ বা ব্যাখ্যা, (৩) উপনিষৎ বা ব্রহ্মতত্ত্ব।

‘ব্রাহ্মণ’ শব্দটির উৎপত্তি ব্রহ্মতত্ত্ব থেকে। যে ব্যক্তি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন, তিনি-ই ‘ব্রাহ্মণ’। ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’ শব্দটি নবীন। চতুবর্ণ প্রথা ও ব্রাহ্মণদের তৈরি নানা শাস্ত্র অর্থাৎ অনুশাসন ও বিধি বিষয়ক মতবাদ-ই হল ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’।

উচ্চবর্ণের লোকেরা যতই নিম্নবর্ণের লোকেদের শোষণ করতে পেরেছে, ততই তারা আরও বেশি সম্পদশালী হয়েছে, সুবিধাভোগী শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। এইসব উচ্চবর্ণের মানুষদের দোহন করে নিজেদের আখের গোছাতে ঋষি বা জাদু-পুরোহিতরা নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে নিত্য-নতুন যজ্ঞ-মন্ত্র ও শাস্ত্রের সৃষ্টি করে গেছে। অত্যন্ত দ্রুত হারে বেড়েছে যজ্ঞপরিচালনকারী জাদু-পুরোহিতদের সংখ্যা, দক্ষিণার বহর। দেবতাদের চরিত্র, জন্মবৃত্তান্ত, এমনকী, মা-বাবার পরিচয় পর্যন্ত পাল্টে গেছে বিভিন্ন বৈদিক ধর্মগ্রন্থে। জাদু-পুরোহিতরা ইচ্ছে মতো পাল্টে দিয়েছে, নতুন নতুন দেবতার জন্ম দিয়েছে, কাউকে তুলেছে, কাউকে নামিয়েছে। দেবতাদের আসল সৃষ্টিকর্তা ছিল এইসব জাদু-পুরোহিতরা।

আর্যভাষীদের বসবাস যতই নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে, ততই দূর- অঞ্চলগুলোতে ধর্ম-প্রচারকদের যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। যত যজ্ঞ বেড়েছে, ততই বেড়েছে যজ্ঞপুরোহিতদের সংখ্যা। রাজারা রোগমুক্তি থেকে যুদ্ধজয়, সবেই জাদু-পুরোহিতদের কৃপাভিক্ষা করছে। রাজকীয় সম্মান দিয়ে নিয়ে এসেছে। সেবার কোনও ত্রুটি রাখেনি। প্রয়োজনে রানিদেরও এগিয়ে দিয়েছে। প্রচুর দক্ষিণা দিয়েছে। জাদু-পুরোহিতদের প্রতি রাজভক্তি সাধারণ প্রজা থেকে রাজকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছে। পুরোহিততন্ত্র শক্ত জমি পেয়েছে।

বৈদিক-ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য যজ্ঞ। ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলো যজ্ঞকেই সর্বশক্তির আধার বলে বর্ণনা করেছে। সমস্ত সৃষ্টিকে যজ্ঞক্রিয়ার ফল বলা হয়েছে।

বেদগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি আমরা। (১) মন্ত্র, (২) ব্রাহ্মণ। ‘মন্ত্ৰ’ হল দেবতার গুণকীর্তন ও প্রার্থনা।

‘ব্রাহ্মণ’ হল যাগ-যজ্ঞের প্রণালী। ব্রাহ্মণের বক্তব্য অনুসারে—ঋক

বেদের দেবতারা যজ্ঞের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা পরিচালিত

হতে বাধ্য। অর্থাৎ যে জন্য যজ্ঞ করা, সে ফল

পাওয়া যাবেই। ফলদানের বা ফল

আটকে দেবার ক্ষমতা

দেবতাদের নেই।

এরপর যে প্রশ্ন উঠে আসা স্বাভাবিক,—তা’হলে মন্ত্র বা প্রার্থনার মূল্য কী রইলো? বেদেরই অংশ ‘ব্রাহ্মণ’ বলছে—বেদভক্তি, মন্ত্র ও প্রার্থনার কোনও মূল্য নেই। তবে যজ্ঞে ফল লাভ অনিবার্য।

এটা আপাতভাবে বেদের স্ববিরোধ মনে হতেই পারে। কিন্তু এই স্ববিরোধ তৈরি করা। বেদ লেখক জাদু-পুরোহিতদেরই তৈরি করা। স্বার্থবুদ্ধি থেকেই তারা এমনটা করেছে। তারা চেয়েছে সুনিশ্চিত ফল পেতে যজমানরা দেবতার চেয়ে তাদের উপর নির্ভর করুক বেশি।

জাদু-পুরোহিতরা নিজেদের দেবতা বা দেবতার চেয়েও বড় করে

হাজির করতে চেয়েছে। তাইতেই তারা লিখেছে—

গুরুই দেবতা। এই নীতি প্রাচীনকাল

থেকে এখনও বর্তমান।

 

