বিজ্ঞাপনের দৌলতে একটা বাচ্চা শিশুও জেনে ফেলেছে বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা বাড়াবার উপায়। ‘সোনা-চাঁদি চ্যবনপ্রাস’ বা ব্রাহ্মী শাকের রস সমৃদ্ধ ব্রেনোলিয়া’ খাও আর বুদ্ধিমান হয়ে যাও । বিজ্ঞাপনের গরু গাছে ওঠে এটা তো আপনাদের জানা। এটাও জানা যে, বিজ্ঞাপন মানুষকে গরু বানাতে চায়। সোনা-চাঁদি চ্যবনপ্রাস ও ব্রাহ্মী শাকের রসের মেধা-বুদ্ধি বাড়াবার বিজ্ঞাপন এমনই মানুষকে গরু বানাবার বিজ্ঞাপন ৷

বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা ইত্যাদি মস্তিষ্কের কাজ-কর্ম নিয়ে মানুষের নানা ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে, যার সঙ্গে সত্যের কোনও সম্পর্ক নেই।

যেমন, (১) মাথা বড় মানেই বুদ্ধিমান। (২) পুরুষের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের ওজন কম। অতএব, পুরুষরা বেশি বুদ্ধিমান। (৩) মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়ামে বুদ্ধি বাড়ে। (৪) অপরাধীর সন্তান অপরাধী হবে। (৫) একটা লোক ভালো হবে কি খারাপ, একগামী কি লম্পট আগে থেকেই জিন বা বংশগতি তা প্রোগ্রামিং বা নির্ধারিত করে রাখে…….. ইত্যাদি ইত্যাদি।

মস্তিষ্ক-বিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান আজ যতটা এগিয়েছে, তারই সাহায্য নিয়ে বুদ্ধি, স্মৃতি, মেধাকে অবশ্যই বাড়ান যায়। আমরা এখন এই বিষয়ে আবিষ্কৃত তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনায় যাব।

 

মগজের কাজ

এই যে আমরা হাঁটছি, চলছি, খাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি, শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালাচ্ছি, চলন্ত বাসে লাফিয়ে উঠছি, খেলছি, নাটক করছি, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখছি, পরিকল্পনা করছি, আবিষ্কার করছি—এই সব কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করছে মগজ বা মস্তিষ্ক।

এই মগজে আছে ১০ লক্ষ কোটি স্নায়ুকোষ। হ্যাঁ, আমরা বলছি মানুষের মগজের কথা। মস্তিষ্ক-ই হল মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মস্তিষ্ককে বলতে পারি, প্রকৃতির তৈরি বিশাল এক কম্পিউটার। ছোটবেলা থেকেই ব্রেন কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রোগ্রামিং পাল্টাতে থাকে। মস্তিষ্ক সেই প্রোগ্রাম অনুসারে কাজ করতে থাকে।

মস্তিষ্ক কোষগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে মাথার খুলি। খুলি কতকগুলো চ্যাপ্টা ও ছোট আকারের হাড়ের টুকরোয় তৈরি। হাড়ের টুকরোগুলো খাপে খাপে আটকে আছে। দেখলে মস্তিষ্ক কাণ্ড মনে হবে সুতো দিয়ে সেলাই করা হয়েছে।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের ওজন সাধারণভাবে ১৩৫০ গ্রাম থেকে ১৪৫০ গ্রাম। এই মস্তিষ্কের পরেই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সুষুম্নাকাণ্ড বা মেরুদণ্ড। মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড এই দু’য়ে মিলে গড়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র।

স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়েছে স্নায়ুকোষ নিউরোন দিয়ে। জন্মের সময় মস্তিষ্কে যে পরিমাণ স্নায়ুকোষ থাকে তা প্রায় কুড়ি বছর পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকে। অর্থাৎ স্নায়ুকোষ আর বাড়ে না। বরং ২০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার করে মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের মৃত্যু হতে থাকে।

স্নায়ুকোষগুলো বা মস্তিষ্ক মাথার খুলির মধ্যে এক বিশেষ ধরনের থলথলে তরলে ভেসে থাকে। এই তরলকে বলে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড সংক্ষেপে সি. এস. এফ।

