‘সংস্কৃতি’ শব্দটি বয়সে অতি নবীন। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও বাংলা শব্দ হিসেবে ‘সংস্কৃতি’ কেউ ব্যবহার করেছেন কি না, সন্দেহ। এই সন্দেহ শুধুমাত্র আমাতেই দানা বাঁধেনি, এই একই সন্দেহের কথা সোচ্চারে উচ্চারণ করেছেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘সংস্কৃতি শিল্প ইতিহাস’ গ্রন্থে। কিছু বছর আগে পর্যন্ত ‘Culture’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত ‘কৃষ্টি’ শব্দটি।

‘কৃষ্টি’র মূলগত অর্থ ‘কর্ষণ-কার্য’। চাষ অর্থেই ‘কৃষ্টি’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় ব্যবহৃত হয়, ‘Culture’ অর্থে নয়। তাই রবীন্দ্রনাথ ‘কৃষ্টি’ শব্দটিকে গতানুগতিক ভাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বটে, কিন্তু শব্দটি সম্বন্ধে তাঁর একটু অস্বস্তি ছিল। ১৯২২ সালে সুনীতিকুমার প্যারিসে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর এক মহারাষ্ট্রীয় বন্ধুকে ‘Culture’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুনে সুনীতিকুমারের খুবই মনে ধরে শব্দটি এবং বাংলা শব্দের জগতে একটি নতুন শব্দের সংযুক্তি-সম্ভাবনার কথা ভেবে তিনি আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এমন উচ্ছ্বাস দর্শনে বিস্মিত সুনীতিকুমারের বন্ধু জানান – Culture-এর প্রতিশব্দ হিসেবে মারাঠী ভাষায় ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯২২ সালেই সুনীতিকুমার দেশে ফিরে এসে— ‘Culture’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রবীন্দ্রনাথ Culture-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সংস্কৃতি’ শব্দটির ব্যবহার ‘কৃষ্টি’ শব্দের চেয়ে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে অনুমোদন জ্ঞাপন করেন।

যদিও তার পরেও দীর্ঘ বছর ‘সংস্কৃতি’র চেয়ে ‘কৃষ্টি’ শব্দটি বাংলা ভাষায় বেশি ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। আজ কিন্তু ‘কৃষ্টি’র সেই সুদিন আর নেই। কৃষ্টির জায়গা দখল করেছে ‘সংস্কৃতি’।

এ তো গেল ‘সংস্কৃতি’ শব্দের বাংলা শব্দ জগতে প্রবেশের বৃত্তান্ত। বিগত কিছু বছরের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাব ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি আজ নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে বাংলা শব্দ জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। তবু এরপরও সত্যের খাতিরে বলতেই হয়, যতই ব্যবহারে ব্যবহারে ব্যবহৃত হতে হতে সংস্কৃতি শব্দটি প্রচলিত হয়ে উঠুক না কেন, শব্দটির প্রকৃত অর্থ আজও এক আজব ঘেরাটোপে বন্দি হয়েই রয়েছে।

‘সংস্কৃতি’,‘লোকসংস্কৃতি’,‘জাতীয়সংস্কৃতি’,‘সাংস্কৃতিক-সংস্থা’,‘সাংস্কৃতিক- আন্দোলনকর্মী’,‘সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশ’, ‘সাংস্কৃতিক-বিপ্লব’,‘অপ-সংস্কৃতি’ বা ‘অ-সংস্কৃতি’ ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে শিক্ষার সুযোগ পাওয়া বাঙালিরা যতটা পরিচিত, সম্ভবত প্রায় ততটাই এই শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ তাঁদের কাছে অ-ধরাই থেকে গেছে। সাধারণ বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা ‘সংস্কৃতিবান’ বলতে সমাজের সেইসব মানুষকেই চিহ্নিত করেন, যাঁরা সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, নাট্যকলা, নৃত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি কোনও এক বা একাধিক বিষয়ে জানেন-বোঝেন; অথবা এই ধরনের চারুকলার কোনও একটি বিষয়ের সঙ্গে নিজের কর্ম-জীবন জড়িয়ে গেছে জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই। আবার যাঁরা ঘর সাজাতে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করেন বাঁকুড়া কী গোয়ার পোড়ামাটির কাজ, মধুবনীর চিত্রকলা, ডোকরার মূর্তি, পটের ছবি, ছৌ-নৃত্যের মুখোশ বা প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর অথবা ভাস্করের চিত্র বা মূর্তি, তাঁদের ওপর ‘সংস্কৃতিবান’-এর তকমা সেঁটে দিই আমরা। সমাজের একটি শ্রেণিকে আমরা যেমন এই ধরনের বিচারের মাধ্যমে ‘সংস্কৃতিবান’ হিসাবে চিহ্নিত করি, একই ভাবে সমাজের আর একটি শ্রেণিকে ‘অসংস্কৃত’ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের অমার্জিত রুচির মানুষ বলেই বোঝাতে চাই।