বৈদিক যজ্ঞ ও যৌনাচার

সামবেদের ঋক্ বা স্তবকগুলোকে যোনি বলা হয়ে থাকে। ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোতে যজ্ঞবেদীকে যোনি বলা হয়েছে। বেদিতে যজ্ঞাগ্নি, প্রজ্বলিত হওয়াকে যৌনক্রিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শতপথ ব্রাহ্মণেও যজ্ঞবেদীকে নারী ও যজ্ঞক্রিয়াকে যৌনক্রিয়া বলা হয়েছে। ছন্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে, কোনও নারীকে মিলনের জন্য আহ্বান করা ‘হিংকার’। তাকে মিলনের জন্য অনুরোধ করা ‘প্রস্তাব’। তার সঙ্গে শয়ন করা ‘উদ্‌গীথ’। তার উপর শয়ন করা ‘প্রতিহার’। মৈথুনের শেষ পর্যায় ‘বিধান’। বীর্যপাত দ্বারা মৈথুন সমাধা করা ‘নিধান’।

ঐতরেয় থেকে যে ব্রাহ্মণেই চোখ রাখবেন, দেখতে পাবেন যজ্ঞের নামে যৌনাচারের ছড়াছড়ি।

বৃহদারণ্যক উপনিষদও বলা হয়েছে—নারীর নিম্নদেশ হল যজ্ঞবেদী,

যৌনকেশ যজ্ঞতৃণ, ত্বক সোমরস-পোষণের ভূমি এবং অণ্ডকোষ

দুটি অগ্নি। এই বিশ্বাস নিয়ে যে সঙ্গমে প্রবৃত্ত

হয়, সে বাজপেয় যজ্ঞের

ফললাভ করে।

এখানে দেখেছি যজ্ঞ না করেই শুধু মৈথুনেই যজ্ঞের ফল লাভের ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আরও বলা হয়েছে, কোনও নারী যৌনমিলন প্রত্যাখ্যান করলে তাকে জোর করে বাধ্য করা উচিত (বৃহদারণ্যক, ৬, ৪, ৬, ৭)। হিন্দুত্ববাদীরা কি হিন্দুধর্মের এই ধর্ষণ সমর্থনের কথা জানেন? বৈদিক যুগের সব কিছুকেই সমর্থন করার আগে, আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে বড়াই করার আগে একবার ভাবুন, না জেনেই প্রশংসা বা নিন্দা—দুই-ই খারাপ। না জেনে জানার ভান ভণ্ডামী, যার আর এক নাম দুর্নীতি।

বাজসনেয়ী সংহিতার ২২-২৩ অধ্যায় থেকে জানতে পারছি, অশ্বমেধ যজ্ঞে প্ৰধান জাদু-পুরোহিত প্রধান রানির সঙ্গে প্রকাশ্যে যজ্ঞক্ষেত্রের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে মিলনে মেতে উঠতেন। অন্যান্য রানি ও জাদু-পুরোহিতরা যৌন-মিলনের নানা উত্তেজক দৃশ্যের বর্ণনা দিতে থাকতেন উত্তেজিতভাবে উচ্চস্বরে। সব মিলিয়ে পরিবেশটা হল জীবন্ত ব্লু-ফিল্ম দেখে খিস্তি-খেউড় সহযোগে তা ‘রিলে’ করে যজ্ঞে হাজির নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া।

এ’ছিল অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রথম যুগের অবস্থা। পরবর্তীকালে পুরোহিতের জায়গা নেয় যজ্ঞের অশ্বটি। মন্ত্র পড়ে অশ্বটিকে আদিত্য, যম ও ত্রিত’র সঙ্গে অভিন্ন বলে ঘোষণা করা হত। ত্রিত ছিলেন গৌতম মুনির ছেলে এবং যজ্ঞনিপুণ। ঘোষণা ও মন্ত্রপাঠ শেষে অশ্বটিকে মেরে ফেলা হল। সম্ভবত মৃত্যু ঘটানো হত শ্বাসরোধ করে। তারপর প্রধানা রানি অশ্বের লিঙ্গটি নিয়ে নিজের যোনির সঙ্গে স্পর্শ করাতেন। রানি ও পুরোহিতরা এই মৈথুন দৃশ্যের বর্ণনা করতেন। সেই অশ্লীল খেউড় গান !

