শ্লোকঃ ৩১
পবনঃ পরতামস্মি রামঃ শস্ত্রভৃতামহম্ ।
ঝষাণাং মকরশ্চাস্মি স্রোতসামস্মি জাহ্নবী ॥ ৩১ ॥
পবনঃ- বায়ু, পৰতাম্ পবিত্রকারীদের মধ্যে; অস্মি— হই; রামঃ পরশুরাম, শস্ত্রভৃতাম্—শস্ত্রধারীদের মধ্যে অহম্ — আমি: ঝাষাণাম্ – মংস্যদের মধ্যে মকরঃ —মকর; চ–ও; অস্মি — হই; স্রোতসাম—নদীসমূহের মধ্যে; অশ্মি — হই; জাহ্নবী- 1-1311
গীতার গান
বেগবান মধ্যে আমি হই সে পবন ।
শস্ত্রধারী মধ্যে সে আমি পরশুরাম ।।
জলচর মধ্যে আমি হয়েছি মকর ।
জাহ্নবী আমার নাম মধ্যে নদীবর ॥
অনুবাদঃ পবিত্রকারী বস্তুদের মধ্যে আমি বায়ু, শস্ত্রধারীদের মধ্যে আমি পরশুরাম, মৎস্যদের মধ্যে আমি নকর এবং নদীসমূহের মধ্যে আমি গঙ্গা।
তাৎপর্যঃ সমগ্র জলচর প্রাণীদের মধ্যে মকর হচ্ছে বৃহত্তম এবং মানুষের কাছে দারুণ ভয়ঙ্কর। এভাবেই মকর শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক।
শ্লোকঃ ৩২
সর্গানামাদিরন্তশ্চ মধ্যং চৈবাহমর্জুন।
অধ্যাত্মবিদ্যা বিদ্যানাং বাদঃ প্রবদতামহম্ ॥৩॥
সর্গণাম্ — সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে আদিঃ – আদি, অন্তঃ—তান্ত; চ–এবং; মধ্যন মধ চ—ও; এব—অবশ্যই; অহম্ — আমি: অর্জুন—হে অর্জুন: অধ্যাত্মবিদ্যা — চিন্তায় জ্ঞান, বিদ্যানাম— সমস্ত বিদ্যার মধ্যে, বাদঃ— সিদ্ধান্তবাদ, প্রবদতাম — তার্কিকদের বাদ, জন্ম ও বিতণ্ডার মধ্যে অহম্ — আমি।
গীতার গান
যত সৃষ্ট বস্তু তার আদি মধ্য অন্ত ।
হে অর্জুন দেখ মোর ঐশ্বর্য অনন্ত ৷।
যত বিদ্যা হয় তার মধ্যে আত্মজ্ঞান ।
আমি সে সিদ্ধান্ত মধ্যে যত বাদীগণ ॥
অনুবাদঃ হে অর্জুন ! সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে আমি আদি অন্ত ও মধ্য। সমস্ত বিদ্যার মধ্যে আমি অধ্যাত্মবিদ্যা এবং তার্কিকদের বাদ, জন্ম ও বিতণ্ডার মধ্যে আমি সিদ্ধান্তবাদ।
তাৎপর্যঃ সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে সমগ্র জড় উপাদান প্রথম সৃষ্টি হয়। পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, মহাবিষ্ণু, গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু ও ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু এই জগতের সৃষ্টি ও পরিচালনার কার্য করেন এবং তারপর পুনরায় সৃষ্টির প্রলয় সাধন করেন শিব। ব্রহ্মা হচ্ছেন গৌণ সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের এই সমস্ত প্রতিনিধিরা হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবানের গুণাবতার। তাই, তিনি হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টির আদি মধ্য ও অস্ত।
উন্নতমানের শিক্ষার জন্য জ্ঞানের বহুবিধ গ্রন্থ আছে, যেমন চতুর্বেদ, তাদের অন্তর্ভুক্ত ষড়দর্শন, বেদান্ত-সূত্র, ন্যায় শাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র ও পুরাণ। সুতরাং, শিক্ষামূলক গ্রন্থের সর্বসমেত চতুর্দশটি বিভাগ রয়েছে। এগুলির মধ্যে যেই গ্রন্থটি অধ্যাত্মবিদ্যা বা পারমার্থিক জ্ঞান পরিবেশন করছে, বিশেষ করে বেদান্ত-সূত্র হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক।
ন্যায় শাস্ত্রে তার্কিকদের মধ্যে তর্কের বিভিন্ন স্তর আছে। বাদী-প্রতিবাদীর যুক্তিতর্কের সমর্থনে সাক্ষ্য বা প্রামাণিক তথ্যকে বলা হয় ‘জন্ম’। পরস্পরকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টাকে বলা হয় বিতণ্ডা’ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে বলা হয় ‘বাদ’। এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক।
শ্লোকঃ ৩৩
অক্ষরাণামকারোহস্মি দ্বন্দ্বঃ সামাসিকস্য চ ।
অহমেবাক্ষয়ঃ কালো ধাতাহ বিশ্বতোমুখঃ ॥ ৩৩ ॥
অক্ষরাণাম্—সমস্ত অক্ষরের মধ্যে; অকারঃ – অকার; অস্মি— হই; দ্বন্দ্বঃ – দ্বন্দ্ব সামাসিকস্য—সমাসসমূহের মধ্যে; চ– এবং ; অহম্ — আমি; এব— অবশ্যই ; অক্ষয়ঃ—নিত্য; কালঃ—কাল; ধাতা – স্রষ্টা; অহম্ – আমি বিশ্বতোমুখঃ-ব্ৰহ্মা।
গীতার গান
অক্ষরের মধ্যে আমি ‘অ’কার সে হই ৷
সমাসের দ্বন্দ্ব আমি কিন্তু দ্বন্দু নই ॥
স্রষ্টাগণে আমি ব্রহ্মা ধ্বংসে মহাকাল।
রুদ্র নাম ধরি আমি সংহারী বিশাল ॥
অনুবাদঃ সমস্ত অক্ষরের মধ্যে আমি অকার, সমাসসমূহের মধ্যে আমি দ্বন্দ্-সমাস সংহারকারীদের মধ্যে আমি মহাকাল রুদ্র এবং স্রষ্টাদের মধ্যে আমি ব্রহ্মা।
তাৎপর্যঃ সংস্কৃত বর্ণমালার প্রথম অক্ষর অকার হচ্ছে বৈদিক সাহিত্যের প্রথম অক্ষর। অকার ছাড়া কোন শব্দের উচ্চারণ সম্ভব নয়। তাই অকার হচ্ছে শব্দের সূত্রপাত। সংস্কৃতে একাধিক শব্দের সমন্বয় হয়, যেমন রাম-কৃষ্ণ একে বলা হয় দ্বন্দ্ব। রাম ও কৃষ্ণ এই দুটি শব্দেরই ছলরূপ এক রকম, তাই তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলা হয়। সমস্ত বিনাশকারীদের মধ্যে কাল হচ্ছেন চরম শ্রেষ্ঠ, কারণ কালের প্রভাবে সকলেরই বিনাশ হয়। কাল শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি, কারণ কালক্রমে এক মহা অগ্নি- প্রলয়ে সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে।
সমস্ত স্রষ্টা জীবদের মধ্যে চতুর্মুখ ব্রহ্মাাই হচ্ছেন প্রধান। তাই, তিনি হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি ।