শিশোনের ঘসা যাত্ৰা
১. একদিন শিশোন ঘসা শহরে গেল। সেখানে সে একজন গণিকাকে দেখতে পেল। তার কাছে একরাত্রি সে থাকতে গেল।
২. কেউ একজন ঘসার বাসিন্দাদের বলল, “শিম্শোন এখানে এসেছে।” তারা শিমশোনকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাই তারা শহরটা ঘিরে ফেলল। ওরা শিশোনের জন্য লুকিয়ে থেকে অপেক্ষা করতে লাগল। সারারাত তারা শহরের ফটকের পাশে চুপচাপ জেগে রইল। তারা বলাবলি করতে লাগল, “সকাল হলেই আমরা শিশোনকে বধ করব।”
৩. কিন্তু শিশোন গণিকার সঙ্গে মাঝরাত পর্যন্ত থাকল। মাঝরাতে সে উঠে পড়ল। শহরের ফটকের দরজা চেপে ধরে সে দেওয়াল থেকে টেনে দরজা আলগা করে দিল। তারপর সে খুলে নিল দরজা, দুটো খুঁটি, দরজা বন্ধ করার খিল। এগুলো সে কাঁধে নিয়ে হিরোণ শহরের কাছে পাহাড়ের মাথায় উঠে গেল।
শিমশোন এবং দলীলা
৪. পরে শিমশোন দলীলা নামে এক নারীর প্রেমে গেঁথে ফেলল। আবার সে শিশোনকে ডাকল, পড়ল। দলীলা থাকত সোরেক উপত্যকায়।
৫. পলেষ্টীয় শাসকেরা দলীলার কাছে গিয়ে বলল, “শিশোন কিসে এত শক্তিশালী হয় আমরা জানতে চাই। তুমি কায়দা করে তার এই গোপন রহস্যটা জেনে নিতে চেষ্টা কর। তাহলে তাকে কি করে ধরে বেঁধে ফেলা যায় তা আমরা জানব। তাহলেই তাকে আমরা ইচ্ছামত চালাতে পারব। যদি এটা করতে পার তাহলে আমরা প্রত্যেকে তোমাকে ২৮পাউণ্ড করে রূপো পুরস্কার দেব।”
৬. সেইমতো দলীলা শিম্শোনকে বলল, “আচ্ছা বল তো, তুমি কি করে এতো শক্তি পেলে? কিভাবে তোমাকে বেঁধে ফেলে বেকায়দায় ফেলা যায়?”
৭. শিমশোন বলল, “নতুন সাতটা ধনুক বাঁধা দড়ি, যে দড়িগুলো শুকনো নয়, তাই দিয়ে আমায় বেঁধে ফেলতে হবে। যদি কেউ তা পারে তাহলেই আমি আর পাঁচজনের মত দুর্বল হতে পারব।”
৮. পলেস্টীয়রা একথা শুনে সাতটা নতুন ধনুক বাঁধা দড়ি দলীলালে এনে দিল। সেই ধনুক বাঁধা দড়ি তখনো শুকিয়ে যায় নি। দলীলা সেই দড়ি দিয়ে শিমশোনকে বেঁধে ফেলল।
৯. কিছু লোক পাশের ঘরে লুকিয়ে ছিল। দলীলা শিমশোনকে বলল, “শিমশোন, পলেস্টীয়রা তোমাকে ধরে ফেলতে যাচ্ছে।” কিন্তু শিমশোন সহজেই দড়িগুলো খুলে ফেলল। আগুনের শিখার খুব কাছে এলে একটা সুতো যেমন হয় তেমনি করে দড়িগুলো খসে পড়ল। সুতরাং পলেস্টীয়রা শিমশোনের শক্তির রহস্য ভেদ করতে পারল না।
১০. দলীলা শিমশোনকে বলল, “তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ ! তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। এখন বল তো, কি করে লোকে তোমাকে বেঁধে ফেলতে পারে?
