শ্লোক – ১৪
ততঃ শ্বেতৈরহয়ৈর্যুক্তে মহতি স্যন্দনে স্থিতৌ।
মাধবঃ পান্ডবশ্চৈব দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদধ্মতুঃ ।। ১৪ ।।
ততঃ- তখন; শ্বেতৈঃ- শ্বেত; হয়ৈঃ- অশ্বগণ; যুক্তে- যুক্ত হয়ে; মহতি- মহান; স্যন্দনে- রথ; স্থিতৌ- অবস্থিত হয়ে; মাধবঃ- শ্রীকৃষ্ণ (লক্ষ্মীর পতি); পান্ডবঃ- অর্জুন (পান্ডুর পুত্র); চ- ও; এব- অবশ্যই; দিব্যৌ- অপ্রাকৃত; শঙ্খৌ- শঙ্খগুলি; প্রদধ্মতুঃ- বাজালেন।
গীতার গান
তারপর শ্বেত অশ্ব রথেতে বসিয়া।
আসিল যে মহাযুদ্ধে নিযুক্ত হইয়া।।
মাধব আর পান্ডব দিব্য শঙ্খ ধরি।
বাজাইল পরে পরে অপূর্ব মাধুরী।।
অনুবাদঃ অন্য দিকে, শ্বেত অশ্বযুক্ত এক দিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন উভয়ে তাঁদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
তাৎপর্যঃ ভীষ্মদেবের শঙ্খের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য দেখিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের শঙ্খকে ‘দিব্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই দিব্য শঙ্খধ্বনি ঘোষণা করল যে, কুরুপক্ষের যুদ্ধজয়ের কোন আশাই নেই, কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পান্ডব-পক্ষে যোগদান করেছেন। জয়স্তু পান্ডপুত্রাণাং যেষাং জনার্দনঃ। পান্ডবদের জয় অবধারিত, কারণ জনার্দন শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। ভগবান যে পক্ষে যোগদান করেন, সৌভাগ্য-লক্ষ্মীও সেই পক্ষেই থাকেন, কারণ সৌভাগ্য-লক্ষ্মী সর্বদাই তাঁর পতির অনুগামী। তাই বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে ঘোষিত হল যে, অর্জুনের জন্য বিষয় ও সৌভাগ্য প্রতীক্ষা করছে। তা ছাড়া, যে রথে চড়ে দুই বন্ধু শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তা অগ্নিদেব অর্জুনকে দান করেছিলেন এবং সেই দুব্য রথ ছিল অর্জুন ত্রিভুবনে সর্বত্রই অপরাজেয়।
শ্লোক – ১৫
পাঞ্চজন্যং হৃষীকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়ঃ।
পৌন্ড্রং দধ্মৌ মহাশঙ্খং ভীমকর্মা বৃকোদরঃ ।। ১৫ ।।
পাঞ্চজন্যম- পাঞ্চজন্য নামক শঙ্খ; হৃষীকেশঃ- হৃষীকেশ (শ্রীকৃষ্ণ, যিনি তাঁর ভক্তদের ইন্দ্রিয়ের পরিচালক); দেবদত্তম- দেবদত্ত নামক শঙ্খ; ধনঞ্জয়ঃ- ধনঞ্জয় (অর্জুন, যিনি ধনসম্পদ জয় করেছেন); পৌন্ড্রম- পৌন্ড্র নামক শঙ্খ; দধ্মৌ- বাজালেন; মহাশঙ্খম- ভয়ংকর শঙ্খ; ভীমকর্মা- প্রচন্ড কর্ম সম্পাদনকারী; বৃকোদরঃ- বিপুল ভোজনপ্রিয় (ভীম)।
গীতার গান
হৃষীকেশ ভগবান পাঞ্চজন্যরবে।
ধনঞ্জয় বাজাইল দেবদত্ত সবে।।
ভীমকর্মা ভীমসেন বাজাইল পরে।
পৌন্ড্রনাম শঙ্খ সেই অতি উচ্চৈঃস্বরে।।
অনুবাদঃ তখন, শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য নামক তাঁর শঙ্খ বাজালেন, অর্জুন বাজালেন, তাঁর দেবদত্ত নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজনপ্রিয় ও ভীমকর্মা ভীমসেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তাঁর ভয়ংকর শঙ্খ।
