১-২. প্রভু ইস্রায়েল থেকে অন্যান্য জাতির সমস্ত লোকেদের সরিয়ে দিলেন না। তিনি ইস্রায়েলীয়দের পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। এই সময়, কোন ইস্রায়েলবাসী কনান দেশ দখল করতে কোন যুদ্ধ করেনি। প্রভু এদেশে অন্যান্য বিদেশীদের থাকতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (যারা কনান দখলের যুদ্ধগুলিতে ভাগ নেয় নি সেই ইস্রায়েলবাসীদের তিনি কেমন করে যুদ্ধ করতে হয় শিক্ষা দেবার জন্যই এরকম ব্যবস্থা করেছিলেন।) এদেশে তিনি যেসব জাতিকে থাকতে দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলঃ

৩. পলেষ্টীয় সম্প্রদায়ের পাঁচজন শাসক, সমস্ত কনানজাতি, সীদোনীয় লোকেরা এবং হিব্বীয় লোকেরা থাকত বাল্-হৰ্ম্মোণ পর্বত থেকে লেবো-হমাত পর্যন্ত ছড়ানো লিবানোনের পর্বতগুলিতে।

৪. ইস্রায়েলবাসীদের পরীক্ষা করার জন্য প্রভু তাদের থাকতে দিয়েছিলেন। তারা তাঁর আদেশ পালন করে কি না তিনি তা দেখতে চেয়েছিলেন। মোশির মাধ্যমে প্রভু সেইসব আজ্ঞা তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন।

৫. ইস্রায়েলের লোকেরা কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয়, যিষীয় এবং ইমোরীয়দের সঙ্গে পাশাপাশি বাস করত।

৬. তারা এইসব সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ে করত। তাদের মেয়েরা তাদের ছেলেদের বিয়ে করতে শুরু করল। ইস্রায়েলীয়রা ঐ সমস্ত লোকেদের দেবতাদের পূজা করতে শুরু করল।

প্রথম বিচারক – অৎনীয়েল

৭. প্রভুর দৃষ্টিতে ইস্রায়েলের লোকেরা মন্দ কাজ করেছিল। তারা প্রভু, তাদের ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে বাল এবং আশেরার মূর্তির পূজা করেছিল।

৮. প্রভু তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি অরাম নহরয়িমের রাজা কৃশন-রিশিয়াথয়িমকে ইস্রায়েলীয়দের হারিয়ে তাদের শাসন করবার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা আট বছর সেই রাজার অধীনে ছিল।

৯. কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কাঁদল। তখন প্রভু কালেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা কনসের পুত্র অত্নীয়েলকে তাদের রক্ষার জন্য পাঠালেন। অত্নীয়েল ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন।

১০. প্রভুর আত্মা অত্মীয়েলের ওপর এল। তিনি ইস্রায়েলীয়দের বিচারক হলেন। যুদ্ধে তাদের নেতৃত্ব দিলেন। প্রভুর সাহায্যে অত্নীয়েল অরামের রাজা কৃশন-রিশিয়াথয়িমকে পরাজিত করলেন।

১১. এরপর ৪০ বছর ধরে দেশে শান্তি বজায় ছিল। এই অবস্থা ছিল কনসের পুত্র অত্নীয়েলের মৃত্যু পর্যন্ত।

বিচারক এহুদ

১২. আবার ইস্রায়েলের লোকেরা সেসব কাজ করল যা প্রভুর বিবেচনায় মন্দ। সেইজন্যে তিনি মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করবার জন্য শক্তি দিলেন।

১৩. ইগ্লোন অম্মোন এবং অমালেক সম্প্রদায়ের লোকেদের কাছ থেকে সাহায্য পেল। তাদের নিয়ে ইগ্লোন ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করল। ইগ্লোন তাদের হারিয়ে ‘খেজুর গাছের শহর’ বা জেরিকো থেকে তাড়িয়ে দিল।

১৪. মোয়াবের রাজা ইগ্লোন ১৮ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিল।

১৫. ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল। তিনি তখন তাদের বাঁচানোর জন্য এহুদ নামে একজন লোককে পাঠালেন। এহুদ ছিল বাঁহাতি। তার পিতার নাম ছিল গেরা, বিন্যামীন বংশীয় লোক। ইস্রায়েলবাসীরা মোয়াবের রাজ৷ ইগ্লোনকে উপহার দেবার জন্য এহৄদকে পাঠালেন।

