জ্যোতিষী হবার কিছু টিপস

(১) নিজের চেম্বার নিজে খুলুন। রত্ন-ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়বেন না। ওরা পাথর বিক্রির ওপর শুধু কমিশনটুকু ধরিয়ে আপনার হাড় মাস চিবিয়ে খাবে। চেম্বার খুলুন কলকাতায়। কোনও কারণে সে স্বপ্ন সফল করতে না পারলে চেম্বারের জন্য বেছে নিন এইসব শহরের যে কোনও একটি। যথা—শিলিগুড়ি, মালদা, আসানসোল, বারাসত বা হাওড়া। কালো টাকা উড়ছে। ডন, স্মাগলার ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা খলবল করছে। খেপলা জাল ফেলুন আর ধরুন। ওরা ঠকার জন্য, ধরা দেবার জন্যে হাঁকুপাঁকু করছে। একটু ঢপ দিলেই কালো টাকার কুমির বনে যাবেন। (২) জ্যোতিষী বা তান্ত্রিক হওয়ার জন্যে কোনও বিদ্যের দরকার হয় না। একটু বুদ্ধি থাকলেই চলবে। ধূর্ত হলে চলবে কী মশাই, দৌড়বে।

প্রথমে কোনও জ্যোতিষ সংস্থা থেকে ইচ্ছেমতো ডিগ্রি, স্বর্ণপদক, পি. এইচ. ডি. বা উপাধি কিনুন। এসমস্ত কিনতে পাওয়া যায় নগদ দামে। এর জন্য ওইসব সংস্থায় পড়াশুনোর কোনও দরকার নেই।

(৩) কিছুই না শিখে জন্মছক বানাবেন কী করে ভাবছেন? এরও ব্যবস্থা আছে। ৫০ থেকে ১০০ টাকায় ছক করে দেবার মতো লোকের অভাব নেই। তাদের কোথায় পাবেন? আপনার চেম্বারে তারাই আসবে কাজের খোঁজে। শুধু চেম্বার খোলার ওয়াস্তা।

(৪) অলৌকিক মাতা, তন্ত্রসিদ্ধ, কামাখ্যাসিদ্ধ, বাকসিদ্ধ, মামলাসিদ্ধ, বশীকরণসিদ্ধ, মহামৃত্যুঞ্জয়সিদ্ধ, গজলক্ষ্মীসিদ্ধ, নীলসরস্বতীসিদ্ধ কোনটায় স্পেশালিস্ট হতে চান? আজকাল স্পেশালিস্টদের যুগ। স্পেশালিস্টদের পিছনে ছুটছে পাবলিক। আপনার পিছনে পাবলিককে দৌড় করাতে হলে আপনাকে স্পেশালিস্ট হতেই হবে। আপনিই ঠিক করুন কোনটায় স্পেশালিস্ট হতে চান।

এ’বিষয়ে আমার একটা পরামর্শ আছে। শিলিগুড়ি হল স্মাগলার, ড্রাগ মাফিয়া ও আর্মস মাফিয়াদের মুক্তাঞ্চল। আসানসোল, রানিগঞ্জে কোল মাফিয়াদের রাজ। হাওড়ায় লোহার ছাঁট নিয়ে ডনদের আকচাআকচি। ভারত-বাংলাদেশ চোরাকারবারিদের মিলনক্ষেত্র হল বারাসাত। এইসব জায়গায় মহামৃত্যুঞ্জয় কবচের হেভি ডিমান্ড। পুলিশ বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গে মাফিয়াদের বন্দোবস্ত করা আছে। ঝাড়টা আসে পাল্টা মাফিয়া গ্রুপের কাছ থেকে। লড়াইটা এলাকা দখলে রাখা নিয়ে। মহামৃত্যুঞ্জয় কবচ ধারণ করলে অপঘাতে মৃত্যু নেই জানলে হিরের দামে কবচ কিনবে। মহামৃত্যুঞ্জয় কবচ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়ে ওইসব এলাকায় বসলে মাসে দশ-বিশ লাখ আয় বাঁধা।

সরস্বতী কবচের মার্কেট সিজিনাল। পরীক্ষার সময় চাহিদা বাড়ে।

বশীকরণ কবচের চাহিদা শহর কলকাতায় দারুণ। বৃদ্ধ বস থেকে হরিপদ কেরানি, অভিনেতা থেকে মডেল গার্ল, কলকাতায় কলেজ পড়ুয়া থেকে প্রফেসার, তিন সন্তানের মা থেকে মন্ত্রী সবাই আসেন বশীকরণ কবচের টানে। এঁদের কেউ ‘অন্ধপ্রেম’এ মশগুল, কেউ বা বশ করে ক্যারিয়ার গোছাতে চান।

অলৌকিক মাতাজি হয়ে বসতে পারলে দশ হাতে লুটে-পুটে খাওয়া যায়। মন্ত্রী থেকে মস্তান, ডাক্তার থেকে ফিল্মস্টার সবাই আপনার শ্রীচরণের স্পর্শ পেলে ধন্য হয়ে যাবে। এই শর্মা একটুও মিথ্যে বলছে না ।

অনেক জ্যোতিষী বড়োবাজার থেকে গ্রোস দরে হোয়াইট মেটাল বা অ্যালুমেনিয়ামের তাবিজ- কবচ কেনে। আপনি প্লিজ একটু খরচা করুন। সোনা-রুপোর ছোট দোকান থেকে মাল কিনুন, কর্মচারীকে দিয়ে বেলপাতা বা জবাফুল ঠাসুন। মোম দিয়ে মুখ বন্ধ করুন। মোট খরচ ২০ থেকে ৩০ টাকা। নেবেন ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। চিন্তা করবেন না। পাবলিক দেবেও।

স্পেশালিস্ট হতে আপনার ইচ্ছেই শেষ কথা। এই অধমের পরামর্শ—আপনি কোন্ শহরে বসবেন, সেটা মাথায় রেখে ইচ্ছেটা ঠিক করুন। তারপর ঢেলে বিজ্ঞাপন দিন। পত্র-পত্রিকায়, চ্যানেলে, পোস্টারে, ব্যানারে, হোর্ডিং-এ, সিনেমায় সর্বত্র বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ করে দিন। প্রচারের বান ডাকলেই দেখবেন, চেম্বারের বাইরে কাঙালি ভোজনের ভিড়।

(৫) ঝড় তোলা বিজ্ঞাপন কী করে লিখবেন ভাবছেন? লিখতে গেলে কলম ভাঙে? এতো প্রায় সব জ্যোতিষীদেরই সমস্যা। প্রায় সব্বাই স্কুলের চৌকাঠে হোঁচট খাওয়া। জ্যোতিষীদের বিজ্ঞাপন লেখার বিশেষজ্ঞ লোক আছে। আপনাকে তোল্লাই দিয়ে এমন লিখবে যে পড়ে লজ্জা পেয়ে যাবেন। বিজ্ঞাপনে আপনার কাছে উপকার পাওয়া মানুষের বিরাট তালিকা দেখে আপনার চোখ কপালে উঠতেই পারে। ভাবছেন এরা কারা? এরা কেউ নয়। অস্তিত্বহীন। প্রথম প্রথম আগাপাশতলা মিথ্যে প্রচার দেখে একটু লজ্জা পেতেই পারেন। পরে দেখবেন চোখের চামড়া পুরু হয়ে গেছে। “ইসি কা নাম জিন্দেগী।”

(৬) টিভিতে নিজের ঢাক পেটাতে চান? হবে। নিজের গ্যাটের টাকায় কোনও চ্যানেল থেকে টাইম-স্লট কিনতে হবে। নিজের টাকায় স্যুটিং করতে হবে। চ্যানেলে ক্যাসেট পৌঁছে দিতে হবে।

ভাবছেন টিভি চ্যানেলে সময় কিনতে চাইলেই পাবেন কি না? আলবাৎ পাবেন। একটায় না পান আর একটায় পাবেন। একগাদা টিভি চ্যানেল বেশ্যা মাগির মতো দরজা খুলেই বসে আছে। ওদের নীতি—“ফেল কড়ি, মাখ তেল। কেউ কি আমার পর?” একবার চেম্বারের শাটার খুলুন, দেখবেন বিভিন্ন চ্যানেলের দালালরা আপনাকে জপাতে হাজির হয়ে গেছে। (তাইতো ভালো প্রোগ্রামের এত আকাল। বিজ্ঞান-প্রকৃতি-পরিবেশ বিষয়ে পটাতে হলে খুলতে হবে ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক’, ‘ডিসকাভারি’র মতো বিদেশি চ্যানেল।)

সরাসরি ফোন লাইনে প্রোগ্রাম করতে চান? চ্যানেল আপনাকে এক ঘণ্টা সময় দেবে। সঙ্গে গ্যারান্টি দেবে, উল্টো-পাল্টা ফোন এলে কেটে দেবার। আপনি ‘বাকসিদ্ধ’ হতে চান। তা বানাবার ব্যবস্থাও রেখেছে চ্যানেল। তবে খরচা বেশি পড়বে। চ্যানেলের স্টুডিওর পাশের ঘরেই হাজির রাখবে একগাদা নারী-পুরুষ। তারাই পাশের ঘর থেকে ইন্টারকমে আপনাকে ধরবে। শোনাবে, আপনার নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী শুনে কতটা অভিভূত—তার ফিরিস্তি। ব্যাস, আর দেখতে হবে না। রাতারাতি পসার জমে কুলপি।

(৭) আপনার টিভি প্রোগ্রাম তৈরি করতে ডিরেক্টর চাই? পাবেন। তারাই আপনার চেম্বারে এসে অতি বিনয়ের সঙ্গে কথা বলবে। আপনি ‘জল উঁচু’ বললে ওরাও বলবে, ‘জল উঁচু’। ‘জল নিচু’ বললে বলবে, ‘জল নিচু’। ওরা জানে ডিরেক্টর, হওয়ার প্রথম শর্তই হল—প্রডিউসরের চামচা হতে হবে ।

(৮) আপনার প্রোগ্রামের সঞ্চালক বা অ্যাঙ্কার কাকে করা যায়, এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন? চেম্বারে বসার আগে এ’নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। ডিরেক্টরই অ্যাঙ্কার যোগাড় করে দেবেন। দেখবেন আবৃত্তি জগতের কত রথি-মহারথি লাইনে দাঁড়িয়ে।

(৯) এত কিছুই যখন না ভেবেই হয়ে গেল, তখন ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক নিয়েও ভাবনার কিছু নেই। হই-চই ফেলে দেওয়া গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে কাকে চাইছেন—শুধু ঠিক করুন। বাকিটা টাকা ঠিক করে দেবে।