তাৎপর্যঃ শ্রীকৃষ্ণকে এই শ্লোকে হৃষীকেশ বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি হচ্ছেন সমস্ত হৃষীক বা ইন্দ্রিয়ের ঈশ্বর। জীবেরা হচ্ছে তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই জীবদের ইন্দ্রিয়গুলিও হচ্ছে তাঁর ইন্দ্রিয়সমূহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নির্বিশেষবাদীরা জীবের ইন্দ্রিয়সমূহের মূল উৎস কোথায় তার হদিস খুঁজে পায় না, তাই তারা সমস্ত জীবদের ইন্দ্রিয়বিহীন ও নির্বিশেষ বলে বর্ণনা করতে তৎপর। সমস্ত জীবের অন্তরে অবস্থান করে ভগবান তাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে পরিচালিত করেন। তবে এটি নির্ভর করে আত্মসমর্পণের মাত্রার উপর এবং শুদ্ধ ভক্তের ক্ষেত্রে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে ভগবান প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত করেন। এখানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের দিব্য ইন্দ্রিয়গুলিকে ভগবান সরাসরিভাবে পরিচালিত করেছেন, তাই এখানে তাঁকে হৃষীকেশ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভগবানের বিভিন্ন কার্যকলাপ অনুসারে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। যেমন, মধু নামক দানবকে সংহার করার জন্য তাঁর নাম মধুসুদন; গাভী ও ইন্দ্রিয়গুলিকে আনন্দ দান করেন বলে তাঁর নাম গোবিন্দ; বসুদেবের পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে তাঁর নাম বাসুদেব; দেবকীর সন্তান রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম দেবকীনন্দন; বৃন্দাবনে যশোদার সন্তানরূপে তিনি তাঁর বাল্যলীলা প্রদর্শন করেন বলে তাঁর নাম যশোদানন্দন এবং সখা অর্জুনের সারথী হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম পার্থসারথী। সেদি রকম, কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে অর্জুনকে পরিচালনা করেছিলেন বলে তাঁর নাম হৃষীকেশ।
এখানে অর্জুনকে ধনঞ্জয় বলে অভিহিত করা হয়েছে, কারণ বিভিন্ন যাগযজ্ঞ্রে অনুষ্ঠান করার জন্য তিনি যুধিষ্ঠীরকে ধন সংগ্রহ করতে সাহায্য করতেন। তেমনই, ভীমকে এখানে বৃকোদর বলা হয়েছে, কারণ যেমন তিনি হিড়িম্ব আদি দানবকে বধ করার মতো দুঃসাধ্য কাজ সাধন করতে পারতেন, তেমনই তিনি প্রচুর পরিমাণে আহার করতে পারতেন। সুতরাং পান্ডবপক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সহ বিভিন্ন ব্যক্তিরা যখন তাঁদের বিশেষ ধরণের শঙ্খ বাজালেন, সেই দিব্য শঙ্খধ্বনি তাঁদের সৈন্যদের অন্তরে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করল। পক্ষান্তরে, কৌরবপক্ষে আমরা কোন শুভ লক্ষণের ইঙ্গিত পাই না, সেই পক্ষে পরম নিয়ন্তা ভগবান নেই, সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবীও নেই। অতএব, তাঁদের পক্ষে যে যুদ্ধ-জয়ের কোন আশাই ছিল না তা পূর্বেই নির্ধারিত ছিল এবং যুদ্ধের শুরুতেই শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে সেই বার্তা ঘোষিত হল।
শ্লোক – ১৬-১৮
অনন্তবিজয়ং রাজা কুন্তীপুত্রো যুধিষ্ঠিরঃ।
নকুলঃ সহদেবশ্চ সুঘোষমণিপুষ্পকৌ ।। ১৬ ।।
কাশ্যশ্চ পরমেষাসঃ শিখন্ডী চ মহারথঃ।
ধৃষ্টদ্যুম্নো বিরাটশ্চ সাত্যকিশ্চাপরাজিতঃ ।। ১৭ ।।
দ্রুপদো দ্রৌপদেয়াশ্চ সর্বশঃ পৃথিবীপতে।
সৌভদ্রশ্চ মহাবাহুঃ শঙ্খান দধ্মুঃ পৃথক পৃথক ।। ১৮ ।।
অনন্তবিজয়ম- অনন্তবিজয় নাম শঙ্খ; রাজা- রাজা; কুন্তীপুত্রঃ- কুন্তীর পুত্র; যুধিষ্ঠিরঃ- যুধিষ্ঠির; নকুলঃ- নকুল; সহদেবঃ সহদেব; চ- এবং; সুঘোষমণিপুষ্পকৌ – সুঘোষ ও মণিপুষ্পক নামক শঙ্খ; কাশ্যঃ- কাশীর (বারাণসীর) রাজা; চ- এবং; পরমেষাসঃ- মহান ধনুর্ধর; শিখন্ডী- শিখন্ডী; চ- ও; মহারথঃ- সহস্র সহস্র যোদ্ধার বিরুদ্ধে একাকী যুদ্ধ করতে সক্ষম মহারথী; ধৃষ্টদ্যুম্নঃ- (মহারাজ দ্রুপদের পুত্র) ধৃষ্টদ্যুম্ন; বিরাটঃ- বিরাট (যিনি পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস কালে আশ্রয় দিয়েছিলেন); চ- ও; সাত্যকিঃ- সাত্যকি (শ্রীকৃষ্ণের সারথী যুযুধানের মতো); চ- এবং; অপরাজিতঃ- যিনি কখনো পরাজিত হননি; দ্রুপদঃ- পাঞ্জালের রাজা দ্রুপদ; দ্রৌপদেয়াঃ- দ্রৌপদীর পুত্রগণ; চ- ও; সর্বশঃ- সকলে; পৃথিবীপতে- হে মহারাজ; সৌভদ্রঃ- সুভদ্রার পুত্র অভিমন্যু; চ- ও, মহাবাহুঃ- মহা বলবান; শঙ্খান- শঙ্খসমূহ; দধ্মুঃ- বাজালেন; পৃথক পৃথক- একে একে।
