দানরা লয়িশ শহর দখল করল

১. সেইসময় ইস্রায়েলের কোন রাজা ছিল না। তখনও দান পরিবারগোষ্ঠী বসবাসের জায়গা খুঁজে পায় নি। তখনও তাদের নিজস্ব কোন জমি-জমা ছিল না। ইস্রায়েলের অন্যান্য পরিবারগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই জায়গা পেয়ে গিয়েছিল। দানরা পায় নি।

২. তাই দান পরিবারগোষ্ঠী দেশে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য পাঁচজন সৈন্যকে পাঠিয়ে দিল। ঐ পাঁচজন সরা আর ইষ্টায়োল শহরের লোক। এদের বেছে নেবার কারণ এরা দানদের সব পরিবার থেকেই এসেছে। তাদের দেশের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য বলা হল। পাঁচ জন পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমে পৌঁছল। তারা মীখার বাড়িতে এল এবং সেই রাতটা সেখানে কাটাল।

৩. তারা যখন মীখার বাড়ির বেশ কাছাকাছি এসেছে, তখন সেই লেবীয় যুবকের স্বর শুনতে পেল। তার স্বর শুনে তারা চিনতে পেরেছিল। এবার দাঁড়িয়ে গেল মীখার বাড়ির দোরগোড়ায়। যুবকটিকে ওরা জিজ্ঞাসা করল, “তোমাকে এখানে কে ডেকে এনেছে? এখানে তুমি কি করছ? এখানে তোমার কাজ কি?”

৪. যুবকটি মীখা তার জন্য কি কি করেছে বলল। যুবকটি বলল, “মীখা আমাকে কাজে রেখেছে। আমি তার যাজক।”

৫. তখন তারা বলল, “তাহলে ঈশ্বরের কাছে আমাদের জন্য কিছু চাও। আমর৷ জানতে চাই আমাদের জমি পাব কি না।”

৬. যাজক ঐ পাঁচ জনকে বলল, “হ্যাঁ, জমি তোমরা পাবে। তোমরা নিশ্চিন্তে যেতে পারো। প্রভু তোমাদের পথ চেনাবেন।”

৭. তাই ঐ পাঁচ জন চলে গেল। এবার এল লয়িশ শহরে। তারা দেখল শহরের লোকেরা বেশ নিরাপদে রয়েছে। সীদোনের লোকেরা তাদের শাসন করছে। দেশে শান্তি রয়েছে, তাদের কোন কিছুর অভাব নেই। কাছাকাছি কোথাও শত্রু নেই যে তাদের আক্রমণ করবে। তাছাড়া সীদোন শহর থেকে তারা অনেক দূরে রয়েছে, আর অরামের লোকেদের সঙ্গেও তাদের কোন চুক্তি নেই।

৮. ঐ পাঁচ জন সরা ও ইষ্টায়োল শহরে ফিরে এল। আত্মীয়স্বজনরা তাদের জিজ্ঞাসা করল, “বলো কি দেখে এলে?”

৯. ঐ পাঁচ জন বলল, “আমরা একটা জায়গা দেখেছি। বেশ ভাল। এবার আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না। চলো জমি দখল করি।”

১০. তোমরা সেখানে গেলেই দেখবে জমির ছড়াছড়ি। জিনিসপত্র অঢেল। তাছাড়া, তুমি আর একট৷ ব্যাপারও দেখবে যে, সেখানে লোকেরা কোনরকম আক্রমণের জন্যে তৈরি নয়। নিশ্চিত ঈশ্বর আমাদের ঐ জমিটি দিয়েছেন।”

১১. তাই সরা আর ইষ্টায়োল শহর থেকে দান পরিবারগোষ্ঠীর ৬০০ জন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে রওনা হল।

১২. লয়িশ শহরে যাবার পথে তারা কিরিয়ৎ-যিয়ারীম শহরের কাছাকাছি থামল। জায়গাটা যিহুদার। সেখানে তারা তাঁবু গাড়ল। সেইজন্য আজও কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পশ্চিম অঞ্চলটার নাম মহনে-দান। অর্থাৎ দানদের শিবির।

১৩. সেখান থেকে ৬০০ জন লোক পাহাড়ি দেশ ইফ্রয়িমের দিকে যাত্রা শুরু করল। তারা এল মীখার বাড়িতে।

১৪. লয়িশ জায়গাটি যে পাঁচ জন আবিষ্কার করেছিল, তারা নিজেদের লোকেদের বলল, “এখানকার একটি বাড়িতে একট৷ এফোদ আছে। তা ছাড়া বাড়িতে পূজা করার মতো অনেক দেবতা, খোদাই করা মূর্ত্তি আর একটা রূপোর প্রতিমা আছে। বুঝতেই পারছি কি করতে হবে। এসব নিয়ে নিতে হবে। যাও, ওসব নিয়ে এসো।”

১৫. তারপর তারা মীখার বাড়িতে এসে পৌঁছল। লেবীয় যুবকটি সেখানে থাকত। তারা তাকে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করল।

১৬. দান পরিবারগোষ্ঠীর ৬০০ জন লোক ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি।

১৭-১৮. পাঁচ জন গুপ্তচর বাড়ির ভেতর গেল। সদর দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রইল যাজক। তার পাশে যুদ্ধের জন্য ৬০০ জন লোক। লোকগুলি ঘরে ঢুকে খোদাই মূৰ্ত্তি, এফোদ, অন্যান্য মূর্ত্তি, রূপোর মূর্ত্তি সব নিয়ে নিলো। লেবীয় যাজকটি তাদের জিজ্ঞাসা করল, “এ তোমরা কি করছ?”

