মিদিয়নীয়দের সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের যুদ্ধ
১. আবার ইস্রায়েলবাসীরা পাপ কর্মে মেতে উঠল। তাই সাত বছর ধরে প্রভু মিদিয়নদের সহায় হয়ে রইলেন যাতে তারা ইস্রায়েলীয়দের দমিয়ে রাখতে পারে।
২. মিদিয়ন সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল ভীষণ শক্তিশালী। ইস্রায়েলবাসীদের ওপর তারা বেশ অত্যাচার করত। তাই ইস্রায়েলীয়রা পর্বতের নানা গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকত। সেখানেই খাবার দাবার লুকিয়ে রাখত। সেসব জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত ছিল।
৩. তারা যে এরকম সাবধান হয়ে গিয়েছিল তার কারণ মিদিয়নীয় এবং অমালেকীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা পূর্বদেশ থেকে সবসময় আক্রমণ করতো এবং তাদের ফসল নষ্ট করতো।
৪. আক্রমণকারীরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শিবির গেড়েছিল। তারা অনেক দূরে ঘসা শহর পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত শস্য নষ্ট করে দিয়েছিল। তারা ইস্রায়েলীয়দের খাবার মতো কিছুই অবশিষ্ট রাখল না। তারা তাদের মেষ, গরু, গাধা এসবও কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল।
৫. মিদিয়নীরা ওদের দেশে তাঁবু গেড়েছিল এবং সঙ্গে এনেছিল পরিবারের লোকজন, জীবজন্তু। পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো অগুণতি মানুষ তারা এবং তাদের আনা উটের সংখ্যা গোণা অসম্ভব ছিল। দেশটাকে ওরা একেবারে ছারখার করে দিল।
৬. মিদিয়নীদের অত্যাচারে ইস্রায়েলীয়রা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল। তাই তার৷ প্রভুর দয়া পাবার জন্যে কেঁদে আকুল হয়ে উঠল।
৭. মিদিয়নের লোকেরা অত্যাচারে মেতে উঠেছিল। সেই জন্যে ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কৃপার জন্যে কেঁদে আকুল হয়ে উঠল।
৮. তাই প্রভু তাদের কাছে একজন ভাববাদীকে পাঠালেন। ভাববাদী ইস্রায়েলবাসীদের বললেন, “প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর কি বলেন তা শোন। তিনি বলেছেন, ‘মিশরে তোমরা ক্রীতদাস ছিলে।
৯. আমি তোমাদের মুক্ত করে সেই দেশ থেকে নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের মিশরের এবং যারা তোমাদের নির্যাতন করেছে, তাদের সকলের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমি আবার সেই লোকেদের তাড়িয়ে বের করে দিয়েছি এবং তাদের দেশ তোমাদের দিয়েছি।
১০. তারপর আমি তোমাদের বলেছিলাম, আমি তোমাদের প্রভু ঈশ্বর। তোমরা ইমোরীয়দের দেশে বসবাস করবে বটে, কিন্তু কখনই তোমরা তাদের মূর্তির পূজা করবে না। কিন্তু তোমরা আমার কথা শোনোনি।
প্রভুর দূত গিদিয়োন দর্শন করলেন
১১. সেই সময়, প্রভুর দূত একজন লোকের কাছে এলেন। তার নাম ছিল গিদিয়োন। প্রভুর দূত অফ্রা নামক একটি জায়গায় একটি ওক গাছের নীচে বসলেন। ওক গাছটা ছিল যোয়াশ নামে একজন লোকের। যোয়াশ, গিদিয়োনের পিতা, অবীয়েষীয় বংশের লোক ছিলেন। গিদিয়োন একটি দ্রাক্ষা মাড়বার জায়গায় কিছু গম মাড়াই করছিলেন। প্রভুর দূত গিদিয়োনের কাছে বসলেন। গিদিয়োন লুকিয়েছিলেন যাতে মিদিয়নরা তাঁকে দেখতে না পায়।
১২. প্রভুর দূত গিদিয়োনের সামনে দেখা দিয়ে তাকে বললেন, “হে মহাসৈনিক প্ৰভু তোমার সহায় !”
১৩. গিদিয়োন বললেন, “মহাশয় আপনাকে একটা কথা বলব। প্রভু যদি সত্যিই আমাদের সহায়, তাহলে এত দুঃখ কষ্ট কেন? আমি শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্যে তিনি অনেক আশ্চর্য্য কাজ করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন যে প্রভু তাঁদের মিশর থেকে সরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কেবলমাত্র প্রভুর জন্যেই মিদিয়নরা আমাদের পরাজিত করতে পেরেছে।
১৪. প্রভু গিদিয়োনের দিকে ফিরে বললেন, “তোমার নিজের শক্তিকে কাজে লাগাও। যাও, মিদিয়নদের হাত থেকে ইস্রায়েলবাসীদের রক্ষা করো। এ কাজে আমি তোমাকেই পাঠাচ্ছি !”
