১. ভোরবেলা যিরুবাল (গিদিয়োন) তার লোকজন নিয়ে হারোদ ঝর্ণার কাছে শিবির স্থাপন করলেন। মিদিয়োনের লোকেরা মোরি পর্বতের নীচে উপত্যকায় তাঁবু খাটাল। জায়গাটা ছিল গিদিয়োনদের শিবিরের উত্তর দিকে।
২. তখন প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “মিদিয়নের লোকদের হারাবার জন্য আমি তোমার লোকেদের সাহায্য করতে যাচ্ছি। কিন্তু এই কাজের পক্ষে তোমার লোকজন অনেক বেশি। ইস্রায়েলীয়রাও আমাকে ভুলে থাকুক, আর বড়াই করে বলুক যে, তারা নিজেরাই নিজেদের বাঁচিয়েছে তা আমি চাই না।
৩. সেই জন্যে এখন তাদের কাছে জানিয়ে দাও, ‘যে ভীতু সে গিলিয়দ পর্বত থেকে চলে যেতে পারে। সে বাড়ি ফিরে যেতে পারে।”” তখন ২২,০০০ লোক গিদিয়োনকে ফেলে রেখে ঘরে ফিরে গিয়েছিল। ১০,০০০ লোক অবশ্য তখনও থেকে গেল।
৪. তারপর প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “তবুও তোমার সঙ্গে অনেক বেশি লোক রয়েছে। তাদের জলের দিকে নিয়ে যাও, তোমার হয়ে আমি সেখানে তাদের পরীক্ষা করব। আমি যখন বলব, ‘এই লোকটা তোমার সঙ্গে যাবে,’ তখন সে যাবে। আবার যখন বলব, ‘ঐ লোকট৷ যাবে না,’ তখন সে যাবে না ৷ ”
৫. সেইমতো গিদিয়োন লোকগুলোকে জলের দিকে নিয়ে গেলেন। সেই জলের কাছে প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “এইভাবে লোকগুলোকে আলাদা আলাদ৷ করোঃ যারা কুকুরের মতো জিভ দিয়ে চুক্চুক্ করে জল পান করবে তারা হবে এক গোষ্ঠী, আর যারা মাথা নীচু করে জল পান করবে তারা হবে অন্য একটি গোষ্ঠী।”
৬. তিনশো জন লোক হাত দিয়ে মুখের কাছে জল নিয়ে কুকুরের মত চুকচুক করে জল পান করল। অন্যান্যরা পান করল মাথা হেঁট করে।
৭. প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “মিদিয়নীয়দের পরাজিত করতে আমি ঐ ৩০০ জন লোককে কাজে লাগাবো যারা কুকুরের মত চুকচুক করে জল পান করেছিল। আমি তাদের দ্বারাই ইস্রায়েলকে রক্ষা করব। বাকি লোকেরা বাড়ি চলে যাক।
৮. সেইমতো গিদিয়োন ৩০০ জন লোককে নিজের কাছে রেখে বাদ বাকি ইস্রায়েলীয়দের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। সেই ৩০০ জন লোক যারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল সেই সব লোকেদের সরবরাহকৃত জিনিসপত্র এবং শিঙাগুলো রেখে দিল। মিদিয়নের লোকেরা গিদিয়োনের তাঁবুর নীচে উপত্যকায় তাঁবু গেড়েছিল।
৯. রাত্রে প্রভু গিদিয়োনের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “ওঠো ! আমি তোমাকে মিদিয়ন সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করতে দেবো। তাদের তাঁবুর দিকে নেমে যাও।
১০. যদি একা যেতে ভয় পাও তাহলে তোমার ভৃত্য ফুরাকে সঙ্গে নাও।
১১. মিদিয়নদের শিবিরের লোকেরা কি সব বলছে তোমরা তা শুনবে। এসব শোনার পর তোমরা আক্রমণ করতে আর ভয় পাবে না।” তাই গিদিয়োন আর তার ভৃত্য ফুরা শত্রুপক্ষের শিবিরের একেবারে সীমানার দিকে চলে গেলেন।
১২. মিদিয়ন, অমালেক আর পূর্ব দেশের লোকেরা সেই উপত্যকায় তাঁবু ফেলল। এত লোকজন যে দেখে মনে হোত পঙ্গপালের ঝাঁক। আর তাদের এত উট যে মনে হোত তারা যেন সমুদ্রের ধারের অসংখ্য বালির কণা।
১৩. গিদিয়োন শত্রু শিবিরে এলেন। তিনি শুনতে পেলেন একজন ব্যক্তি তার বন্ধুকে একটা স্বপ্নের কথা বলছে। লোকটা বলছে, “আমি স্বপ্ন দেখলাম একটা গোল রুটি মিদিয়নদের তাঁবুর ওপর নেমে এসে এত জোরে ধাক্কা দিল যে তাঁবু উল্টে গিয়ে ধূলোয় লুটিয়ে গেল।”
