অবীমেলক রাজা হলেন
১. অবীমেলক হলেন যিরুব্বালের পুত্র। শিখিম শহরে তাঁর কাকা জ্যাঠারা বাস করতেন। সেখানে অবীমেলক চলে গেলেন। তাঁদের এবং মামার বাড়ির সকলের কাছে তিনি বললেন,
২. এ কথাট৷ তোমরা শিখিম শহরে নেতাদের জিজ্ঞাসা করঃ “যিরুব্বালের ৭০ জন পুত্রের শাসন ভাল, না একজন লোকের শাসন ভাল? মনে রেখো আমি তোমাদের আত্মীয়।””
৩. অবীমেলকের কাকা শিখিমের নেতাদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। নেতারা অবীমেলককে অনুসরণ করা স্থির করল। নেতারা বলল, “যতই হোক, অবীমেলক আমাদের ভাই।”
৪. তারা তাকে ৭০ খানা রূপোর খণ্ড দান করল। তারা বাল-বরীতের মন্দির থেকে এইসব রূপো এনেছিল। সেই রূপো দিয়ে অবীমেলক কিছু লোক ভাড়া করলেন। এই লোকগুলো ছিল অপদার্থ, বেপরোয়া ধরণের। অবীমেলক যেখানেই যেতেন তারাও তার সঙ্গে সঙ্গে যেত।
৫. অবীমেলক অফ্রায় তার পিতার বাড়ীতে গিয়ে ভাইদের হত্যা করলেন। গিদিয়োনের ৭০ জন পুত্রকে তিনি একসঙ্গে হত্যা করলেন। কিন্তু যিরুব্বালের ছোট ছেলেটি লুকিয়ে ছিল। সে পালিয়ে গেল। তার নাম যোথম।
৬. তারপর শিখিমের নেতারা আর মিল্লোর লোকেরা সব একত্র হয়ে শিখিমে একটি বিরাট গাছের নীচে অবীমেলককে রাজা হিসাবে মেনে নিল।
যোথমের কাহিনী
৭. যোথম শুনতে পেল যে, শিখিমের নেতারা অবীমেলককে রাজা করেছে। তারপর সে গরিষীম পর্বতের মাথায় উঠে গিয়ে চিৎকার করে এই গল্পটি বলতে লাগলঃ শোনো, শিখিমের যত নেতারা শোনো। শোনার পরেই তোমাদের কথা ঈশ্বর শুনবেন।
৮. একদা বনের সমস্ত গাছপালা ভাবল জলপাই গাছ হোক না তাদের রাজা। সেই মতো তারা জলপাই গাছকে বলল, “তুমি আমাদের ওপর রাজত্ব কর।”
৯. জলপাই গাছ বলল, “দেখো, মানুষ, দেবতা সবাই আমার তেলের জন্য আমাকে প্রশংসা করে। তোমরা কি চাও আমি তেলের প্রস্তুতি বন্ধ করে দিই এবং অন্য গাছেদের শাসন করি?’
১০. গাছেরা তখন ডুমুর গাছকে বলল, “হও না তুমি আমাদের রাজা।”
১১. ডুমুর গাছটি বলল, “আমি কি ডুমুর ও মিষ্ট ফল ফলান বন্ধ করে শুধুই অন্য গাছেদের ওপর শাসন করব?”
১২. তারপর তারা দ্রাক্ষালতার কাছে গিয়ে বলল, “দ্রাক্ষালতা, আমাদের রাজা হও।”
১৩. দ্রাক্ষালতা বলল, “সকলেই আমার রসের গুণে খুশি। সে মানুষই হোক অথবা ঈশ্বর। তোমরা কি চাও আমি রসের জোগান বন্ধ করে অন্য গাছেদের শাসন করি?”