১১. শিমশোন বলল, “আমাকে নতুন দড়ি দিয়ে বাঁধতে হবে। সেই দড়ি যেন আগে কেউ ব্যবহার না করে। এরকম দড়ি দিয়ে কেউ আমাকে বাঁধলে আমি আর পাঁচ জনের মতো দুর্বল হয়ে যাবো।
১২. দলীলা কয়েকটা নতুন দড়ি দিয়ে শিমশোনকে বেঁধে ফেলল। পাশের ঘরে কিছু লোক লুকিয়ে ছিল। দলীলা শিমশোনকে বলল, “শিমশোন পলেস্টীয়রা তোমাকে ধরতে আসছে !” শিমশোন সহজেই দড়ি খুলে ফেলল। সেগুলো সে সুতোর মতো ছিঁড়ে ফেলল।
১৩. দলীলা শিমশোনকে বলল, “তুমি আবার মিথ্যে কথা বলেছ ! তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। এবার বল তো কি করে তোমাকে বেঁধে ফেলা যায়? শিম্শোন বলল, “যদি তুমি তাঁত দিয়ে আমার মাথায় চুলের সাতটি বিনুনী বেঁধে একটি পিন দিয়ে আটকে দাও তাহলে আমি আরও পাঁচট৷ সাধারণ লোকের মতো দুর্বল হয়ে যাব।” পরে শিশোন ঘুমোতে গেল। দলীলা তার মাথার চুলের সাতটি গোছা নিয়ে তাঁতে বুনলো।
১৪. তারপর তাঁবুর খুঁটির সঙ্গে সেই বোনা চুলগুলিকে বেঁধে মাটিতে গেঁথে ফেলল। আবার সে শিমশোনকে ডাকল। “পলেস্টীয়রা তোমাকে ধরতে আসছে !” শিমশোন তাঁত আর মাকু সব খুলে ফেলল।
১৫. দলীলা শিমশোনকে বলল, “তুমি তো আমায় বিশ্বাসই করো না? তুমি কি করে বলো যে, ‘আমি তোমায় ভালবাসি।’ গোপন ব্যাপারট৷ তুমি আমাকে বললে না। এই নিয়ে তিনবার তুমি আমাকে বোকা বানালে। তোমার শক্তির গোপন কথা তুমি আমাকে বললে না।”
১৬. দিনের পর দিন দলীলা শিমশোনকে রাগিয়ে তুলতে লাগল। তার ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ক্লান্তিতে সে যেন মরমর অবস্থায় পৌঁছল।
১৭. সে এটা আর সহ্য করতে পারল না। শেষ পর্যন্ত সে দলীলাকে সবকিছুই বলে দিল। সে বলল, “আমি কখনও চুল কাটি না। আমার জন্মের আগে থেকেই আমাকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ আমার চুল কেটে নেয়, তাহলে আমি অন্য পাঁচজন সাধারণ লোকের মতো দুর্বল হয়ে পড়ব।”
১৮. দলীলা বুঝতে পারল শিমশোন তার গোপন কথাটা এবার সত্যই বলেছে। পলেষ্টীয় শাসকদের কাছে সে একটা খবর পাঠাল। সে বলে পাঠাল, “আর একবার ফিরে এসো, শিম্শোন আমায় সব বলে দিয়েছে।” এই খবর পেয়ে তারা আবার দলীলার কাছে চলে এল। প্রতিশ্রুতিমত দলীলাকে দেবার মত টাক৷ নিয়ে এল।
১৯. দলীলার কোলে মাথা দিয়ে শিমশোন যখন শুয়ে ছিল, সেই সময় দলীলা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর সে একজন লোককে শিমশোনের চুলের গোছা কেটে নেবার জন্য ডাকল। এইভাবে দলীলা শিমশোনকে শক্তিহীন করে দিল। শিমশোনের শক্তি চলে গেল।
২০.দলীলা শিমশোনকে ডেকে বলল, “শিমশোন, পলেষ্টীয়রা তোমাকে ধরবার জন্য আসছে !” শিম্শোন জেগে উঠে ভাবলো, “আমি আগের মতোই নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারব।” কিন্তু সে বুঝতে পারেনি যে প্রভু তাকে ছেড়ে চলে গেছেন।