(১০) স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা ভালো। আজকাল যুক্তিবাদীরা বড্ড বেড়েছে। কিছু পাবলিক ওদের কথা খাচ্ছেও ভাল। তাই তো অনেক চ্যানেল প্রায়ই জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদীদের লড়িয়ে দিচ্ছে। যুক্তিবাদীদের নাম শুনলেই প্রোগ্রাম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবেন, যতই চ্যানেল সাধাসাধি করুক না কেন। কিন্তু তাতেই যে যুক্তিবাদীদের আক্রমণ এড়াতে পারবেন, এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। কখন যে আপনাকে ৪২০ বলে প্রমাণ করে পুলিশের হাতে তুলে দেবে, আর মিডিয়া তা দেখাবে, বুঝতেই পারবেন না। বাঁচতে থানা ও স্থানীয় ক্লাবকে ‘দেখুন’। বিপদে ওরাও দেখবে।

(১১) ‘বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন’–বিজ্ঞাপনে এমন চমক দিন। দেখবেন, পাবলিক দারুণ খাবে। হয় ফল পাব, নতুবা টাকা খরচ হবে না—এমন ভাবনা-ই খদ্দেরদের রান্নাঘর থেকেও টেনে আনবে।

ওই স্লোগান শুধু কথার কথা। আপনাকে কোনও মূল্যই ফেরত দিতে হবে না। যারা দাম ফেরত চাইতে আসবে, তাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাট্টু বানিয়ে দিন। একসময় ঘোরা থামিয়ে কাত হয়ে পড়বে। পার্টি একটু টেটিয়া হলে ভিজিয়ে কথা বলুন। জিজ্ঞেস করুন, যন্ত্রম ধারণের পর তিন দিন আমিষের ছোঁয়া বাঁচিয়ে খেয়েছিলেন তো?’ অথবা পরনারী/পরপুরুষের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলেছিলেন তো? এই ধরনের প্রশ্নেই রয়েছে বাজিমাত করার সব মশলা। আমিষের স্পর্শ বাঁচাবেন কী করে? বাজার থেকে চাল-ডাল-আনাজ আনবার সময় কোনও মাংস বা মাছের ব্যাগের ছোঁয়া লাগেনি—এর গ্যারান্টি কোথায়? না, এর কোনও গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। শহরে বা মফস্সলে থেকে ছেলে-মেয়ে বেছে স্পর্শ বাঁচিয়ে বাসে-ট্রেনে রাস্তায় চলা বিলকুল না-মুনকিম । অতএব আপনার মূল্য ফেরতের গ্যারান্টি রক্ষা পেল। প্রয়োজনে এমনি আরও অজুহাত বানান । টাকা ফেরত না পেলে, দেখে নেবে বলে শাসাচ্ছে? থানায় ফোন করুন, ক্লাবকে খবর দিন।

আপনার ওইসব আপনজনরাই অবস্থা সামলে দেবে।

হ্যাঁ, এই শর্মার একটি উপদেশ মনে রাখবেন। বড় মাপের পুলিশ-কর্তাদের ফোন মাঝে- মধ্যে পাবেন। আত্মীয়র কাজ হয়নি। টাকা ফেরত চাই, এই হল ফোনের মোদ্দা কথা। টাকা ফেরত দিতে একটুও দ্বিধা করবেন না।

(১২) ‘বিনা রত্নে স্থায়ী প্রতিকার’ স্লোগানটা খুব জমেছে। অনেকেই দিচ্ছে। কামাচ্ছেও দারুণ। গ্রহরত্নের পরিবর্তে যা খুশি দিন। কেজি দরে কড়ি কিনে ফুটো করিয়ে নিন। কড়ি পিছু খরচ পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ পয়সা। ‘ধনদা কবচ’, ‘মহালক্ষ্মী’ কবচ বলে কড়িগুলো তিন থেকে দশ হাজারে বেচুন। রুপোর কবচ বানিয়ে তার উপর কতকগুলো যা খুশি জ্যামিতিক চিহ্ন আঁকিয়ে নিন। তারপর ওগুলোকে তারা যন্ত্রম, সরস্বতী যন্ত্রম ইত্যাদি বলে বেচে দিন। সবাই এখন cult সংস্কৃতি নিয়ে মেতেছে। এই তো সুযোগ !

(১৩) বিখ্যাত জ্যোতিষী হতে ভালো ভবিষ্যৎ বক্তা হওয়ার প্রয়োজন হয় না। জ্যোতিষশাস্ত্র কখনই ভবিষ্যৎ বলতে পারে না। আপনাকে বিখ্যাত করতে পারে শুধু প্রচার। প্রচারের আলো নিজের উপর ফেলুন। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবেন।

(১৪) বিজ্ঞাপনে দেখবেন কেউ ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর কথা আগাম ঘোষণা করেছিলেন। কেউ বা রাজীব গান্ধির। আপনিও এমনি বাজার গরম করা বিজ্ঞাপন ছাড়তে পারেন। এর জন্য আপনাকে একটা ছোট ম্যাগাজিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। সম্পাদককে করতে হবে আপনার দাস। তারপর সব কিছু সহজ সরল। এই ধরুন, সেপ্টেম্বর ২০০৩-এ উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের পতন ঘটল। ঘটনা ঘটার পর শুরু হবে আপনার খেলা।

লিটিল ম্যাগাজিন যখন, তখন নিশ্চয়ই বছরে দু-চারটের বেশি সংখ্যা প্রকাশিত হয় না এবং সময়েও প্রকাশিত হয় না। আর পাঁচটা ছোট পত্রিকার মতো এই পত্রিকাটির একই বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্যই এবার আপনার কাজে লাগবে মায়াবতী সরকার পড়ে যাওয়ার পর বের করুন জুলাই বা আগস্ট সংখ্যা। তাতে লিখে ফেলুন—সেপ্টেম্বরের গোড়াতে মায়াবতী সরকারের পতন ঘটবে।

সব ভবিষ্যৎ বক্তাই এমন করে। আপনিও করুন। পসার আরও বাড়বে।

(১৫) পসার জমে গেলে নিজেও একটা জ্যোতিষ শিক্ষাকেন্দ্র খুলে ফেলুন। আপনাকে কিছুই শেখাতে হবে না। এখান থেকে শুধু সোনার চেয়ে বেশি দামে ‘স্বর্ণপদক’, নানা উপাধি ইত্যাদি বিক্রি করা হবে। স্টেডি ব্যবসা। ভালো টাকা।

(১৬) গত মাস ছ’য়েকের জ্যোতিষীদের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে লক্ষ রেখেছেন? নিশ্চয়ই ভালো করে লক্ষ রাখেননি। দৈনিক পত্রিকাগুলোর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় জ্যোতিষীদের বিজ্ঞাপন তলানিতে নেমেছে। প্রায় সবাই রাতারাতি ‘তান্ত্রিক’ বনে গেছে। জ্যোতিষীরাই গোত্রান্তর ঘটিয়ে তান্ত্রিক হয়েছে। কেন জানেন না? জেনে নিন। জ্যোতিষীদের পেশাটা বে-আইনি। তাই জ্যোতিষচর্চাকে পেশা দেখিয়ে ‘বৃত্তিকর’ দিতে গেলে সরকার নিচ্ছে না। এই পুরো গোলমালটাই ঘটিয়েছে যুক্তিবাদী সমিতি। সুতরাং আইন বাঁচিয়ে পকেট কাটতে আপনিও তান্ত্রিক হয়ে বসে জ্যোতিষীর কাজকর্ম চালিয়ে যান।

(১৭) তান্ত্রিকদেরও ধরে ধরে যেভাবে যুক্তিবাদীরা গ্রেপ্তার করাচ্ছে, তাতে একটু ভয়ের তো কারণ আছেই। কিন্তু চুরি করব অথচ গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নেব না—এ হয় নাকি? তাই ভালো ক্রিমিনাল ল্য ইয়ারের সঙ্গে স্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলতে হবে।

(১৮) তান্ত্রিক হয়ে বসে নিজের রক্ত জল করে মাসে মাত্র দশ বিশ লাখ রোজগার করছেন তাতেই থাবা মারবে ইনকান ট্যাক্স। অবশ্য ইনকাম ট্যাক্স ফাকি দেওয়ার ফুল প্রুফ ব্যবস্থা আছে। আপনার পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে একটা ধর্মীয় ট্রাস্ট তৈরি করে ফেলুন। আপনি থাকুন নৈবেদ্যের চূড়োয় কলার মতো, সবার উপরে। ট্রাস্টের নিয়ম-কানুন এমনভাবে তৈরি করবেন, যাতে ট্রাস্টের টাকা যথেচ্ছ খরচ করার পুরো অধিকার আপনার থাকে। ট্রাস্টই আপনার স্কচের বোতল থেকে বিদেশে মৌজ-মস্তির খরচ জোগাবে। এই চালে চলছে অনেক মিশন থেকে আশ্রম। অধুনা এই চালে পা মিলিয়েছে কিছু তান্ত্রিক। ইনকাম ট্যাক্সের বিরুদ্ধে একেবারে কিস্তি মাত চাল।

(১৯) রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। সুযোগ আসবেই। অনেক রাজনীতিকই আপনার কাছে আসবে। ডান, বাম বাছবিচার না করে সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেষ্টা করুন। আখেরে লাভ হবে। অথবা নিজেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। এটাই এখন সর্বাধুনিক হাওয়া। শুধু গেরুয়া হাওয়া নয়, লাল হাওয়াও।

দেশ যখন চরম বেকার সমস্যায় ধুঁকছে, তখন বেশ্যাবৃত্তি, জ্যোতিষবৃত্তি, ও তন্ত্রপেশার মতো স্বনির্ভর পেশাকে আমাদের উৎসাহিত করতে হবে। এই সুরে সমাজবিজ্ঞানীদের দিয়ে বলাতে হবে। মন্ত্রীরা শুধু জ্যোতিষ সম্মেলন উদবোধন করেই তাঁদের দায়িত্ব খালাস করতে পারেন না। জ্যোতিষ পেশাকে স্বনির্ভর প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব তাঁরা এড়াতে পারেন না। জ্যোতিষীদের আজ বড় দুঃসময়। এই সময় রাজনীতিকদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করার বড়োই প্রয়োজন। যুক্তিবাদীদের দাবিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন।

 

জ্যোতিষীদের দেখভালে-রাজনীতিকরা

অতি সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। রাতদুপুরে একটি ফোন এলো। ফোন করলেন এই বঙ্গের গব্বর সিং। তিনি বামফ্রন্টের মহাক্ষমতাবান এক মন্ত্রীর শক্তির উৎস। নো ধানাই-পানাই । সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ওমুক জ্যোতিষী মন্ত্রী মহোদয়ের খুব কাছের লোক। আমি যেন দেখি। ওইটুকু বলেই লাইন কেটে দিলেন। বুঝলাম জ্যোতিষীর সঙ্গে মন্ত্রীর লাইন ভালোই আছে।