একটি স্নায়ুকোষ বা নিউরোন হল স্নায়ুতন্ত্রের একক। এমনই ১০ লক্ষ কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরোন নিয়ে মানুষ জন্মায়। নিউরোন থেকে ডালপালার মত ছড়িয়ে থাকে ‘ডেনড্রাইট’। গ্রিক ভাষায় ‘ডেনড্রাইট’ শব্দের অর্থ

গাছ। ড্রেনড্রাইটে দেখতে শাখা-প্রশাখা যুক্ত গাছের মতো। এই ডেনড্রাইট অন্য নিউরোন থেকে খবরাখবর দেওয়া-নেওয়া করে। স্নায়ুকোষ বা নিউরোন আকৃতিতে অনেকটা গোলাকার। এই নিউরোন থেকে লম্বা লেজের মতো একটা অংশ বার হয়। এক্সন। এক্সনের কাজ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বাইরের অংশে খবর আদান-প্রদান। বিভিন্ন স্নায়ুকোষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ডেনড্রাইট।

ডেনড্রাইটের সঙ্গে ডেনড্রাইটের এই যুক্ত হওয়ার অংশকে বলে স্নায়ু-সন্ধি বা সাইনাপস, যার মাঝখানে একটু ফাঁক থাকে

নিউরোন কোনওভাবে নষ্ট হয়ে গেলে নিউরোনের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু ডেনড্রাইট বা এক্সন নষ্ট হলে অনেক সময় স্নায়ুকোষের সঙ্গে লেগে থাকা অংশ থেকে নতুনভাবে অংশগুলো তৈরি হতে পারে। তবে নতুন নতুন স্নায়ু-সন্ধি সৃষ্টির মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি, বিচারবুদ্ধি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, প্রতিভা বিকাশ, সৃষ্টিধর্মীচিন্তা ইত্যাদি বিকশিত হয় ।

কীভাবে এই স্নায়ু-সন্ধি সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের চিন্তাশীলতা বিকাশ করতে পারি—সে নিয়ে নিশ্চয়ই পরে আলোচনায় যাব।

মাথার খুলির ভিতর যে মস্তিষ্ক রয়েছে, তার কিছুটা অংশ ধূসর বা গ্রে রঙের । কিছুটা অংশের রঙ সাদা। মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ বা নিউরোন যখন ঘনবদ্ধভাবে একসঙ্গে মিলে থাকে, তখন দেখায় ধূসর। একেই বলে ‘গ্রে-ম্যাটার’। প্রচলিত ধারণা—যার গ্রে-ম্যাটার যত বেশি, তার বুদ্ধি-মেধা তত বেশি।

এই ধারণার সত্যি-মিথ্যে নিয়ে পরে আলোচনায় যাব। মস্কিষ্কে রয়েছে ১২ জোড়া ক্রেনিয়াল নার্ভ। এই স্নায়ু বা নার্ভের কাজ হল মাথা ও ঘাড়ের নানা অংশের কাজকর্ম পরিচালনা করা।

এই স্নায়ুগুলোর সঙ্গে সুষুম্নাকাণ্ডের স্নায়ু মিলে-মিশে অস্থি-পেশীগুলোর কাজকর্ম পরিচালনা করে এবং খবর আদান-প্রদান করে ।

শরীরের কিছু অংশ যথা হৃদপেশী, পিত্তথলি, মূত্রথলি ইত্যাদির কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে।

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক : সিমপ্যাথেটিক। শরীরের জমানো শক্তিকে ব্যবহার করে সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে। যেমন, হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেওয়া, অস্থিপেশীতে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। দুই : প্যারাসিমপ্যাথেটিক। এই স্নায়ুতন্ত্রের কাজ শরীরে খাদ্যরসের ক্ষরণ, লালাক্ষরণ ইত্যাদি।

হৃদপিণ্ড যত রক্ত পাম্প করে তার শতকরা কুড়ি ভাগই আসে মস্তিষ্কে।

মগজের তিন প্রধান অংশঃ

মগজের তিনটি প্রধান অংশ হল (১) অগ্র মস্তিষ্ক বা গুরু মস্তিষ্ক। (২) মধ্য মস্তিষ্ক। (৩) পশ্চাৎ মস্তিষ্ক বা লঘু মস্তিষ্ক।

