দশম অধ্যায়
বিভূতি-যোগ
শ্লোকঃ ১
শ্রীভগবানুবাচ
ভূয় এব মহাবাহো শৃণু মে পরমং বচঃ ।
যত্তেহহং প্রীয়মাণায় বক্ষ্যামি হিতকাম্যয়া ॥ ১ ॥
শ্রীভগ্নবান্ উবাচ—পরমেশ্বর ভগবান বললেন; ভূয়ঃ— পুনরায়; এব— অবশ্যই, মহাবাহো — হে মহাবীর, শ— শ্রবণ কর, মে— আমার, পরমম্― পরম, বচঃ — বাক্য; য—যা; তে— তোমাকে, অহম্ — আমি; প্রীয়মাণায়— আমার প্রিয় পাত্র বলে মনে করে; বক্ষ্যামি বলব, হিকাম্যয়া — হিত কামনায়।
গীতার গান
শ্রীভগবান কহিলেনঃ
আবার বলি যে শুন পরম বচন ।
তোমার মঙ্গল হেতু কহি বিবরণ ৷।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে মহাবাহো । পুনরায় শ্রবণ কর। যেহেতু তুমি আমার প্রিয় পাত্র, তাই তোমার হিতকামনায় আমি পূর্বে যা বলেছি, তার থেকেও উৎকৃষ্ট তত্ত্ব বলছি।
তাৎপর্যঃ ভগবান শব্দটির ব্যাখ্যা করে পরাশর মুনি বলেছেন, যিনি সর্বতোভাবে ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ— যাঁর মধ্যে সমগ্র ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য পূর্ণরূপে বিদ্যমান, তিনিই হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান। শ্রীকৃষ্ণ যখন এই জগতে প্রকট ছিলেন, তিনি তার ষড়ৈশ্বর্য পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছিলেন। তাই পরাশর মুনির মতো মহর্ষিরা সকলেই তাঁকে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বলে স্বীকার করেছেন। এখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর বিভুতি ও কার্যকলাপ সম্বন্ধে আরও গুঢ়তম জ্ঞান প্রদান করেছেন। পূর্বে সপ্তম অধ্যায় থেকে শুরু করে ভগবান তাঁর বিভিন্ন শক্তি এবং তারা কিভাবে ক্রিয়া করে, সেই কথা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। এখন এই অধ্যায়ে তিনি তাঁর বিশেষ বিভূতির কথা অর্জুনকে শোনাচ্ছেন। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে তিনি তাঁর বিভিন্ন শক্তির কথা বিশ্লেষণ করে শুনিয়েছেন যাতে অর্জুনের হৃদয়ে দৃঢ় ভক্তির উদয় হয়। এই অধ্যায়ে তিনি আবার অর্জুনকে তাঁর বিবিধ প্রকাশ ও বিভূতির কথা শোনাচ্ছেন।
পরমেশ্বর ভগবানের কথা যতই শ্রবণ করা যায়, ভগবানের প্রতি ভক্তি ততই দৃঢ় হয়। ভক্তসঙ্গে ভগবানের কথা সর্বদাই শ্রবণ করা উচিত, তার ফলে ভক্তি বৃদ্ধি হয়। যাঁরা যথার্থভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত লাভের প্রয়াসী, তাঁরাই কেবল ভক্তসঙ্গে ভগবানের কথা আলোচনা করতে সক্ষম। অন্যেরা এই ধরনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। ভগবান স্পষ্টভাবে অর্জুনকে বলেছেন যে, যেহেতু অর্জুন তাঁর অতি প্রিয়, তাই তাঁর মঙ্গলের জন্য এই সমস্ত কথা আলোচনা হচ্ছে।
শ্লোকঃ ২
ন মে বিদুঃ সুরগণাঃ প্রভবং ন মহৰ্ষয়ঃ ।
অহমাদির্হি দেবানাং মহর্ষীণাং চ সর্বশঃ ॥ ২॥
ন—না; মে— আমার; বিদুঃ— জানেন; সুরগণাঃ— দেবতাগণ, প্রভবম্ — উৎপত্তি; ন—’না; মহৰ্ষয়ঃ— মহর্ষিগণ; অহম্ — আমি; আদিঃ – আদি কারণ; হি— অবশ্যই; দেবানাম্― দেবতাদের, মহর্ষীণাম্ — মহর্ষিদের, চ– ও, সর্বশঃ— সর্বতোভাবে।
গীতার গান
আমার প্রভাব যেই কেহ নাহি জানে ৷
সুরগণ ঋষিগণ কত জনে জনে।।
সকলের আদি আমি দেব ঋষি যত ৷
ভাবিয়া চিন্তিয়া তারা কি বুঝিবে কত ॥
অনুবাদঃ দেবতারা বা মহর্ষিরাও আমার উৎপত্তি অবগত হতে পারেন না, কেন না. সর্বতোভাবে আমিই দেবতা ও মহর্ষিদের আদি কারণ।