১৯. পাঁচ জন লোক বলল, “চুপ করো ! একটি কথাও বলবে না। আমাদের সঙ্গে এস। তুমি আমাদের পিতা ও যাজক হও। এখন স্থির কর তুমি কি করবে। ভেবে দেখ, একজনের যাজক হওয়া ভাল, না সমগ্র ইস্রায়েলীয় পরিবারগোষ্ঠীর যাজক হওয়া ভাল।”

২০. কথা শুনে লেবীয় যুবকটি খুশি হল। খোদাই মূর্ত্তি, অন্যান্য মূর্ত্তি, এফোদ এইসব নিয়ে সে দানদের সঙ্গে চলে গেল।

২১. তারপর দান পরিবারগোষ্ঠীর ৬০০ জন লোক লেবীয় যাজককে নিয়ে মীখার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। তাদের সামনে ছোট ছেলেমেয়ে, জীবজন্তু আর অন্যান্য জিনিসপত্র রইল।

২২. সেখান থেকে তারা অনেক দূরে এগিয়ে গেল। কিন্তু মীখার বাড়ির কাছাকাছি লোকেরা সব একজায়গায় জড়ো হল। তারপর তারা দানদের পিছু নিয়ে ওদের ধরে ফেলল।

২৩. মীখার সঙ্গের লোকেরা দানদের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে উঠল। দানেরা ঘুরে দাঁড়িয়ে মীখাকে বলল, “ব্যাপারটা কি? তোমরা চেঁচাচ্ছ কেন?”

২৪. মীখা তাদের বলল, “তোমরা দানরা আমার মূৰ্ত্তিগুলো নিয়ে গেছ। আমি নিজের জন্য ঐগুলো তৈরি করেছি। তোমরা আমার যাজককেও নিয়ে গেছ। আমার আর কি-ই বা আছে? তোমরা কোন মুখে আমাকে বলছ, ‘কি হয়েছে?’

২৫. দান পরিবারগোষ্ঠীর লোকেরা বলল, “তর্ক কোর না, চুপ করো। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বেশ রগচটা। চেঁচালেই এরা তোমায় আক্রমণ করতে পারে। তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে হত্যা করতেও পারে।”

২৬. এই কথা বলে তারা মুখ ফিরিয়ে চলতে শুরু করল। মীখা জানত তাদের শক্তি অনেক বেশি। তাই সে বাড়ি চলে এল।

২৭. মীখার তৈরি মূর্ত্তিগুলো দানরা নিয়ে নিলো। মীখার কাছ থেকে যাজককেও তারা নিয়ে গেল। তারপর তারা লয়িশে এল। তারা সেখানকার লোকেদের আক্রমণ করল। সেই লোকেরা ছিল শান্তিপ্রিয়। তারা কোন আক্রমণ আশা করতে পারেনি। দানরা তরবারি দিয়ে তাদের হত্যা করল এবং শহরটিতে আগুন লাগিয়ে দিল।

২৮. লয়িশের লোকেরা এমন কাউকে পেল না যে তাদের রক্ষা করতে পারবে। তারা সীদোন শহর থেকে অনেক দূরে ছিল, সুতরাং সিদোনীয়রা তাদের রক্ষা করতে ছুটে আসতে পারেনি। অরাম শহরের লোকেদের সঙ্গেও তাদের কোন ভালো সম্পর্ক ছিল না, তাই সেখান থেকেও তারা কোন সাহায্য পেল না। লয়িশ শহরটা ছিল বৈৎ-রহোব শহরের কাছে একটা উপত্যকায়। দানের লোকেরা সেখানে একটা নতুন বসতি স্থাপন করে সেই জায়গাটাকেই তারা নিজেদের দেশ বলে গড়ে তুলল।

২৯. তারা সেই শহরটার একটা নতুন নাম দিল। লয়িশের নাম হল দান। তাদের পূর্বপুরুষ, ইস্রায়েলের পুত্রদের একজন, দানের নামানুসারেই তারা এই নাম রাখল।

৩০. দান পরিবারগোষ্ঠীর লোকেরা দান শহরে মূর্ত্তিগুলো প্রতিষ্ঠা করল। গের্শোমের পুত্র যোনাথনকে তারা যাজক করল। গেশোম হচ্ছে মোশির পুত্র। যোনাথন ও তার পুত্রেরাই ছিল দানদের যাজক। যতদিন না ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ততদিন পর্যন্ত তারা যাজক ছিল। মীখার তৈরী মূর্ত্তিগুলো দানরা পূজো করতো। যতদিন শীলোতে ঈশ্বরের গৃহ ছিল ততদিন সর্বক্ষণই তারা ঐসব মূৰ্ত্তি পূজো করত।

error: Content is protected !!