গত ১৫ বছরে জিন বা বংশগতি নিয়ে গবেষণা যতটা এগিয়েছে, তার আগের ১৫০ বছরে জিন গবেষণার সামগ্রিক সাফল্য সেই তুলনায় অতি সামান্য । পাশাপাশি স্নায়ুবিজ্ঞানের জগতে এসেছে অসামান্য সাফল্য। আশ্চর্য সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জিন-বিজ্ঞানী ও স্নায়ুবিজ্ঞানীরা।
স্কটল্যান্ডের ড. উইলমট ও তাঁর সহকর্মীরা ৬ বছরের একটি স্ত্রী ভেড়ার স্তনগ্রন্থির থেকে একটি কোষ নিয়ে তা থেকে একটা ভেড়ার সৃষ্টি করেছিলেন। নাম রাখা হয়েছিল ‘ডলি’। বিজ্ঞানের ভাষায় এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার নাম ‘ক্লোনিং’।
ডলির ক্লোনিংয়ের এক সপ্তাহ পরেই জিন-বিশেষজ্ঞরা আরও বড় ধরনের একটা বিস্ফোরণ ঘটালেন। আমেরিকার ওরিগন রিজিওনাল প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা বানরের ভ্রুণকোষ থেকে যমজ বানরের সৃষ্টি করলেন। এই ক্লোনিং বিজ্ঞানের চোখে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বানর মানুষের খুবই কাছাকাছি প্রাণী। একটি বানরের সঙ্গে মানুষের জিনগত পার্থক্য শতকরা এক ভাগ মাত্ৰ।
ভেড়ার ক্লোনিং প্রচারের আলো এতই বেশি টেনে নিল যে
এক সপ্তাহ পরের বানরের ক্লোনিং তেমন সাড়া জাগাতে
পারল না। কিন্তু জিন-বিজ্ঞানী, শারীর বিজ্ঞানী ও
স্নায়ুবিজ্ঞানীদের কাছে এই সৃষ্টির গুরুত্ব
ছিল ভেড়ার ক্লোনিং-এর
চেয়ে বহুগুণ বেশি।
এই ক্লোনিং-এর সাফল্য বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে এক লাফে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখন জিনের ত্রুটি সারিয়ে তোলার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোতে বিশাল কর্মকাণ্ড চলছে।
স্নায়ুরোগে আক্রান্তকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার জন্যে নার্ভ-ট্রান্সপ্লান্ট অর্থাৎ স্নায়ু-সংস্থাপন-এর প্রচলন হতে চলছে। স্তন্যপায়ী পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর মগজে ওই প্রজাতির বাচ্চার মগজ থেকে কোষ নিয়ে সংস্থাপন করা হচ্ছে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে।
গিনিপিগের ক্ষেত্রে মগজের কিছু অংশ বাদ দিয়ে স্মৃতি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তারপর বাচ্চা গিনিপিগের মগজ থেকে প্রয়োজনীয় স্নায়ুকোষ সংস্থাপন করলে দেখা যাচ্ছে তাদের স্মৃতিশক্তি আবার ফিরে আসছে।
স্নায়ুবিজ্ঞানীরা আশা করছেন কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ,
বিনষ্ট স্নায়ুকোষগুলোর জায়গায় নতুন স্নায়ুকোষ স্থাপন
করা যাবে। তার ফলে শতায়ু মানুষরা আর অথর্ব
জীবন নিয়ে শতবর্ষ পার করবেন না ।
সমস্ত দিক থেকেই থাকবেন
টগবগে তরুণ।
এই বিজ্ঞানীরা এমন আশাও প্রকাশ করেছেন যে, ইতিমধ্যে তাঁরা নতুন নতুন ‘নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর আবিষ্কার করে ফেলবেন।
জিন-বিজ্ঞানী ও স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন Cultural determinist-দের সংখ্যা একচেটিয়া। এঁরা মনে করেন মেধা বংশগতির উপর নির্ভর করে না। পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে এটাও স্বীকার করেন যে, মানবগুণ বিকাশের সম্ভাবনা জিনের প্রভাবে শুধু মানুষেরই আছে।
জিন মানুষের জীবনকে কতটা প্রভাবিত করে
মানুষের জিন-ই মানুষকে মানুষ করে তুলেছে। মানুষের বদলে একটা বনমানুষ বা শিম্পাঞ্জিকে আমাদের সামাজিক পরিবেশে রেখে যতই চেষ্টা করুন না কেন, মানুষের মেধা-বুদ্ধি-বিদ্যে দিতে পারবেন না। কারণ বনমানুষ বা শিম্পাঞ্জির ভিতর বংশানুক্রমিক মানবিক গুণ না থাকায় কোনওভাবেই তার বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয় ।
আমরা যে দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াই, হাঁটি, পানীয়
পশুর মতো জিব দিয়ে চেটে গ্রহণ না করে
পান করি, কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ
করি—এসবের কোনোটাই
জন্মগত নয়।
এইসব অতি সাধারণ মানবধর্মগুলোও আমরা শিখেছি, অনুশীলন দ্বারা অর্জন করেছি। শিখিয়েছে আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোই, অর্থাৎ আমাদের সামাজিক পরিবেশ।
মানবশিশু প্রজাতিসুলভ জিনের প্রভাবে মানবধর্ম বিকশিত হবার পরিপূর্ণ সম্ভাবনা (Protentialities) নিয়ে অবশ্যই জন্মায়। কিন্তু সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয় মা-বাবা, আশেপাশের মানুষরা অর্থাৎ সামাজিক পরিবেশ। এই মানবশিশুই কোনও কারণে মানুষের পরিবর্তে পশু সমাজের পরিবেশে বেড়ে উঠতে থাকলে তার আচরণে সেই পশু সমাজের প্রভাবই প্রতিফলিত হবে। আমার সমবয়স্ক বা তার চেয়ে প্রাচীন সংবাদ পাঠকদের অনেকেরই জানা নেকড়েদের দ্বারা প্রতিপালিত হওয়া ‘রামু’ ও ‘কমলার’ ঘটনা। নেকড়েদের ডেরা থেকে বালক-বালিকা দুটিকে উদ্ধার করার পর তাদের এই নামকরণ করা হয়েছিল। ওরা দুজনেই হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতো, জিব দিয়ে চেটে জল পান করতো, রান্না করা খাবার খেত না। কথাও বলতে জানতো না, পরিবর্তে নেকড়ের মতোই আওয়াজ করতো। এরা মানুষের সমাজের সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পেরে বেশি দিন বাঁচেনি।
আমার আপনার পরিবারের কোনও শিশু সভ্যতার আলো না দেখা আন্দামানের আদিবাসী জাড়োয়াদের মধ্যে বেড়ে উঠলে তার আচার-আচরণে, মেধায় জাড়োয়াদেরই গড় প্রতিফলন দেখতে পাব। আবার একটি জাড়োয়া শিশুকে শিশুকাল থেকে আপনি আমি আমাদের সামাজিক পরিবেশে মানুষ করলে দেখতে পাব শিশুটি বড় হয়ে আমাদের সমাজের আর দশটি ছেলে-মেয়ের গড় বিদ্যে, বুদ্ধি, মেধার পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু একটি মানুষের পরিবর্তে একটি বনমানুষকে বা শিম্পাঞ্জিকে শিশুকাল থেকে আমাদের সামাজিক পরিবেশে মানুষ করলেও এবং আমাদের পরিবারের শিশুর মতোই তাকেও পড়াশোনা শেখাবার সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেও তাকে আমাদের সমাজের স্বাভাবিক শিশুদের বিদ্যে, বুদ্ধি, মেধার অধিকারী করতে পারবো না ; কারণ ওই বনমানুষ বা শিম্পাঞ্জির ভিতর বংশগতির ধারায় বংশানুক্রমিক মানবিক গুণ না থাকায় তা অনুকুল পরিবেশ পেলেও বিকশিত হওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। অর্থাৎ মানবগুণ বিকাশে জিন ও পরিবেশ দুয়েরই প্রভাব বিদ্যমান।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