১৪. অবশেষে তারা কাঁটা ঝোপঝাড়ে গিয়ে বলল, “আমরা তোমাকে রাজা করব।”
১৫. তখন কাঁটাগাছ তাদের বলল, “সত্যিই যদি তোমরা আমাকে তোমাদের রাজা কর, তবে চলে এসো আমার ছায়ায়, আশ্রয় নাও এখানে। তোমরা যদি তা না করো কাঁটাঝোপ থেকে দাউদাউ করে আগুন বেরোবে। এটা লিবানোনের এরস গাছগুলিকেও পুড়িয়ে দেবে।”
১৬. এখন সত্যিই যদি তোমরা মনে প্রাণে অবীমেলককে রাজা করো, তাহলে তাকে নিয়ে সুখে থাকো। আর যদি তোমরা যিরুব্বাল ও তার পরিবারের প্রতি সুবিচার করেছ বলে মনে করো সে তো ভালই।
১৭. কিন্তু একবার ভেবে দেখো, আমার পিতা তোমাদের জন্য কি করেছিলেন। তিনি তোমাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। মিদিয়নদের হাত থেকে তোমাদের বাঁচানোর জন্য তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন।
১৮. কিন্তু আজ তোমরা আমার পিতার পরিবারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছ। তোমরা তাঁর ৭০ জন পুত্রকে একসঙ্গে হত্যা করেছ। তোমরা অবীমেলককে তোমাদের রাজা করেছ। তোমরা তাকে রাজা করেছ কারণ সে তোমাদের আত্মীয়। কিন্তু সে আমার পিতার ক্রীতদাসীর পুত্র, এছাড়া আর কিছু নয়।
১৯. তাই বলছি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি সত্যিই যদি তোমরা যথার্থ ব্যবহার করে থাকো, তাহলে অবীমেলককে রাজা হিসেবে পেয়ে তোমরা সুখী হও। সেও তোমাদের নিয়ে সুখী হোক।
২০. কিন্তু যদি তোমরা তার সঙ্গে যথার্থ ব্যবহার না করে থাকো তাহলে হে শিখিমের নেতারা, মিল্লোর লোকেরা তোমাদের ধ্বংস করবে। সেই সঙ্গে অবীমেলক নিজেও ধ্বংস হবে।”
২১. এই বলে যোথম বের নগরে পালিয়ে গেল। সেখানে সে থাকতে লাগল, কারণ সে তার ভাই অবীমেলককে ভয় করত।
শিখিমের সঙ্গে অবীমেলকের যুদ্ধ
২২. অবীমেলক তিন বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন।
২৩-২৪. অবীমেলক যিরুব্বালের ৭০ জন পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। তারা সকলেই ছিল অবীমেলকের নিজের ভাই। শিখিমের নেতারা তার এই অন্যায় কাজ সমর্থন করেছিল। সেইজন্য ঈশ্বর অবীমেলক ও শিখিমের নেতাদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দিলেন। শিখিমের নেতারা কিভাবে অবীমেলককে জখম করা যায় তার মতলব করছিল।
২৫. তারা আর অবীমেলককে চাইছিল না। পাহাড়ের মাথায় তারা লোকেদের দাঁড় করিয়ে দিল। যারা ঐ পথ দিয়ে যেত তাদের ওপর চড়াও হয়ে ঐসব লোক সবকিছু কেড়ে নিত। অবীমেলক ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন।
২৬. এবদের পুত্র গাল তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে শিখিম শহরে উঠে গেলো। সেখানকার নেতারা ঠিক করলো, তারা গালকেই বিশ্বাস করবে এবং মেনে নেবে।
২৭. একদিন শিখিমের লোকেরা ক্ষেত থেকে দ্রাক্ষা তুলতে গেল। দ্রাক্ষা নিংড়ে তারা দ্রাক্ষারস তৈরি করল। তারপর তারা তাদের দেবতার মন্দিরে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। সেখানে তারা দ্রাক্ষারস পান করে অবীমেলককে খুব গালমন্দ করতে লাগল।