যে ভাবে মাঝে-মধ্যে জ্যোতিষী, তান্ত্রিকদের পুলিশ ধড়পাকড় করছে, মিডিয়া টিভিতে দেখাচ্ছে, তাতে মন্ত্রী আশ্রিত জ্যোতিষী ভয় পেয়েছেন, বুঝলাম। কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে নির্লজ্জ দালালিতে নামবেন মার্কসবাদী মন্ত্রী ও তাঁর মস্তান? এই মার্কস বাদ দেওয়া মার্কসবাদীদের সত্যিই বুঝি না ।

জ্যোতিষী ও অবতারদের পিছনে লেগে থাকাটা আমাদের সমিতির চরম কোনও লক্ষ্য নয়। জ্যোতিষী ও অবতারদের ক্ষমতার গল্পটা যে পুরোপুরি গল্প—এই সত্যটা মানুষ বুঝতে শিখুক, এটা আমরা চাই। চাই—কারণ আজও বেশির ভাগ ভারতীয় মনে করে, মানুষের বঞ্চনার কারণ ভাগ্য, আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র, ঈশ্বরের কৃপা না পাওয়া, পূর্বজন্মের কর্মফল ইত্যাদি। অথচ এই ধারণা আদৌ সত্যি নয়। সত্যি হল—এই সমাজ কাঠামো এভাবেই তৈরি, যেখানে বেশির ভাগ মানুষকে বঞ্চিত না করলে কিছু মানুষ স্যুইস ব্যাংকে টাকা জমাতে পারে না।

জ্যোতিষী ও অবতারদের ‘মিথ’ ভাঙতে ওদের বুজরুকি ফাঁসের একটা প্রক্রিয়া আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সমিতির কাজ এই নয় যে, সব বুজরুকদের নাঙ্গা করতে হবে। কারণ কুসংস্কার মুক্তি আমাদের লক্ষ্য নয়, উপলক্ষ। লক্ষ্য কুসংস্কারকে কাজে লাগিয়ে যে অসাম্যের সমাজ ব্যবস্থা টিকে আছে, চূড়ান্ত পর্যায়ে তাকে আঘাত করা।

পিলু ভট্টাচার্য পেশায় গায়ক। সমাজসেবার পাগলামি আছে। একটি গরিব মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টাকার অভাবে। শুনে নিজে মেয়েটির গয়নার খরচ যুগিয়েছেন। বন্ধুদের কাছ থেকে গাড়ি, বরের পোশাক, আসবাব ইত্যাদি জোগাড় করেছেন। তার পরও পড়ে আছে অনেক খরচ। সমস্যা শুনে পিলুর এক বন্ধু পিলুকে নিয়ে গেলেন হবু বউয়ের ফ্ল্যাটে। হবু বউ নামী জ্যোতিষী। মাস গেলে রোজগার নাকি পনেরো থেকে পঁচিশ লাখ।

পিলু অবশ্য সাহায্য পাননি। কিন্তু নতুন একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলেন। মহিলা পিলুকে নাকি বলেছিলেন, রক্ত জল করে আয় করতে হয়। এ টাকা যাকে খুশি দান-খয়রাতের জন্য নয়। আরও নাকি বলেছিলেন—আপনার বন্ধুকে পরের ধনে পোদ্দারি করতে বারণ করবেন। যাওয়ার আগে জেনে যান, আমি ভিক্ষে দিই না ।

পিলু রাজনীতি করা মানুষ। সুতরাং এমন অপমান সহ্য হবে কেন? একটু গরম হয়েছিলেন। মহিলা তাঁর পাশে দাঁড়ানো একজনকে দেখিয়ে নাকি বলেছিলেন—একে চেনেন?

না চেনার কোনও কারণ ছিল না। একই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত দু-জনেই। ভদ্রলোক প্রাক্তন এম এল এ। কিন্তু এবার পিলুকে যা শুনতে হল, তার জন্য বেচারা আদৌ তৈরি ছিল না। মহিলা না কি বলেছিলেন—গরম দেখাবেন না। আমি একবার বললে উনি আপনার গরম ভেঙে দেবেন। প্রাক্তন এম এল এ’র শরীরী ভাষা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমি ওর পাশে আছি।

মার্কসবাদী মন্ত্রীরা আগে প্রকাশ্যেই জ্যোতিষ সম্মেলনে যেতেন। প্রশংসা করতেন এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসকে। কোনও কারণে যেতে না পারলে সরকারি প্যাডে গদগদ ভাষায় চিঠি কম্পোজ করে পাঠাতেন। অমূল্য ও’সব দলিল জ্যোতিষ সম্মেলনের উদ্যোক্তারা সম্মেলনের স্মারক গ্রন্থে ছাপতেন ।

যুক্তিবাদীদের চেল্লামিল্লিতে মার্কসবাদী মন্ত্রীরা এখন প্রকাশ্য ছেড়ে নেপথ্যে গেছেন। কিন্তু জ্যোতিষীদের সঙ্গে রাজনীতিকদের ফেবিকলের জোড় অটুট রয়েছে।

হ্যাঁ, একটা সাবস্টোরি মনে পড়ে গেল। পিলুর সঙ্গী ছিলেন জ্যোতিষীর হতে যাওয়া বর— সে কথা তো আগেই বলেছি। যা বলিনি তা হল—জ্যোতিষী আবার প্রজাপতিসিদ্ধ। অর্থাৎ বিয়ে দেওয়ায় স্পেশালিস্ট। পিলুকে অপমানিত করার হপ্তা তিনেক আগের একটা ঘটনা। রাত ১১টা। পিলু এলেন। আবদার—ওঁর একটি অনুরোধ রাখতে হবে। না শুনে কথা দিই কী করে। শেষ পর্যন্ত অনুরোধ শুনলাম। ওঁর এক বন্ধু বিয়ে করতে যাচ্ছেন এক জ্যোতিষীকে। আমি যেন বন্ধু পত্নীর পিছনে না লাগি। জ্যোতিষীর নাম শুনলাম। শুনে কথা দিলাম, “ঠিক আছে, কথা দিচ্ছি। যত দিন জ্যোতিষীটি তোমার বন্ধুপত্নী থাকবে, ততদিন পিছনে লাগব না। খুশি তো? ওই মাস ছয়েক আমি না হয় ওকে ছেড়ে অন্য দিকে নজর দেব?

পিলু রসে টইটম্বুর ছেলে। বড় বড় চোখ করে বললেন, “কী বলতে চাইছো গুরু? ওদের বিয়ে ছ’মাসের বেশি টিকবে না?”

“আর ধু-র। ছ’মাস টিকে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই। এর আগের দুটো বিয়ে তিন মাসও টেকেনি।”

পিলুর বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার আগেই সম্পর্ক সম্ভাবনা ভেঙে যায়।

এই জ্যোতিষী সম্পর্কে তাঁরই বান্ধবী রেইকি সম্রাজ্ঞী যাজ্ঞসেনী বলেছিলেন—ও বাবা, ও তো বিয়েপাগলি হয়ে গেছে। নিজের একটা স্টেডি হাসবেন্ড জোগাড় করতে পারছে না, অন্যদের প্রজাপতি কবচ দিচ্ছে?

 

জ্যোতিষীদের ধসাতে ফাঁদ চাই ফাঁদ

একবার পরীক্ষায় নামাতে পারলে পর জ্যোতিষীদের নাক ঘষে দেওয়া খুব সোজা। নামানোটা অবশ্য একটু কঠিন। ‘বাংলা এখন’ চ্যানেল ‘নারদ নারদ’ একটা অনুষ্ঠান করতে চায়। এক ঘণ্টার ‘লাইভ’ প্রোগ্রাম। আমি তো রাজি হলাম। কিন্তু সমস্যাটা হল আমার বিরুদ্ধে বসাবার মতো জ্যোতিষী পাওয়া নিয়ে। জ্যোতিষীর যেন আকাল পড়েছে। শেষে একজন পাওয়া গেল। প্রিয়াংকা। তাঁর আবার এক বায়নাক্কা আছে। আগে আমার সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর জানাবেন নারদ নারদে অংশ নেবেন কি না।

আমাকে ফোন করলেন। অনেকক্ষণ কথা বললেন। ভালোমতোই বুঝে গেলেন আমার দৌড়। অতএব ফুরফুরে মেজাজে রাজি হয়ে গেলেন।

ওই সরলতায় ছিল জ্যোতিষী ধরার ফাঁদ।

যাঁরা আমার নাম শুনেই জানিয়ে দেন—“আমি নেই”, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু যাঁরা আমার বিরুদ্ধে তাল ঠোকার আগে আমাকে একবার মেপে নিতে চান তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে দ্রুত পড়ে নেন। বুঝে ফেলেন আমার ‘দৌড়’। অতএব দুর্বল মাটিতে আঁচড়াবার লোভ সামলাতে পারেন না। আমার ‘দৌড়’ বোঝানোটা সেই ফাঁদ।

টিভি অনুষ্ঠানে হার স্বীকার করার মূল্য হিসেবে আমি কত টাকা চাই—এই মোদ্দা কথাটা কোনও জ্যেতিষী সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করেছেন, কেউ জিজ্ঞেস করেছেন দালাল মারফত। এক ভারী মহিলা জ্যোতিষী আমার সঙ্গে কথা-টথা বলে একটা টিভি অনুষ্ঠান করতে রাজি হলেন। অনুষ্ঠানের শ্যুটিং ডেটের দিন দুয়েক আগে আমাকে একটা আংটি উপহার দিলেন পরম ভালোবেসে। সোনার ওপর চুনী বসানো আংটি। কে জানে, কী ছিল মনে। হয়তো বা আশা করেছিলেন, কৃতজ্ঞতা জানাতে আমি হেরে যাব। যে তিন জনের হাত দেখিয়ে প্রশ্ন করব, তাদের উত্তরগুলো জানিয়ে দেব, এমন প্রত্যাশা হয়তো ছিল। রেকর্ডিং শেষে যখন বুঝলেন ‘হেরে ভূত কিম্ভূত’, তখন তাঁর সে কী রাগ? রাগ হবার-ই কথা। ব্যাটা আংটি নেবে, আবার হারিয়েও দেবে? আমাকে ফোন করেও এই ক্ষোভ জানালেন ভারী জ্যোতিষী। বলেছি—কী মুশকিল আপনি আমাকে বলবেন তো, আমি আপনাকে আংটি দিলাম, বিনিময়ে আপনি আমাকে জয় দেবেন।’ তাহলেই ল্যাঠা চুকে যেত। আপনাকে আর এমন মনকষ্ট নিয়ে থাকতে হত না। আংটি নিতাম না। আংটি নেওয়াটা ছিল জ্যোতিষী ধরার ফাঁদ।

আর এক জ্যোতিষী অনুষ্ঠান রেকর্ডিং-এর দিন কয়েক আগে আমার সঙ্গে কিছুটা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। অফারটা ভালোই—একসঙ্গে ড্রিঙ্ক করতে করতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা। আমি আবার পরের পয়সায় মদ খাই না। সুযোগ পেলেই বিনেপয়সায় আকণ্ঠ মদ্যপানের মধ্যবিত্তসুলভ আচরণ আমার অসহ্য ঠেকে। আমি রাজি না হওয়ায় ঘাবড়ে গিয়ে তিনি আমার বিপরীতে টিভিতে নামলেন-ই না। তিনি বোধহয় ধরে নিয়েছিলেন, আমি ঘুষ নিলাম না। স্পষ্ট ইঙ্গিত। অতএব অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো।

আজ অবধি ১৬০ জনের উপর জ্যোতিষীদের মুখোমুখি হয়েছি। মুখোমুখি হয়েছি রেডিওতে, টিভিতে, মঞ্চে। সব জায়গায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে—জ্যোতিষশাস্ত্র আসলে স্রেফ বুজরুকি। পকেট কাটার মতো, প্রতারণা শিল্পের মতোই একটা শিল্প। এদের থাকার সঠিক জায়গা হল জেলখানা।

চ্যালেঞ্জগুলোতে জ্যোতিষীদের সামনে হাজির করেছি দু-চারজন লোক— যাদের হাত দেখে অতীত জীবন নিয়ে কিছু বলতে হবে। এইসব জ্যোতিষীদের জ্ঞানের বহর আমজনতার কাছে তুলে ধরতে চ্যালেঞ্জ করেছি অত্যন্ত সহজ শর্তে। কাঁটায় কাঁটায় কিছুই মেলাতে হবে না। বিয়ের বয়স বলতে গিয়ে পাঁচ বছর কম, বা পাঁচ বছর বেশি বললেও হারব। আয়ের বেলায় পাঁচ হাজার টাকা কম বা বেশি বললেও হার হবে আমার। এত সুবিধে পাওয়ার পরও কোনও জ্যোতিষী আজ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ জিততে পারেনি। কারণ, জ্যোতিষীরা যে সাধারণ জ্ঞান থেকে মানুষের সম্বন্ধে অতীত বা ভবিষ্যৎ বলে, তা আমি জানি। জানি এসব বলতে কোনও শাস্ত্র লাগে না। ওদের ভুল করাতে আমি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার সাধারণ জ্ঞানকেই কাজে লাগিয়েছি। আর মুখোমুখি বসাতে পেতেছি ফাঁদ।

নাকে খত দেওয়া এইসব জ্যোতিষীরা আমার মুখোমুখি হওয়ার আগে নিশ্চয়ই যথেষ্ট ভাবনা- চিন্তা করেছেন, দ্বিধায় ভুগেছেন। লোকটার বিরুদ্ধে নামব কি? জিততে পারলে অচিন্ত্যনীয় লাভ। সব জ্যোতিষীদের টেক্কা মেরে এক লাফে কুবের। এই ধরনের চিন্তা থেকে আমার সঙ্গে একটু কথা বলে আমাকে কিছুটা বুঝতে চেয়েছেন। তারপর, ফোন করেছেন। একাধিকবার অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা হয়েছে। তারপর অবাক হয়ে ভেবেছেন এই ব্যাটার কাছে কি করে যে জ্যোতিষীরা হেরেছেন, ভগবান জানেন? এর কাছে তো হারাই কঠিন। জয় সম্পর্কে এতোটাই নিশ্চিত্ত হয়ে তবে আমার বিরুদ্ধে টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন।

এই রাজি করানোটাই কঠিন। রাজি করানোর স্বার্থে নিজের অহমিকার গলা টিপে কিছুক্ষণের জন্য বোকা হয়ে যান। পারবেন।

 

বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার ঝঞ্ঝাট

যুক্তিবাদী আন্দোলন আমার প্রথম প্রেম। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস। জ্যোতিষী, বুজরুক বাবাজি – মাতাজিদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছি। নামলেই বাঘ আমাকে খাবে। যতক্ষণ জিতব, ততক্ষণ বাঁচব। হারলেই একগাদা লোক আমার পিছন পিছন কালি ছিটোতে ছিটোতে যাবে। বলবে, ঘুষ খেয়েছি। যুক্তিবাদী আন্দোলনকে শেষ করতে হামলে পড়ার মতো স্বার্থান্বেষী, হুজুগে, কানপাতলা, ঈর্ষাকাতর কাঁকড়ার অভাব নেই।

এ’সব লিখতে গিয়ে একটা ভয়ংকর স্মৃতি ভেসে উঠল। ২১ এপ্রিল ১৯৮৯ সাল। আনন্দবাজার ও আজকাল পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপন প্রচারিত হল। ছবিটি আমার ও এক তান্ত্রিক শ্রীশ্রীগৌতম ভারতী’র। ‘আজকাল’ পত্রিকা থেকে বিজ্ঞাপনের কথাগুলো তুলে দিচ্ছি।

একটা বিজ্ঞাপন, আগাপাশতলা মিথ্যে বিজ্ঞাপন নামাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সেদিন টাইফুন হয়ে আছড়ে পড়েছিল। একটি স্ববিজ্ঞাপিত ‘যুক্তিবদী সমাজসচেতন’ মাসিক পত্রিকার কাছের মানুষরা প্রচারে নেমে পড়ল—প্রবীর ঘোষ ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে গরাজয় মেনে নিয়েছে। ঘুষ-খোর প্রবীর ঘো। বিজ্ঞান আন্দোলনের শত্রু। ফোনে ফোনে গুজবের আগুন ছড়িয়েছে দ্রুত। হুজুগপ্রিয় মানুষ! – থাকথিত যুক্তিবাদী আন্দোলনের কর্মীরা এক যোগে আক্রমণ হেনেছে আমাদের প্রতিটি শাখায়। বনগাঁ থেকে ক্যানিং, জলপাইগুড়ি থেকে পুরুলিয়া — কোথায় নয়। আমাদের সমিতির সদস্য-সদস্যাদের উপর মারধোর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, দেওয়াল লিখনে আলকাতরা লেপে দেওয়া, লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা—সবরকম হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেবার যে আক্রমণ নেমে এসেছিল, তাতে আন্দোলন বিপন্ন বোধ করেছিল।

এই বিপদ থেকে বাঁচতে সেদিন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অভীক সরকার ও আজকাল পত্রিকার সম্পাদক অশোক দাশগুপ্তের সঙ্গে কথা বলেছি। সত্যকে তুলে ধরার অনুরোধ রেখেছি। দু-জনেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিলেন। ভণ্ডামি ফাঁস করতে শ্রীগৌতম ভারতীর প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন বে-আব্রু করেছে দুটি পত্রিকাই। শ্রীগৌতম ভারতী নিজের পেটে ভাঙা কাচের বোতল ঢুকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। সে’খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

আমি প্রত্যয় রাখি—কখনই হারব না। সব তথাকথিত অলৌকিক ঘটনার রহস্য ফাঁস করব। এমন প্রত্যেয়ের পিছনে রয়েছে, বহু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানের উপর আস্থা এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁদের সহযোগিতা পাবার প্রত্যাশা। কিন্তু এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যার একটিই আমার সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। অন্তর্ঘাত, দলগত সংহতির অভাব, একজনের কর্তব্যে গাফিলতি যুক্তিবাদী সমিতির লাগাতার জয়ের ধারাকে ধসিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও অন্য ধরনের কারণে ব্যর্থতা আসতে পারে। হয়তো কোনও কারণে পুরোপুরি মনোসংযোগ করতে পারছি না, হয় তো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পুরো তথ্য হাতে আসেনি, যে সব বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা পাওয়াটা জরুরি ছিল, কোনও কারণে তা পাইনি। বিশেষজ্ঞ বাইরে, বিশেষজ্ঞ অসুস্থ অথবা সহযোগিতা করতে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনার কথা ভেবে ব্যাকফুটে— এমন অজস্র কারণ থাকতে পারে। আর এমন একটি কারণই আমাদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থতার জল ঢেলে দিতে পারে। এমন কী এও হতে পারে—ব্যর্থতার কাহিনি নেহাতই গুজব। যদি ব্যর্থ- ই হই, তাতে কী প্রমাণিত হয়? আমার ব্যর্থতা শুধু এটাই প্রমাণ করে যে, আমি পারিনি। এটা প্রমাণ করে না যে, আমি ঘুষ খেয়েছি। এমন কী এটাও প্রমাণিত হয় না যে, অলৌকিক বলে সত্যিই কিছু আছে অথবা জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞান ।

আমার না পারাটাই চূড়ান্ত এবং শেষ সত্য নয়। আমার পরবর্তী প্রজন্ম নিশ্চয়ই সেই ব্যর্থতা ঢেকে দিয়ে নিয়ে আসবে সাফল্য। আমার এই প্রত্যয় কোনও আবেগ থেকে নয়। নতুন প্রজন্মের উত্তরণ আমি যে দেখতে পাচ্ছি।

কিছু কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা হয় ঢাক-ঢোল ৰাজিয়ে। দু-তরফ থেকেই মিডিয়াদের আমন্ত্রণ করা হয়। লক্ষ করেছি, এই সময় অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা থাকে। প্রতিপক্ষ আমার কাছের মানুষদের মধ্যে থেকে দু-একজনকে কেনার চেষ্টা করে। দশজনকে পায় না তো দু’জনকে পায় । আমাদের আন্দোলন একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে। একটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেও বিশ্বাসঘাতক তৈরি হচ্ছে কী করে? তবে কি আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যেই গোলমাল আছে?

এই প্রসঙ্গটি বোঝাতে একটু অন্যদিকে নজর দিই আসুন। বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী, স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠন পৃথিবীর বেশ কিছু দেশেই আছে। তাদের কাজকর্মের উপর সে’সব দেশের সরকার নজরদারি করে। সে’জন্য বিশাল অঙ্কের ব্যয় বরাদ্দ করা হয়। এর একটা বড় অংশ খরচ হয় ইনফরমারদের পিছনে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে, বিপ্লবীদের নেতাদের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে রাষ্ট্রের দালাল বা ইনফরমার। কারা সন্ত্রাসবাদী, কারা স্বাধীনতা সংগ্রামী, এই আলোচনায় আমি এখন ঢুকছি না। কিন্তু যাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রামে নেমেছেন, তাঁদের আন্তরিকতায় নিষ্ঠায় আমরা শ্রদ্ধা রাখতেই পারি। হতে পারে, তাদের আদর্শে কোথাও ভুল আছে। কিন্তু তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারে যাঁরা আঘাত হেনেছিলেন, তারা আদর্শচালিত বলে নিজেদের মনে করতেন। সেটা ভুল আদর্শ কী ঠিক, সেই তর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু তাঁদের কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সততা, আত্মত্যাগ প্রবণতা সন্দেহাতীত। এদের মধ্যে থেকেই ইনফরমার জোগাড় করে এদের শত্রুরা। ইনফরমার পাওয়া যায় বলেই বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাবার আগেই অনেক আগাম খবর মেলে। যারা কাশ্মীরকে আজাদ করতে লড়ছে, তাদের হামলার বহু খবর চলে আসে আমাদের দেশের গোয়েন্দাদের হাতে। পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের সাত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাত নেতার গোপন বৈঠকের খুঁটিনাটি সব খবর পেয়ে যায় ভারতের গোয়েন্দা দপ্তর। সাত নেতার কেউ ভারত সরকারের ইনফরকার না হলে এটা অসম্ভব। ইনফরমার নিয়ে সাত-সতেরো লেখার কারণ এই সত্যটা তুলে ধরা যে, প্রক্রিয়া অনেক সময় লোভের কাছে হার মানে ৷

সি আই এ থেকে ‘কে জি বি-র এজেন্টদের অনেক গল্প, অনেক গুজব আমরা শুনেছি। একটা সময় ছিল যখন এদেশের প্রতিটি নামী-দামি লেখক ও শিল্পীদের সি আই এ বা কে জি বি-র দালাল বলে চিহ্নিত করত আমজনতা। যেন আমজনতাকে সাক্ষী রেখে ওদের দালালির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর এও সত্যি, এক সময়কার পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা দপ্তর সি আই এ এবং কে জি বি সারা পৃথিবীতেই বিপুল সংখ্যক ইনফরমার রেখেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বীহীন আমেরিকা বুঝে গিয়েছে অত বিপুল সংখ্যক ইনফরমারের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু একেবারেই প্রয়োজন নেই—এমনটা মনে করে না।

পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রই শাসক ও শোষকদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দেশের ভিতরে ও প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর গোয়েন্দাগিরি করে। এই জন্য দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, রাষ্ট্রের ভণ্ডামির খোলনলচে প্রকাশে উদ্যোগী সংগঠনের মধ্যে নিজেদের দালাল খুঁজে নেয়। একইভাবে প্রতিবেশী দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে, তাদের গোয়েন্দা দপ্তরে ও সেনা দপ্তরে দালাল নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়। এবং সে চেষ্টা অনেক সময়ই সফল হয়।

প্রতিটি বিপ্লবী সংগঠনেরও নিজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর থাকা জরুরি। প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে নিজেদের ‘আপন লোক’ খুঁজে নেওয়াটা জরুরি। এই আপন লোকরাই সরবরাহ করবে শত্রুদের নানা তথ্য।

আমরা একটা কুঁচো সংগঠন। তবু আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে অনেক জায়গায় ‘আপন লোক’ খুঁজে নিতে হয়েছে। তাঁরা আছেন বলেই আমাদের জয় সহজ হয়েছে। তাঁরাই খবর দিয়েছেন আমাদের সমিতির কে কোন্ জ্যোতিষীর এজেন্ট, কে কোন্ অবতারের। কে কী ভয়ংকর কাজ সংগঠিত করতে যাচ্ছে। আমাদের সমিতির সেই ছেলেদের টেপ রেকর্ডারে ধরে রাখা কন্ঠস্বর শুনেছি। শুধু অবতার ও জ্যোতিষীদের মধ্যে নয়, অনেক প্রয়োজনীয় দপ্তরে, বিভাগে, সংগঠনে আমাদের ‘আপন লোক’ এখন অনেক।

বাঘের পিঠে সওয়ার হলে এসব করতেই হয়।

 

জ্যোতিষীরা যে ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হন

একটি বিনীত অনুরোধ। এক সন্ধ্যায় টিভিটি খুলুন। একটু রিমোটে আঙুল নিয়ে খেলা করুন । একগাদা চ্যানেলে বিচিত্র সাজের নানা জ্যোতিষীদের পেয়ে যাবেন। ‘এখন ফোনে’ মার্কা জীবন্ত অনুষ্ঠানও পাবেন। তাতে ফোনে জ্যোতিষীদের কাছে কী ধরনের প্রশ্ন আসে আর কী ধরনের উত্তর যায়, তার একটা হদিশ পেয়ে যাবেন। মিলিয়ে দেখবেন, তলায় যা লিখছি প্রশ্নোত্তরগুলো সেই ধরনের।

প্রশ্নকর্ত্রী—আমি বেলঘরিয়া থেকে মিনতি পাল ফোন করছি। আপনার জ্যোতিষের অনুষ্ঠান প্রত্যেক সপ্তায় দেখি। খুব ভালো লাগে। আপনাকে আমার প্রণাম

জ্যোতিষী—হ্যাঁ। আপনার প্রশ্নটা কী? কার সম্বন্ধে জানতে চাইছেন?

প্রশ্নকর্ত্রী—আমার ছেলের সম্বন্ধে জানতে চাইছি।

সঞ্চালক—আপনার ছেলের জন্ম সাল ও সময়টা বলুন।

প্রশ্নকর্ত্রী—জন্ম ১৯৮০ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টা ৩৫ মিনিটে বেলঘরিয়ায়।

জ্যোতিষী—ছেলের সম্বন্ধে কী জানতে চান ?

প্রশ্নকর্ত্রী—ওর বিদ্যাস্থান আর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জানতে চাইছিলাম ।

জ্যোতিষী—কী পড়ছে ?

প্রশ্নকর্ত্রী—ক্লাস ইলেভেনে পড়ে।

জ্যোতিষী—ওর বিদ্যাস্থানে অশুভ গ্রহ বসে আছে। পড়াশুনোয় বাধা। পড়ায় মন দিতে পারে না। মন অস্থির। (কুড়ি বছরে ইলেভেনে পড়লে পড়ায় ভালো নয়—বোঝাই যাচ্ছে) ওর স্বাস্থ্যও মাঝে মাঝে ডিসটার্ব করছে।

প্রশ্নকর্ত্রী—হ্যাঁ। খুব অসুখে ভোগে। এক বছর তো শরীর খারাপের জন্য পরীক্ষায় বসতেই পারেনি ।

জ্যোতিষী—সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তাই তো বললাম, স্বাস্থ্য ডিসটার্ব করছে পড়াশুনায়। বিদ্যাস্থান আর স্বাস্থ্যস্থানকে ঠিক করতে হবে। আপনি আমার সঙ্গে পরে চেম্বারে যোগাযোগ করবেন, নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করে দেব।

সঞ্চালক—আরও একটা ফোন আসছে। কে বলছেন ?

প্রশ্নকর্ত্রী—আমি দমদম ক্যানটনমেন্ট থেকে বলছি। আমার নাম গোপা পোদ্দার। আপনার প্রোগ্রাম দারুণ ভালো লাগে। আমার প্রণাম নেবেন ।

জ্যোতিষী—নিলাম বোন। এবার বলুন কার সম্বন্ধে জানতে চাইছেন ?

প্রশ্নকর্ত্রী—আমার বড় মেয়ের বিয়ে নিয়ে জানতে চাইছি।

সঞ্চালক—আপনার মেয়ের জন্ম সময়টা বলুন।

প্রশ্নকর্ত্রী—১৯৭৩ এর ৯ এপ্রিল। দুপুর ১২ টা ৬ মিনিটে।

সঞ্চালক—ঠিক আছে। শুনতে থাকুন।

জ্যোতিষী—আপনার মেয়ের সম্বন্ধ তো বেশ কিছু দিন ধরে দেখছেন। কিন্তু কোনওটাই হচ্ছে না।

প্রশ্নকর্ত্রী—হ্যাঁ একদম ঠিক বলছেন।

জ্যোতিষী—অ্যাসট্রোলজি হল খাঁটি অঙ্ক। ঠিক তো হতেই হবে।

(দমদম ক্যানটনমেন্ট মানে সাধারণভাবে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাস। বাংলাদেশ বর্ডার থেকে প্রতিদিনই প্রচুর চোরাইমাল নামিয়ে দেওয়া হয়। চোরাইমালের ক্যারিয়াররাও গরিব ঘরের ছেলে মেয়ে। সুতরাং মেয়েদের চেহারায় অপুষ্টি ও দারিদ্র স্পষ্ট হবে—এটাই স্বাভাবিক। জায়গার নাম শুনে চেহারার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মফস্সলের চেহারা, উত্তর কলকাতার চেহারা, কলকাতার চেহারার মধ্যে কিছু স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। বৈশিষ্ট্য থাকে সাজপোশাকে, রুচিতে, সংস্কৃতিতে।

দমদম ক্যানটনমেন্টের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েকে পাত্রস্থ করার চেষ্টা ৩০ এর অনেক আগেই শুরু হয়। মেয়ের বয়স ৩০ বছর। বিয়ের অনেক ব্যর্থ-চেষ্টার পর নিশ্চয় এই ফোন। ) প্রশ্নকর্ত্রী—কবে নাগাদ বিয়ে হবে?

জ্যোতিষী—এখানে এতই সময়ের অভাব যে, ডিটেইলে ক্যালকুলেশন করে বলা সম্ভব নয় বোন। আপনি আমার চেম্বারে আসুন। বলে দেব। প্রয়োজন হলে গ্রহশান্তির ব্যবস্থা করব, যাতে ওর তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়।

কোনও ফোন হয়তো জানাল, হ্যাজবেন্ডের সম্বন্ধে জানতে চাইছি। জ্যোতিষীর পরবর্তী প্রশ্ন— সমস্যাটা কী?

প্রশ্নকর্ত্রী—ও তো আগে ভালোই ব্যবসা করত। এখন বছর দেড়েক ধরে হল ব্যবসাটা ভালো চলছে না, কবে থেকে আবার ভালো চলবে?

জ্যোতিষী—কীসের ব্যবসা? প্রশ্নকর্ত্রী—ট্যাক্সির।

জ্যোতিষী—আগে তো দেখছি ব্যবসা ভালোই চালাতেন। ট্যাক্সিও বাড়িয়ে ছিলেন। এখন কী দু-একটা ট্যাক্সি বিক্রি করেছেন?

