শ্লোকঃ ১৭
কিরীটিনং গদিনং চক্রিণং চ
তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্ ।
পশ্যামি ত্বাং দুর্নিরীক্ষ্যং সমন্তাদ
দীপ্তানলার্কদুতিমপ্রমেয়ম ।। ১৭ ।।
কিরীটিনম্—কিরীটযুক্ত; গদিনম—গদাধারী; চক্রিণম্— চক্রধারী, চ-এবং, তেজোরাশি— তেজঃপুঞ্জ -স্বরূপ; সর্বতঃ—সর্বত্র, দীপ্তিমন্তম্-দীপ্তিমান; পণ্যামি— দেখছি; তাম্—তোমাকে; দুর্নিরীক্ষাম্ — দুর্নিরীক্ষ্য, সমন্তাৎ — সবদিকে, দীপ্তানল- প্রদীপ্ত অগ্নি, অর্ক—সূর্যের দ্যুতিম— দ্যুতি; অপ্রমেয়ম্ — অপ্রমেয়।
গীতার গান
কিরীট যে চক্র গদা, রাশি রাশি তেজপ্রদ,
দীপ্তমান দেখিতেছি সব ।
দেখিতে দুরূহ সেই, প্রদীপ্ত উজ্জ্বল যেই,
দীপ্ত অগ্নি সূর্য দ্যুতি সম।।
অনুবাদঃ কিরীট শোভিত, গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র দীপ্তিমান, তেজঃপুঞ্জ-স্বরূপ, দুর্নিরীক্ষ্য, প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্যের মতো প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরূপ তোমাকে আমি সর্বত্রই দেখছি।
শ্লোকঃ ১৮
ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং
ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম।
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা
সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে ৷৷ ১৮ ॥
জম্—তুমি, অক্ষরম্—ব্রহ্ম, পরমম্ পরম; বেদিতব্যম্ — জ্ঞাতব্য; জন — তুমি; অস্য-এই; বিশ্বস্য-বিশ্বের; পরম্পরম; নিধানম্ — আশ্রয়, জ্বম্ — তুমি; অব্যয়ঃ—অব্যয়; শাশ্বতধর্মগোপ্তা – সনাতন ধর্মের রক্ষক, সনাতনঃ— নিত্য; ত্বম্— তুমি: পুরুষঃ—পরম পুরুষ; যতঃ মে–আমার মতে।
গীতার গান
তুমি যে অক্ষর তত্ত্ব, বুঝিবার যোগ্য তথ্য,
এ বিশ্বের পরম আশ্রয় ৷
সনাতন ধর্মরক্ষা, সনাতন পুরুষাখ্যা,
তুমি হও অনন্ত অব্যয় ॥
অনুবাদঃ তুমি পরম ব্রহ্মা এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ। এই আমার অভিমত।
শ্লোকঃ ১৯
অনাদিমধ্যান্তমনন্তবীর্যম
অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্ ।
পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্রং
স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্ ॥ ১৯ ৷৷
অনাদিমধ্যাত্ত— আদি, মধ্য ও অন্তহীন অনন্ত — অন্তহীন; বীর্য — বীর্যশালী; অনন্ত—অন্তহীন; বাহুম্—বাহু, শশি—চন্দ্র; সূর্য—সূর্য, নেত্রম্— চক্ষুদুয়; পশ্যামি — দেখছি; ত্বাম্ — তোমাকে; দীপ্ত — প্রজ্বলিত, হুতাশবক্রম — অগ্নিতুল্য মুখবিশিষ্ট; স্বতেজমা—স্বীয় তেজ দ্বারা, বিশ্বম্—জগৎ, ইদম্—এই, তপস্তম্ — সন্তাপকারী।
গীতার গান
তব আদি অন্ত নাই, মধ্যের কি কথা তাই,
তুমি হও সে অনন্ত বীর্য ।
তোমার বাহু মহান, চন্দ্র-সূর্য নেত্রবান,
তোমার হুতাশ দীপ্ত বক্র।।
নিজ তেজ রাশি দ্বারা, তপ্ত কর বিশ্ব সারা,
ব্যাপ্ত তোমার সর্বত্র তেজ।
অনুবাদঃ আমি দেখছি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নেই। তুমি অনন্ত বীর্যশালী অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট এবং চন্দ্র ও সূর্য তোমার চক্ষুদ্বয়। তোমার মুখমণ্ডলে প্র অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছে।
তাৎপর্যঃ পরম পুরুষোত্তম ভগবানের ষড়ৈশ্বর্যের কোন সীমা নেই। এখানে এবং বহু স্থানে তার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। কিন্তু শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণের কীর্তির পুনরাবৃত্তি করলে, তা সাহিত্যগত দুর্বলতা হয় না। কথিত আছে যে, মোহাচ্ছন্ন বা আশ্চর্যান্বিত হলে অথবা পুলকিত হলে মানুষ একই কথার বারবার পুনরাবৃত্তি করে। সেটি দূষণীয় নয়।