২৮. এবদের পুত্র গাল বলল, “আমরা সবাই শিখিমের লোক। আমরা কেন অবীমেলককে মানব? নিজেকে সে কি মনে করে? অবীমেলক যিরুব্বালের পুত্রদের মধ্যে একজন? আর সে সবূলকে করেছে তার মন্ত্রী, ঠিক কিনা? আমরা অবীমেলককে মানছি না, মানব না। আমরা আমাদের নিজেদের লোককেই মানবো। আমরা শিখিমের পিতা হমোরের লোকেদের মানব। কারণ তারা আমাদের নিজের লোক।
২৯. তোমরা যদি আমাকে সেনাপতি বলে স্বীকার করো তাহলে আমি অবীমেলককে পরাজিত করব। আমি ওকে বলব, ‘সৈন্য সাজাও এসো, যুদ্ধ করো।”
৩০. শিখিমের শাসনকর্তা হল সবূল। এবদের পুত্র গালের কথা সবূল সব শুনল। শুনে সে খুব রেগে গেলো।
৩১. সে অরুমা শহরে অবীমেলকের কাছে বার্তাবাহক পাঠাল। বার্তাটি ছিল এরকমঃ এবদের পুত্র গাল তার ভাইদের নিয়ে শিখিম শহরে চলে এসেছে। তারা আপনার সঙ্গে একটা ঝগড়া বাধাতে চায়। গাল সারা শহরকে আপনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে।
৩২. তাই আজ রাত্রেই আপনি অবশ্যই আপনার লোকেদের নিয়ে শহরের বাইরে মাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকবেন।
৩৩. তারপর সকালে রোদ উঠলেই শহর আক্রমণ করবেন। গাল তার দলবল নিয়ে আপনার সঙ্গে লড়াই করতে এলে যা করবার করবেন।
৩৪. একথা শোনার পর অবীমেলক তাঁর সৈন্যদলসহ রাত্রে উঠে শহরের দিকে রওনা হলেন। সৈন্যরা চারটে দলে ভাগ হয়ে গেল। তারা শিখিম শহরের কাছাকছি একটি জায়গায় লুকিয়ে থাকল।
৩৫. এবদের পুত্র গাল বেরিয়ে গিয়ে শিখিম শহরের ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে রইল। গাল যখন সেখানে দাঁড়িয়ে তখন অবীমেলক ও তাঁর সৈন্যদল লুকোনোর জায়গা থেকে বেরিয়ে এল।
৩৬. গাল ওদের দেখল। সে সবূলকে বলল, “তাকিয়ে দেখ, লোকেরা পর্বত থেকে নেমে আসছে।” কিন্তু সবূল বলল, “তুমি শুধু পর্বতের ছায়াই দেখছ। ছায়াগুলোকে ঠিক মানুষের মত দেখতে।”
৩৭. কিন্তু গাল আবার বলল, “তাকিয়ে দেখ, কিছু লোক ওখান থেকে নাভেল দেশে নেমে আসছে। আমি যাদুকর বৃক্ষের ওপরে কার যেন মাথা দেখলাম।”
৩৮. সবূল গালকে বলল, “তুমি কেন আগের মত হাম্বড়াই করছ না? তুমি বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে? কেন আমরা তাকে মানব?’ তুমি এই মানুষগুলিকে উপহাস করেছিলে। এখন যাও, ওদের সঙ্গে লড়াই করো।”
৩৯. গাল শিখিমের নেতাদের নিয়ে অবীমেলকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল।
৪০. অবীমেলক তাঁর লোকজন নিয়ে গাল ও তার সেনাবাহিনীকে তাড়া করলেন। গালের লোকেরা শিখিম শহরের ফটকের দিকে পালিয়ে গেল। পালিয়ে যাবার সময় তাদের মধ্যে অনেকে নিহত হল।
৪১. তারপর অবীমেলক অরুমা শহরে ফিরে এলেন। গাল ও তার ভাইদের সবূল শিখিম শহর থেকে তাড়িয়ে দিলেন।
৪২. পরদিন শিখিমের লোকেরা মাঠে কাজ করতে গেল। অবীমেলক তা দেখলেন।