গীতার গান
যুধিষ্ঠিরে ধরে শঙ্খ রাজা কুন্তীপুত্র।
অনন্তবিজয় সেই ঘোষণা সর্বত্র।।
নকুল বাজাল শঙ্খ সুঘোষ তার নাম।
সহদেব বাজাল মণিপুষ্পক নাম।।
তারপর একে একে যত মহারথী।
ধনুর্ধর কাশীরাজ শিখন্ডী সারথী।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন বিরাটাদি বীর সে সাত্যকি।
মহাযোদ্ধা পারে যারা যুঝিতে একাকী।।
দ্রুপদ আর দ্রৌপদেয় পৃথিবীপতে।
সৌভদ্র বাজাল শঙ্খ যার যার মতে।।
অনুবাদঃ কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন এবং নকুল ও সহদেব বাজালেন সুঘোষ ও মণিপুষ্পক নামক শঙ্খ। হে মহারাজ! তখন মহান ধনুর্ধর কাশীরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, সভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাঁদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
তাৎপর্যঃ সঞ্জয় সুকৌশলে ধৃতরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিলেন যে, পান্ডুপুত্রদের প্রতারণা করে তাঁর নিজের ছেলেদের সিংহাসনে বসাবার দুরভিসন্ধি করাটা তাঁর পক্ষে মোটেই প্রশংসনীয় কাজ হয়নি। চারদিক থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল যে, কুরুবংশের সমূলে বিনাশ হবে এবং পিতামহ ভীষ্ম থেকে শুরু করে অভিমন্যু আদি পৌত্রেরা সকলেই যুদ্ধে নিহত হবেন। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে রাজা-মহারাজা ও রথী-মহরথীরা সকলেই নিহত হবেন। এই বিপর্যয়ের মূল কারণ ছিলেন মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র স্বয়ং, কারণ তাঁর পুত্রদের দুষ্কর্মে তিনি কখনো কোন রকম বাধা দেননি, উপরন্তু তাদের সব রকম দুষ্কর্মে তিনি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
শ্লোক – ১৯
স ঘোষো ধার্তরাষ্ট্রাণাং হৃদয়ানি ব্যদারয়ৎ।
নভশ্চ পৃথিবীং চৈব তুমুলোহভ্যনুনাদয়ন ।। ১৯ ।।
সঃ- সেই, ঘোষঃ- শব্দ স্পন্দন; ধার্তরাষ্ট্রাণাম- ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের; হৃদয়ানি- হৃদয়; ব্যদারয়ৎ- চূর্ণবিচূর্ণ করেছিল; নভঃ- আকাশ; চ- ও; পৃথিবীম- পৃথিবীকে; চ- ও; এব- অবশ্যই; তুমুলঃ- প্রচন্ড; অভ্যনুনাদয়ন- অনুরণিত হয়ে।
গীতার গান
সে শব্দ ভাঙ্গিল বুক ধার্তরাষ্ট্রগণে।
আকাশ ভেদিল পৃথ্বী কাঁপিল সঘনে।।
অনুবাদঃ শঙ্খ-নিনাদের প্রচন্ড শব্দ আকাশ ও পৃথিবী প্রতিধ্বনিত করে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় বিদারিত করতে লাগল।
তাৎপর্যঃ ভীষ্মদেব আদি কৌরব-পক্ষের বীরেরা যখন শঙ্খ বাজিয়েছিলেন, তখন পান্ডবদের বুক ভয়ে কেঁপে উঠেনি। কিন্তু এই শ্লোকে আমরা দেখছি যে, পাণ্ডবদের শঙ্খনাদে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় ভয়ে বিদীর্ণ হল। পাণ্ডবদের মনে কোন ভয় ছিল না, কারণ তাঁরা ছিলেন সদাচারী এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত। ভগবানের কাছে যিনি আত্মসমর্পণ করেন, তাঁর মনে কোন ভয় থাকে না, চরম বিপদেও তিনি থাকেন অবিচলিত।
শ্লোক – ২০
অথ ব্যবস্থিতান দৃষ্টা ধার্তরাষ্ট্রান কপিধ্বজঃ।