১৫. গিদিয়োন বলল, “ক্ষমা করবেন। কি করে আমি ইস্রায়েলকে রক্ষা করব? মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে আমার পরিবারই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল। তাছাড়া এই পরিবারে আমিই সবচেয়ে ছোট।”
১৬. প্রভু বললেন, “আমি তোমার সঙ্গে আছি ! সুতরাং মিদিয়নদের তুমি সহজেই পরাজিত করতে পারবে ! এতই সহজ যে, মনে হবে তুমি যেন শুধু একজনের সঙ্গেই যুদ্ধ করছ।”
১৭. তখন গিদিয়োন প্রভুকে বলল, “যদি আপনি সত্যিই আমার ওপর প্রসন্ন হন তাহলে আপনি যে স্বয়ং প্ৰভু তার একটা প্রমাণ দিন।
১৮. দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন চলে যাবেন না। আমি আপনার জন্য নৈবেদ্য আনতে যাচ্ছি। সেই নৈবেদ্য আপনার কাছে নিবেদন করব। আপনি দয়া করে অনুমতি দিন।” প্রভু বললেন, “আমি তোমার ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।”
১৯. গিদিয়োন ভেতরে গিয়ে একটি কচি পাঁঠা গরম জলে ফোটালো। তাছাড়া সে প্রায় ২০ পাউণ্ড ময়দা দিয়ে খামিরবিহীন রুটি তৈরি করলো। তারপর মাংসটা সে একটা ঝুড়িতে আর ঝোলটা একটা পাত্রে রাখলো। সে মাংস, ঝোল আর রুটি নিয়ে ওক গাছের নীচে প্রভুকে পরিবেশন করল।
২০. প্রভুর দূত গিদিয়োনকে বললেন, “মাংস, রুটি ঐখানে পাথরের ওপর রাখো। ঝোলট। ঢেলে দাও।” গিদিয়োন তাই করলো।
২১. প্রভুর দূতের হাতে একটি ছড়ি ছিল। মাংস আর রুটির ওপর ছড়িটার ডগা ছোঁয়াতেই পাথর থেকে আগুন ছিটকে বেরল। মাংস, রুটি একেবারে পুড়ে গেল। তারপর প্রভুর দূত কোথায় মিলিয়ে গেলেন।
২২. তখন গিদিয়োন বুঝতে পারলেন যে তিনি এতক্ষণ প্রভুর দূতের সঙ্গেই কথা বলছিলেন। গিদিয়োন চেঁচিয়ে উঠল, “সর্বশক্তিমান প্রভু ! আমি প্রভুর দূতকে মুখোমুখি দেখেছি !”
২৩. প্রভু বললেন, “শান্ত হও ! এর জন্যে ভয় পেয়ো না, তুমি মরবে না !
২৪. অতঃপর গিদিয়োন সেই জায়গায় প্রভুর উপাসনার জন্যে একটি বেদী তৈরী করলেন। সে বেদীর নাম দিলেন, “প্রভুই শান্তি।” অফ্রা শহরে সেই বেদী আজও রয়েছে। এখানেই অবীয়েষীয়দের বংশের লোকেরা বসবাস করে।
গিদিয়োন বালের বেদী ভেঙ্গে ফেললেন
২৫. সেই রাত্রেই প্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “তোমার পিতার একটা সাত বছরের বেশ শক্তসমর্থ ষাঁড় আছে, তাকে সঙ্গে নাও। বালের মূর্ত্তি পূজার জন্যে একটি বেদী আছে, যেটা তোমার পিতা তৈরি করেছিলেন। বেদীর পাশে একটা কাঠের খুঁটি রয়েছে। খুঁটিটা আশেরার মূর্তিকে পূজা করার জন্যে। এবার ঐ ষাঁড়টিকে কাজে লাগাও, যাতে সে ঐ বালের বেদী, আশেরার খুঁটি ভেঙ্গে ফেলতে পারে।
২৬. ভাঙ্গার পর তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের জন্যে উপযুক্ত বেদী তৈরি করো। এই উঁচু জায়গাতেই সেটা তৈরি করো। তারপর এই বেদীতেই ঐ ষাঁড়টিকে বলি দিয়ে পুড়িয়ে দাও। জ্বালানোর জন্য আশেরার খুঁটিটাকে ব্যবহার করো।”
২৭. গিদিয়োন প্রভুর কথামতো দশ জন ভৃত্য নিয়ে কাজটি করলেন। কিন্তু তাঁর মনে ভয় হল যে, বাড়ির লোকেরা আর শহরের সবাই তাঁর কাণ্ড দেখে ফেলবে। অথচ প্রভুর নির্দেশ তাঁকে পালন করতেই হবে। কাজটা তিনি দিনের বেলায় নয়, রাত্রিতেই করলেন।