কিছু মানুষ সংস্কৃতি

সম্পন্ন এবং কিছু মানুষের

সংস্কৃতি নেই—এই ধারণাটি প্রচলিত

হলেও অবশ্যই ভ্রান্ত।

মানুষ অস্ত্র বানিয়েছে, শিকার করেছে, পশুকে গৃহপালিত করেছে, আগুনের ব্যবহার শিখেছে, শিখেছে চাষবাস করতে। মৃৎপাত্র বানিয়েছে, ভাষা সৃষ্টি করেছে সৃষ্টি করেছে লিপির। এসেছে যুক্তি, বিজ্ঞান, জ্ঞান, বিদ্যা। প্রকৃতির শক্তির কাছে অসহায় মানুষ প্রকৃতির শক্তিকে ভয় করেছে, শ্রদ্ধা করেছে। জল, ঝড়, বজ্র, বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, আগুন, পাহাড়-পর্বত, আকাশ, মাটি সমস্ত কিছুকে বসিয়েছে দেবত্বের আসনে। সূর্য, চন্দ্র, বৃহস্পতি, শনি প্রভৃতি জড় নক্ষত্র ও গ্রহগুলো পূজিত হয়েছে জীবন্ত দেবতা হিসেবে। মানুষের জীবনে সম্পদ হিসেবে প্রবেশ করেছে বৃক্ষ, অরণ্য, গরু, ছাগল, শুয়োর এবং আরও নানা গৃহপালিত পশু। এইসব সম্পদই পূজিত হয়েছে দেবতা হিসেবে। বন থেকে সম্পদ সংগ্রহের সময় শক্তিমান পশুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে, তাদের তুষ্ট করতে পুজো করেছে পরম ভক্তি ভরে, পুজো করেছে বনকেও। অসুখ-বিসুখ থেকে বাঁচতে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা দেব-দেবীর, পুজো করা হয়েছে তাদের। মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে। গোষ্ঠীর শক্তিমান ও বুদ্ধিমানকে বরণ করেছে নেতার পদে। শক্তিমান হয়েছে শাসক, বুদ্ধিমান হয়েছে ধর্মীয় নেতা। শক্তিমান ও বুদ্ধিমানেরা মিলিত ভাবে শুরু করল ক্ষমতার মধুপান করতে। সময় এগিয়েছে। বাড়ি-ঘর, রাস্তা, যানবাহন তৈরি হয়েছে, গড়ে উঠেছে কল-কারখানা, এগিয়েছে বিজ্ঞান। এগিয়ে গেছে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্যকলা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদি চারুকলা । মনের খোরাক জোগাতে আপন তাগিদে মানুষ গড়ে তুলেছে ক্লাব, সমিতি । চারুকলা ও ক্রীড়া উভয়কেই এগিয়ে নিয়ে গেছে এইসব ক্লাব বা সমিতি। রাষ্ট্রশক্তিও এ-বিষয়ে পিছিয়ে থাকেনি। অন্ধবিশ্বাস, জ্ঞান, চারুকলা, খেলাধুলো-এই সব কিছু নিয়েই সংস্কৃতি। এ-সবই একটি রাষ্ট্রের অধীন মানুষের সংস্কৃতি, জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। অর্থাৎ মানুষের সৃষ্ট সব কিছুই হল সংস্কৃতি।

একটি জনগোষ্ঠীর তৈরি জীবনযাত্রার প্রণালী, ছক, আচরণবিধি, অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক, ভাষা, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংগীত, অবসর যাপনের পদ্ধতি, বিবাহের আচার-অনুষ্ঠান, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম-বিশ্বাস, সামাজিক উৎসব, সামাজিক বন্ধন ও সামাজিক বিচার পদ্ধতি সবই ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মধ্যে যুক্তিযুক্ত এবং যুক্তিবিরোধী, ভালো, খারাপ, জ্ঞান এবং অজ্ঞানতা সবই থাকতে পারে, মিলে-মিশেই থাকতে পারে, এবং থাকেও ৷

শহর কলকাতার অভিজাত এলাকার মানুষদের যেমন সংস্কৃতি আছে, তেমনই বাঁকুড়ার হত-দরিদ্র, নিরন্ন, নিরক্ষর মানুষগুলোরও রয়েছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি আর চারুকলাকে যাঁরা সমার্থক বলে মনে করেন, তাঁরা অবশ্যই ভ্রান্ত চিন্তার শিকার। এমন ভ্রান্ত চিন্তার দ্বারা বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি প্রভাবিত হওয়ার কারণ, এমন চিন্তা উৎসারিত হয়েছিল বিদগ্ধ মনীষী রবীন্দ্রনাথের মস্তিষ্ক থেকে। ‘রবীন্দ্রনাথের চিন্তা মানেই অভ্রান্ত’ এমনই এক গণহিস্টিরিয়াগ্রস্তের মতো ধারণার ফলে, ‘সংস্কৃতি’ বিষয়ক রবীন্দ্রনাথের ভ্রান্ত চিন্তা বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বহুকেই বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে।

রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে

‘ব্যক্তিপূজার’ প্রাবল্য এতই অমোঘ

যে বুদ্ধিজীবীরাও এ-ক্ষেত্রে ক্ষণিকের তরে যুক্তিকে ছুটি দিয়ে

হাঁফ ছাড়েন। তখন একবারের জন্যেও ভাবতে

চান না—যুক্তির কাছে ব্যক্তি-

বিশ্বাস মূল্যহীন।

যুক্তি চলবে সংগৃহীত তথ্য ও পরীক্ষিত সত্যের ওপর নির্ভর করে। রবীন্দ্রনাথ প্ল্যানচেটে বিশ্বাস করলেন, কি করলেন না, তার ওপর কখনওই প্ল্যানচেটের বাস্তব অস্তিত্বের থাকা না থাকা নির্ভরশীল হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মসংগীতের ওপর নির্ভর করে প্রমাণিত হয় না পরমব্রহ্মের অস্তিত্ব। বরং রবীন্দ্রনাথের এইসব বিশ্বাস দ্বারা এটুকুই প্রমাণিত হয়— তাঁরও চিন্তার সীমাবদ্ধতা ছিল।

আর এমনই এক রবীন্দ্রচিন্তার সীমাবদ্ধতার জ্বলন্ত উদাহরণ ‘সংস্কৃতি’ বিষয়ে তাঁর নিরূপিত ধারণা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সামাজিক পরিবেশ থেকে, তাঁর শ্রেণিচেতনা থেকে সংস্কৃতির এই অসংগত ধারণাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শিল্পই হচ্ছে আত্মসংস্কৃতি। সম্যক্ রূপদানই সংস্কৃতি, তাকেই বলে শিল্প। আত্মাকে সুসংযত করে মানুষ যখন আত্মার সংস্কার করে, অর্থাৎ তাকে দেয় সম্যক্ রূপ, সেও তো শিল্প। মানুষের শিল্পের উপাদান কেবল তো কাঠপাথর নয়, মানুষ নিজে। বর্বর অবস্থা থেকে মানুষ নিজেকে সংস্কৃত করেছে। এই সংস্কৃতি তার স্বরচিত ছন্দোময় শিল্প। এই শিল্প নানা দেশে, নানা কালে, নানা সভ্যতায়, নানা আকারে প্রকাশিত, কেননা বিচিত্র তার ছন্দ।’(‘ছন্দ’, রবীন্দ্ররচনাবলী, বিশ্বভারতী, ২১ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫২ )

রবীন্দ্রনাথ আরও লিখলেন, ‘… তার [মানুষের] সংস্কৃতির ক্ষেত্র সাহিত্যে, এখানে তার আপনারই সংস্কৃতি, সে তাতে আপনাকেই সম্যকরূপে করে তুলছে, সে আপনিই হয়ে উঠছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ তাই বলেছেন, আত্মসংস্কৃতিবার শিল্পানি”। (‘সাহিত্যের পথে’, রবীন্দ্ররচনাবলী, বিশ্বভারতী, ২৩ খণ্ড, পৃষ্ঠা 888) |

রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন লেখায়, বিশেষত সংস্কৃতি আলোচনা প্রসঙ্গে ঐতরেয় ব্রাহ্মণের বিশিষ্ট উক্তিকে টেনে এনেছেন—‘আত্মসংস্কৃতিবাব শিল্পানি’। আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনশাস্ত্রীর ক্ষুদ্র পুস্তিকা ‘ভারতের সংস্কৃতি’তে আছে ব্রাহ্মণ ঐতরেয়র কাহিনি। ঐতরেয়কে সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত করে তুলেছিলেন নাকি এই ধরিত্রীই, ঐতরেয় রচনা করেছিলেন ‘চরৈবর্তি’ মন্ত্র। যে মন্ত্রে আছে:

চরণ বৈ মধু বিপুতি চরণ স্বাদুমুদুম্বরম্ ।

সূর্যস্য পশ্য শ্রেমানং যো না তন্ত্রয়তে চরণ।।

চরৈবতি চরৈবতি।।

মন্ত্রের যে অনুবাদ ক্ষিতিমোহন করেছেন, এখানে তাই তুলে দিচ্ছি ‘চলাটাই হল অমৃতলাভ, চলাটাই তার স্বাদু ফল, দেখো ঐ সূর্যের আলোকসম্পদ, যে সৃষ্টির আদি হতে চলতে চলতে একদিনের জন্যও ঘুমিয়ে পড়েনি। অতএব এগিয়ে চলো, এগিয়ে চলো। (‘ভারতের সংস্কৃতি’; ক্ষিতিমোহন সেন, বিশ্বভারতী, পৃষ্ঠা-১৩)

রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি ধারণা বোধ ও কথাকে অমোঘ ও চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করার যে বিকট ব্যাধিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা আক্রান্ত তারই পরিণতিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সমাজ বিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের বিষয়ে চোখ বুজে থেকে ‘সংস্কৃতি’ বলতে গ্রহণ করছে রবীন্দ্রনাথের ভ্রান্ত বিশ্বাসকে। ফলে ‘সংস্কৃতি’কে আমরা করেছি একান্তই মানসিক অবস্থা বা ভঙ্গি অথবা কিছু ভান মাত্র। ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ বলতে আমরা নাচ-গান-আবৃত্তি-নাটক-মাইম-মূকাভিনয়-যন্ত্রসংগীত ইত্যাদিকেই বুঝি বলে এ সবেরই আসর বসাই ‘সাংস্কৃতিক’ অনুষ্ঠানে। এই বোঝার এবং এমন ধরনের আচরণের পিছনে রয়েছে ‘সংস্কৃতি’ সম্বন্ধে একটা খণ্ডিত ধারণা, একটা অস্বচ্ছ ধারণা, একটা ভ্রান্ত ধারণা— সংস্কৃতি মানে মার্জিত ব্যাপার-স্যাপার, শিষ্টাচার, ললিতকলা, চারুকলা ইত্যাদি।

‘সংস্কৃতি’ বলতে ভদ্র আচার, সহবত, ললিতকলাকে বোঝায় না, এমন ধরনের কথা বলছি না। নিশ্চয়ই বোঝায়। এ-সবও সংস্কৃতির অঙ্গ বটে, কিন্তু এ-সবই শেষ নয়। সংস্কৃতি আরও ব্যাপক, আরও বিস্তৃত, জীবনযাত্রার সঙ্গে আরও সম্পর্কিত। সংস্কৃতি শুধুমাত্র অবসর বিনোদনের উপায় নয়, চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্র নয়। এই বাস্তব সত্য রবীন্দ্র-প্রভাবিত হয়ে আমরা ভুলতে বসেছি বলেই ‘সংস্কৃতিবান’ বলতে চিহ্নিত করি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষকে, ধনীকে, সাহিত্যিককে, নাট্যকারকে, অভিনেতাকে, নাটক বা চলচ্চিত্রের পরিচালককে, সংগীত শিল্পীকে, চিত্র-শিল্পীকে। কোনও ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’-এ প্রধান অতিথি বা সভাপতির কোনও একটিতে এঁরা অপরিহার্য শোভাবর্ধনকারী। একই সঙ্গে আমরা অবহেলিত নিচুতলার মানুষদের চিহ্নিত করে বসি ‘অসংস্কৃত’ বিশেষণে ।

‘সংস্কৃতি’শব্দের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবিত করেছেন। বুদ্ধিজীবী প্রভাবিত, পাঠাভ্যাস নিয়ন্ত্রিত মধ্যবিত্ত বাঙালিরাও একই বোধ দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছেন। এইভাবে আমরা মানব সমাজের সংস্কৃতিকে খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ করে দেখি, এক ধরনের উচ্চ-নীচ সীমারেখা টেনে দেখি । আর তাইতেই কারো উদ্দেশ্যে মূর্খের স্পর্ধা নিয়ে নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করতে পারি— “লোকটার কোনও ‘কালচার’ নেই।”

এই প্রভাব থেকে ভাষাচার্য সুনীতিকুমারও নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। তাই ভাষাচার্যের কলম থেকেই উৎসারিত হয়, ‘পার্থিব বা ভৌতিক সভ্যতা তো বহু জাতির বা জনগণের মধ্যে আছেই; কিন্তু আমরা ক্রমে উপলব্ধি করতে পারলুম, ঘরবাড়ি যন্ত্রপাতি, সুসংবদ্ধ জীবন-রীতি—প্রভৃতির অতিরিক্ত আর একটা কিছু জাতির জীবনে পাওয়া যায়, যেটা তার বাহ্য সভ্যতার ভিতরের ব্যাপার রূপে প্রতিভাত হয়। সেটা একদিকে তার বাইরের সভ্যতার আভ্যন্তর প্রাণ বা অনুপ্রেরণা বটে, আর একদিকে তার বাহ্য সভ্যতার প্রকাশও বটে। সভ্যতার এই আভ্যন্তর অথচ তার বাইরেও প্রকাশমান এই অতিরিক্ত বস্তুটির নামকরণ হয়েছে ইংরেজি প্রভৃতি আধুনিক ইউরোপী ভাষায় Culture (জর্মান Kultur ‘কুলতুর’) শব্দ রূপে। আমরা মোটামুটি ভাবে বলতে পারি, একাধারে সভ্যতা-তরুর পুষ্প আর তার আভ্যন্তর প্রাণ বা মানসিক অনুপ্রেরণা যা, তা হ’চ্ছে Culture।’ (সংস্কৃতি শিল্প ইতিহাস, প্রকাশকাল ১৯৭৬, পৃষ্ঠা ৬)

