সাধু-সজ্জনরা বলেন যে, জগত অনিত্য। অর্থাৎ জগত বা জগতের মধ্যে “চিরস্থায়ী” বলে কিছুই নেই। আর বিজ্ঞানীরা বলেন যে, সৃষ্টি বৈচিত্রের মূলে রয়েছে পরিবর্তন বা বিবর্তন। বিবর্তনের মাধ্যমে চলেছে পুরাতনের ঝাড়া-ছাটা, হচ্ছে নিত্যনূতনের আবির্ভাব, জগত চলেছে ক্রমোন্নতির পথে এগিয়ে। মানুষের মনের বিশ্বাস (ঈমান)টাও পরিবর্তনশীল। আশৈশব একই বিষয়ের ওপর বিশ্বাস রাখা চলে না। যদি কেহ রাখতে পারেন তিনি ত মানুষের মত মানুষ। কিন্তু আমি পারিনি।

শৈশবে মা বলেছেন যে, পুকুরে কুমীর, বাগানে বাঘ ও কবরখোলায় ভূত থাকে, ও সব জায়গায় যেও না। উহা বিশ্বাস করেছি। কিন্তু ছেলে বয়সে করিনি। তখন বুঝেছি যে, ও সব মিথ্যে কথা। যেহেতু তখন (প্রথম বড়দের সাথে, পরে একা একা) ওসব জায়গায় হামেসা গিয়েছি। কিন্তু দেখতে পাইনি ও সব কিছুই।

কৈশোরে নানাবিধ রূপকথা-উপকথায় বিশ্বাস করতাম। যখন শোনতাম- “হাজার মনের গদা নিল ভীমসেন, আশিমণ খানা খায় সোনাবান বিবি” ইত্যাদি। তখন উহা বিশ্বাস করতাম এবং মনে মনে বলতাম- “বাপরে কি সাধ্য ছিল ওদের! আর আমরা এখন কোথায়”? এভাবে চলতে থাকলে একদা- “বেগুন তলায় হাট মেলবে, “তাও বিশ্বাস করতাম। কিন্তু যৌবনে ওসব বিশ্বাস করিনি, তখন মনে করেছি- “ধ্যোৎ, ওসব বাজে কথা, কথকের কল্পনা সৃষ্টি।“

যৌবনে বিশ্বাস রেখেছি ধর্মীয় আখ্যানগুলোর ওপর। যথা- গণেশের গজ মুন্ড রাবনের দশমুন্ড, ঈসা নবী খোদার ছেলে, খোয়াজখেজের (আঃ) জলে বাস করেন ইত্যাদি। বিশ্বাস করেছি- যেহেতু এগুলো ধর্মগ্রন্থের অনুমোদন প্রাপ্ত, বিশ্বাস করতেই হবে। তাই পুথিগানের আসরে ওগুলোকে নিয়ে নানা সুরে কীর্তন করছি।

হিন্দু, মুসলিম ও খৃষ্টানাদির ধর্মোপখ্যানগুলো পড়ে পড়ে আমার মনে কতিপয় ধাঁধাঁর সৃষ্টি হচ্ছিল। কেননা ওতে এমন কতগুলো বাহিনী আছে, বিশেষতঃ প্রকৃতি সম্বন্ধে; যা একান্তই অবাস্তব। তবে বাস্তবের সন্ধান না পেলে অবাস্তবকেই আঁকড়ে থাকতে হয়। কিন্তু তাতে বিশ্বাসটা অনাবিল হয় না, কিন্তু সন্দেহের আবিল মিশ্রিত থাকে। দিন-রাত, জোয়ার-ভাটা, শীত-গ্রীষ্ম, বজ্র-বৃষ্টি ইত্যাদি এবং এজাতের আরো বহু বিষয় আছে, যা আমার ধাঁধাঁর অন্তর্গত।