তাৎপর্যঃ ব্রহ্মসংহিতাতে বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই; তিনি সর্ব কারণের পরম কারণ। এখানেও ভগবান নিজেই বলেছেন যে, তিনিই সমস্ত দেব-দেবী ও ঋষিদের উৎস। এমন কি দেব-দেবী এবং ঋষিরাও শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারেন না। তাঁরা তাঁর নাম ও স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারেন না, সুতরাং এই অতি ক্ষুদ্র গ্রহের তথাকথিত পণ্ডিতদের জ্ঞান যে কতটুকু, তা সহজেই অনুমেয়। পরমেশ্বর ভগবান কেন যে এই পৃথিবীতে একজন সাধারণ মানুষের মতো অবতীর্ণ হয়ে পরম আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক লীলान করেন, তা কেউই বুঝতে পারে না। তাই আমাদের বোঝা উচিত যে, তথাকথিত পাণ্ডিত্যের মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানা যায় না। এমন কি দেব-দেবী এবং মহান ঋষিরাও মনোধর্মের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে জানবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁরা সফল হতে পারেননি। শ্রীমদ্ভাগবতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। যে, এমন কি সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতারাও পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে জানতে পারেননি। তাঁরা তাঁদের সীমিত অসম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুমান করতে পারেন এবং তার ফলে নির্বিশেষবাদের অপসিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন, যা জড় জগতের তিনগুণের অতীত, অথবা মনোধর্মের বশবর্তী হয়ে তাঁরা নানা রকমের অলীক কল্পনা করতে পারেন, কিন্তু এই ধরনের নির্বোধ অনুমানের দ্বারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কখনই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
ভগবান এখানে পরোক্ষভাবে বলেছেন যে, যদি কেউ পরমতত্ত্ব সম্বন্ধে জানতে চায়, “আমিই সেই পরমেশ্বর ভগবান, আমিই সেই পরমতত্ত্ব।” এটি সকলেরই বোঝা উচিত। পরমেশ্বর ভগবান অচিন্তনীয়, তাই তিনি আমাদের সামনে থাকলেও তাঁকে উপলব্ধি করা যায় না, কিন্তু তবুও তিনি আছেন। আমরা কিন্তু ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের বাণী যথাযথভাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে সেই সচ্চিদানন্দময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করতে পারি। যারা ভগবানের নিকৃষ্ট শক্তিতে অবস্থিত, তারা ভগবানকে কোন শাসক-প্রধানরূপে অথবা নির্বিশেষ ব্রহ্মরূপে অনুমান করতে পারে, কিন্তু অপ্রাকৃত স্তরে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত পরম পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করতে পারে না।
যেহেতু অধিকাংশ মানুষই শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর স্বরূপে উপলব্ধি করতে পারে না, তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অহৈতুকী করুণা প্রদর্শন করার জন্য এই জগতে অবতীর্ণ হয়ে এই সমস্ত মনোধর্মীদের প্রতি কৃপা করেন। কিন্তু ভগবানের অলৌকিক লীলা সম্বন্ধে অবগত হওয়া সত্ত্বেও, এই ধরনের মানোধর্মীরা জড় জগতের কনুষের দ্বারা কলুষিত থাকার ফলে মনে করে যে, নির্বিশেষ ব্রহ্মই হচ্ছেন পরমতত্ত্ব। যে সব ভক্ত সর্বতোভাবে পরমেশ্বর ভগবানের চরণে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁরাই কেবল ভগবানের কৃপার প্রভাবে উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনিই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। ভগবানের নির্বিশেষ ব্রহ্ম-উপলব্ধি নিয়ে ভক্ত মাথা ঘামান না। তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রভাবে তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের চরণে তৎক্ষণাৎ আত্মসমর্পণ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে তাঁরা তাঁকে জানতে পারেন। তা ছাড়া আর কেউই তাঁকে জানতে পারে না। তাই মহাঋষিরাও স্বীকার করেন, আত্মা কি? পরমতত্ত্ব কি? তা হচ্ছেন তিনি, যাঁকে আমাদের ভজনা করা উচিত।