ভাষাচার্য এ-কথাও বলেছেন, ‘ভারতের সত্যকার সংস্কৃতি, আমার মনে হয়, কতগুলি ভাবপুঞ্জ নিয়ে, যেগুলি একাধারে ভারতের বাহ্য সভ্যতার অনুপ্রেরণা-রূপে আর তার প্রকাশ-রূপেও বিদ্যমান।’ (ওই গ্রন্থেরই পৃষ্ঠা ১০)

বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ব্যাখ্যাকার নীহাররঞ্জন রায়, তাঁর ‘কৃষ্টি কাচার সংস্কৃতি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ Culture বলতে বুঝতেন শিল্পসাহিত্য ইত্যাদি, ভব্যতা, ভদ্রতা, চিত্তোৎকর্ষ, refinement ইত্যাদি; একান্ত জীবনধারণ ও জীবনযাপনের জন্য যে স্থূল দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম ও তার ফলশ্রুতি, তাকে তিনি ‘Culture’বলতে অনিচ্ছুক ছিলেন।” … ‘সুনীতিবাবুর সংস্কৃতি-সম্বন্ধীয় রচনাদি থেকে মনে হয়, তিনিও এই ধরনের মতই পোষণ করতেন।’ (পৃষ্ঠা ৮)

তাহলে সংস্কৃতির প্রকৃত ব্যাখ্যা কী হওয়া উচিত? তার সন্ধান দিতে গিয়ে নীহাররঞ্জন রায় লিখছেন, ‘মানুষ যখন মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়, তখন সেই মানবশিশুর সঙ্গে একটি পশুশাবকের কোনও পার্থক্য বড় একটা থাকে না । কিন্তু তার পর থেকেই মা-এর ও পরিবারের কোলে সে যখন বাড়তে থাকে, তখন খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, শোয়া, বসা, চলা থেকে পদে পদে স্তরে স্তরে তার সংস্কার সাধন চলতেই থাকে; বাল্য-কৈশোর-যৌবনের শিক্ষাদীক্ষাও সেই সংস্কারক্রিয়ারই অন্তর্গত। শরীরচর্চা, জ্ঞানচর্চা, শিল্পসাহিত্যচর্চা, গোষ্ঠী-সমাজ-রাষ্ট্রের সঙ্গে তার আদান-প্রদানক্রিয়া ইত্যাদিও তার নিজকে ক্রমশ উন্নততর, ক্রমশ বেশি সংস্কৃতি করবার অবিরাম প্রয়াস। যে-জীবন ছিল প্রকৃত অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মশাসিতমাত্র তাকে সজ্ঞান সচেতন চেষ্টায় বিচিত্র কর্মের বিচিত্রতর নিয়ম-সংযমের শাসনে ক্রমশ সংস্কৃত করে তোলা। তাছাড়া, জীবনের পথে চলতে চলতে সংসারের দৈনন্দিন কর্মের রথচক্রে নানা মালিন্য, নানা আবর্জনা জমতেই থাকে। মালিন্য ও আবর্জনা শুধু ধুলোবালি-কালি নয়, শুধু মৃত খড়কুটো নয়, অভ্যাসের মালিন্য আছে, অর্থবোধহীন আবৃত্তিরও আবর্জনা আছে, ব্যবহারে-ব্যবহারেও ক্ষয় আছে। সেজন্য প্রতিনিয়তই সজ্ঞান সচেতন চেষ্টা রাখতে হয় জীবনকে ক্ষয়, মালিন্য ও আবর্জনামুক্ত রাখবার জন্যে; এই সচেতন সজ্ঞান ক্রিয়াও সংস্কার-ক্রিয়া, এবং এই ক্রিয়ার যে ফললাভ ঘটে তাকেই তো আমরা বলি সংস্কৃতি।’ (কৃষ্টি কাচার সংস্কৃতি, প্রকাশ কাল ১৯৭৯, পৃষ্ঠা ১৮-১৯)

নীহাররঞ্জন রায়ের ‘সংস্কৃতি’র সংজ্ঞা রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র-প্রভাবিত- বুদ্ধিজীবীদের ধারণা থেকে আরও কিছুটা বিশ্লেষণ-ভিত্তিক হলেও তাঁর ধারণাও ছিল অসম্পূর্ণ, খণ্ডিত ৷

সংস্কৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের নতুনতত্ত্ব-ঘেঁষা এবং মধ্যবিত্ত-রুচি-নিয়ন্ত্রিত ধারণা থেকে আরো সার্বজনীন এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ-ভিত্তিক ধারণার দিকে যেতে চাইলে আমাদের আধুনিক নৃবিজ্ঞানীদের অর্থাৎ অ্যানথ্রোপলজিস্টদের দ্বারস্থ হতে হবে। নৃবিজ্ঞানে “সংস্কৃতি” বা Culture-এর সংজ্ঞা হল, ‘Culture is the man-made part of the environment.’ (Cultural Dynamics, New York. Alfred A. Konpf, 1966, page – 4 ) ।

