বার্ষিক বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ
মাননীয় সভাপতি সাহেব, উপস্থিত সুধীবৃন্দ এবং আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীগণ। আজ আমার সামান্যতম বৃত্তিদানের পঞ্চম বার্ষিক অনুষ্ঠান। আমার এ ক্ষুদ্র লাব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করা হয় বিগত ১৩৮৬ মোতাবেক ১৯৭৯ সালে। এবং উক্ত সাল থেকেই বৃত্তিদান শুরু করা হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের সুকোমল হস্তে সর্বপ্রদান ও লাইব্রেরীর শুভ উদ্বোধন পর্বে পৌরোহিত্য করেন তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাননীয় আ. আউয়াল সাহেব ২৫.১.৮১ তারিখে, দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অতঃপর ১৯৮০ সালের বৃত্তি প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শ্রীযুক্ত বাবু অরবিন্দ কর ৩.৫.৮১ তারিখে, ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮১ সালের বৃত্তি প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মাননীয় সিরাজুল ইসলাম সাহেব ১০.১.৮২ তারিখে, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮২ সালের বৃত্তি প্রদান করেন মহকুমা প্রশাসক মাননীয় এম.এ. মতিন সাহেব ১৪.১.৮৩ তারিখে, ৪টি প্রাথমিক ও ১টি মাধ্যমিক – মোট ৫টি বিদ্যালয়ে। এবং ১৯৮৩ সালের বৃত্তি রদান করবেন অদ্যকার অনুষ্ঠানের সভাপতি মাননীয় ইউ.এন.ও. সাহেব অদ্য ১৪.১.৮৪ তারিখে, তাও ৫টি বিদ্যালয়ে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, আমার বৃত্তিপ্রদানের প্রথম বছর বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো ২টি, দ্বিতীয় বছর ৩টি, তৃতীয় বছর ৪টি এবং চতুর্থ বছর ৫টি। পূর্বের বছরগুলির ন্যায় সংখ্যা বাড়াতে পারলে এ বছর বিদ্যালয়ের সংখ্যা হওয়া উচিত ছিলো ৬টি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্যবশত এ বছর সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। হয়তো আর পারবোও না কোনোদিন। কেননা ১৩৬৭ সালের পরে সম্পদ বলতে আমার কিছুই ছিলো না, একমাত্র কায়িক শক্তি ছাড়া। কায়িক শক্তির দ্বারাই আমি মাঠে মাঠে দিনমজুরি করেছি আমিন রূপে। আর তারাই ফল আমার এ প্রতিষ্ঠান। বার্ধক্যজনিত শক্তিহীনতার দরুন এখন আর মাঠে মাঠে কাজ করতে পারছিনা। তাই এ বছর বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়াতে পারছি না। তবে বরিশাল জনতা ব্যাংকে, চকবাজার শাখায় আমি এক্টী রিজার্ভ ফান্ড করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বছর ৫০.০০ টাকা করে মজুত রাখার ব্যবস্থা করেছি, যার শুধু মুনাফার দ্বারাই অন্তত ৫ বছর পর পর একটি করে বৃত্তিদানযোগ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। আমি আশা করি যে, এ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে প্রতি ১০০ বছরে ২০টি করে বৃত্তিদানযোগ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে এবং এরূপ সংখ্যাবৃদ্ধি অনন্তকাল চলতে থাকবে, যদি কোনোরূপ রাষ্ট্রীয় বিভ্রাট না ঘটে।
মাননীয় সভাপতি সাহেব ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ। আপনারা হয়তো জানেন যে, আমার সামান্য সম্বল যা কিছু ছিলো, তা সবই দান করেছি জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে, এমনকি নিজ দেহটিও। ঐ একই উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু তাতে এখনো অভাব রয়েছে বহু, যা পূরণ করা আমার সামর্থের বাইরে। গণশিক্ষার মাধ্যম রূপে লাইব্রেরী ভবনে একটি টেলিভিশন সেট থাকা আবশ্যক বলে মনে করি। কিন্তু তা আমার সামর্থে কুলোচ্ছে না। এ বিষয়ে সদাশয় ইউ.এন.এ. সাহেবের শুভদৃষ্টি প্রার্থনা করছি।
হে আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীগণ। তোমরা যারা এ বছর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান পাওনি, তারা আগামী বছর প্রথম স্থান পাবার জন্য আপ্রাণ যত্ন নিবে এবং যারা প্রথম স্থান পেয়েছ, তারা আজ বৃত্তিদান গ্রহণ করবে এবং আগামী দিনেও আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে। তোমাদের সুস্বাস্থ্য ও পাঠানুরাগ বৃদ্ধির জন্য আমার আশীর্বাদ রইলো।
মাননীয় সভাপতি সাহেব ও সুধী অতিথিবৃন্দ। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও শ্রম স্বীকার করে শহর থেকে বহুদূরে এ নগণ্য পল্লীতে পদার্পণ করেছেন। যার ফলে আমার বৃত্তিদান অনুষ্ঠানটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে, ধন্য হয়েছে লামচরি গ্রামখানি। আর এর জন্য আপনাদেরকে সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
ধন্যবাদ, শুভ হোক।
১৪.১.১৯৮৪
অপ্রকাশিত
৮.১ মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভাষণ
৮.২ বাংলাদেশ সোসিও-ফিলসফিক হিউম্যানিস্ট গিল্ড সেমিনারে ভাষণ
৮.৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৪ নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৫ গুণী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৬ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৭ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.৮ মানবিক উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা সেমিনারে ভাষণ
৮.৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় ভাষণ
৮.১০ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ
৮.১১ বার্ষিক বৃত্তিপ্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১২ বাংলাদেশ কুটির শিল্প সংস্থায় ভাষণ
৮.১৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.১৪ বাংলাদেশ দর্শন সমিতিতে ভাষণ
৮.১৫ বার্ষিক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১৬ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীতে ভাষণ
৮.১৭ বাংলা একাডেমীর সংবর্ধনা ভাষণ