আজ থেকে প্রায় ৪২ বছর আগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী প্রয়াত হরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর দুই ছেলের জমিতে বাবা তারকনাথের আদেশক্রমে (?) মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগ্রহ পাথরের। সাধারণের কাছে প্রচলিত এটি ‘ভুঁইফোড় শিব’। সেবাইত –বাসুদেব দাস। লন্ড্রিতে কাজ করতেন। বর্তমানে অবতার। ছোটবেলা থেকেই নাকি তারকনাথকে দেখছেন, তারকনাথের সঙ্গে খেলেছেন। রোগীদের পরপর চার সপ্তাহ প্রতি সোমবারে মন্দিরে গিয়ে নিজের রোগের কথা জানাতে হয়। ভোলাবাবার আদেশ মতো বাসুদেব ওষুধ দেন। ওষুধ বলতে বাবার স্নানজল, ফুল-বেলপাতা ইত্যাদি রয়েছে।
মন্দিরে রোগমুক্ত রোগীদের নাম-ঠিকানা ঝোলান রয়েছে। যত বড় রোগই হোক না কেন সব রোগেই মুশকিল আসান হয়। জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকা ‘আলোকপাত’ –এর পাতায় রঙ্গিন ছবি সহ অলৌকিক তারক ভোলার কাহিনী প্রকাশিত হওয়ার পর বাবার রমরমা বেড়েছে।
ওঁ
নূতন তীর্থ তারক ভোলার মন্দির
আশ্চর্য পুরুষ শ্রীশ্রীবাসুদেব
যুগে যুগে –এ যুগেও নিজের জীবনকে তীলে তীলে শেষ করে শত শত মুমূর্ষু মানুষকে মুক্তি দিয়ে যাও তাই তোমাকে আমি চিরকাল মাথায় করে রাখি।
আর ভক্তের অন্তরে ধ্বনিত হয় যে কথা –
বহু যুগ থেকে তুমি আজও আছ সাথে সাথে আস যাও, কর খেলা সবই থাকে হৃদয়ে গাঁথা। তবুও যখন তুমি করগো খেলা কারো সাধ্য কি তোমায় ধরা? জীবের তরে যাতনা সহে আপন জীবন বিলায়ে দিয়ে শান্তি আন বহু প্রাণে, তাই কত মানুষ ছুটে আসে ভালবেসে তোমার টানে, ধন্য তারা তোমার নামে।
আমাদের ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সমস্ত মানুষকে জানাই নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা। হে মুমূর্ষু-পীড়িত ব্যাধিগ্রস্থ মানুষ এই তীর্থ ও সেবাইত আপনাদের সেবায় সর্বদাই ব্যস্ত।
মন্দিরের ঝোলানো নাম ঠিকানা ধরে আট জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের সমিতি। দেখে রিংকা মজুমদারের শ্বেতী সারেনি। মাধবী মজুমদারের জীবনে স্টোভ বারস্ট করে দৃষ্টি হারাবার ঘটনাই ঘটেনি। শ্যামাপদ দত্তের মানসিক ভারসাম্যের অভাব এখনো আছে। চন্দন দাস ক্যন্সারের আক্রমণ থেকে মুক্ত হয়নি। সনকা পালের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। সুদীপ দাস মৃগী রোগ থেকে মুক্ত হতে এখনো বাবার স্নানজল ও চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ওষুধ দুটোই গ্রহণ করে চলেছেন। ওষুধ বন্ধ করে পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। সেক্ষেত্রে অসুস্থতা বেড়েছে। রুমা ঘোষ নাকি জলের ভুলে হাত ও পায়ের অসারতার শিকার হন। বাবা পঞ্চানন ঘোষ বলতে পারেন নি কত বছর হল অসুখ হয়েছিল। কোন চিকিৎসক চিকিৎসা করেছিলেন। দেখাতে পারেন নি চিকিৎসকের কোন নির্দেশ-পত্র। আর একটি তথ্য এখানে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ – সেবাইত বাসুদেব নাকি রুমার সম্পর্কে কাকা। সাবিত্রী পাল অশ্বমুক্ত হয়েছেন। বাবা কিছু গাছ-গাছালি দিয়েছিলেন। অর্শ অনেক সময় নিজে থেকেই রক্তপাত বন্ধ রাখে। এ বিষয়ে আগেই আলোচনা করেছি। এছাড়া আরও একটি সম্ভাবনা রয়ে গেছে – বাবা অলৌকিক কিছুর পরিবর্তে আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রয়োগ করেছিলেন।
গিয়েছিলাম নূতন তীর্থ- তারক ভোলার মন্দির ও আশ্চর্য পুরুষ শ্রীশ্রীবাসিদেবের দর্শন লাভের আশায়। দিনটা ৭ জানুয়ারী ১৯৯০। দর্শনার্থীদের গাড়ির ভিড় দেখে বুঝলাম বিজ্ঞাপনের খরচটা চুড়ান্তভাবেই সার্থক হয়েছে।