শ্লোকঃ ৩
যো মামজমনাদিং চ বেত্তি লোকমহেশ্বরম্ ।
অসংমূঢ়ঃ স মর্ত্যেষু সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে ॥ ৩ ॥
যঃ = যিনি; মাম্—আমাকে, অজম্ – জন্মরহিত; অনাদি অনাদি; চ বেত্তি— জানেন: লোক — সমস্ত গ্রহলোকের মহেশ্বরম্ — ঈশ্বর; অসংগূঢ়ঃ— মোহশূন্য হয়ে; সঃ— তিনি; মর্ত্যেষু — মরণশীলদের মধ্যে; সর্বপাপৈঃ – সমস্ত পাপ থেকে, প্রমুচ্যতে মুক্ত হন।
গীতার গান
যে মোরে অনাদি জানে লোক মহেশ্বর ।
সচ্চিদ আনন্দ শ্রেষ্ঠ অব্যয় অজর ॥
মর্ত্যলোকে অসংমূঢ় যেই ব্যক্তি হয় ৷
এই মাত্র জানি তার সর্ব পাপ ক্ষয় ॥
অনুবাদঃ যিনি আমাকে জন্মরহিত, অনাদি ও সমস্ত গ্রহলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, তিনিই কেবল মানুষদের মধ্যে মোহশূন্য হয়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন।
তাৎপর্যঃ সপ্তম অধ্যানে (৭/৩) বলা হয়েছে যে, মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিদ যততি সিদ্ধয়ে যাঁরা আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসী, তাঁরা সাধারণ মানুষ নন। আত্ম-জ্ঞানবিহীন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের থেকে তাঁরা শ্রেষ্ঠ। কিন্তু যথার্থ আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান লাভের প্রয়াসী পুরুষদের মধ্যে কদাচিৎ দুই-একজন কেবল উপলব্ধি করতে পারেন যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান, সর্বলোক মহেশ্বর ও অজ। এভাবেই যাঁরা ভগবৎ-তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন, তাঁরাই অধ্যাত্ম মার্গে সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত। এভাবেই শ্রীকৃষ্ণের পরমপদ সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারার ফলেই কেবল পাপময় কর্মের বন্ধন থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়া যায়।
এখানে অজ শব্দটির দ্বারা ভগবানকে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে ‘জন্মরহিত’। দ্বিতীয় অধ্যায়ে জীবকেও অজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু ভগবান জীব থেকে ভিন্ন। জীবেরা জন্মগ্রহণ করছে এবং বৈষয়িক আসক্তির ফলে মৃত্যুবরণ করছে, কিন্তু ভগবান তাদের থেকে আলাদা। বদ্ধ জীবাত্মারা তাদের দেহ পরিবর্তন করছে, কিন্তু ভগবানের দেহের কোন পরিবর্তন হয় না। এমন কি তিনি যখন জড় জগতে অবতরণ করেন, তখন তিনি তাঁর অপরিবর্তিত অজ রূপেই অবতরণ করেন। তাই চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, ভগবান সব সময়ই তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তিতে অধিষ্ঠিত। তিনি কখনই অনুৎকৃষ্টা মায়াশক্তি দ্বারা প্রভাবিত হন না। তিনি সব সময়ই তাঁর উৎকৃষ্টা শক্তিতে অবস্থান করেন।
এই শ্লোকে বেডি লোকমহেশ্বরম্ কথাটি ইঙ্গিত করে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত গ্রহলোকের মহেশ্বর এবং তা সকলের জানা উচিত। সৃষ্টির পূর্বেও তিনি ছিলেন এবং তিনি তাঁর সৃষ্টি থেকে ভিন্ন। দেব-দেবীরা সকলেই এই জড় জগতে সৃষ্ট হয়েছেন, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এই সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে, তিনি কখনও সৃষ্ট হন না; তাই তিনি ব্রহ্মা, শিব আদি মহান দেবতাদের থেকেও ভিন্ন। আর যেহেতু তিনি ব্রহ্মা, শিব ও অন্যান্য সমস্ত দেব-দেবীর সৃষ্টিকর্তা, তাই তিনি সমস্ত গ্রহলোকেরও পরম পুরুষ।
