শ্লোকঃ ২১

আদিত্যগণের বিষ্ণুর্জ্যোতিষাং রবিরংশুমান।

মরীচির্মরুতামশ্মি  নক্ষত্রাণামহং শশী ॥ ২১ ৷৷

আদিত্যানাম্ – আদিত্যদের মধ্যে, অহম্ – আমি, বিষ্ণুঃ বিষ্ণু, জ্যোতিষাম- জ্যোতিষ্কদের মধ্যে; রবি:-সুর্য; অংশুমান—কিরণশালী; মরীচিঃ—মরীচি; মরুতামূ— মরুতদের মধ্যে; অস্মি – হই; নক্ষত্রাণাম্ — নক্ষত্রদের মধ্যে; অহন আমি শশী—চন্দ্ৰ।

গীতার গান

আদিত্যগণের বিষ্ণু জ্যোতিষে সে সূর্য।

মরীচি মরিৎগণে শশী তারাচর্য।।

অনুবাদঃ আদিত্যদের মধ্যে আমি বিষ্ণু, জ্যোতিষ্কদের মধ্যে আমি কিরণশালী সূর্য, মরুতদের মধ্যে আমি মরীচি এবং নক্ষত্রদের মধ্যে আমি চন্দ্ৰ ।

তাৎপর্যঃ দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ প্রধান। আকাশে অসংখ্য উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মধ্যে সূর্য হল মুখ্য। ব্রহ্মসংহিতায় সূর্যকে ভগবানের একটি উজ্জ্বল চোখরূপে গণ্য করা হয়েছে। ‘অন্তরীক্ষে পঞ্চাশ রকমের বিভিন্ন বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে এবং এগুলির নিয়ন্ত্রণকারী দেবতা মরীচি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি ।

অসংখ্য নক্ষত্রদের ভিতর রাত্রিবেলায় চন্দ অত্যন্ত সুস্পষ্ট উজ্জ্বল এবং এভাবেই চন্দ্র শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক। এই শ্লোক থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চন্দ্রও একটি নক্ষত্র; তাই যে সমস্ত নক্ষত্র আকাশে ঝলমল করে, সেগুলিতেও সূর্যের আলোক প্রতিফলিত হচ্ছে। ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে অনেকগুলি সূর্য রয়েছে, তা বৈদিক শাস্ত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। সূর্য একটিই এবং সূর্যের প্রতিফলনের দ্বারা যেমন চন্দ্র আলোকিত হয়, সেই রকম নক্ষত্রগুলিও আলোকিত হয়। যেহেতু ভগবদ্‌গীতা এখানে নির্দেশ করছে যে, নক্ষত্রগুলির মধ্যে চন্দ্রও একটি নক্ষত্র, তাই যে সমস্ত নক্ষত্র ঝলমল করছে সেগুলি সূর্য নয়, বরং সেগুলি চন্দ্রেরই মতো নক্ষত্র।

শ্লোকঃ ২২

বেদানাং সামবেদোহস্মি দেবানামস্মি বাসবঃ।

 ইন্দ্রিয়াণাং মনশ্চাস্মি ভূতানামস্মি চেতনা ।। ২২ ।।

বেদানাম্—সমস্ত বেদের মধ্যে, সামবেদঃ – সামবেদ; অস্মি – হই, দেবানাম— সমস্ত দেবতাদের মধ্যে; অস্মি—হই; বাসবঃ—ইন্দ্র; ইন্দ্রিয়াণাম — সমস্ত ইন্দ্রিয়ের মধ্যে: মনঃ—মন; চ–৫; অস্মি— হই; ভূতানাম্ — প্রাণীদের মধ্যে; অস্মি হই; চেতনা— চেতনা।

গীতার গান

বেদ-মধ্যে সামবেদ দেবগণে ইন্দ্ৰ ।

ইন্দ্রিয়গণের মন চেতনার কেন্দ্র ॥

অনুবাদঃ সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ, সমস্ত দেবতাদের মধ্যে আমি ইন্দ্ৰ, নমস্ত ইন্দ্রিয়ের মধ্যে আমি মন এবং সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে আমি চেতনা।

তাৎপর্যঃ জড় ও চেতনের পার্থক্য হচ্ছে যে, জীবসত্তার মতো জড়ের চেতনা নেই। তাই, চেতন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও নিত্য। জড় পদার্থের সমন্বয়ের ফলে কখনই চেতনা সৃষ্টি করা যায় না।

শ্লোকঃ ২৩

রুদ্রাণাং শঙ্করশ্চাস্মি বিত্তেশো যক্ষরক্ষসাম ।

বসূনাং পাবকশ্চাস্মি মেরুঃ শিখরিণামহম্ ॥ ২৩ ৷।

রুদ্রাণাম—রুদ্রদের মধ্যে শঙ্করঃ— শিব: চ–ও অস্মি হই বিত্তেশঃ– কুবের; যার ক্ষসাম্—যক্ষ ও রাক্ষসদের মধ্যে; বনাম বসুদের মধ্যে, পারকঃ- অগ্নি চ—ও; অস্মি হই; মেরুঃ – মেরু, শিখরিণাম — পর্বতসমূহের মধ্যে; অহম্ — আমি।

গীতার গান

রুদ্রদের মধ্যে শিব যক্ষের কুবের ।

পাবক সে বসুমধ্যে পর্বতে সুমের ॥

অনুবাদঃ রুদ্রদের মধ্যে আমি শিব, যক্ষ ও রাক্ষসদের মধ্যে আমি কুবের, বসুদের মধ্যে আমি অগ্নি এবং পর্বতসমূহের মধ্যে আমি সুমেরু।

তাৎপর্যঃ একাদশ রুদ্রের মধ্যে শঙ্কর বা শিব হচ্ছেন প্রধান। তিনি হচ্ছেন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তমোগুণের নিয়ত্তা এবং ভগবানের গুণাবতার। যক্ষ ও রাক্ষসদের অধিপতি কুবের হচ্ছেন দেবতাদের সমস্ত ধন-সম্পদের কোষাধ্যক্ষ এবং তিনি পরমেশ্বর ভগবানের প্রতিনিধি। মেরু হচ্ছে একটি সুবিখ্যাত পর্বত, যা প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ ।

error: Content is protected !!