মহারত যজ্ঞে যে আনুষ্ঠানিক যৌন মিলন হত তার বর্ণনা মেলে তৈত্তিরীয় সংহিতা, কাঠক সংহিতা, ঐতরেয় আরণ্যক, জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ, শ্রৌতসূত্র ইত্যাদিতে। যজ্ঞবেদীর উত্তর ও দক্ষিণে দুই গণিকাকে প্রকাশ্যে রমণ করতে হতো। এই রমণীকারীদের একজন হতেন ব্রহ্মচারী, যিনি গণিকাকে রমণ করে তাঁর ব্রহ্মচারী জীবনের অবসান ঘটাতেন। আর একজন হতেন নগরবাসী।

ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যজ্ঞকালে গণমৈথুনের বিধান দেওয়া আছে। কারণ

মৈথুনকে যজ্ঞক্রিয়ার প্রতীক বলে মনে করা হত। কী ভাবে

মৈথুন করতে হবে, তার যা ডিটেল বর্ণনা

ঐতরেয়তে আছে, তাতে সেরা পর্ন-

লেখকরাও ঘাবড়ে যাবেন।

ঋক্‌ বেদের পরবর্তী যুগে যজ্ঞ অনুষ্ঠানগুলো জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। কোন্ যজ্ঞে কতজন পুরোহিত লাগবে, কী কী দান সামগ্রী পুরোহিতদের দিতে হবে, যজ্ঞের জন্য কী কী প্রয়োজন হবে, যজমানেরই করণীয় কী—ইত্যাদি নানা নিয়ম- কানুন নতুন নতুন করে জুড়ে বসতে থাকে। একটা অতি সাধারণ যজ্ঞেও সতেরজন পুরোহিতের প্রয়োজন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিটি যজ্ঞেই বহু বলি দেওয়া হত । অশ্বমেধ যজ্ঞে যজ্ঞের অশ্ব ছাড়া অন্তত হাজার খানেক পশু-বলি হত। এইভাবেই গড়ে উঠলো পুরোহিততন্ত্র। তৈরি হল পুরোহিতদের চারটি শ্রেণী বিভাজন। শ্রেণীগুলো হল (১) হোতা, (২) উদ্‌গাতা, (৩) ব্রহ্মা, (৪) অধ্বর্ষু। পরবর্তীতে আরও নানা শ্রেণীর পুরোহিত সম্প্রদায় উঠে এল। এই নতুন শ্রেণী প্রধানত সচ্ছল পরিবারের যজমানদের অমঙ্গল কাটাতে, কুদৃষ্টি কাটাতে, তুক্তাক্ কাটাতে অথবা পরিবারের মঙ্গল কামনায়, রোগ মুক্তি ঘটাতে যজ্ঞের আয়োজন করতেন। এইসব যজ্ঞেই পুরোহিতরা প্রচুর দক্ষিণা ও দানসামগ্রী গ্রহণ করতেন। বিনিময়ে যজমান যজ্ঞের ফলভোগী হতেন। সন্তানহীন সচ্ছল পরিবার পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করাতেন। যজমানের স্ত্রী’কে নিয়ে গোপন যজ্ঞ করতো পুরোহিত। তাতে অনেক সময় সন্তানও হত। বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই যে সন্তান হচ্ছে, সেটা যজমানরা বুঝতো না, যেমন আজও বোঝে না ।

বেদে একই সঙ্গে দেবস্তুতি ও যজ্ঞস্তুতি দেখে মীমাংসা দর্শনের অনুগামী মীমাংসকরা বললেন—আমরা বেদ মানি। বেদ এ’কথাই প্রমাণ করে যজ্ঞই সত্য, দেবতাদের ক্ষমতা মিথ্যা। জাদু-পুরোহিতদের পাকা মাথা দারুণ কাজ করেছিল। দেবতার চেয়েও জাদু- পুরোহিতদের প্রতি নির্ভরশীলতা বেড়েছিল।

তন্ত্রের আকরগ্রন্থ ‘বৃহৎ তন্ত্রসারঃ’-এ বলা হয়েছে

“গুরুঃ পিতা গুরুম্মাতা গুরুদেবো গুরুর্গতিঃ।

শিবে রুষ্টে গরুস্রাতা গুরৌ রুষ্টে ন কশ্চন।।

অর্থাৎ, গুরু পিতা, মাতা ও অভিষ্ট দেবতা স্বরূপ এবং একমাত্র গুরুই অন্তিমে নিস্তার করেন। যার প্রতি শিব রুষ্ট হন, তাকে গুরুদেব ত্রাণ করতে পারেন, কিন্তু যার উপর গুরু রুষ্ট হন, তাকে নিস্তার করার ক্ষমতা কারও নেই।

ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এমন ‘উমদা’ চালের জন্য সেলাম জানাতেই হবে। সত্যি-ই ওরা রাজনীতি ভালই বুঝতো।

এরকম সংঘবদ্ধভাবে নিরবচ্ছিন্ন প্রতারণার রাজ চালিয়ে যাওয়ার নজির আর কোনও উপাসনা-ধর্মে আছে বলে জানা নেই ।

error: Content is protected !!