প্রশ্নকর্ত্রী—একদম বাক্‌সিদ্ধের মতো বলেছেন। পাঁচটা ট্যাক্সি ছিল। দুটো বিক্রি করে দিয়েছে। জ্যোতিষী—সে তো দেখতেই পাচ্ছি। এখন কিছু দিন হল আপনার হ্যাজব্যান্ডের মন-মেজাজ ভালো নেই ।

প্রশ্নকর্ত্রী—একদম ঠিক বলেছেন। এখন খুব খিটখিটে হয়ে গেছে। বাড়িতে ঝগড়া-ঝাটি করছে।

জ্যোতিষী—এখন ড্রিঙ্ক করার মাত্রা খুব বাড়িয়েছেন? (ট্রান্সপোর্ট বিজনেসম্যানদের মদ্যপান হল স্বাভাবিক অভ্যেস। মন খারাপ বা মন ভালো থাকলে একটু বেশি পান করবেন—এটাও স্বাভাবিক। এটা বলার জন্য সাধারণ বুদ্ধিই যথেষ্ট। )

প্রশ্নকর্ত্রী—সত্যিই আপনি ধন্বন্তরি জ্যোতিষী। একদম ঠিক বলেছেন।

এরপর সেই এক পুরানো কাসুন্দি, “এ’সব তো এত চট্ করে বলে দেওয়া সম্ভব নয় । অনেক কিছু বিচার করে ব্যবস্থা করতে হবে। চলে আসুন আমার চেম্বারে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসবেন। আমার চেম্বারের ফোন আর মোবাইল নম্বর লিখে নিন। “

টিভি স্ক্রিনে ফুটে উঠলো দুটো ফোন নম্বর। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশ্নকর্ত্রী বা প্রশ্নকর্তারাই জ্যোতিষীদের এমন সব তথ্য জুগিয়ে দেন, তাতে নিরেট গাধা না হলে প্রত্যেকেই এক একজন ‘ধন্বন্তরি’ বা ‘বাকসিদ্ধ’।

সলিড মাথাওয়ালা মানুষগুলোই রং-টং চড়িয়ে এইসব জ্যোতিষীদের অলৌকিক ক্ষমতার গল্প ফেঁদে বসেন যত্র-তত্র।

এ’রাজ্যে পাঁঠার কোনও অভাব নেই। ওরা হাড়িকাঠে গলা দেবার জন্য ছট্‌ফট্ করছে। আপনি ওদের পকেট থেকে যত বেশি করে সাফ করবেন, ওরা ততই প্রশান্তি ও নির্ভরশীল বিশ্বাস খুঁজে পাবে। অতএব মা ভৈ !

 

বিদ্যে বোঝাই তিন জ্যোতিষী ও এক যুক্তিবাদী

১৯৯৯ সাল। আলফা বাংলার একটি অনুষ্ঠান ‘অন্য ভুবন’। সঞ্চালক চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। গৌতম ফোনে জানালেন, জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদীদের হাজির করে একটা জমজমাট অনুষ্ঠান করতে চান। এতে আলোচনার পাশাপাশি জ্যোতিষীদের হাত দেখিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাব আমি। আলোচনায় আমার সঙ্গী থাকবেন অভিনেতা শুভেন্দু চ্যাটার্জি। শুভেন্দু চ্যাটার্জি আমাদের আন্দোলনের সাথী। ওর নাম শুনে খুশি হলাম। জ্যোতিষী কারা থাকছেন? শুনলাম, হাতিবাগান টোলের দুই জ্যোতিষী থাকছেন। এও জানলাম, আমাকেই একজন লোক আনতে হবে। তাঁর হাত দেখেই আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন জ্যোতিষীরা।

আমি যে থাকছি, এটা কি জানেন জ্যোতিষীরা? জিজ্ঞেস করেছিলাম গৌতম ঘোষকে। উত্তরে গৌতম জানালেন— পাগল! আপনার নাম শুনেই অনেক জ্যোতিষী কেটে পড়েছেন। এঁরাও জানতে চেয়েছিলেন, আলোচনায় আপনি থাকছেন কি না। আপনি থাকছেন না শুনে রাজি হয়েছেন। রেকর্ড আগামীকাল, বিকেল তিনটেয়, নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে।

পরের দিন আড়াইটের মধ্যে হাজির স্থান-নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে। গৌতম যখন শুনলেন, কয়েক ঘণ্টার নোটিসে কাউকেই হাজির করতে পারিনি, তখন নিরাশ হলেন। হাত দেখানোর পর্যায়টা থাকলে দর্শকরা দেখতে পেতেন জ্যোতিষীরা পারছেন, কি পারছেন না?

জ্যোতি মুখার্জি

এতো হারিকিরি করার মতো ব্যাপার। আপনাকে প্রত্যেক জ্যোতিষী চেনেন। নিদেনপক্ষে আপনার প্রচুর ছবি জ্যোতিষীরা দেখেন বই, পত্রিকা ও টিভি’র কল্যাণে। আপনার নাড়িনক্ষত্রের খবর ওঁদের জানা। সেখানে এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার কোনও মানেই নয় না—আমাকে বললেন গৌতম।

গৌতম ঘোষের কথায় যুক্তি আছে। অস্বীকার করছি না, ঝুঁকি আছে। কিন্তু কী করি। এত কম সময়ে এমন একজনকেও পেলাম না, যাকে দেখে জ্যোতিষীরা বেবাক বুরবক বনে যাবেন। একটা মানুষ দেখে সাধারণ বুদ্ধিতেই অনেক কিছু প্রায় ঠিকঠাক বলে দেওয়া সম্ভব। আর চর্চায় সেটা শিল্পে পৌঁছায়। এমন খেলা আমরা ট্রেন যাত্রায় প্রচুর খেলি। যারা এই খেলা নিয়ে ব্যবসা করে তাদের সঙ্গে খেলতে মজা পাই। থেবড়ে গোবরে বসিয়ে দেওয়ার মজা। এ খেলায় আমাকে জিততে হলে এমন একটা লোককে হাজির করতে হবে, যাকে দেখে আন্দাজ করা সম্ভব নয়।

তেমন লোক যখন পেলাম না, তখন নিজের হাত দেখাবার ঝুঁকি নিতেই হল। এর জন্য প্রথমেই যেটা প্রয়োজন, সেটা হল, আমাকে ‘আমি নই’ করে হাজির করা।

গৌতম ঘোষকে একটি অনুরোধ করলাম, প্রোগ্রামে আপনি আমাকে প্রবীর ঘোষ বলে পরিচয় করাবেন না। গৌতম নিশ্চিন্ত করলেন—ঠিক আছে। সমাজবিজ্ঞানী শ্রীঘোষ বলে পরিচয় করাব।

স্টুডিওর মেকাপ রুমেই পরিচয় হল জ্যোতিষীদের সঙ্গে। আসার কথা ছিল দু-জনের। কিন্তু এসেছেন তিনজন। তৃতীয়জন পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। এখন নেশা জ্যোতিষ চর্চা। (চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর জ্যোতিষী করে টু পাইস’ এলে মন্দ নয়। স্বেচ্ছা-অবসর নেওয়া অকর্মণ্যরা ঘরে বসে পিঠ না চুলকে এমন ব্যবসায় মন দিতে পারেন। এতে সময় কাটবে, প্রভাব বাড়বে, টাকা আসবে।) পাক্কা ঘণ্টাখানেক আড্ডা মারার পর জ্যোতিষীরা নিশ্চিন্ত হলেন, আমি আমি নই। অন্তত আমার তেমনটাই মনে হল। প্রমাণ মিলবে আমার অতীত নিয়ে প্রশ্নের ওঁরা কী উত্তর দেন তাঁর উপর।

এখানে তাত্ত্বিক আলোচনার প্রসঙ্গ টানছি না। আনছি আমার হাত দেখে কী উত্তর ওরা দিলেন সেই প্রসঙ্গে। গৌতম ঘোষ আমাকে বললেন, এই অনুষ্ঠান শুরুর আগে আপনার হাত আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী জ্যোতিষীদের দেখিয়েছেন। এ’বার ওঁদের কাছে আপনার প্রশ্নগুলো রাখুন। তবে প্রশ্নগুলো রাখবেন আপনার অতীত জীবন নিয়ে। যাতে আমরা মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাই, উত্তরগুলো ঠিক হল, কী ভুল?

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছিল দেখলেন। উত্তর পেলাম, চৌতিরিশ-পঁয়তিরিশ।

-ছেলে মেয়ে ক’টি?

—দুটি মেয়ে।

—কর্মক্ষেত্র ?

দু-চার বছরের বেশি কোনও জায়গায় লেগে থাকতে পারেননি।

জ্যোতিষীরা তাঁদের দেওয়া উত্তরে সহমত। কিন্তু আমার মতটা কী? ক’টা মিলল? গৌতম অনুরোধ করলেন, সঠিক উত্তরগুলো দর্শকদের জানাতে।

সঠিক উত্তর—বিয়ে করেছি তেইশে। চৌতিরিশ, পঁয়তিরিশে নয়। একটি সন্তান। ছেলে। একটাই চাকরি করতাম। স্টেট ব্যাংকে। চাকরি ছেড়েছি সম্প্রতি।

সেদিন জানাবার কোনও সুযোগ ছিল না, কেন ওদের একটা উত্তরও কাছাকাছি দিয়ে যেতে পারেনি। আজ আপনাদের সেই কাহিনি শোনাচ্ছি।

নিউ থিয়েটার স্টুডিওর্স এক টেকনিশিয়ান বন্ধু সেদিন আমার অনুরোধ রেখেছিলেন। তাইতেই জয়। তিনি শুধু আমাদের মেকাপ রুমের আড্ডায় ঢুকে বললেন, “ঘোষ’দা তোমার গলা শুনে ঢুকে পড়লাম। ছোটমেয়ে তো গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেল। কবে খাওয়াচ্ছ বলো।”

ওঁর ওই ছোট্ট ডায়লগই জয়কে নিশ্চিত করেছিল। জ্যোতিষীরা ওই এক ডায়লগ থেকে যে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, সেগুলো হলঃ-

(১) আমার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে জ্যোতিষীরা মনে করেছিলেন, প্রবীর ঘোষের সঙ্গে চেহারার যথেষ্ট মিল থাকলেও আমি সম্ভবত প্রবীর ঘোষ নই। কিন্তু স্টুডিওরই একজন টেকনিশিয়ানের কথা শুনে নিশ্চিত হয়েছিলেন—আমি প্রবীর ঘোষ নই। কারণ জ্যোতিষীরা জানেন, আমার এক ছেলে। ‘অলৌকিক নয় লৌকিক প্রথম, দ্বিতীয় খণ্ডে সে কথা লেখা আছে।

