যোষেফ ফাঁদ পাতলেন
১. তারপর যোষেফ তাঁর ভৃত্যদের এক আদেশ দিয়ে বললেন, “ওদের প্রত্যেকের বস্তা বইবার ক্ষমতা অনুসারে শস্য ভর্তি করে দাও। আর প্রত্যেকের টাকাও তাদের শস্যের সঙ্গে রেখে দাও।
২. আমার ছোট ভাইয়ের বস্তায় তার টাকাটা রেখ এবং তার সঙ্গে আমার বিশেষ রূপোর পেয়ালাটাও রাখ।” ভৃত্যরা যোষেফের কথা মত কাজ করল।
৩. পরের দিন ভোরবেলা ভাইদের গাধায় করে দেশে ফেরার জন্য বিদেয় করা হল।
৪. তারা শহর ছেড়ে বেরোলে যোষেফ তার ভৃত্যকে বললেন, “যাও, ওদের পিছু নাও। ওদের থামিয়ে বল, ‘আমরা তোমাদের প্রতি কি ভাল ব্যবহার করি নি? তবে তোমরা কেন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে? কেন তোমরা আমার মনিবের রূপোর পেয়ালা চুরি করলে?
৫. আমার মনিব সেই পেয়ালা থেকে পান করেন এবং গণনার জন্যও ব্যবহার করেন। তোমরা যা করেছ তা অন্যায় কাজ।”‘
৬. ভৃত্যটি সেই মত কাজ করল। সে সেখানে পৌঁছে ভাইদের থামালো। যোষেফ যা বলতে বলেছিলেন, ভৃত্যটি সেই মত কথা বলল।
৭. কিন্তু ভাইরা ভৃত্যটিকে বলল, “রাজ্যপাল কেন এইরকম কথা বলছেন? আমরা সেইরকম কোন কাজ করতেই পারি না।
৮. আমরা আমাদের বস্তায় যে টাকা আগের বার পেয়েছিলাম তা ফিরিয়ে এনেছিলাম। তাহলে নিশ্চয়ই আমরা তোমার মনিবের বাড়ী থেকে সোনা কি রূপা কিছুই চুরি করতে পারি না।
৯. তুমি যদি সেই রূপোর পেয়ালা আমাদের কারও বস্তায় খুঁজে পাও তবে তার মৃত্যু হোক। তুমি তাকে তাহলে হত্যা এবং সেক্ষেত্রে আমরাও তোমার দাস হব।”
১০. ভৃত্যটি বলল, “আমরা তোমাদের কথা মতই কাজ করব। কিন্তু আমি সেই জনকে হত্যা করব না। আমি রূপোর পেয়ালা খুঁজে পেলে সেই জন আমার দাস হবে, অন্যরা যেতে পারে।”
বিন্যামীন ফাঁদে ধরা পড়ল
১১. তখন প্রত্যেক ভাই তাড়াতাড়ি মাটিতে নিজেদের বস্তা খুলে ফেলল।
১২. ভৃত্যটি বস্তাগুলি দেখতে লাগল। জ্যেষ্ঠ থেকে শুরু করে কনিষ্ঠের বস্তা খুঁজে দেখলে বিন্যামীনের বস্তায় সেই পেয়ালা খুঁজে পাওয়া গেল।
১৩. ভাইরা এতে অত্যন্ত দুঃখিত হল। তারা তাদের শোক প্রকাশ করতে জামা ছিঁড়ে ফেলল। নিজেদের বস্তা আবার গাধায় চাপিয়ে শহরে ফিরে চলল।
১৪. যিহূদা তার ভাইদের নিয়ে যোষেফের বাড়ী গেল। যোষেফ তখনও বাড়ীতে ছিলেন। ভাইরা তার সামনে মাটিতে পড়ে তাকে প্রণাম করল।
১৫. যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা কেন এ কাজ করেছ। তোমরা কি জানতে না যে আমি গণনা করতে পারি। এ কাজে আমার থেকে ভালো কেউ নেই।”
১৬. যিহূদা বলল, “মহাশয়, আমাদের বলবার কিছুই নেই। ব্যাখ্যা করারও পথ নেই। আমরা যে নির্দোষ তা প্রমাণ করারও পথ নেই। অন্য কোন অন্যায় কাজের জন্য ঈশ্বর আমাদের বিচারে দোষী করেছেন। সেইজন্য আমরা সবাই এমনকি, বিন্যামীনও, আপনার দাস হব।”
১৭. কিন্তু যোষেফ বললেন, “আমি তোমাদের সবাইকে দাস করব না। কেবল যে পেয়ালা চুরি করেছে সেই আমার দাস হবে। বাকী তোমরা তোমাদের পিতার কাছে শান্তিতে ফিরে যাও।”
যিহুদা বিন্যামীনের জন্য মিনতি করলেন
১৮. তখন যিহূদা যোষেফের কাছে গিয়ে বললেন, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে সব কথা পরিস্কার করে আপনাকে বলতে দিন। দয়া করে আমার প্রতি রাগ করবেন না। আমি জানি আপনি ফরৌণের সমান।
১৯. আমরা আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমাদের একজন পিতা আর ভাই আছে কি?’