বাবার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করতে আশ্চর্য পুরুষের এক আশ্চর্য চামচা প্রথম বাধা দিলেন। পুলিশি জেরা চালিয়ে গেলেন। এতকিছুর পরও আশ্চর্য পুরুষের দর্শন মিলল না। পরিবর্তে চামচা যা বললেন, তার সারমর্ম – আমি যদি প্রবীর ঘোষ হই তো…। এরপর যেসব নোংড়া কথা বললেন সেগুলো ছাপার অযোগ্য।
রাগের কারণটা বোঝার চেষ্টা করলাম। তবে কি আমাদের পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের কর্মধারায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে? ৫ তারিখে রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠান চিঠিটা কি ইতিমধ্যেই শ্রীশ্রীবাসুদেবের কাছে পৌঁছে গেছে? আমার ছোট্ট চিঠিটায় বাসুদেবকে অপমান করার মতো একটি কথাও লিখেছি বলে তো বরং ছিল তাঁকে প্রণামী দেওয়ার অঙ্গীকার। পুরো চিঠিটাই তুলে দিচ্ছি পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ন্যায়-বিচার পাবার আশায়।
শ্রীশ্রী বাসুদেব সেবাইত, ৫.১.১৯৯০
বাবা তারক ভোলার মন্দির
৩৮, প্রামাণিক ঘাট রোড
কলকাতা- ৭০০ ০৩৬
বাবা তারক ভোলার কৃপায় ও আপনার অতিন্দ্রীয় ক্ষমতায় কৃপাপ্রার্থী প্রতিটি রোগী রোগমুক্ত হয়েছেন বলে বহু প্রচার শুনেছি ও পড়েছি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও লোকমুখে আপনার প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের অথবা তাঁদের প্রিয়জনদের রোগ-মুক্তি কামনায় আপনার কাছে আসছেন। আমিও আপনার অতিন্দ্রীয় ক্ষমতায় আকৃষ্ট।
অলৌকিক কোন ঘটনা বা অলৌকিক ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তির কথা শুনলে আমি ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রকৃত সত্য জানতে সত্যানুসন্ধান চালিয়ে থাকি। এই ধরণের সত্যকে জানার প্রচেষ্টাকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে নিশ্চয়ই আপনি স্বাগত জানাবেন।
আপনার দাবির বিষয়ে একটি সত্যানুসন্ধান চালাতে আপনার কাছে পাঁচজন রোগীকে হাজির করতে চাই। আপনি ছ’মাসের মধ্যে রোগীদের রোগমুক্ত করতে পারলে আপনার অতিন্দ্রীয় ক্ষমতা এবং বাবা তারক ভোলার মাহাত্ম্য অবশ্যই স্বীকার করে নেবো ও প্রণামী হিসেবে আপনাকে দেবো ৫০ হাজার টাকা।
আগামী সাত দিনের মধ্যে আপনি চিঠির উত্তর না দিলে অথবা অনুসন্ধানের কাছে সহযোগিতা না করলে অবশ্যই ধরে নেবো আপনি মিথ্যাচারী ও বুজরুক।
শুভেচ্ছান্তে – প্রবীর ঘোষ
এমনি আরও বহু বহু অবতারের রোগমুক্তির ক্ষমতার উপর সমীক্ষা চালিয়েছি আমরা। প্রতিটি ঘটনা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করলেও একটা মোটা-সোটা বই হয়ে যাবে। এইসব সমীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌছেছি –
যারা বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতায় বা স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের সাহায্যে যে কোন রোগ সারাবার দাবিদার, তারা প্রত্যেকেই হয় বুজরুক, নয় পাগল। অবতারদের সকলকেই ঠগ ও ধান্দাবাজ বলতে পারি না। এঁদের অনেকেই ঈশ্বর সম্বন্ধে জন্মগত ভাবে নানা ভ্রান্ত ধারণার শিকার।
এই যুগেই বেশ কিছু অবতারদের দেখতে পাচ্ছি, যারা নানা রকম সেবামূলক কর্মসূচির মুখোশ এঁটে চূড়ান্তভাবে মানুষ ঠকিয়ে অর্থ রোজগারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম-ব্যবসায়ে আজ তারা একদিকে যেমন বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে উঠেছে, তেমনি ভক্ত রাজনৈতিক নেতাদের ও উঁচু সমাজের লোকদের কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছে সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতার অধিকারী।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