প্রবৃত্তে শস্ত্রসম্পাতে ধনুরুদ্যম্য পান্ডবঃ।
হৃষীকেশং তদা বাক্যমিদমাহ মহীপতে ।। ২০ ।।
অথ- অতঃপর; ব্যবস্থিতান- অবস্থিত; দৃষ্টা- দেখে; ধার্তরাষ্ট্রান- ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের; কপিধ্বজঃ- যার পতাকায় হনুমান চিহ্ন শোভা পায়; প্রবৃত্তে- প্রবৃত্ত হওয়ার সময়; শস্ত্রসম্পাতে- অস্ত্র নিক্ষেপ করতে; ধনুঃ- ধনুক; উদ্যম্য- তুলে নিয়ে; পান্ডবঃ- পান্ডুপুত্র (অর্জুন); হৃষীকেশম- শ্রীকৃষ্ণকে; তদা- তখন; বাক্যম- বাক্য; ইদম- এই; আহ- বললেন; মহীপতে- হে মহারাজ।
গীতার গান
কপিধ্বজ দেখি ধার্তরাষ্ট্রের গণেরে।
যুদ্ধের সজ্জায় সেথা মিলিল অচিরে।।
নিজ অস্ত্র ধনুর্বাণ যথাস্থানে ধরি।
যুদ্ধের লাগিয়া সেথা স্মরিল শ্রীহরি।।
অনুবাদঃ সেই সময় পান্ডুপুত্র অর্জুন হনুমান চিহ্নিত পতাকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে, তাঁর ধনুক তুলে নিয়ে শর নিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ! ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের সমরসজ্জায় বিন্যস্ত দেখে, অর্জুন তখন শ্রীকৃষ্ণকে এই কথাগুলি বললেন –
তাৎপর্যঃ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই, পান্ডবদের অপ্রত্যাশিত সৈন্যসজ্জা দেখে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদকম্প শুরু হয়ে গেছে। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উপস্থিত থেকে পান্ডবদের পরিচালিত করেছিলেন, তাই কৌরবদের এই হৃদকম্প হওয়াটাই স্বাভাবিক। অর্জুনের রথে হনুমান অঙ্কিত ধ্বজাও একটি বিজয়সূচক ইঙ্গিত, কারণ রাম-রাবনের যুদ্ধে হনুমান শ্রীরামচন্দ্রকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং শ্রীরামচন্দ্র বিজয়ী হয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও অর্জুনকে সাহায্য করবার জন্য তাঁর রথে শ্রীরামচন্দ্র ও হনুমান দুজনকেই উপস্থিত থাকতে দেখতে পাই। শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন শ্রীরামচন্দ্র এবং যেখানে শ্রীরামচন্দ্র, সেখানেই তাঁর নিত্য সেবক ভক্ত-হনুমান এবং নিত্য সঙ্গিনী সীতা লক্ষ্মীদেবী উপস্থিত থাকেন। তাই, অর্জুনের কোন শত্রুর ভয়েই ভীত হবার কারণ ছিল না, আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, সমস্ত ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে পরিচালিত করবার জন্য স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। এভাবে, যুদ্ধজয়ের সমস্ত শুভ পরামর্শ অর্জুন পাচ্ছিলেন। তাঁর নিত্যকালের ভক্তের জন্য ভগবানের দ্বারা আয়োজিত এই রকম শুভ পরিস্থিতিতে সুনিশ্চিত জয়েরই ইঙ্গিত বহন করে।
৯. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কর্মসন্ন্যাস-যোগ
১২. অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রক্ষ্ম-যোগ
১৫. একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
১৭. ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ
১৮. চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৯. পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষত্তম-যোগ
২০. ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুর- সম্পদ-বিভাগযোগ
২১. সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
২৪. বর্তমান সংস্করণ সম্পর্কে টীকা
শ্রীমদ্ভগভদ গীতা সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