শ্রীকৃষ্ণ তাই সমস্ত সৃষ্টি থেকে ভিন্ন এবং এভাবেই যখন কেউ শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারেন, তিনি তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপময় কর্মফল থেকে মুক্ত হন। পরমেশ্বর ভগবানকে জানতে হলে সব রকমের পাপময় কর্মফল থেকে মুক্ত হতে হবে। কেবলমাত্র ভক্তির মাধ্যমেই তাঁকে জানা যায়, এ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে তাঁকে জানতে পারা যায় না। সেই কথা ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকে কখনই একজন মানুষরূপে জানবার চেষ্টা করা উচিত নয়। পূর্বেই সেই সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, একমাত্র মূঢ় ব্যক্তি তাঁকে একজন মানুষ বলে মনে করে। সেই কথাই এখানে একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে মানুষ মূর্খ নয়, যিনি যথার্থ বুদ্ধিমান, তিনি ভগবানের স্বরূপ সম্বন্ধে অবগত হতে পারেন এবং তার ফলে তিনি সব রকমের পাপময় কর্মফল থেকে মুক্ত হন।
শ্রীকৃষ্ণ যদি দেবকীর পুত্র হন, তা হলে তিনি অজ হন কি করে? সেই কথাও শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে— তিনি যখন দেবকী ও বসুদেবের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো জন্মগ্রহণ করেননি; তিনি তাঁর আদি চিন্ময় স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তারপর তিনি নিজেকে একটি সাধারণ শিশুতে রূপান্তরিত করেন।
শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসারে যা কিছু করা হয়, তা অপ্রাকৃত। তা জড় জগতের শুভ অথবা অশুভ কোন কর্মফলের দ্বারাই কলুষিত হয় না। জড় জগতের শুভ ও অশুভ সম্বন্ধে যে ধারণা তা কম-বেশি মনোধর্ম-প্রসূত অলীক কল্পনা মাত্র, কারণ এই জড় জগতে শুভ বলতে কিছুই নেই। সব কিছুই অশুভ, কারণ এই জড়া প্রকৃতিই হচ্ছে অশুভ। আমরা কেবল কল্পনা করি যে, তা শুভ। প্রগাঢ় ভক্তি ও সেবার মাধ্যমে কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপের উপর যথার্থ শুভ নির্ভরশীল। যদি আমরা প্রকৃতই শুভ কর্ম সম্পাদনে প্রয়াসী হই, তা হলে আমাদের পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশ অনুসারে কাজ করা উচিত। সেই সমস্ত নির্দেশ আমরা শ্রীমদ্ভাগবত, ভগবদ্গীতা আদি শাস্ত্রগ্রন্থ অথবা সদগুরুর কাছ থেকে পেতে পারি। সদগুরু যেহেতু পরমেশ্বর ভগবানের প্রতিনিধি, তাই তাঁর নির্দেশ প্রত্যক্ষভাবে পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশ। সদগুরু, সাধু ও শাস্ত্র একই নির্দেশ দান করেন। এই তিনের নির্দেশের মধ্যে কোন রকম বিরোধ নেই। তাঁদের নির্দেশ অনুসারে সাধিত সমস্ত কর্ম জড় জগতের সব রকমের শুভ বা অশুভ কর্মফল থেকে মুক্ত থাকে। কর্মকালে ভক্তের অপ্রাকৃত মনোভাবই হচ্ছে যথার্থ বৈরাগ্য এবং তাকেই বলা হয় সন্ন্যাস। ভগবদ্গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে বলা হয়েছে, যিনি
কর্তব্যবোধে কর্ম করেন, যেহেতু সেই প্রকার কর্ম করতে তিনি ভগবানের দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন এবং যিনি তার কর্মফলের প্রতি আশ্রিত নন (অনাশ্রিতঃ কর্মফলম্ ), তিনিই হচ্ছে যথার্থ সন্ন্যাসী। ভগবানের নির্দেশ অনুসারে যিনি কর্তব্যকর্ম করেন, তিনিই হচ্ছেন যথার্থ সন্ন্যাসী ও যোগী। সন্ন্যাসী বা যোগীর পোশাক পরলেই যোগী হওয়া যায় না।