ডঃ পবিত্র সরকার-এর কথায়, ‘সংস্কৃতি’র ব্যাপকতম এবং সবচেয়ে বিজ্ঞান সম্মত সংজ্ঞা হল—‘মানুষ আসার আগে পৃথিবী যে অবস্থায় ছিল, আর মানুষ আসার পর পৃথিবীর যে অবস্থা দাঁড়াল— এই দু’য়ের তফাতই হলো সংস্কৃতির তফাত। পৃথিবীর জীবনপ্রতিবেশে মানুষের সৃষ্টি যা কিছু সে সবই ‘সংস্কৃতি’, বাকিটা হল ‘প্রকৃতি’।’(লোকভাষা লোকসংস্কৃতি, প্রকাশকাল ১৯৯১, পৃষ্ঠা-১২)। সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষক গোপাল হালদারের কথায়, ‘মানুষের জীবন- সংগ্রামের সংস্কৃতিঃ সংঘর্ষ ও নির্মাণ-২ বা প্রকৃতির উপর অধিকার বিস্তারের মোট প্রচেষ্টাই সংস্কৃতি;’ … ‘জীবিকার প্রয়াসে মানুষ যেমন অগ্রসর হয় সংস্কৃতিরও তেমনই পরিবর্ধন ঘটে, পরিবর্জনও হয়, অর্থাৎ তার পরিবর্তন চলে।’ (সংস্কৃতির রূপান্তর, প্রকাশকাল ১৯৬৫, পৃষ্ঠা-৩৩) ওই গ্রন্থেরই ৪১ পৃষ্ঠায় শ্রীহালদার লিখছেন, ‘সংস্কৃতি বলিতে তাই শুধু যে ঘরবাড়ি, ধন-দৌলত, যানবাহন বুঝায় তাহাও নয়। … সংস্কৃতি বলিতে মানস-সম্পদও বুঝায়— চিন্তা, কল্পনা, দর্শন, ধ্যান-ধারণা, এই সবও বুঝায়, —তাহাও আমরা জানি। আসলে বাস্তব ও মানসিক সমস্ত ‘কৃতি’ বা সৃষ্টি লইয়াই সংস্কৃতি-মানুষের জীবন-সংগ্রামের মোট প্রচেষ্টার এই নাম।”

আর এক বিশিষ্ট সংস্কৃতি গবেষক পল্লব সেনগুপ্তের মতে ‘সংস্কৃতি শব্দের সীমানা সুদূরবিস্তৃত। সাধারণভাবে মনে করা হয়— সংস্কৃতি মানেই হল নাচ, গান, অভিনয়, চিত্র, ভাস্কর্য ইত্যাদি—প্রকৃতপক্ষে এই শব্দটির তাৎপর্য তার থেকে অনেক বেশি ব্যাপ্ত ।

সংস্কৃতির দুটি দিক : ব্যাবহারিক বস্তুসম্পদ এবং তার থেকে বিবর্তিত ভাবসম্পদ। বস্তুসম্পদের ভিত্তির ওপরই গড়ে ওঠে ভাবসম্পদ। ওপরে বিন্যস্ত দ্বিতীয় তালিকাটিকে যদি আলোচনার জন্য আবার হাজির করি, তাহলে সংস্কৃতির দুই প্রকরণেরই কিছু কিছু নমুনা দেখা যাবে। যেমন: খাদ্য পোশাক, ভাষা, খেলাধুলা, অঙ্গভঙ্গিমা, কিছু-কিছু আচরণবিধি ও পরিচর্যা পদ্ধতি-ইত্যাদিকে সরাসরিই বস্তুসম্পদের বিষয় বলে নির্দিষ্ট করা চলে। অন্যপক্ষে, ভাবসম্পদের উপজীব্য হল : শিল্প, সাহিত্য, নৃত্য, গীত, নাটক ইত্যাদি। সংস্কার, বিশ্বাস, অলৌকিকতার প্রত্যয় প্রভৃতি বিষয়কে সংস্কৃতির দুই প্রকরণের মধ্যে সাধারণ বা [‘কমন্’] উদাহরণ হিসাবেই ধরতে হয়। ….. সুতরাং জীবনের সর্ব-পর্যায়েই তার [সংস্কৃতির] অভিক্ষেপ।’ (লোক সংস্কৃতি গবেষণা, ৩য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা)।

  1. Felix Keesing Cultural Anthropology T ‘Culture’ শব্দটির সংজ্ঞা বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গ্রন্থের ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন এই বিষয়ে বিশ্বখ্যাত নৃবিজ্ঞানী Clyde Kluckhohn (ক্লাইড ক্লাকহোন) – এর মতামত। সেই মতে Culture বা সংস্কৃতি হল- ‘…all those historically created designs for living, explicit and implicit, rational, irration and non-rational which exist at any time as potential guides for the behaviour of man.” অর্থাৎ ‘সংস্কৃতি’ হল একটি জনগোষ্ঠীর বংশানুক্রমে জীবনযাপন প্রণালীর নানা ছক, যার কিছু প্রকাশ্য, কিছু অপ্রকাশ্য, কিছু যুক্তিযুক্ত, কিছু যুক্তিবিরোধী, যে ছকগুলি মানুষের আচরণবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষক বিনয় ঘোষের মতে, “কালচার ট্রে’ হল সংস্কৃতির প্রত্যেকটি মৌল পদার্থ ও উপাদান, যার নানারকমের সমাবেশে সংস্কৃতির বিশিষ্ট রূপমণ্ডল হয়। যেমন শিকার, চাষবাস, ঘরবাড়ি, দেবদাসী, দেবালয়, আচার-ব্যবহার প্রথা-সংস্কার ইত্যাদি স্বতন্ত্রভাবে এক-একটি মৌল সাংস্কৃতিক উপাদান।” (পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রকাশকাল ১৯৫৭, পৃষ্ঠা ৪৬)।

‘সংস্কৃতি’ বা ‘Culture’ মানুষ মাত্রেরই আছে—এরই প্রতিধ্বনি শুনি ক্লাইড ক্লাকহোন-এর কথায়। তার সোচ্চার ঘোষণা, “ to be human is to be cultured’ |

এই আলোচনাটুকুর মধ্য দিয়ে আমরা ‘সংস্কৃতি’ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট ধারণায় অবশ্যই পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। আমরা অবশ্যই অনুধাবন করতে পেরেছি, এতাবৎকাল প্রচলিত অতি জনপ্রিয় ‘সংস্কৃতি’র সংজ্ঞা বিষয়ক ধারণাটি ছিল খণ্ডিত, অস্বচ্ছ, ভ্রান্ত ৷

‘সংস্কৃতি’ বলতে চারুকলা বোঝালে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন চারুকলার উন্নতি বিষয়ক আন্দোলন বলেই মনে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু

‘সংস্কৃতি’ বলতে যেহেতু একটি মানবগোষ্ঠী বা সংস্কৃতিক

গোষ্ঠীর সামগ্রিক জীবনধারাকে বোঝায়, তাই সাংস্কৃতিক

আন্দোলন বলতে আমরা অবশ্যই একটি মানব-

গোষ্ঠী বা সংস্কৃতিক গোষ্ঠী জীবন

ধারার সুস্থ বিকাশের প্রতি

অগ্রগমনকেই বুঝব।

বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী Edward Sapir (এডওয়ার্ড সাপির)-এর ‘সংস্কৃতি’ বিষয়ক কিছু আলোচনায় এ-বার আমরা ঢুকছি। সাপির তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধের গ্রন্থে (Selected Writings of Edward Sapir. University of California Press) ‘সংস্কৃতি’ বা ‘কৃষ্টি’ শব্দের অর্থকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন ৷

