বিন্যামীনদের পত্নী সংগ্রহের প্রস্ততি

১. মিস্পায় ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞা করলঃ “বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর ঘরে আমরা কেউ আমাদের মেয়েদের বিবাহ দেব না।”

২. ইস্রায়েলীয়রা বৈথেল শহরে গেল। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ঈশ্বরের কাছে বসে রইল। আকুল হয়ে কেঁদে কেঁদে তাঁরা বলল, “হে প্রভু ইস্রায়েলবাসীদের তুমিই ঈশ্বর।

৩. তাহলে এমন বিপদ হল কেন? কেন ইস্রায়েলীয়দের একটা পরিবারগোষ্ঠীকে পাওয়া যাচ্ছে না?”

৪. পরদিন ভোরে ইস্রায়েলীয়রা একট৷ বেদী তৈরি করল। সেই বেদীতে তারা ঈশ্বরের কাছে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করল।

৫. তারপর ইস্রায়েলীয় লোকেরা বলল, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এমন কোন পরিবার কি আছে যারা প্রভুর সামনে আমাদের এই প্রার্থনায় আসেনি?” এরকম জিজ্ঞাসার কারণ হচ্ছে তারা বেশ সাংঘাতিক ধরণের একটা প্রতিজ্ঞা করেছিল। তাদের প্রতিজ্ঞা ছিল অন্যান্য পরিবারগোষ্ঠীর সঙ্গে যদি কেউ মিস্পা শহরে যোগ না দেয় তবে তাকে হত্যা করা হবে।

৬. ইস্রায়েলীয়রা তাদের আত্মীয় বিন্যামীনদের জন্য দুঃখ বোধ করল। তারা বলল, “আজ ইস্রায়েল থেকে একটি পরিবারগোষ্ঠী পৃথক করা হয়েছে। 

৭. আমরা প্রভুর কাছে একটি শপথ করেছি, কোন বিন্যামীন পুরুষের সঙ্গে আমরা আমাদের মেয়েদের বিবাহ দেব না। কি করে আমরা নিশ্চিত জানব যে বিন্যামীনদের বিয়ে হচ্ছে?”

৮. ইস্রায়েলীয়রা জানতে চাইল, “ইস্রায়েলীয়দের কোন পরিবারগোষ্ঠী এখানে এই মিস্পায় আসেনি? আমরা এখানে প্রভুর সামনে সমবেত হয়েছি। নিশ্চয়ই একটা পরিবার এখানে আসেনি।” তারা দেখল, যাবেশ- গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে আসেনি। 

৯. ইস্রায়েলীয়রা গুনে দেখলো কে-কে এসেছে আর কে-কে আসেনি। দেখল যাবেশ-গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে আসেনি। 

১০. তারা যাবেশ-গিলিয়দে ১২,০০০ সৈন্য পাঠাল। সৈন্যদের তারা বলে দিল, “যাবেশ-গিলিয়দে গিয়ে সেখানকার প্রতিটি লোককে তরবারি দিয়ে হত্যা করবে। মেয়েদের আর বাচ্চাদের তোমরা ছেড়ে দেবে না।

১১. এ কাজ তোমাদের করতেই হবে। যাবেশ-গিলিয়দের প্রত্যেককে তোমরা হত্যা করবে, তাছাড়া যে সব মেয়েদের কারো- না-কারো সাথে যৌনসম্পর্ক আছে তাদেরও হত্যা করবে। তবে যে সব মেয়ের কোন পুরুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক হয়নি তাদের হত্যা করবে না।” সৈন্যরা তাই করল।

১২. ঐ ১২,০০০ সৈন্য যাবেশ-গিলিয়দে ৪০০ জন এমন মেয়ের দেখা পেল যারা কোন পুরুষের সঙ্গে এরকম সম্পর্ক স্থাপন করেনি। সৈন্যরা তাদের শীলোর শিবিরে নিয়ে এলো। শীলো কনানদের দেশে অবস্থিত।

১৩. তারপর ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীন লোকেদের কাছে খবর পাঠাল। তারা বিন্যামীনের লোকেদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাইল। বিন্যামীনের লোকেরা ছিল রিম্মোণ শিলায়।