২১. পলেষ্টীয়রা শিমশোনকে ধরে ফেলল। তারা তার চোখ খুবলে নিয়ে তাকে ঘসা শহরে নিয়ে গেল এবং যাতে সে পালিয়ে না যায় সেজন্য চেন দিয়ে বাঁধল। তারপর কারাগারে তাকে ঢুকিয়ে যাঁতায় শস্য পিষতে বাধ্য করল।
২২. কিন্তু আবার শিমশোনের চুল গজাতে লাগলো।
২৩. পলেষ্টীয়দের শাসকেরা সবাই উৎসব করতে জড়ো হল। তারা তাদের দেবতা দাগোনের কাছে একটা মস্ত বড় নৈবেদ্য দেবার ব্যবস্থা করছিল। তারা বলল, “আমাদের দেবতাই আমাদের শিমশোনকে হারিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।”
২৪. পলেষ্টীয়রা শিমশোনের দিকে তাকাল এবং তাদের দেবতার প্রশংসা করতে শুরু করল। তারা বললঃ এই লোকটা আমাদের লোককে হত্যা করেছে এবং আমাদের দেশ ধ্বংস করেছে। আমাদের দেবতা আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়ী করেছে !
২৫. লোকেরা উৎসবে বেশ মেতে উঠলো। তারা বলল, “শিশোনকে বের করে আনো। আমরা তাকে নিয়ে মজা করব।” কারাগার থেকে শিমশোনকে নিয়ে এসে তারা ওকে নিয়ে মজা করতে লাগল। দাগোনের মন্দিরের থামের মাঝখানে তারা শিমশোনকে দাঁড় করাল।
২৬. একজন ভৃত্য শিমশোনের হাত ধরে ছিল। শিম্শোন তাকে বলল, “যে দুই থামের উপর মন্দিরের উপরের অংশের ভার রয়েছে তা আমাকে ছুঁতে দাও। আমি সেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে চাই।”
২৭. মন্দিরে ঠাসা ভিড়। পলেষ্টীয়দের শাসকরা সেখানে সব এসেছে। মন্দিরের ছাদে প্রায় ৩,০০০ নরনারী। তারা শিমশোনকে নিয়ে হাসাহাসি করছে, মজা করছে।
২৮. শিমশোন প্রভুর কাছে এই প্রার্থন৷ করলেন, “হে সর্বশক্তিমান প্রভু তুমি দয়া করে আমায় স্মরণ করো। ঈশ্বর, আর একবার তুমি আমায় শক্তি দাও । এই একটা কাজ আমায় করতে দাও, আমি যেন এই পলেষ্টীয়দের আমার দুই চোখ উপড়ে নেওয়ার জন্য শাস্তি দিতে পারি !”
২৯. তারপর শিমশোন মন্দিরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুটো থামকে ধরল। থাম দুটো সমস্ত মন্দিরটাকে ধরে রেখেছিল। দুটো থামের ভেতর সে নিজেকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করল। একটি থাম তার ডানদিকে, আরেকটা বাঁদিকে।
৩০. শিম্শোন বলল, “এই পলেষ্টীয়দের সঙ্গে আমার প্রাণ যাক !” তারপর যত জোরে পারল থামদুটোকে ধাক্কা দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত শাসকদের ও লোকজনের ওপর মন্দিরটা ভেঙ্গে পড়ে গেল। এইভাবে শিমশোন বেঁচে থাকা অবস্থায় যত পলেষ্টীয় হত্যা করেছিল, মরে গিয়ে তার চেয়ে ঢের বেশি পলেষ্টীয় হত্যা করল।
৩১. শিমশোনের ভাই আর পরিবারের লোকেরা সবাই তার শবদেহ নিতে এলো। তাকে নিয়ে তারা তার পিতার সমাধিতে কবর দিল। সমাধিটা রয়েছে সরা আর ইষ্টায়োল শহরের মাঝখানে। ২০ বছর ধরে শিম্শোন ইস্রায়েলীয়দের বিচারক ছিলেন।