১৬. এহুদ নিজের জন্য একটি তরবারি তৈরী করল। তরবারিটির দুদিকেই ধার ছিল আর সেটা ছিল প্রায় ১৮ ইঞ্চি লম্বা। এহুদ তরবারিটি ডানদিকের ঊরুতে বেঁধে তার পোশাকের নীচে লুকিয়ে রাখল।

১৭. তারপর সে মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের কাছে এসে উপহার দিল । ইগ্লোন ছিল মোটাসোটা লোক।

১৮. উপহার দেবার পর এহুদ সঙ্গের লোকেদের বাড়ী পাঠিয়ে দিল। এরা উপহার বয়ে নিয়ে তার সঙ্গে এসেছিল।

১৯. তারা রাজার প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেল। এহুদ গিল শহরে শিলা মূর্ত্তিগুলোর কাছ থেকে ফিরে এসে ইগ্লোনকে বলল, “রাজা তোমার জন্য একটা গোপন খবর আছে।” রাজা বলল চুপ। তারপর সে ঘর থেকে ভৃত্যদের সরিয়ে দিল।

২০. এহুদ রাজা ইগ্লোনের কাছে এসেছিল। ইগ্লোন তখন গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদের উঁচুতলার একটা ঘরে একেবারে একা। তারপর এহুদ রাজাকে বলল, “তোমার জন্য ঈশ্বরের একটা বার্তা আছে।” শুনেই রাজ৷ সিংহাসন থেকে উঠে এহুদের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল।

২১. আর ঠিক এই সময় এহুদ বাঁ হাত দিয়ে ডান ঊরু থেকে তরবারি বের করে রাজার পেটে বিঁধিয়ে দিল।

২২. রাজার পেটের ভেতর তরবারির বাঁট শুদ্ধ ঢুকে গেল। রাজার চর্বিতে সেট৷ পুরোপুরি ঢুকে গেল। এহুদ রাজার পেটেই তরবারিটা রেখে দিল। তরবারি বিদ্ধ হয়ে রাজা ইগ্লোন মলত্যাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল এবং মল নির্গত হলো।

২৩. এহুদ ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

২৪. এহুদ চলে যাবার পর ভৃত্যরা ফিরে এলো। তারা দেখল ঘরের দরজা বন্ধ। তাই তারা নিজেরা বলাবলি করল, রাজা নিশ্চয়ই ঘরের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করছেন।

২৫. তারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু রাজা উপরের ঘরের দরজা খুললেন না। এবং শেষ পর্যন্ত তারা ভয় পেয়ে গেল। চাবি নিয়ে তারা দরজ৷ খুলে দেখল রাজা মেঝের উপর মরে পড়ে রয়েছেন।

২৬. ভৃত্যেরা যখন রাজার জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন এহুদ পালিয়ে যাবার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। সে মূর্ত্তিগুলোর পাশ দিয়ে যেতে যেতে সিয়ীরার দিকে পালিয়ে গেল।

২৭. সে সিয়ীরায় পৌঁছে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে শিঙা বাজাল। ইস্রায়েলবাসীরা শিঙার শব্দ শুনে পাহাড় থেকে নেমে এল। এহুদ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল।

২৮. এহুদ বলল, “আমাকে অনুসরণ কর ! প্রভু আমাদের শত্রু মোয়াবের লোকেদের পরাজিত করতে শক্তি দিয়েছেন।” তাই ইস্রায়েলবাসীরা এহৄদকে অনুসরণ করল। তারা সেইসব জায়গা দখল করল যেখান থেকে সহজেই যদ্দন নদী পেরনো যায়। সেইসব জায়গা মোয়াবের দিকে গিয়েছে। তারা কাউকে যদ্দন নদী পেরোতে দিল না।

২৯. তারা মোয়াবের ১০,০০০ সাহসী ও শক্তিশালী লোককে হত্যা করল। তাদের কেউ পালাতে পারে নি।

৩০. সেদিন থেকে ইস্রায়েলীয়রা মোয়াবের লোকদের শাসন করতে লাগল। সে দেশে ৪০ বছর শান্তি ছিল।

বিচারক শমগর

৩১. এহুদের পর আরও একজন লোক ইস্রায়েল- বাসীদের বাঁচিয়েছিল। তার নাম অনাতের পুত্র শর। শমগর একট৷ গরু তাড়ানোর লাঠি দিয়ে ৬০০ জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করেছিল।

error: Content is protected !!