১৪. বিন্যামীনরা তাই শুনে ইস্রায়েলে ফিরে এল। ইস্রায়েলীয়রা তাদের কাছে যাবেশ-গিলিয়দের সেইসব মেয়ে দিয়ে দিল যাদের তারা মারেনি। কিন্তু বিন্যামীনদের সংখ্যার তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশ কম ছিল।

১৫. ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনদের জন্য দুঃখ করল। তাদের দুঃখের কারণ ঈশ্বর বিন্যামীনদের অন্যান্য ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে দিয়েছেন।

১৬. ইস্রায়েলীয়দের প্রবীণরা বলল, “বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর মেয়েদের সব হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং যে সব বিন্যামীন সন্তান বেঁচে আছে তাদের জন্য কিভাবে পত্নীর ব্যবস্থা করা যায়?

১৭. যেসব বিন্যামীন সন্তান এখনও বেঁচে রয়েছে তাদের বংশ রক্ষা করার জন্য সন্তানসন্ততির অবশ্য প্রয়োজন। এটা করতেই হবে, নইলে ইস্রায়েলীয়দের একটা পরিবারগোষ্ঠী তো একেবারে লোপ পেয়ে যাবে।

১৮. কিন্তু আমাদের মেয়েদের সঙ্গে তো বিন্যামীন সন্তানদের বিয়ে হতে পারে না। আমরা এই নিয়ে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি। আমরা প্রতিশ্রুতি নিয়েছি যে, ‘বিন্যামীনদের ঘরে যে মেয়ে দেবে সে শাপগ্রস্ত হবে।

১৯. তাই আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। শীলো শহরে প্রভুর জন্য এই সময় একট৷ উৎসব হয়। প্রতিবছরই সেখানে উৎসব পালিত হয়।” (শীলো হচ্ছে বৈথেলের উত্তরে, আর বৈথেল থেকে শিখিমের দিকে যে রাস্তা চলে গেছে তার পূর্বদিকে। তাছাড়া লবোনা শহরের দক্ষিণেও শীলো শহরটা পড়বে।

২০. প্রবীণরা তাদের পরিকল্পনাটি বিন্যামীন সন্তানদের বলল। তারা বলল, “যাও দ্রাক্ষাক্ষেতে গিয়ে লুকিয়ে পড়।

২১. উৎসবের সময় শীলোর যুবতীরা কখন নাচতে আসবে সেদিকে খেয়াল করবে। তারপর যখনই তারা আসবে তখন দ্রাক্ষা ক্ষেতের লুকোনো জায়গা থেকে তোমরা বেরিয়ে আসবে। প্রত্যেকেই একটি করে যুবতী ধরে নেবে। তারপর ওদের নিয়ে বিন্যামীনদের দেশে গিয়ে বিয়ে করবে।

২২. এবং যদি মেয়েদের পিতা কিংবা ভাইয়েরা আমাদের কাছে নালিশ জানায়, তখন আমরা বলব, ‘বিন্যামীনদের ওপর তোমরা সদয় হও। তারা ঐ মেয়েদের বিয়ে করুক। তারা তোমাদের মেয়েদের নিয়েছে, তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে নি। তারা মেয়েদের গ্রহণ করেছে। সুতরাং ঈশ্বরের কাছে তোমর৷ যে প্রতিশ্রুতি করেছিলে তা ভঙ্গ করো নি। তোমরা প্রতিশ্রুতি করেছিলে যে ঐ মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের বিয়ে দেবে না। বিন্যামীনদের তোমরা মেয়ে দাওনি। বরং তারাই তোমাদের কাছ থেকে মেয়েদের নিয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কর নি।

২৩. এইভাবেই বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীরা কাজ করল। যুবতীরা যখন নাচছিল, প্রত্যেক পুরুষ তাদের একজন করে নিয়ে নিল। তাদের তুলে নিয়ে তারা বিয়ে করল। নিজেদের দেশে তারা ফিরে গেল। বিন্যামীনরা আবার সেই দেশে শহরগুলি গড়ল এবং সেই শহরগুলিতে বসবাস করতে লাগল।

২৪. তারপর ইস্রায়েলীয়রা ঘরে ফিরে গেল। তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের দেশে ও পরিবারগোষ্ঠীর কাছে ফিরে গেল।

২৫.সেইসময় ইস্রায়েলীয়দের কোন রাজা ছিল না। তাই যে যা ঠিক মনে করত তাই করত।

error: Content is protected !!