১৩৩৫ সালের শেষার্ধ হ’তে আমি উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ের পাঠ্য পুস্তক গুলো নিয়মিত অধ্যয়ন করে এ বছর এসেছি দশম শ্রেণীর পাঠ্যে। পাঠ্য গুলোর যাবতীয় বিষয়ের মধ্যে আমার মনকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে বিজ্ঞান, বিশেষতঃ প্রকৃতি বিজ্ঞান। ও সব পড়ে ওতে আমার অনেক গুলো ধাঁধাঁর সমাধান পেলাম, কিন্তু তা ধর্মীয় মতের বিপরীত, বাস্তব মুখী।

আমার মন যেন বিজ্ঞানের সমাধান মেনে নিতে চাইল। বস্তুতঃ- “চাইল” না, “বাধা হল”। মন তার নিজের গরজে বা সখ করে অথবা খাম খেয়ালী রূপে কোন কিছু বিশ্বাস করে না, করতে পারে না। বিশ্বাস্য বিষয়টির যুক্তির সাহায্যে চেপে ধরে মনকে তা বিশ্বাস করায়। এ ছাড়া আর এক ধরণের সহজ বিশ্বাস আছে, তাকে বলা হয় “অন্ধ বিশ্বাস”, ওতে কোন যুক্তি তর্কের বালাই নেই। আমার মন হল যুক্তিনির্ভর বিশ্বাসে বিশ্বাসী। নানাবিধ সমস্যার সমাধানে যুক্তিভিত্তিক সমাধান সমূহ আমার মনোপূত হচ্ছিল। তাই ক্রমে আমি হয়ে ওঠলাম যুক্তিবাদী।

শিশুরা সাধারণতঃ মাকেই ভালবাসে। কিন্তু এমন মা-ও আছেন, যিনি উগ্র স্বভাবী, রুক্ষ ভাষী ও অলস প্রকৃতি; সর্বদা রাগিয়াই থাকে। শিশু হয়ত মলত্যাগ করে বকুনী খায়, দুধ চেয়ে খায় চড়। এমতাবস্থায় শিশু দাদা-দাদী, ভাই-বোন বা অন্য কাউকে ভালবাসে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শিশুকে সর্বদা তুষ্ট রাখে, তাকেই ভালবাসে। আমার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা পূরণ বা মনের খোরাকী দান করেছে ও করছে বিজ্ঞান। তাই আমি বিজ্ঞানে বিশ্বাসী, বিজ্ঞানকে ভালবাসি, ভালবাসি- যে কোন যন্ত্রপাতি দেখতে, বোঝাতে, কোন আবিষ্কার কাহিনী শুনতে ও পড়তে, নিজ হাতে কলকব্জা গড়তে।

কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

নিবেদন

ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড

চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)

ছবি ও জলের কল (১৩২২)

মুন্সি আহম্মদ দেওয়ান (১৩২৩

পলায়ন (১৩২৪)

মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)

আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)

চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)

জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)

ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)

জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)

বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)

উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)

জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড

জাল বোনা ও মৎস্য শিকার

মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)

মোসলেম সমিতিরঃ ভাঙ্গন

পাঠাগার স্থাপন (১৩৩৭)

পাখা তৈয়ার (১৩৩৯)

ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)

সীজের ফুল রচনা (১৩৪০)

বিশ্বাসের বিবর্তন (১৩৪১)

ডাইনামো তৈয়ার (১৩৪১)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড

কৃষি বিদ্যা শিক্ষা 

জলঘড়ী তৈয়ার

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা 

সাইক্লোন

দুর্ভিক্ষ

অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে

লাল গোলা যাতায়াত

ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড

“ক্ষেত্র-ফল” রচনা

স্টেট বাটারা

আদেশাবলী

“সৃষ্টি – রহস্য” রচনা

“সত্যের সন্ধান” এর পান্ডুলিপ

সত্যের সন্ধান প্রকাশ

সন্তান-সন্ততি

ভূসম্পত্তি

দেশ সেবা

খোরাক-পোসাক

জীবন বাণী

“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒অভিযোগ বা মন্তব্য⇐

 

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x