১৪. বন্ধুটি স্বপ্নের অর্থ বুঝতে পারল। সে বলল, “তোমার স্বপ্নের একটিই অর্থ হয়। স্বপ্নটি হচ্ছে ইস্রায়েলের সেই পুরুষটিকে নিয়ে। তার নাম যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন। অর্থাৎ মিদিয়নের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করার জন্য ঈশ্বর গিদিয়োনকে পাঠিয়েছেন।”
১৫. গিদিয়োন তাদের স্বপ্ন নিয়ে কথাবার্তা শুনলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে মাথা নুইয়ে প্রণাম জানালেন। তারপর ইস্রায়েলীয়দের তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তাদের বললেন, “ওঠো ! মিদিয়নদের পরাজিত করতে প্রভু আমাদের সাহায্য করবেন।
১৬. গিদিয়োন ৩০০ জন লোককে তিনটি দলে ভাগ করে দিলেন। প্রত্যেককে একটি করে শিঙা আর খালি ঘট দিলেন। ঘটের মধ্যে ছিল একটা করে জ্বলন্ত মশাল।
১৭. তারপর গিদিয়োন বললেন, “তোমরা আমাকে লক্ষ্য করবে। আমি যা করি তোমরা তাই করবে। তোমরা আমার পেছনে পেছনে শত্রু-শিবিরের সীমানার কাছে চলে আসবে। ওখানে গিয়ে আমি যা করব তোমরাও ঠিক তাই করবে।
১৮. শত্রু শিবিরগুলো তোমরা ঘিরে ফেলবে। আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের নিয়ে আমরা শিঙা বাজাব। তখন তোমরাও শিঙা বাজাবে। তারপর চিৎকার করে বলে উঠবেঃ জয় প্রভুর জন্য ও গিদিয়োনের জন্য !
১৯. গিদিয়োন ১০০ জন লোক নিয়ে শত্রু শিবিরের সীমানায় পৌঁছলেন। ওখানে প্রহরীদের পালা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই তারা এসে পড়ল। রাত্রির মাঝামাঝি পাহারাদারির সময় তারা হানা দিল। গিদিয়োন ও তার লোকেরা শিঙা বাজাবার পর ঘটগুলো ভেঙ্গে ফেলল।
২০. তারপর গিদিয়োনের তিনটি বাহিনীর সকলেই শিঙা বাজিয়ে দিয়ে ঘটগুলি ভেঙ্গে দিলো। লোকেরা বাঁহাতে মশালগুলো আর ডানহাতে শিঙা ধরেছিল। শিঙা বাজাতে বাজাতে তারা ধ্বনি দিলঃ “প্রভুর তরবারি, গিদিয়োনের তরবারি !”
২১. গিদিয়োনের লোকেরা যেখানে ছিল সেখানেই রইল। কিন্তু তাঁবুর ভেতরে মিদিয়নের লোকেরা চিৎকার করতে করতে পালাতে লাগল।
২২. যখন ৩০০ জন লোক শিঙা বাজাল, প্রভু মিদিয়নের লোকেদের পরস্পরকে তরবারি দিয়ে হত্যা করালেন। শত্রু সৈন্যরা বৈৎ-শি নগরের দিকে পালাতে লাগল। বৈৎ-শিট্টা সরোরা নগরের কাছাকাছি ছিল। লোকগুলো দৌড়াতে দৌড়াতে একেবারে টব্বতের শহরের কাছে আবেল-মহোলা শহরের সীমানা পর্যন্ত চলে এল।
২৩. তারপর নপ্তালি, আশের এবং মনঃশির পরিবারগোষ্ঠীর সবাইকে বলা হল মিদিয়নদের হঠিয়ে দেবার জন্যে।
২৪. ইফ্রয়িমের পাহাড়ে দেশগুলোয় গিদিয়োন দূত পাঠিয়ে দিলেন। দূতেরা বলল, “তোমরা নেমে এসো। মিদিয়নদের আক্রমণ করো। বৈৎ-বার আর যদ্দন নদী পর্যন্ত যে নদী চলে গেছে তোমরা তার দখল নাও। মিদিয়নরা সেখানে যাবার আগেই এই কাজটা তোমরা করে নাও।” এইভাবে ইফ্রয়িম পরিবারগোষ্ঠীর সবাইকে দূতেরা আহবান করল। যে নদী বৈৎ-বারা পর্যন্ত বয়ে গেছে সেই নদী তারা অধিকার করল।
২৫. ইফ্রয়িমের লোকেরা দুজন মিদিয়ন নেতাকে ধরল। এদের নাম ওরেব আর সেব। তারা ওরেবকে “ওরেবের শিলা” নামে এক জায়গাতে হত্যা করল। সেবকে হত্যা করল সেবের দ্রাক্ষা মাড়াই ক্ষেত্রে। ইফ্রয়িমের লোকেরা মিদিয়নদের তাড়িয়ে দেবার কাজ চালিয়ে গেল। প্রথমে তারা ওরেব আর সেবের মস্তক কেটে নিয়ে গিদিয়োনের কাছে গেল। যেখান থেকে লোকেরা যদন নদী পার হয় গিদিয়োন সেখানেই ছিলেন।