একঃ মানুষের খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য সংগ্রহ, চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, বিজ্ঞান, চারুকলা সবই সংস্কৃতির উপকরণ। এই অর্থে মানুষ মাত্রেরই সংস্কৃতি রয়েছে, মানবগোষ্ঠী মাত্রেরই সংস্কৃতি আছে।

দুইঃ সংস্কৃতির দ্বিতীয় অর্থটি ব্যবহৃত হয় এই ভাবে—শিক্ষিত, মার্জিত, পোশাক-আশাক, কথা-বার্তায় রুচিবানকে ‘সংস্কৃতি সম্পন্ন’ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তিনঃ কোনও মানবগোষ্ঠী যখন নিজেদের একটি স্বতন্ত্র ‘জাতি’ বলে ভাবতে শুরু করে এবং নিজেদের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো সম্পর্কে অসংখ্য বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে একটি ‘জাতিস্বভাব’ বা ‘জাতিচরিত্র’ গড়ে ওঠে, তাও জাতীয়-সংস্কৃতি বলে বিবেচিত হয়। সাপিরের হাজির করা সংস্কৃতির প্রথম অর্থ বা ব্যাখ্যাটি যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাখ্যা আমাদের কাছে যুক্তিগ্রাহ্যতা লাভ করতে পারে না। সাপির দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সংস্কৃতির যে অর্থ হাজির করেছেন, তাতে শিক্ষিত, মার্জিতকে সংস্কৃতিবান বলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে গিয়ে আমরা কিন্তু শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত, প্রায় নগ্ন জারোয়াদের ‘সংস্কৃতিহীন’ বলে চিহ্নিত করার মতো ভুলটি করে বসতে পারি। আপনার চোখে জারোয়াদের যে সংক্ষিপ্ততম পোশাক অমার্জিত মনে হয়, জারোয়াদের চোখে তো তা হয় না? আমার পরিচিত এক বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী তাঁর একমাত্র পুত্রের বিয়ে দেওয়ার পর আমার কাছে আক্ষেপের সুরে পুত্রবধূর সম্পর্কে বলেছিলেন, “ওর সবই ভাল, কিন্তু এত রুচিহীন পোশাক পরে…..।” রুচিহীন পোশাকটি কী ? না, সালোয়ার-কামিজ, যা পাঞ্জাবিদের কাছে একান্তভাবেই মার্জিত রুচির পোশাক। অনেক প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী বাঙালিই হিন্দি লঘু সংগীতের ‘বোম্বাই বেলেল্লাপনা’ খুঁজে পান। জনপ্রিয় এইসব গানের বাণীতে, সুরে অনেক হিন্দিভাষী এমনকী অহিন্দিভাষীরাও প্রাণের আনন্দ খুঁজে পান। যাঁরা ধুতি-পাঞ্জাবিতেই বাঙালির সংস্কৃতি খুঁজে পান, তাঁরা ‘সংস্কৃতি’ ও ‘ঐতিহ্য’কে সমার্থক হিসেবে ভুল করেন। কিন্তু শুধু ধুতি-পাঞ্জাবিকেই কেন আমরা ‘ঐতিহ্য’ হিসেবে গ্রহণ করব? বাঙালির ঐতিহ্যময় পোশাক যেমন ধুতি-পাঞ্জাবি, তেমনই বাঙালির ঐতিহ্যে ছিল ধুতি-ফতুয়া, ধুতি-উত্তরীয়, শুধু ধুতি, ঊর্ধ্বাঙ্গের বস্ত্রহীনতা, এই সবই। শুধু ধুতি-পাঞ্জাবিকেই বাঙালির ঐতিহ্য বলে কেন চিহ্নিত করা হবে?

সাধারণভাবে আমরা শিক্ষিত, মার্জিত মানুষকে ‘সংস্কৃতিবান’বলে

চিহ্নিত করে থাকি। এমন চিহ্নিতকরণের পিছনে রয়েছে

আমাদের আজন্ম পালিত ‘সংস্কৃতি’র সংজ্ঞা বিষয়ে

ভ্রান্ত ধারণা, ফলে যাকে ‘সভ্য’ ‘বিদগ্ধ’

অর্থাৎ ‘civilized’ বলে চিহ্নিত করা

উচিত ছিল, তাকেই অজ্ঞতাবশে

‘সংস্কৃতিবান’ বলে চিহ্নিতকরণের

মতো অনুচিত কাজ

করে বসি।

সংস্কৃতির উপাদানের প্রগতিশীল দিকগুলির বিপুল উপস্থিতি ঘটলে তাকেই বলে ‘সভ্যতা’ বা civilization’। ‘গ্রিক সভ্যতা’, ‘সিন্ধু সভ্যতা’ ইত্যাদিকে যে অর্থে ‘সভ্যতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেই অর্থে অন্যান্য বহু অঞ্চলের সংস্কৃতিকেই কিন্তু ‘সভ্যতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। অর্থাৎ সাপির যে অর্থে সভ্য মানুষকে ‘সংস্কৃতিবান’ বলে চিহ্নিত করতে চাইছেন, তাতে ‘অ-বিদগ্ধ’ মানুষদের ‘সংস্কৃতিহীন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে যায় নিজের অজান্তেই, বে-খেয়ালে। এ-কথা আমাদের ভুলে থাকলে চলবে না, ‘অ-বিদগ্ধ’ মানুষেরও ‘সংস্কৃতি’ আছে, ‘সুসভ্য’ হিসেবে চিহ্নিত নয় এমন মানবগোষ্ঠীরও ‘সংস্কৃতি’ আছে।

সাপিরের তৃতীয় ব্যাখ্যাটি কিন্তু পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। মানবগোষ্ঠী ভাষা, ধর্ম বা দেশকে নিয়ে গড়ে উঠতে পারে। এই সূত্র ধরে আমরা যদি বলি ‘এক ভাষা এক সংস্কৃতি’, ‘এক ধর্ম এক সংস্কৃতি’, ‘এক দেশ এক সংস্কৃতি’ তবে তা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক হবে না। এই সরলীকৃত হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি কয়েকটি জটিল হিসেব। সেগুলো কী? সেই আলোচনাটুকু বরং আমরা সেরে ফেলি আসুন।