৪৩. তিনি তাঁর লোকেদের তিনটি দলে ভাগ করলেন। শিখিমের অধিবাসীদের তিনি হঠাৎ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। সেইজন্য তিনি তাঁর লোকজনকে মাঠে লুকিয়ে রাখলেন। যখন তিনি দেখলেন লোকেরা শহর থেকে বেরিয়ে পড়ছে, তিনি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
৪৪. অবীমেলক সদলবলে দৌড়ে গিয়ে শিখিমের ফটকের কাছে একটা জায়গায় দাঁড়ালেন। অন্য দু-দলের লোকেরা মাঠের দিকে ছুটে গিয়ে লোকদের মেরে ফেলল।
৪৫. সারাদিন ধরে অবীমেলক শিখিমের সঙ্গে লড়াই করলেন। অবীমেলক শিখিম দখল করলেন আর সেখানকার লোকদের হত্যা করলেন। তারপর তিনি শহরটিকে তছনছ করে তার ওপর লবণ ছিটিয়ে দিলেন।
৪৬. শিখিমের দুর্গে কিছু লোক বাস করত। যখন তারা শিখিমের ঘটনা শুনল তখন তারা এল্-বরীৎ দেবতার মন্দিরের মধ্যে একটি মিনারে মিলিত হল।
৪৭. অবীমেলক শিখিম দুর্গের নেতাদের জড়ো হবার খবর জানতে পারলেন।
৪৮. তাই তিনি তাঁর লোকেদের নিয়ে সল্মোন পর্বতে উঠে এলেন। একটা কুড়ুল দিয়ে অবীমেলক গাছ থেকে কয়েকটি ডাল কেটে নিলেন। ডালগুলো কাঁধে নিয়ে সঙ্গের লোকেদের অবীমেলক বললেন, “আমি যা করলাম তোমর৷ তা চটপট্ করে ফেল।”
৪৯. এই কথা শুনে তাঁর দেখাদেখি তারাও ডালগুলো কেটে ফেলল। তারপর এল-বরী মন্দিরের সবচেয়ে নিরাপদ ঘরের গায়ে সেগুলো তার৷ জড়ো করল। আগুন লাগিয়ে দিল ডালগুলোয়। সেখানে যার৷ ছিল তাদের পুড়িয়ে মারল। এইভাবে শিখিম দুর্গের কাছে বসবাসকারী প্রায় 1,000 নরনারী মারা গেল।
অবীমেলক মারা গেলেন
৫০. তারপর সদলবলে অবীমেলক তেবস শহরে গেলেন। তারা শহরটি দখল করল।
৫১. শহরের মধ্যে একট৷ বেশ মজবুত মিনার ছিল। শহরের লোকেরা আর নেতার৷ পালিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিল। মিনারের দরজায় তালাচাবি দিয়ে তারা ছাদে উঠে গেল।
৫২. অবীমেলক দুর্গ আক্রমণ করলেন এবং দুর্গট৷ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবার জন্য দুর্গের দরজার কাছে গেলেন।
৫৩. কিন্তু তিনি যখন দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে, সেই সময় দুর্গের ছাদ থেকে একজন নারী তাঁর মাথা লক্ষ্য করে একট৷ পেষাই করবার পাথরের চাঁই ফেলে দিল। অবীমেলকের মাথার খুলি সেই পাথরের ঘায়ে গুঁড়িয়ে গেল।
৫৪. সেই মূহুর্তে অবীমেলক তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “তরবারিটা বের করে আমাকে মেরে ফেল। তোমাকেই এ কাজটা করতে হবে। লোকে যেন না বলে, ‘একট৷ স্ত্রীলোক আমাকে মেরে ফেলেছে।”” তাই হল। ভৃত্যটি তাঁকে তরবারির কোপে মেরে ফেলল। অবীমেলক মারা৷ গেলেন।
৫৫. অবীমেলক মারা গেছে দেখে ইস্রায়েলের লোকের৷ সকলে দেশে ফিরে গেল।
৫৬. অবীমেলককে তাঁর অসৎ কর্মের জন্য ঈশ্বর এভাবেই শাস্তি দিলেন। তার 70 জন ভাইকে হত্য৷ করে অবীমেলক তাঁর পিতার বিরুদ্ধে পাপ করেছিলেন।
৫৭. ঈশ্বর শিখিম শহরের লোকেদেরও অন্যায় কর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন। এভাবেই যোথমের কথা ফলে গিয়েছিল। (যোথম যিরুব্বালের কনিষ্ঠ পুত্র। আর যিরুব্বালই ছিল গিদিয়োন।)