মস্তিষ্কের তিনটি অংশের মধ্যে অগ্র বা গুরু মস্তিষ্কই প্রধান। গুরু মস্তিষ্কই বিচার-বিশ্লেষণের শক্তি, আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ-আনন্দ কল্পনা প্রবণতা, দিক্‌নির্ণয় ক্ষমতা, সংগীতে-শিল্পে-সাহিত্যে অনুরাগ, শোনা ও পড়া ইত্যাদির আধার। মধ্যমস্তিষ্ক সুক্ষ্ম চালচলন, আচরণ, দেহভঙ্গী ইত্যাদি পরিচালনা করে। বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের প্রভাবে, আচরণ, চালচলন ইত্যাদি যে পাল্টায় তার বড় দৃষ্টান্ত উৎপল দত্ত ও শম্ভু মিত্রের কাছে পাট নেওয়া অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ক্রিকেটর ইরফান

পাঠান থেকে ফুটবলার পেলে গরীব থেকে উঠে এলেও বিখ্যাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সহখেলোয়াড়দের প্রভাবে চাল-চলন পাল্টে যায়। এই পাল্টে যাওয়ার ব্যাপারটা, অর্থাৎ একমুখী করে তোলার ব্যাপারটা ঘটায় মধ্যমস্তিষ্ক ।

পশ্চাৎমস্তিষ্ক অক্ষিগোলক সঞ্চয়ন, শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালন, চর্বণ, মুখের অভিব্যক্তি, হৃদস্পন্দন, পাচনযন্ত্র ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। দেহের অত্যন্ত জরুরি কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চাৎ মস্তিষ্ক।

মগজের দু’টি ভাগ, দুটি মন

গুরু-মস্তিষ্কের মধ্য ভাগ থেকে বাম ও দক্ষিণে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে একটা গভীর খাঁজ। দেখতে অনেকটা এরকম –

মগজের দুটি অর্ধই আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের নির্দিষ্ট কাজ করে। মগজের দুটি অংশের কাজে সমতা রক্ষা করে অজস্র স্নায়ুপথ, যারা বিভিন্ন স্নায়ুকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। দুই অংশের যোগাযোগ কোনওভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মানুষের আচার-আচরণে সামান্য পরিবর্তন ঘটে দুই অংশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে। এই অবস্থায় মস্তিষ্কের বাঁ দিকের অংশ আচার-আচরণ, বোধবুদ্ধি ইত্যাদিকে বেশি রকম প্রভাবিত করে।

মস্তিষ্কের বাঁ দিক-ই সাধারণভাবে বাক্শক্তি, পড়াশুনায় আগ্রহ, যুক্তিতর্কের ক্ষমতা, বিশ্লেষণীশক্তি, গণন ক্ষমতা ও ডান দিকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজকর্ম পরিচালনা করে।

মস্তিষ্কের ডান দিক কল্পনাপ্রবণতা, দিক্‌নির্ণয় ক্ষমতা, সংগীত-চিত্রকলা ইত্যাদির প্রতি আবেগ, অনেক দিন আগে দেখা মানুষকে চিনে নেওয়ার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া বাঁ দিকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজকর্ম পরিচালনা করে।

 

বড় মাথা বেশি বুদ্ধির লক্ষণ নয়ঃ

একটি চলতি ধারণা–বড় মাথা মানেই বেশি বুদ্ধিমান। ব্যাপারটা আদৌ সত্যি নয়। বরং বলতে পারি, এমন ধারণা বিজ্ঞান-বিরোধী।

হাতের সামনেই হাজারো উদাহরণ রয়েছে। জাপানের গড়পড়তা মানুষদের তুলনায় আফ্রিকার হতদরিদ্র মানুষগুলোর মাথা অনেক বড়। কিন্তু তারপরও জাপানিরা মেধায় অন্যতম সেরা জাতি।

