শ্লোকঃ ২০

দ্যাবাপৃথিব্যোরিদমন্তরং হি

ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্বাঃ ।

দৃষ্ট্বাদ্ভুতং রূপমুগ্রং তবেদং

লোকত্ৰয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্ ॥ ২০ ॥

দ্যৌ — দ্যুলোক; আপৃথিব্যাঃ— পৃথিবীর; ইদম্—এই অন্তরম্—মধ্যস্থল হি অবশ্যই: ব্যাপ্তম্–ব্যাপ্ত তুয়া — তোমার দ্বারা, একেন—একমাত্র; দিশঃ দিক, চ এবং; সর্বাঃ—সমস্ত; দৃষ্টা— দেখে; অদ্ভুতম্ — অদ্ভুত; রূপম্ রূপ উগ্রম্— ভয়ংকর, তব—তোমার, ইদম্—এই, লোকত্রয়ম্ – ত্রিলোক, প্রবাধিতম্ ব্যথিত হচ্ছে; মহাত্মন—হে মহাত্মন।

গীতার গান

পৃথিবী বা অন্তরীণে,     বাহিরে ভিতরে মধ্যে,

যত দিগ্‌-দিগন্তের দেশ।।

দেখিয়া তোমার রূপ,     মহান যে বিশ্বরূপ,

যাহা হয় অদ্ভুত দর্শন।

হয়েছে দেখিয়া ভীত,     ত্রিভূবনে যে ব্যথিত,

সব লোক শুন মহাত্মন ।।

অনুবাদঃ তুমি একাই স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী অন্তরীক্ষ ও দশদিক পরিব্যাপ্ত করে আছ। হে মহাত্মন্! তোমার এই অদ্ভুত ও ভয়ংকর রূপ দর্শন করে ত্রিলোক অত্যন্ত ভীত হচ্ছে।

তাৎপর্যঃ এই শ্লোকে দ্যাবাপৃথিব্যাঃ (স্বর্গ ও মর্ত্যলোকের মধ্যবর্তী স্থান) ও লোকত্রয়ম্ (ত্রিভুবন) কথা দুটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কেবল অর্জুনই ভগবানের বিশ্বরূপ দর্শন করেননি, অন্যান্য গ্রহলোকের অধিবাসীরাও তাঁর সেই রূপ দর্শন করেছিলেন। অর্জুনের এই বিশ্বরূপ দর্শন স্বপ্ন নয়। ভগবান যাঁদেরকে দিব্যদৃষ্টি দান করেছিলেন, তাঁরা সকলেই যুদ্ধক্ষেত্রে সেই বিশ্বরূপ দর্শন করেছিলেন।

শ্লোকঃ ২১

অমী হি ত্বাং সুরসঙ্ঘা বিশন্তি

কেচিদ্ ভীতাঃ প্রাঞ্জলয়ো গৃণন্তি ৷

স্বস্তীত্যুক্তা মহর্ষিসিদ্ধসঙ্ঘাঃ

স্তবস্তি ত্বাং স্তুতিভিঃ পুষ্কলাভিঃ ॥ ২১ ৷৷

অমী ঐ সমস্ত; হি—অবশ্যই; ত্বাম্—তোমাকে, সুরস্যাঃ— দেবতারা, বিশন্তি- প্রবেশ করছেন; কেচিৎ — কেউ কেউ; ভীতা: — ভীত হয়ে প্রাঞ্জলয়ঃ — করজোড়ে: গুণন্তি—গুণ বর্ণনা করছেন; স্বস্তি — শান্তিবাক্য; ইতি—এভাবে; উত্ত্বা—বলে; মহর্ষি – মহর্ষিগণ, সিদ্ধসাঃ– সিদ্ধগণ, স্তবন্তি- —স্তব করছেন; ড্রাম — তোমাকে, স্তুতিভিঃ—স্তুতির দ্বারা; পুষ্কলাভিঃ— বৈদিক মন্ত্র।

গীতার গান

ঐ যে যত দেবগণ,     লইতেছে যে শরণ,

কেহ বা হয়েছে ভীত মনে ৷

স্তব করে জোড় হাতে,     মহর্ষির সে সন্ততি,

স্বস্তিবাদ সকলে বাখানে।।

অনুবাদঃ সমস্ত দেবতারা তোমার শরণাগত হয়ে তোমাতেই প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ ভীত হয়ে করজোড়ে তোমার গুণগান করছেন। মহর্ষি ও সিদ্ধের ‘জগতের কল্যাণ হোক’ বলে প্রচুর স্তুতি বাক্যের দ্বারা তোমার স্তব করছেন।

তাৎপর্যঃ ভগবানের বিশ্বরূপের এই ভয়ংকর প্রকাশ এবং তার প্রচণ্ড জ্যোতি দর্শন করে সমস্ত গ্রহলোকের দেব-দেবীরা ভীত হয়ে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করতে থাকেন।

শ্লোকঃ ২২

রুদ্রাদিত্যা বসবো যে চ সাধ্যা

বিশ্বেহশ্বিনৌ মরুতশ্চোষ্মপাশ্চ ।

গন্ধর্বযক্ষাসুরসিদ্ধসঙ্ঘা

বীক্ষন্তে ত্বাং বিস্মিতাশ্চৈব সৰ্বে ।। ২২ ।।

রুদ্র—রুদ্র; আদিত্যঃ – আদিত্যগণ, বসব ঃ— বসুগণ; যে যে সমস্ত: চ―এবং সাধ্যাঃ— সাধাগণ, বিশ্বে বিশ্বদেবগণ, অশ্বিনৌ— অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মরুতঃ- মরুতগণ; চ—এবং; উম্মপাঃ পিতৃগণ, চ–এবং গন্ধর্ব — গন্ধর্বাণ, যক্ষ— যক্ষগণ, অসুরসিদ্ধস্যাঃ— অসুরগণ ও সিদ্ধগণ, বীক্ষন্তে – দর্শন করছেন: স্বাম্–তোমাকে; বিস্মিতাঃ—বিস্ময়যুক্ত হয়ে ৮–৩; এর অবশ্যই সর্বে—সকলে।

গীতার গান

রুদ্র আর যে আদিত্য,     বসু আর যত সাধ্য,

অশ্বিনীকুমার বিশ্বদেব।

মরুত বা পিতৃলোক,     গন্ধর্ব বা সিদ্ধলোক,

দেখিতে আসিয়াছে সে সব।।

অনুবাদঃ রুদ্রগণ, আদিত্যগণ, সাধ্য নামক দেবতারা, বসুগণ, বিশ্বদেবগণ, অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মরুতগণ, পিতৃগণ, গন্ধবগণ, যক্ষগণ, অসুরগণ ও সিদ্ধগণ সকলেই বিস্মৃত হয়ে তোমাকে দর্শন করছে।

error: Content is protected !!