(২) হাত দেখার সময় আমার জন্ম সাল জেনেছিলেন। ছোট মেয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে শুনে ওঁরা ধরে নিয়েছিলেন, ছোটর বয়স বছর কুড়ি হবে। বড়র বয়স একুশ-বাইশ হবে। আমার যা বয়েস, তাতে আমার সময়ে প্রথম সন্তানের পর দ্বিতীয় সন্তানের বয়সের পার্থক্য দু-এক বছরের বেশি হত না। আমার বিয়েটা তার মানে বছর বাইশ, আগে হয়েছে। এখন বয়েস ছাপ্পান্ন । অর্থাৎ বিয়ে হয়েছে চৌতিরিশ-পঁয়তিরিশে। সোজা হিসেব।

(৩) আমার স্টুডিওর বন্ধুটি যে’হেতু ‘আপনার মেয়ে’ না বলে ‘ছোট মেয়ে’ ‘শব্দটি বলেছিলেন, তাইতেই ওঁদের হিসেবে গোলমাল হয়েছে। ওঁরা ধরে নিয়েছিলেন, বড়োটি ছেলে হলে ‘ছোট মেয়ে’ না বলে ‘মেয়ে’ শব্দটি বলতেন। এরই সঙ্গে আমার শিক্ষা ও আর্থিক স্ট্যাটাস অনুমান করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, আমার দু’য়ের বেশি সন্তান হওয়াটা স্বাভাবিক নয় ।

(৪) গিয়েছি ‘প্রেস’ লেখা গাড়িতে। গাড়ি দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমি সাংবাদিক। কোথায় যুক্ত আছি, জানতে চেয়েছেন। জানিয়েছি। এর আগে কোথায় কোথায় যুক্ত ছিলাম, তাও জানতে চেয়েছেন। মিডিয়াগুলোর নাম বলেছি। আমি কোনও সংবাদমাধ্যমে কখনও চাকরি করিনি বটে, কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম—এ’ও সত্যি। আমার কথা শুনেই তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন, ঘন ঘন চাকরি বদল করেছি।

জ্যোতিষীদের ক্ষমতার দৌড় আমি জানি। জানি, ওরা হাত বা ছক দেখে কোনও কিছুই বলে না। বলে যে হাত বা জন্ম ছক দেখাতে এসেছে তার কথার সূত্র ধরে (সূত্র ধরে জ্যোতিষীরা কীভাবে বলে, তার একটা জীবন্ত ছবি একটু আগেই তুলে ধরেছি ‘এখন ফোনে’ ধরনের অনুষ্ঠান থেকে)। পোশাক-পরিচ্ছদ, চেহারা, রুচি, ঘড়ি, জুতো, গাড়ি কী বাসযাত্রী ইত্যাদি বুঝে নিয়ে অতীত বলে, ভবিষ্যৎ বলে। যে সব দেখে-শুনে ওরা বলে, সে’সব একটু উলটে-পালটে দিলেই সব ওলট-পালট। আমি শুধু তাই করেছিলাম। এবং জিতেছিলাম ।

 

বিশ্বের বিস্ময় ও অলৌকিক মাতা

জয়া গাঙ্গুলীর বিস্ময়কর পরাজয়

জয়া গাঙ্গুলী হেভি-ওয়েট জ্যোতিষী। নিজেকে ‘অলৌকিক মাতা’ ‘অতীন্দ্রিয় শক্তির অধিকারিণী’ বলে বিজ্ঞাপন দেন। একবার পাথর দিয়ে অসুখ সারান বলে দাবি করে আইন- আদালতের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। জামিন পর্যন্ত নিতে হয়েছিল। এখন আর অসুখ সারাবার মত ভয়ংকর এবং প্রতারণামূলক দাবি করেন না। কারণ—নেড়া একবার বেলতলায় যায়।

এক সময় অনেক জ্যোতিষী ও তান্ত্রিক এমন ভয়াবহ দাবি করত বোধহয় বেশি কামাবার লোভে। গাদাগাদা দুরারোগ্য ব্যাধির ক্লায়েন্টদের জীবন দানের আশ্বাস দিয়ে শুষে ছিবড়ে করার নিষ্ঠুর খেলা বন্ধ করতে, আমরা যুক্তিবাদী সমিতিই মামলা দায়ের করেছিলাম।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে দামি ও নামী জ্যোতিষী বোধহয় জয়া গাংগুলী। অবশ্য তিনিও এখন নিজেকে শুধু ‘জ্যোতিষী’ বলে পরিচয় দেন না। লেখেন ‘জ্যোতিষ ও তন্ত্র সম্রাজ্ঞী’। এমন-ই এক মহার্ঘ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারিণী, বিশ্বের বিস্ময়ের সঙ্গে আমার মতো এক আম আদমির একটি টিভি অনুষ্ঠানের আংশিক বিবরণ এখানে তুলে দিচ্ছি।

‘ATN WORLD’ এবং ‘ATN BANGLA’ তখন স্যাটেলাইট চ্যানেল। রমরমিয়ে চলছে। RPG নেটওয়ার্কে কেবল চ্যানেল বলতে তখন শুধু ‘CCCN’। এই তিনটি চ্যানেলে এক সময় একটা অনুষ্ঠান হত, ‘দেখা না দেখা’। পরিচালক ছিলেন শর্মিলা চ্যাটার্জি। সহপরিচালক

সুজিত চ্যাটার্জি। এই ‘দেখা না দেখা’ আমাকে ও জয়া গাঙ্গুলীকে চারটে এপিসোডে মুখোমুখি বসিয়ে দিয়েছিল। দুটো এপিসোডে ছিল তাত্ত্বিক আলোচনার নামে হিজিবিজি বোকা তর্ক, গেঁড়ে তর্ক। যেমন—দশ রতি নীলা নিয়ে হাঁটতে পারবেন? পারবেন না। উত্তরে যখন বললাম— দিন। পরে হাঁটব তো বটেই। বেঁচে থাকব বছরের পর বছর। জয়া চুপ মেরে গেলেন-৷ টেনে আনলেন রোগ সারাবার কথায়। মা মনসা নাকি ওঁকে দেখা দেন! চর্মচক্ষে দেখতে পান? জিজ্ঞেস করতেই, জয়া আমতা-আমতা। আরও একটু চেপে ধরতেই বললেন, তিনি অনুভব করেন ।

মা মনসার কথা মতোই তিনি নাকি অসুখ সারান। কী ধরনের অসুখ? চোখের রোগ থেকে ক্যানসার স-অ-ব ।

আমি রোগী দেব—সারাবেন? এমন বেয়াড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই আবার অন্য প্রসঙ্গ টানলেন।

সূর্য রশ্মি ব্লাডসারকুলেশনে মিশে যায়’—এমন উদ্ভট অশিক্ষা উদ্ভুত কথা বলতে তাঁর জিভ যেভাবে সপ্রতিভ দেখলাম, তাতে এ’নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত করার প্রবৃত্তি থাকে না ।

তৃতীয় ও চতুর্থ এপিসোডে লড়াইটা জমবে, প্রত্যাশিত ছিল। তৃতীয় এপিসোডে আমি অলৌকিক জ্যোতিষী জয়ার সামনে হাজির করব তিনজনকে। তাঁদের সম্বন্ধে প্রশ্ন রাখব। বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাঙ্গুলী উত্তর দেবেন। চতুর্থ এপিসোডে দেখা হবে উত্তর ঠিক, না ভুল। উত্তর ঠিক দিলে আমি যুক্তিবাদী সমিতি ভেঙে দেব। যাঁদের হাজির করব তাঁদের নাম-ঠিকানা দিতে বাধ্য থাকব। তাঁদের উত্তর হিসেবে যেগুলো আমার হাজির করা মানুষগুলো বলবে, তার একটিও মিথ্যে হলে আমি সমিতি ভেঙে দিতে বাধ্য থাকব। জয়া উত্তর ভুল দিলে কী জয়া-জ্যোতিষ পেশা বন্ধ করে দেবেন? সুজিত চ্যাটার্জির প্রশ্নের উত্তরে জয়া জানালেন, না তিনি তাঁর পেশা বন্ধ করবেন না ।

যে তিনজন সম্বন্ধে জয়া বলবেন, অনুষ্ঠান রেকর্ডিংয়ের আগে তাঁদের এক একজনের হাত দেখলেন দীর্ঘ সময় ধরে। কার কার সম্বন্ধে কী কী প্রশ্ন রাখব, তাও জানিয়ে দিয়েছিলাম। জয়া হয়তো ধরে নিয়েছিলেন—আমাকে আংটি উপহার দেওয়ার বিনিময়ে আমি সহজ সরল প্রশ্ন হাজির করেছি।

প্রথমে আনা হল জ্যোতি মুখার্জিকে। ঠিকানা দেখানো হল টিভি’তে। ১০৩ এ কবি সুকান্ত সরণি, কলকাতা ৭০০০৮৫। বয়স পঁয়ষট্টির এপাশ-ওপাশ ।

জ্যোতি মুখার্জি সম্পর্কে জয়া জানালেন, চাকরি করতেন, রিটায়ার করেছেন।

—বিয়ে কবে নাগাদ ?

উত্তরে জয়া জানালেন, অনেক বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। অর্থাৎ পঁচিশ-তিরিশ-পঁয়তিরিশ বা যা খুশি হতে পারে। একেই বলে অলৌকিক মাতা’র নিখুঁত গণনা !

—ক’টি সন্তান?

জয়ার কথায় তিনটি। তবে মিসক্যারেজ হতে পারে। অর্থাৎ সন্তান সংখ্যা একটি বা দুটি হলেও মিসক্যারেজের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার রাস্তা খোলা রাখা হল।

জ্যোতি মুখার্জি নিজেই জানতে চাইলেন, তাঁর স্ত্রী বেঁচে আছেন কি না?