মাথা বড় হলেই যে মস্তিষ্কের পরিমাণ বেড়ে যাবে—এমন ভাবনার গোড়ায় ভুল রয়েছে। মস্তিষ্কের ওজন সাধারণভাবে ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ গ্রাম হয়, তা আগেই বলা হয়েছে। মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের কোঁচকানো অংশ বেশি হলে মেধা-বুদ্ধির সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কোঁচকানো যত কমতে থাকে ততই বুদ্ধিসুদ্দি লোপ পেতে পারে। বহু কারণেই গ্রে ম্যাটারের এই কোঁচকানো খাঁজগুলো ফ্ল্যাট হতে পারে বা খাঁজের গভীরতা হারাতে পরে। বড় মাথাতে খাঁজ বেশি থাকে—এমন ভাববার কোনও কারণ নেই ।

পৃথিবী বিখ্যাত লেখক আনাতোলে ফ্রাঁসের মস্তিষ্কের

ওজন ছিল মাত্র ১০২০ গ্রাম। এই তথ্য দ্বারা

বলতে চাইছি যে মস্তিষ্কের ওজন কখনও

মেধা-বুদ্ধির পরিমাপক নয়।

রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন তাঁদের ১০ লক্ষ কোটি মস্তিক কোষের খুব বেশি হলেও শতকরা এক ভাগের কম কোষকে কাজে লাগিয়েই রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন হয়েছিলেন। এক একটি মস্তিষ্ক কোষের রয়েছে শেখার অসীম ক্ষমতা। এই ক্ষমতাকে যতই কাজে লাগান যাবে, ততই বিকাশ ঘটবে বুদ্ধি-মেধার।

 

বুদ্ধি-মেধা বাড়াবার উপায়

মেধা-বুদ্ধি বাড়াবার প্রধান উপায় হল—মস্তিষ্ককোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে কাজে লাগানো। মস্তিষ্ককোষকে কে কতটা কাজে লাগাচ্ছে, তার উপর নির্ভর করছে বুদ্ধি-মেধার উন্নতি। মগজকে যত বেশি কাজে লাগাবেন, খেলাবেন তত বেশি মেধা বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে। স্নায়ুকোষের শেখার ক্ষমতা এতই বেশি যে, আন্তরিকতার সঙ্গে, ভালোবেসে যা শিখতে চাইবেন, তাই শিখে নেবে স্নায়ুকোষ । ভালো-খারাপ, অপরাধ-বিজ্ঞান থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য থেকে সমাজনীতি যা-ই পড়বেন, দেখবেন, জানবেন, তা-ই জমা হবে স্নায়ুকোষে।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি থেকে রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিৎ পর্যন্ত পৃথিবীর বহু প্রতিভাই বিভিন্ন বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে তাঁদের মস্তিষ্ককোষকে কাজে লাগাতেন। এতে তাঁরা সবচেয়ে বেশি করে মস্তিষ্ককোষগুলোকে কর্মক্ষম রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মস্তিষ্ক হল—কাজ করলে কাজী, অলস হলেই পাজী। চিত্রা বসু ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে এম. এস. সি। বিয়ে হল কলকাতার ধনী বনেদী বাড়িতে। বছর দশেক পরে বইমেলায় ওকে দেখলাম। সপ্রতিভ, জিজ্ঞাসু, ঝকঝকে, কথার সেই মানুষটাকে খুঁজেই পেলাম না। জানাল ওর রোজনামচা। মেয়েকে তৈরি করে দিয়ে সকালে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া। স্কুল থেকে আনা। দুপুরে কিছুটা ঘুম। সন্ধ্যায় মেয়েকে পড়ানো। গাড়ি আছে। স্কুলে যাওয়া আসার কষ্ট নেই। মেয়ের বইগুলো পড়ার বাইরে অন্য কোনও বই পড়ার তেমন সুযোগ হয় না। মেয়ের জন্য কয়েকটা কেনার মতো বইয়ের খোঁজে মেলায় আসা, বর, মেয়ে ও তাদের পরিচর্যা ও দিবানিদ্রার মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সে। চর্চার অভাবে চিত্রার মেধা-বুদ্ধি ভোঁতা হয়ে গেছে।

আইনস্টাইন একবার রসিকতার সুরে বলেছিলেন, ‘কিছু লোকের মস্তিষ্ক আছে, কিন্তু কোনও কাজেই লাগে না। ওরা যা কাজ করে তারজন্য শুধু শিরদাঁড়াই যথেষ্ট ছিল।’

আমাদের গলার ওপর একটা মাথা চাপান আছে। সেটা কি শুধুই বয়ে বেড়াবার জন্যে? নাকি শ্যাম্পু, ময়শ্চারাইজার, সাবানের বিজ্ঞাপনে দেখাবার জন্যে?

