বাংলা একাডেমী কর্তৃক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ
মাননীয় সভাপতি সাহেব, বাংলা একাডেমীর সংশ্লিষ্ট মণীষীগণ, উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও অন্যান্য বন্ধুগণ! বাঙ্গালী জাতির প্রগতিপথের আলোকস্তম্ভ হচ্ছে বাংলা একাডেমী। যে সমস্ত সুধীবৃন্দ এ মহতী প্রতিষ্ঠানটির ধারণ, বহন ও পরিচালনা কাজে নিয়োজিত আছেন, তাঁরা কয়েকটি অস্বাভাবিক ব্যাপারের সমন্বয় ঘটিয়েছেন আজকের এ মহান অনুষ্ঠানটিতে। প্রথম অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলা একাডেমীর বিদগ্ধ সমাজের কোনো অনুষ্ঠানে আমার মতো পল্লীবাসী একজন অশিক্ষিত কৃষককে আমন্ত্রণ করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, আমাকে সংবর্ধনা প্রদান করা এবং তৃতীয় অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে, আমাকে ‘ফেলো’ পদ দানের প্রস্তাব করা। আমার মনে হয় যে, এ সমস্ত হচ্ছে তাঁদের উদারতা ও মহত্ত্বের প্রকাশ। আমাকে সংবর্ধনা দান করার মাধ্যমে তাঁরা দেশবাসীকে দেখাতে চাচ্ছেন যে, তাঁরা তুচ্ছ মতকেও তুচ্ছ করেন না, গ্রহণ করেন সাদরে। নতুবা আজ আপনারা আমাকে যে সংবর্ধনা দান করছেন, তা কোনরূপ যোগ্যতার মাপকাঠিতে আমার প্রাপ্য নয়।
মাননীয় সভাপতি সাহেব ও শ্রদ্ধেয় সুধীবৃন্দ, যারা আমাকে দেখেননি, শুধু আমার নামটিই জানেন, তাঁরা যা-ই মনে করুন না কেন, যারা আমাকে ভালভাবে চিনেন তাঁরা জানেন যে, আমি কি পরিমাণ মূর্খ। আধুনিক সমাজে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র না থাকলে অথবা ইংরেজি ভাষা না জানলে সে শিক্ষিত বলে বিবেচিত হয় না। অথচ এ দু’টোর একটিও আমার দখলে নেই।
বর্তমান জগতে উচ্চতর জ্ঞান লাভের মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। আর তাই অনায়ত্ত। একাধিক ভাষা বিশেষত ইংরেজি না জানায় আমি পঙ্গু। আর পঙ্গু ব্যক্তির পক্ষে কায়ক্লেশে সমতল ভূমিতে চলা সম্ভব হলেও যেমন পর্বতে আরোহণ করা সম্ভব নয়, তেমন ইংরেজি ভাষা না জানার ফলে আমি উচ্চতর জ্ঞান লাভ হতে আছি বঞ্চিত। আমার মতো পঙ্গু বাঙ্গালী এদেশে যারা আছেন, তাঁরা কামনা করেন এবং আমিও কামনা করি যে, বাংলা ভাষা আরও সমৃদ্ধ হোক, যাতে আমরা ইংরেজি ভাষার সাহায্য ছাড়া শুধু বাংলা ভাষার মাধ্যমেই উচ্চতর জ্ঞান লাভের সুযোগপ্রাপ্ত হই। পরম আনন্দ ও আশার বিষয় এই যে, বাংলা ভাষার দৈন্য দূর করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই বাংলা একাডেমী সচেষ্ট হয়েছে এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, অনুবাদ ও গবেষণামূলক কিছুসংখ্যক পুস্তক বাংলা ভাষায় প্রকাশের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের অভাবের তুলনায় যথেষ্ট নয়। তবে দেশের সুধী ও বুদ্ধিজীবী সমাজ এ বিষয়ে একাডেমীর সাথে একাত্ম হলে বাংলা ভাষা তার দীনতা ঘুচিয়ে অচিরেই স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মাননীয় সভাপতি সাহেব, বাংলা একাডেমীর সংশ্লিষ্ট মণীষীগণ ঐ উপস্থিত সুধীবৃন্দ! মামুলি আলোচনা দ্বারা আমি আপনাদের আর অধিক কষ্ট দিতে চাই না। আপনারা আপনাদের অমূল্য সময় নষ্ট করে এবং কষ্ট স্বীকার করে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন, এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এবং আপনাদের সাদর সংবর্ধনা সানন্দে গ্রহণপূর্বক আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ, শুভ হোক।
বাংলাদেশ অমর হোক।
১.১.১৩৯২
অপ্রকাশিত
৮.১ মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভাষণ
৮.২ বাংলাদেশ সোসিও-ফিলসফিক হিউম্যানিস্ট গিল্ড সেমিনারে ভাষণ
৮.৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৪ নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৫ গুণী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৬ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.৭ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.৮ মানবিক উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা সেমিনারে ভাষণ
৮.৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় ভাষণ
৮.১০ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ
৮.১১ বার্ষিক বৃত্তিপ্রদান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১২ বাংলাদেশ কুটির শিল্প সংস্থায় ভাষণ
৮.১৩ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীর বার্ষিক বিবরণী ভাষণ
৮.১৪ বাংলাদেশ দর্শন সমিতিতে ভাষণ
৮.১৫ বার্ষিক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ
৮.১৬ আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরীতে ভাষণ
৮.১৭ বাংলা একাডেমীর সংবর্ধনা ভাষণ