ভারতবর্ষে ‘ভাষা’, ‘ধর্ম’ অবশ্যই সংস্কৃতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক, কিন্তু অবশ্যই একমাত্র নিয়ন্ত্রক নয়। ভাষা, ধর্ম বা দেশকে ঘিরে যে ভাবেই আমরা মানবগোষ্ঠী বা সমাজকে চিহ্নিত করি না কেন, সেই সমাজের ধনী ও গরিবের মধ্যে, শোষক ও শোষিতের মধ্যে সংস্কৃতির বা কৃষ্টির পার্থক্য অবশ্যই দেখতে পাব আমরা। তাই তো বাংলা ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে ওঠা শিল্পপতি চন্দন বসুর সঙ্গে রসুলপুরের ভূমিহীন চাষি হারান মণ্ডলের সংস্কৃতির মধ্যে মিলের চেয়ে গরমিল ই বড় বেশি। চন্দন বসুর খাদ্য-পানীয়ের অভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদের রুচি, অবসর বিনোদনের পদ্ধতির সঙ্গে হারান মণ্ডলের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া ভার। একই ভাবে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না বিশিষ্ট সরোদবাদক আমজাদ আলির ও রাজাবাজারের গরিব ফল বিক্রেতা একরাম আলির সংস্কৃতিতে, যদিও দু’জনেই একই ধর্মগোষ্ঠীর মানুষ

ধনিক শ্রেণি ও দরিদ্র শ্রেণির সংস্কৃতির এই পার্থক্য গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক কারণে। এই শ্রেণি পার্থক্যের সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে আমরা বিবেচনার মধ্যে না আনলে ভুলই করব।

একইভাবে সাংস্কৃতিক পরিবেশই আবার সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টা বোধহয় আর একটু ব্যাখ্যা করলে আমাদের বোঝার পক্ষে সুবিধে হয়। ‘হোপ ৮৬’ শিরোনামে ৮৬ সালে বিশাল প্রচার ও বিশাল বাজেট নিয়ে রাজ্য সরকার পশ্চিমবাংলার রাজধানীর বুকে হাজির করেছিলেন চরম উত্তেজক, যৌন আবেদনে ভরপুর নাচ-গানের দারুণ হুল্লোড়। বম্বের চিত্র জগতের স্বপ্ন-সুন্দরীরা আলোর ঝল্কানির সামনে শরীরের যে ঝিলিক্ হেনে ছিলেন ঝট্‌কা-মট্‌কা নাচের ঝট্‌কানিতে; কোঁচা দুলিয়ে কোমর হেলিয়ে সুপারস্টার যে পাগলামো জাগিয়ে তুলেছিলেন দর্শকদের মস্তিষ্ক কোষে, তাই বিস্ফারিত হয়েছে প্রায় প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমের অকৃপণ সহযোগিতায়। ফলে দ্রুত গড়ে উঠেছে একটি সম্প্রদায়— বোম্বের স্বপ্ন-সুন্দরীদের নিয়ে ‘হোপ-৮৬’ ধাঁচের ফাংশন করার প্রোমোটার।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কাগজগুলোতে চোখ বোলালেই চোখে পড়বে এইসব ফাংশন প্রমোটারদের ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন। অনেক প্রোমোটার এইসব বিজ্ঞাপনে নিজেদের ছবিও প্রকাশ করছেন। পশ্চিমবাংলার শহরে গ্রামে সর্বত্র আজ ‘হোপ-৮৬’ ধাঁচের ফাংশনের রমরমা বাজার। তা হলে আমরা শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম? ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সরকার আমাদের অর্থাৎ বঙ্গ সংস্কৃতির ধারক-বাহকদের মস্তিষ্কটি ধোলাই করে যে উত্তেজনাপূৰ্ণ, যৌন আবেগের আঁশটে গন্ধে ভরপুর হুল্লোড়ময় ‘হোপ-সংস্কৃতি’“ভোগসর্বস্ব সংস্কৃতি র আদিম ক্ষুধা চাগিয়ে দিয়েছিল, তার ফলহিসাবে ‘হোপ-সংস্কৃতি’ আজ বঙ্গ সংস্কৃতিরই অঙ্গ হয়ে পড়েছে, বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা হয়ে থাকেনি। আমদানি করা নতুন সংস্কৃতিক পরিবেশই এ-ক্ষেত্রে আমাদের বঙ্গ সাংস্কৃতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে বই কী। অথবা এও বলা যায়—‘হোপ ৮৬’ ছিল ভোগবাদী সংস্কৃতির কাছে কমিউনিস্ট দল পরিচালিত একটি সরকারের আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত ।

কখনও অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে আদান-প্রদানের মধ্যেও সংস্কৃতি তার ধারা বদলায়। আর তেমন উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে বহু শতাব্দী ধরে ভূরি-ভূরি। সংস্কৃতি কখনওই অনড় নয়, একই জায়গায় থেমে থাকে না, বদলে যায় ৷ বদলায় কারা? মানুষরাই। মানুষের নতুন নতুন ভাবনাই প্রভাবিত করে সংস্কৃতির মূল উপাদানগুলোকে, মানুষের সংস্কৃতিকে।

সংস্কৃতির মূল উপাদানগুলোকে আমরা প্রধান দু’টি ভাগে ভাগ করতে পারি। একঃ বস্তুগত উপাদান ; দুইঃ অবস্তুগত উপাদান ৷

বস্তুগত উপাদানের মধ্যে রয়েছে ওই মানবগোষ্ঠীর জীবনযাপন প্রণালীর সঙ্গে সম্পর্কিত বস্তু সমূহ। যেমন—বাসস্থান, গৃহ-সামগ্রী (যার মধ্যে মাদুর, চাটাই, হাত-পাখা, কুলো, দাওয়া থেকে ফ্রিজ, ওয়াটার কুলার, এয়ার কুলার, টেলিভিশন, জেনারেটর ইত্যাদি সবই পড়ে), পোশাক, খাদ্যাভ্যাস শস্য উৎপাদন পদ্ধতি, শিল্প উৎপাদন পদ্ধতি, পথ-ঘাট, যানবাহন, চিকিৎসা পদ্ধতি ইত্যাদি সবকিছুকেই সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান হিসেবে আমরা গ্রহণ করব।