আমাদের মনে রাখতে-ই হবে মগজকে যথেষ্ট পরিমাণে

কাজে না লাগালে অলস মস্তিষ্ককোষগুলোর

মৃত্যু ঘটতে থাকবে।

শারীরিকভাবে স্থায়ী অসুস্থতা অনেক সময় একজনকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে চিন্তায় শ্লথতা আসে, পরিকল্পনা মাফিক কাজে উৎসাহ হারায়। ফলে মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষগুলোর দ্রুত মৃত্যু ঘটতে থাকে। চিন্তা, বুদ্ধি, মেধা, বিশ্লেষণক্ষমতা লোপ পায়। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার পরও কেউ যদি তাঁর মগজ নানা কাজে খেলাতে থাকেন, তবে নতুন নতুন সৃষ্টির বিস্ময়কর বিকাশ সম্ভব। স্টিফেন হকিং-এর মতো পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী তার-ই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। অচল দেহ। কিন্তু সচল মস্তিষ্ক তাঁকে শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী করেছে।

‘পারকিন্‌সন্স’ রোগী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিপ্লব দাশগুপ্ত দু’জনের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারতেন না, কথা বলতেন এতই জড়িয়ে যে তাঁর কাছের মানুষরাও কথার অর্থ বুঝতে পারতেন না। মুখ দিয়ে লালা পড়তো। প্রবীণ মানুষটি এইসব শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও এখনও কম্পিউটারে বসে লিখে গেছেন অনবদ্য সব অভিজ্ঞতা, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের অসাধারণ বিশ্লেষণ-ধর্মী নানা গ্রন্থ। তিনি জানতেন মস্তিষ্কচর্চাই তাঁকে অলজাইমার রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাবে। এটাও জানতেন, পারকিনসন্স রোগীদের অলজাইমার রোগের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। অলজাইমার রোগী, চিন্তাশক্তি, বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলে। আর অলজাইমার রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ব্যাপক মস্তিষ্কচর্চা।

ব্যাপক মস্তিষ্কচর্চা অব্যাহত রাখতে পারলে যুক্তিবোধ নব্বইতেও অতি তীক্ষ্ণ থাকে। হাতের সামনে উদাহরণ জর্জ বারনার্ড শ’, নীরদ সি. চৌধুরী, খুশবন্ত সিং অন্নদাশঙ্কর রায় ।

 

মস্তিষ্কের পুষ্টি

মস্তিষ্কচর্চার জন্য মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম রাখাটা জরুরি। আর কার্যক্ষম রাখতে জরুরি মস্তিষ্কে পুষ্টির সরবরাহ অব্যাহত রাখা। মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায় রক্ত। চারটি মহাধমনী শুদ্ধ রক্ত ‘হার্ট’ থেকে বহন করে মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়।

মস্তিষ্কের ওজন সাধারণভাবে দেহের ওজনের শতকরা ২ ভাগের মতো। কিন্তু সারা দেহে অনবরত যে রক্ত হার্ট থেকে প্রবাহিত হয়, তার শতকরা ১৫ ভাগই যায় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কের কাজের জন্য যে শক্তির দরকার, তা সরবরাহ করে ‘গ্লুকোজ’। গোটা শরীরে যে অক্সিজেনের প্রয়োজন, তার শতকরা ২০ ভাগ-ই খরচ হয় মস্তিষ্কে। এই গ্লুকোজ ও অক্সিজেন রক্তের সঙ্গেই মস্তিষ্কে যায়। অর্থাৎ রক্তই গ্লুকোজ ও অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়।

মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ বন্ধ হলে স্ট্রেক, পক্ষাঘাত হতে পারে। রক্তের যোগান না পাওয়া বা কম পাওয়ার জন্য স্নায়ুকোষের মৃত্যু-ও হয়। দেহের কোন্ অংশে পুষ্টির যোগানে ঘাটতি হচ্ছে বা বন্ধ হচ্ছে, তার উপর শরীরে কী ধরনের অসুখ হবে, সেটাও নির্ভর করে।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!