২০. আমরা আপনাকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘আমাদের এক পিতা আছেন, তিনি বৃদ্ধ। আমাদের এক ছোট ভাই রয়েছে। আমাদের পিতা তাকে ভালবাসেন কারণ সে তার বৃদ্ধ বয়সের সন্তান। আর সেই ছোট ভাইয়ের নিজের এক ভাই মারা গেছে। তাই তার মায়ের পুত্রদের মধ্যে একমাত্র সেই বেঁচে আছে এবং তার পিতা তাকে খুব ভালবাসেন।
২১. তারপর আপনি বললেন, “তবে সেই ভাইকেই আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাকে দেখতে চাই।’
২২. আর আমরা আপনাকে বললাম, ‘সেই ছোট ভাই পিতাকে ছেড়ে আসতে পারে না। আর পিতা তাকে হারালে শোকেতে মারাই যাবেন।’
২৩. কিন্তু আপনি আমাদের বললেন, ‘তোমাদের অবশ্যই সেই ভাইকে আনতে হবে নতুবা আমি শস্য বিক্রি করব না।’
২৪. তাই আমরা ফিরে গিয়ে আপনি যা বলেছিলেন তা আমাদের পিতাকে জানালাম।
২৫. “পরে আমাদের পিতা বললেন, ‘যাও, গিয়ে আরও কিছু শস্য কিনে আনো।’
২৬. আর আমরা পিতাকে বললাম, ‘আমরা ছোট ভাইকে না নিয়ে যেতে পারি না। রাজ্যপাল বলেছেন ছোট ভাইকে না দেখলে তিনি আমাদের কাছে শস্য বিক্রি করবেন না।’
২৭. তখন আমাদের পিতা বললেন, ‘তোমরা জান আমার স্ত্রী রাহেলের দুটি সন্তান হয়।’
২৮. তাদের একজনকে আমি যেতে দিলে বন্য জন্তু তাকে মেরে ফেলল। সেই থেকে আর কখনও তাকে দেখিনি।
২৯. তোমরা যদি অন্য জনকেও আমার কাছে থেকে নিয়ে যাও আর তার যদি কিছু ঘটে তাহলে আমি শোকে মারা যাব।’
৩০. এখন ভেবে দেখুন ছোট ভাইকে নিয়ে বাড়ী না ফিরলে কি ঘটবে – এই ছোট ভাই পিতার প্রাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
৩১. ছোট ভাইকে আমাদের সঙ্গে না দেখলে আমাদের পিতার মারাই যাবেন আর দোষটা হবে আমাদেরই। তাহলে আমরা আমাদের বৃদ্ধ পিতাকে এই দুঃখের কারণে মেরে ফেলব।
৩২. “এই ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব আমিই নিয়েছিলাম। আমি পিতাকে বলেছিলাম, ‘আমি যদি তাকে তোমার কাছে ফিরিযে না আনি তবে সারাজীবন আমি অপরাধী হয়ে থাকব।’
৩৩. তাই এখন আমার এই ভিক্ষা, দয়া করে ছোট ভাইকে তার ভাইদের সঙ্গে ফিরতে দিন। আর আমি এখানে আপনার দাস হয়ে থাকি।
৩৪. ঐ ছোট ভাই না ফিরলে আমি পিতাকে মুখ দেখাতে পারবো না। ভেবে ভয় পাচ্ছি আমার পিতার কি হবে।”