হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র, আবূ বিশর, আবূ উআয়নাহ, মূসা ইব্‌ন ইসমাঈল ও ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেনঃ

‘হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন- ‘নবী করীম (সাঃ) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আমার বয়স দশ বৎসর। এই বয়সেই আমি কুরআন মজীদের ‘মুহকাম’ (المحكم) অংশের তিলাওয়াত শিখিয়া ফেলিয়াছিলাম।’ উক্ত রিওয়ায়েতের অন্যতম রাবী সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র বলেন- কুরআন মজীদের যে অংশকে তোমরা ‘মুফাস্সাল’ (المفصل) নামে আখ্যায়িত করিয়া থাকো, উহার এক নাম ‘মুহকাম’ (المحكم) বটে।’

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র, আবূ বিশর, হাশীম, ইয়াকূব ইবন ইবরাহীম ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেনঃ ‘হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন- নবী করীম (সাঃ)-এর জীবদ্দশায়ই আমি কুরআন মজীদের ‘মুহকাম’ অংশটি আয়ত্ত করিয়া ফেলিয়াছিলাম।’ রাবী সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র বলেন, আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম- কোন অংশটির নাম ‘মুহকাম’? তিনি বলিলেন- ‘মুফাস্সাল নামক অংশটির আরেক নাম হইতেছে ‘মুহকাম।’ উক্ত রিওয়ায়েতটি শুধু ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম মুসলিম উহা বর্ণনা করেন নাই। উহা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বালক-বালিকাদের পক্ষে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত শিক্ষা করা জায়েয। কারণ স্বয়ং হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর কথায় জানা যাইতেছে যে, নবী করীম (সাঃ)-এর ইন্তিকালের সময়ে তাঁহার বয়স দশ বৎসর ছিল এবং এই বয়সেই তিনি কুরআন মজীদের মুফাস্সাল অংশটুকু আয়ত্ত করিয়া ফেলিয়াছিলেন। উল্লেখ্য যে, সূরা হুজুরাত হইতে শেষ পর্যন্ত অংশ ‘মুফাস্সাল’ নামে অভিহিত হইয়া থাকে। ইমাম বুখারী অন্যত্র হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন- ‘নবী করীম (সাঃ)-এর ইন্তিকালের সময়ে আমি খতনাকৃত বালক ছিলাম। সেই সময়ে বালকদের বয়ঃপ্রাপ্ত হইবার পূর্বে তাহাদের খতনা সম্পাদিত হইত না।’ উপরোক্ত রিওয়ায়েতগুলির মধ্যে সামঞ্জস্যের একটি পথ এই হইতে পারে যে, হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) মাত্র দশ বৎসর বয়সেই বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন। উহার মধ্যে সামঞ্জস্যের আরেকটি পথ এই হইতে পারে যে, তিনি মাত্র দশ বৎসর বয়সে নহে; বরং দশ বৎসরের অধিক বয়সেই বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন; কিন্তু দশ বৎসরের অতিরিক্ত বৎসরের সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেন নাই। আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।

সে যাহা হউক, উক্ত রিওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বালক-বালিকাগণকে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শিক্ষা দেওয়া জায়েয। ইহা সহজবোধ্য কথা। এমনকি উহা কখনও কখনও মুস্তাহাব অথবা ওয়াজিবও হয়। কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক হইবার পূর্বে বালক-বালিকাগণ কুরআন মজীদ তিলাওয়াত শিক্ষা করিলে নামাযের জন্যে প্রয়োজনীয় কুরআন মজীদের অংশ প্রাপ্তবয়স্ক হইবার কালে তাহাদের জানা থাকে। অধিক বয়সে কুরআন মজীদ হিফজ করা অপেক্ষা অল্প বয়সে হিফজ করা শ্রেয়তর। উহাতে কুরআন মজীদ সহজেই হিফজ হইয়া যায় এবং স্মৃতিতে অধিকতর দৃঢ়ভাবে গাঁথা থাকে। বাস্তব ঘটনাই ইহার প্রমাণ বহন করে ৷

পূর্বসূরী কোন কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলিয়াছেন যে, বালক-বালিকাগণকে তাহাদের প্রথম বয়সে কিছু দিন খেলাধূলার জন্যে ছাড়িয়া দেওয়া উচিত। তারপর তাহাদের মধ্যে কুরআন মজীদ পড়িবার মত দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতা সৃষ্টি হইলে তাহাদিগকে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শিক্ষা দেওয়া উচিত। এইরূপ করিলে তাহারা কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শিক্ষা করা আরম্ভ করিবার পর উহাতে বিরক্ত ও অনিচ্ছুক হইয়া খেলাধূলায় ফিরিয়া আসিবে না। কেহ কেহ বলেন- শিশুর মধ্যে যতদিন কথা বুঝিবার মত বুদ্ধি না আসে, ততদিন তাহাকে কুরআন মজীদের তিলাওয়াত শিক্ষা না দেওয়াই ভাল। কিছুটা বুদ্ধি আসিবার পর তাহার বুদ্ধি অনুযায়ী অল্প অল্প করিয়া তাহাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। হযরত উমর (রাঃ) শিশুকে পাঁচ আয়াত করিয়া শিক্ষা দেওয়া পছন্দ করিতেন। আমরা তাঁহার নিকট হইতে উহা সহীহ সনদে (অন্যত্র) বর্ণনা করিয়াছি।

error: Content is protected !!