জয়া জানালেন, স্ত্রী’র সাংঘাতিক বিপদ হতে পারে।

দ্বিতীয় জন সাধন মজুমদার। ঠিকানা ২/৩৮ রামকৃষ্ণ পল্লী, বেলঘরিয়া, কলকাতা-৭০০০৮৩৷ বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশি।

জয়া জানালেন, আয় ভীষণ কম। এক-দেড়-দু’ হাজারের মধ্যে। ছোট-খাট ব্যবসা করেন। —ব্যবসার ধরনটা কী? জিজ্ঞেস করায় জানালেন লিকুইড কোনও কিছুর ব্যবসা করেন। তেল-জল-চা এই ধরনের জলীয় কিছুর ব্যবসা করেন।

তেল মানে কী কেরোসিন ? জলীয় মানে কী তাড়ি? চা মানে ফুটে ভাঁড়ের চা? সাধন মজুমদার নিজে যেন চলমান জীবিকার বিজ্ঞাপন। ওঁকে দেখে এইসব কথা বলে ফেলা যায় সহজে। ভক্‌ভক্‌ করে যে ভাবে তাড়ির গন্ধ বেরুচ্ছে, তাতে তাড়ি-ব্যবসায়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তৃতীয় জন বলু ঘোষ দস্তিদার। ঠিকানা ১১২ এ, কবি সুকান্ত সরণি, কলকাতা ৭০০০৮৫৷ বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ হবে।

বলুর সম্বন্ধে জয়া জানালেন, চাকরি করেন। মাসিক আয় পাঁচ হাজার থেকে ছ’ হাজার টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্রাজুয়েটের কাছাকাছি।

চতুর্থ পর্বে দর্শকদের মধ্যে ছিল টানটান উত্তেজনা। অলৌকিক মাতাজি ১০০% মেলাতে পারলেন কি না—জানতে আগ্রহী বহু মানুষ। এই অনুষ্ঠানটি যে বিপুল সাড়া ফেলেছে—পরিচালক শর্মিলা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সে কথা জানালেন দর্শকদের।

টিভি-তে আমি, জয়া গাঙ্গুলী ও সঞ্চালক সুজিত চ্যাটার্জি। আমরাও উত্তর আনার অপেক্ষায়। সুজিতের আহ্বানে জ্যোতি মুখার্জি এলেন। রোগা, ফর্সা, দাড়ি-গোঁফ নিখুঁত কামানো। পরিপাটি আঁচড়ানো চুল। পরনের সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি। বনেদি ঐতিহ্যের ছাপ চেহারায় স্পষ্ট। যদিও এখন ছাপ থাকলেও বৈভবের চিহ্ন নেই। সহজ কিন্তু রুচিপূর্ণ পোশাক-আশাক।

চেহারা দেখলে ব্যবসায়ী মনে হয় না। অতএব পেশা হিসেবে পড়ে থাকে চাকরি। বয়স দেখে বোঝা যায় অবসর নেবার সময় পেরিয়ে এসেছেন। সুতরাং চাকরি করতেন, অবসর নিয়েছেন—এসব বলার জন্যে হাত দেখার প্রয়োজন হয় না।

আমার কথা শুনে কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন। আমাকে মনে করতে পারেন— বাঙালি কাঁকড়া। চ্যালেঞ্জ জানাবে। আর হেরে গেলে হারকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবে।

কে কী মনে করল, বলল—ও’সব গায়ে মাখতে নেই। যা নেই, তাতে আমিও নেই। অতএব চলুন, সোজা যাই জ্যোতি মুখার্জির কথা শুনতে।

জ্যোতি মুখার্জির কথায়—অবসর নেননি। অ্যাক্সিডেন্টে পা ভাঙে। কাজে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজে যেতে না পারার ফলে চাকরি চলে যায়। বিয়েই করেননি। সুতরাং তিন সন্তান, মিসক্যারেজ এ’সবই ভুল। বউয়ের সাংঘাতিক বিপদ ঘটার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

এমন সব উত্তর শুনে জয়ার বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস রাখা মানুষদের কেউ অবাক, কেউ শোকাহত, কেউ বা জয়াকে গাল পেড়েছেন—আমরা অনুমান করতে পারি। কিন্তু লাগাতার বিজ্ঞাপনের দৌলতে গড়ে তোলা এমন ইমেজের গ্যাস বেলুন যে ফুটো হতে চলেছে তা জ্যোতিষী জয়া বুঝতেই পারেননি। নিজের ভবিষ্যৎ বুঝতে ডাহা ফেল করে জয়া তখন বেজায় নার্ভাস। রুমাল দিয়ে যে ভাবে ঘন ঘন মুখ মুছছিলেন, তাতে এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

এ’বার এলেন সাধন মজুমদার। সোফায় বসলেন। আগের এপিসোডের সেই ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি। সুজিতের অনুরোধে ক্যামেরার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাত জোড়া করে দর্শকদের নমস্কার জানালেন। সাধনবাবুর উচ্চতা পাঁচ ফুট চারের মধ্যে। খস্থসে কালো চামড়া। উড়োখুড়ো তেলের ছোঁয়া না পড়া চুল। দু-দিন না কাটা খোঁচা-খোঁচা কাঁচা-পাকা দাড়ি। না, চশমা পরেন না। চেহারা দেখে মনে হয় পড়াশুনোই করেন না। তাই হয়তো চশমার পিছনে বাজে খরচের বিলাসিতায় রাজি নন। গলায় একটা মোটা কালো সুতো বাঁধা। তাতে ঝুলছে একটা রুপো বা হোয়াইট মেটালের কবচের মতো কিছু। কবচে আরবি ভাষায় কিছু লেখা। পরনে টেরিকটনের হাফ হাতা সার্ট। এত পুরোনো যে অনেক জায়গায় জ্যালজ্যালে হয়ে গেছে। কুঁচকোনো আধ ময়লা । কয়েক জায়গায় সেলাই করা টেরিকটনের ময়লা প্যান্ট। পায়ের হাওয়াই চপ্পলের সোল ক্ষয়ে প্রায় মেঝেতে মিশেছে। এর মধ্যেই বাবু সাধনচন্দ্র যে দু-এক পাঁইট দিশি চড়িয়েছেন, গন্ধে আমাদের তা মালুম দিচ্ছে। চেহারা-পোশাক-গন্ধ সোজা বুঝিয়ে দেয় চোলাইয়ের কারবার করেন সাধনবাবু। এ’বুঝতে হাত দেখার দরকার হয় না।

সাধনবাবু সুজিতকে যা যা জানালেন, তা সত্যিই অবাক করা। চাকরি করেন ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশনের ভবানীপুর শাখায়। পে স্লিপ দেখালেন। মাইনে বারো হাজারের বেশি।

তাহলে ‘ভুল, সবই ভুল’। কোথায় বা এক-দেড়-দুই হাজার, কোথায় বারো হাজারের বেশি! কোথায় তরল-তাড়ি ; কোথায় সি ই এস সি ! এই না কি ‘বিশ্বের বিস্ময়’ ! এই না কি ‘অলৌকিক মাতা’র কেরামতি !

জানতাম, জ্যোতিষশাস্ত্রের দৌড়। জানি জ্যোতিষীদের নিখুঁত ভবিষ্যৎ বলার গোপন কৌশল । আর এ’সব জানি বলেই সাধন মজুমদারকে বলেছিলাম, শ্যুটিং ওমুক তারিখে। তার পাঁচদিন আগে থেকে শরীরে তেল ছোঁয়াবেন না। তিন দিন দাড়ি-গোঁফ কামাবেন না। গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম ধুকধুকিটা। চোখ থেকে খুলে নিয়েছিলাম চশমা, হাত থেকে হাতঘড়ি। সার্ট-প্যান্ট- হাওয়াই সাধনবাবুই জোগাড় করেছিলেন। সাধনবাবুর গায়ে তাড়ি ছেটানোর কাজটা করেছিলাম আমি ৷

হাত দেখার অভিনয় করে, কথা শুনে, পোশাক দেখে, গন্ধ শুঁকে জ্যোতিষীরা যে ‘বাকসিদ্ধ’ সাজতে চায়, সেটাই বে-আব্রু হল আজ ৷

বলু ঘোষ দস্তিদার জানালেন, জয়া গাঙ্গুলী তো সবই ভুল বললেন। চাকরি করেননি একদিনের জন্যেও। করেন ব্যবসা। অতএব পেশা বলতে জয়া পুরোপুরি ব্যর্থ।

আয় বলেছেন, মাসিক পাঁচ-ছয় হাজার। এটাও ভুল। রোজগার মাসে হাজার পনেরো। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে গিয়ে বলেছেন—গ্র্যাজুয়েটের কাছাকাছি। আসলে পড়াশুনো সিক্স অবধি।

বলুকে কোনও বাড়তি মেকাপ দিতে হয়নি। স্মার্ট লোক। সমিতির পুরোনো সদস্য। এর আগেও অনেক বুজরুকের ভান্ডাফোড় করেছেন বলু ও তাঁর বউ জয়া। ওদের কী করতে হবে বুঝিয়ে দিলে ঠিকঠাক বের করে আনবে।

বলুর শরীরী ভাষা যা বুঝিয়েছে, জয়া গাঙ্গুলী তাই বলেছেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হল এই যে—বিশ্বের বিস্ময় মাতাকে বলুর মতো একজন অকিঞ্চিৎকর মানুষ ইচ্ছে মতো চালিয়েছে!

সব হল। কিন্তু জ্যোতি মুখার্জির ব্যাপারটা কী হল? ওখানেও কি কিছু কারিকুরি করা হয়েছিল? হ্যাঁ হয়েছিল। তবে সেটা ছিল একটা ছোট্ট এবং সূক্ষ্ম চাল।

আমাদের সমিতির সদস্যা প্রিয়াংকা। তখন প্রিয়াংকা ক্লাস টুয়েলভ-এ পড়ে। তাকে দিয়েই চালটা দেওয়া হয়েছিল। অলৌকিক মাতা জ্যোতি মুখার্জির হাত দেখছেন। সঙ্গে কথাও বলছেন প্রচুর। সম্ভবত কথা বলে মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করছেন। মিনিট তিরিশ কেটে গেল। উঠে দাঁড়াল প্রিয়াংকা। পরনে স্কার্ট। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। জ্যোতিদার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ঝোলা ব্যাগ থেকে একটা পাঁচশো এম এল জলের বোতল বের করল। বোতলটার ঢাকনি খুলে জ্যোতিদার হাতে ধরিয়ে দিল। জ্যোতি মুখার্জি ধরলেন। এবার প্রিয়াংকা একটা ওষুধ বের করে এগিয়ে দিল জ্যোতি মুখার্জির দিকে। সঙ্গে একটা ছোট্ট ডায়লগ, “এই নাও। খেয়ে নাও।”

জ্যোতিদা গলায় জল ঢাললেন। ট্যাবলেটটা মুখে ফেললেন। গিললেন। প্রিয়াংকাকে জলের বোতলটা ফেরত দিলেন। প্রিয়াংকা ফিরে এসে আবার বসল।

এইতেই যা চাইছিলাম, তাই হল। যেমনটা চাইছিলাম, জয়া তেমনটাই বললেন। কারণ জয়া এমন স্বাভাবিক অভিনয় দেখে ক্লিন বোল্ড। ধরেই নিয়েছিলেন প্রিয়াংকা নির্ঘাত জ্যোতি মুখার্জির মেয়ে। তারপর যা হবার তাই হল।

একে আমরা কী বলব? বিস্ময়কর মাতা’র বিস্ময়কর পরাজয় ?

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!