অবস্তুগত উপাদান বলতে আমরা গ্রহণ করব মানুষের চিন্তা-চেতনা থেকে উদ্ভূত উপাদানগুলোকে। এর মধ্যে আছে যুক্তিবাদী চিন্তা, মূল্যবোধ, নীতিবোধ, অজানাকে জানার আগ্রহ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদি।

এরই পাশাপাশি অবস্তুগত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি নানা শিল্পকলা যার মধ্যে অনেক সময় মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে ভাববাদী অলীক চিন্তা, অন্ধ বিশ্বাস, অন্ধ-সংস্কার, ঈশ্বরতত্ত্ব, তথাকথিত ধর্ম ইত্যাদি।

অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উপাদানের মধ্যেই রয়ে গেছে একটি মানব গোষ্ঠীর, একটি সমাজের মানুষের মধ্যে চেপে বসা নীতিহীনতা, নীতিবোধ, মূল্যবোধ, মূল্যবোধের অভাব, চাটুকারিতা, স্পষ্টবাদিতা, স্বার্থপরতা, পরার্থপরতা, আপসহীনতা, প্রতিবাদহীনভাবে অন্যায়কে মেনে নেওয়ার প্রবণতা, সংগ্রামী- মানসিকতা, অজ্ঞানতা, তথাকথিত ধর্মে বিশ্বাস, ঈশ্বরতত্ত্ব-অলৌকিকত্ব- জন্মান্তরবাদ, কর্মফলবাদ-অদৃষ্টবাদ ইত্যাদিতে অন্ধ-বিশ্বাস, যুক্তিবাদী মানসিকতা ইত্যাদি সব কিছুই।

এই বস্তু ও অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো নিয়েই চলমান

একটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের

চিন্তা-চেতনা পরিবর্তিত হতেই থাকে, পাল্টে যেতে

থাকে সংস্কৃতি। এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তবে

পরিবর্তন সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পক্ষে

সুফল বয়ে আনবে, কী কুফল বয়ে

আনবে—সে অন্য প্রসঙ্গ।

সংস্কৃতির বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানগুলোর সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক ধনকুবের হুজুরের দল ও তাদের অর্থে নির্বাচন জিতে গদিতে বসা শাসককুল। ধনকুবেরদের টিকে থাকার পক্ষে, আরও বেশি পুষ্ট হয়ে ওঠার পক্ষে কী ধরনের সংস্কৃতি কখন প্রয়োজন, সেটা হিসেব করেই হুজুরের দল ও রাষ্ট্রশক্তি সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করতে ময়দানে নামায় তাদের বুদ্ধিজীবীদের। বুদ্ধিজীবীরা নানা পদ্ধতিতে মগজ ধোলাই করে মানুষের চিন্তায়-চেতনায় প্রয়োজনীয় ধারণাগুলো ঢোকাতে থাকে।

ইলেকট্রনিক প্রচার মাধ্যমগুলোর সর্বগ্রাসী প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ভোগ্যবস্তুর প্রতি ক্ষুধা জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস সবই যাচ্ছে পাল্টে। চিঁড়ে মুড়িকে বিদায় নিতে হচ্ছে ‘বনিমিক্স’ ‘কর্নফ্লেক্স’ ‘বিনিজ মাঙ্গতা’র স্বপ্নময় স্লোগানের ঠেলায়। পাখা, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ভিডিও, জেনারেটর, স্কুটার, এয়ার কুলার, ওয়াকম্যান, প্রেসার কুকার, স্টিরিও থেকে শুরু করে লিপস্টিক, নেলপলিশ, পাউডার, সাবান, পানীয়, শাড়ি, সুটিং-শার্টিং-এর বিজ্ঞাপনের মধ্যে উৎপাদনকারী ধনকুবেররা আমাদের সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানগুলোকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে খেলতে নেমেছে। ফলে থামস্-আপ, পেপসি, সেভেন-আপ্, সিট্রা ইত্যাদি পানীয়ের কোনটা পিপাসার্ত খাবে; ক্রেতা হিরো হোন্ডা কিনবে, কি বাজাজ, অথবা কিনবে সুজুকি-লড়াইটা এর মধ্যে।

এবার অবস্তুগত উপাদানগুলোর দিকে একটু তাকানো যাক। আমরা কী ধরনের গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-কবিতা পড়ব, তা ব্যাপকভাবে নির্ধারিত করে দিচ্ছে বৃহৎ পত্রিকা গোষ্ঠী ও প্রকাশক। কী দূরদর্শনে দেখব, তা ঠিক করে দিচ্ছে সরকার । কোন্ ধরনের সিনেমা দেখব, তা নির্ণয় করে কোটিপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সেনসর ক্ষমতার অধিকারী সরকার। এ সবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাধারণভাবে গড়ে উঠছে আমাদের রুচি, চাহিদা, চেতনা, এ সব কিছুকেই গড়ে জীবনধারা। আর এই জীবনধারাকেই প্রকাশ্যে বা অ-প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ করে শাসককুল ও তাদের প্রভু ধনকুবের গোষ্ঠী।

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বিভ্রান্তির সংস্কৃতিঃ বাঁচাও তাহারে মারিয়া

অধ্যায়ঃ দুই

♦ অপসংস্কৃতি ও সুস্থ সংস্কৃতিঃ পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হোক সুচেতনার পথে

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাংস্কৃতিক বিপ্লবঃ পৃথিবীর পথে হাজার বছর হাঁটা

অধ্যায়ঃ চার

♦ ভারতবর্ষে সাংস্কৃতিক আন্দোলনঃ কেউ কথা রাখেনি

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ নকশালবাড়ির সংগ্রামে উব্ধুদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলন

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন, সার্বিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনঃ এসো আমরা আগুনে হাত রেখে প্রেমের গান গাই

অধ্যায়ঃ সাত

♦ ‘যুক্তিবাদ’ একটা সম্পূর্ণ দর্শন, একটা বস্তুবাদী বিশ্ব-নিরীক্ষণ পদ্ধতিঃ কুয়াশা কাটে, কাটে নেশা, আকাশের ঘষা-সূর্য স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়

অধ্যায়ঃ আট

♦ যুক্তির পথচলাঃ লোভের অন্ধকারে ঢোকে না দিনের আলো

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অতি ব্যবহৃত কিছু শব্দঃ সিন্দুকেতে মন ভরেছে ভেতরে তার কি আছে কেই বা রাখে খোঁজ?

“সংস্কৃতিঃ সংঘর্ষ ও নির্মাণ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!