শিমশোনের জন্ম

১. আবার ইস্রায়েলীয়রা পাপ কাজে মেতে উঠল। প্রভু তাদের লক্ষ্য করলেন। তাই প্ৰভু পলেষ্টীয়দের উপর ৪০ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করার ভার দিলেন।

২. সরা শহরে মানোহ নামে একজন লোক ছিল। সে ছিল দান পরিবারগোষ্ঠীর লোক। মানোহর স্ত্রী ছিল নিঃসন্তান।

৩. একদিন প্রভুর এক দূত তার স্ত্রীর কাছে দেখা দিয়ে বলল, “তুমি বন্ধ্যা হয়ে রয়েছ। কিন্তু তুমি গর্ভবতী হবে, তোমার সন্তান হবে। 

৪. দ্রাক্ষারস বা কোন কড়া পানীয় পান কোরো না। অশুচি কোন খাদ্য খাবে না।

৫. কারণ তুমি গর্ভবতী হবে এবং একটি পুত্রের জন্ম দেবে। সেই পুত্রকে ঈশ্বরের কাছে একটা বিশেষ উপায়ে উৎসর্গ করা হবে। উপায়টা হচ্ছে, সে হবে নাসরতীয়। তাই কখনও তার চুল কাটবে না। সে জন্মাবার আগে থেকেই ঈশ্বরের একজন বিশেষ ব্যক্তি হবে। সে-ই পলেষ্টীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করবে।”

৬. তখন সেই স্ত্রী তার স্বামীর কাছে গিয়ে সবকিছু বলল। সে বলল, “ঈশ্বরের কাছ থেকে একজন আমার কাছে এসেছিল। তাকে দেখতে ঈশ্বরের এক দূতের মতো। আমি বেশ ভয় পেয়েছিলাম। এমনকি আমি তাকে জিজ্ঞাসাও করিনি সে কোথা থেকে এসেছে। সে তার নাম কিছুই বলল না।

৭. সে শুধু এটুকুই বলল, ‘তুমি গর্ভবতী হবে। তোমার পুত্র হবে। দ্রাক্ষারস বা কোন ঝাঁজাল কড়া পানীয় পান করবে না। কোন অশুদ্ধ খাবার খাবে না। কারণ তোমার সেই সন্তানকে ঈশ্বরের কাছে কোন বিশেষ পদ্ধতিতে উৎসর্গ করা হবে। সে জন্মাবার আগে থেকেই ঈশ্বরের একজন বিশেষ ব্যক্তি হবে এবং আমৃত্যু সে তাই থাকবে।”

৮. তাই শুনে মানোহ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। সে বলল, “হে প্রভু, দয়া করে আপনি ঈশ্বরের সেই ব্যক্তিকে আবার আমাদের কাছে পাঠান। যে শিশু অচিরেই জন্মাবে, তাকে আমরা কিভাবে গড়ে তুলব বলে দিন।”

৯. ঈশ্বর মানোহর প্রার্থনা শুনলেন। ঈশ্বরের দূত আবার তার স্ত্রীকে দেখা দিলেন। সে তখন মাঠের মধ্যে এক৷ বসেছিল। মানোহ তার সঙ্গে ছিল না।

১০. সে ছুটে স্বামীর কাছে গিয়ে বলল, “সেই ব্যক্তিটি যে আগে একবার আমার কাছে এসেছিল, আবার এসেছে !”

১১. মানোহ স্ত্রীর সঙ্গে তার কাছে এল। সে জিজ্ঞাসা করল, “আপনিই কি সেই, যিনি এর আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন?” প্রভুর সে দূত বললেন, “হ্যাঁ আমিই।”

১২. মানোহ বলল, “আশা করি যা বলেছেন তাই হবে। এবার বলুন ছেলেটি কিরকমভাবে জীবন কাটাবে? সে কি করবে?”

১৩. প্রভুর দূত মানোহকে বলল, “আমি যা-যা করতে বলেছি তোমার স্ত্রীকে সে সব অবশ্যই করতে হবে।

১৪. যে সব জিনিস দ্রাক্ষালতায় জন্মায়, সে সব যেন সে না খায়। কোন দ্রাক্ষারস বা চড়া ধরণের কোন পানীয় যেন সে কিছুতেই না পান করে। কোন অশুচি খাবার সে কোন মতেই খাবে না। ঠিক যা-যা আদেশ দিয়েছি লোকদের এমনকি সুন্নৎ পর্যন্ত হয় নি।” শিশোন এসব সেই রকমই কাজ যেন সে করে।” কথা শুনল না।

১৫. তখন মানোহ প্রভুর দূতকে বলল, “দয়া করে আপনি একটু বসুন। আমরা আপনাকে কচি পাঁঠার মাংস রান্না করে খাওয়াব।”

১৬. প্রভুর দূত বলল, “তোমরা আমাকে যেতে না দিলেও আমি তোমাদের সঙ্গে খাবো না। তবে একান্তই যদি কিছু করতে চাও তাহলে প্রভুর উদ্দেশ্যে হোমবলি উৎসর্গ করো।” (মানোহ বুঝতে পারেনি যে লোকটি সত্যিই প্রভুর দূত।)

১৭. মানোহ প্রভুর দূতকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কি আপনার নাম জানতে পারি? কারণ আপনার কথামত সবকিছু হলে আমরা আপনাকে সম্মান জানাব।”

১৮. প্রভুর দূত বললেন, “কেন তুমি আমার নাম জানতে চাইছ? এটা তো আশ্চর্য্য ব্যাপার !

১৯. তারপর মানোহ একট৷ পাথরে একট৷ কচি পাঁঠাকে বলি দিল। সেই সঙ্গে একটি শস্য নৈবেদ্যও প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করল এবং সে একটি আশ্চর্য্য কাজ করল।

২০. মানোহ আর তার স্ত্রী যা ঘটেছিল তার সব দেখল। বেদী থেকে আগুনের শিখা যখন আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছিল তখন প্রভুর দূত আগুনের মধ্য দিয়ে স্বর্গে চলে গেল । এই দৃশ্য দেখার পর তারা দুজন ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করল।

২১. প্রভুর সেই দূত আর কখনও মানোহ এবং তার স্ত্রীর কাছে আবির্ভূত হয়নি। অবশেষে মানোহ বুঝতে পারল যে লোকটি সত্যিই প্রভুর দূত।

২২. মানোহ তার স্ত্রীকে বলল, “আমরা ঈশ্বর দর্শন করেছি ! এখন আমরা নিশ্চিৎ মারা যাব !”

২৩. কিন্তু তার স্ত্রী বলল, “প্রভু আমাদের মারতে চান না। তা যদি হত তাহলে তিনি আমাদের হোমবলি ও শস্যের নৈবেদ্য গ্রহণ করতেন না। তিনি আমাদের এইসব দৃশ্য দেখাতেন না। তা যদি হত তাহলে তিনি আমাদের এইসব কথা বলতেন না।”

২৪. তারপর তার একটি সন্তান হল। সে তার নাম দিল শিমশোন। শিমশোন বড় হয়ে উঠল। প্রভু তাকে আশীর্বাদ করলেন। 

২৫. শিমশোন যখন মহনেদান শহরে ছিল তখন তার উপর প্রভুর আত্মা ভর করল। শহরটি সরা আর ইষ্টায়োল শহরের মাঝখানে অবস্থিত।

error: Content is protected !!