২৮. পরদিন সকালে শহরের লোকের৷ ঘুম থেকে উঠে দেখল, বালের বেদীটা শেষ হয়ে গেছে। তারা এটাও দেখল যে, আশেরার খুঁটিও কেটে ফেলা হয়েছে। বালের বেদীর পাশেই ছিল সেই খুঁটি। সেইসঙ্গে তারা দেখলো গিদিয়োনের তৈরি সেই বেদীটা। বেদীর উপর বলি দেওয়৷ ষাঁড়টিও তাদের চোখে পড়লো।
২৯. লোকেরা এ-ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কে আমাদের বেদীট৷ ভেঙ্গেছে? কে আশেরার খুঁটি কেটেছে? কে এই নূতন বেদীটায় ষাঁড় বলি দিয়েছে?” এইরকম নানা প্রশ্ন তারা নিজেদের মধ্যে করতে থাকল। একজন বলল, “যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন এসব করেছে।”
৩০. তারা যোয়াশের কাছে এল। তারা তাঁকে বলল, “তোমার পুত্রকে নিয়ে এসো। সে বালের বেদী ভেঙ্গেছে। সেই বেদীর পাশে আশেরার খুঁটি সে কেটে ফেলেছে। তার মরণ কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাকে মরতে হবেই।”
৩১. ঘিরে থাকা লোকেদের সামনে যোয়াশ বলল, “তোমরা কি বালের পক্ষ নিতে যাচ্ছ? তোমরা কি বালকে রক্ষা করতে যাচ্ছ? যদি কেউ তার পক্ষ নাও তাহলে কাল সকালের মধ্যেই তাকে মরতে হবে। বাল যদি সত্যিই দেবতা হয় তাহলে যে তার বেদী ভেঙ্গেছে তার বিরুদ্ধে সে নিজেকে রক্ষা করুক।”
৩২. যোয়াশ বলল, “যদি গিদিয়োন বালের বেদী ভেঙ্গে থাকে তবে বাল তার সঙ্গে বিবাদ করুক।” সেদিন থেকে যোয়াশ গিদিয়োনের একটা নতুন নাম দিলেন। যিরুবাল হচ্ছে সেই নতুন নাম।
গিদিয়োনের হাতে মিদিয়নীয়দের পরাজয়
৩৩. মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্বদেশের অন্যান্য লোকেরা একসঙ্গে মিলে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। যদ্দন নদী পেরিয়ে তারা যিষিয়েল উপত্যকায় শিবির গাড়ল।
৩৪. প্রভুর আত্মা গিদিয়োনের ওপর ভর করলেন। তিনি তাকে প্রচণ্ড শক্তি দিলেন। গিদিয়োন অবীয়েষীয় পরিবারকে আহবান করার জন্য শিঙা বাজাল।
৩৫. মনঃশি পরিবারগোষ্ঠীর সকলের কাছে সে বার্তাবাহক পাঠাল। বার্তাবাহকেরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলল। তাছাড়া গিদিয়োন আশের, সবূলূন আর নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠীর কাছেও বার্তাবাহক পাঠালেন। এই কথা বার্তাবাহকেরা তাদের বললে তারাও গিদিয়োন ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করলো।
৩৬. তখন গিদিয়োন ঈশ্বরকে বলল, “আপনি আমাকে সাহায্য করবেন বলেছিলেন যাতে ইস্রায়েলবাসীরা রক্ষা পায়। এ কথা যে সত্যি তা প্রমাণ করুন।
৩৭. যে জায়গায় শস্য ঝাড়াই হয় সেখানে আমি একট৷ মেষের ছাল রেখে দেব। যদি দেখি সব জায়গাই শুকনো অথচ সেই মেষের ছালে শিশির পড়েছে তাহলে বুঝব আপনি আমাকে দিয়ে ইস্রায়েল রক্ষা করবেন। এরকম কথাই তো আপনি বলেছিলেন।”
৩৮. ঠিক সে রকমই ঘটল। পরদিন খুব ভোরে গিদিয়োন ঘুম থেকে উঠে মেষের ছাল নিংড়ে নিলে ছাল থেকে এক বাটি ভর্তি জল বের হল।
৩৯. গিদিয়োন ঈশ্বরকে বলল, “হে প্রভু আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন না। আমি আপনার কাছে শুধু আর একটি জিনিস চাইব। মেষের ছাল নিয়ে আর একবার আপনাকে পরীক্ষা করতে দিন। এবারে ছালটা যেন শুকিয়ে যায় আর চারিদিকের মাটি যেন শিশিরে ভিজে থাকে।”
৪০. সেদিন রাত্রে ঈশ্বর সে রকমই করলেন। মেষের ছালটাই শুধু শুকিয়ে গেলো আর চারপাশের সমস্ত মাটি শিশিরে শিশিরে ভেজা ভেজা হয়ে রইল।