আজকাল পঞ্জিকার ব্যবহার কিছুটা কমে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় পঞ্জিকার বিজ্ঞাপন পড়ে বেশ মজা পেতাম। তাতে কত যে অদ্ভুত সব বিজ্ঞাপন থাকত তার ইয়ত্তা নেই। এখনো থাকে। ফোটো-সম্মোহনের বিজ্ঞাপন এখনো পঞ্জিকা খুললে চোখে পড়বে। সে’সব বিজ্ঞাপনের ভাষাও বিচিত্র –“আপনি কি ভালবাসায় ব্যর্থ হয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ হারিয়েছেন? ফোটো সম্মোহনের সাহায্য নিন। দেখবেন, যিনি আপনাকে দূর দূর করেছেন, তিনিই আপনার হুকুমের চাকর হয়ে গেছেন, আপনার বিরহে ছট্ফট্ করছেন?”
ফোটো-সম্মোহন করার ব্যাপারটা কী? আপনি যাকে সম্মোহিত করে হুকুমের চাকর করতে চান, তার একটা ছবি আর মোটা টাকা দক্ষিণা তুলে দিন যে সম্মোহন করবেন, তাঁর হাতে। তা হলেই নাকি, যার ছবি সে আপনার হুকুমের দাস, আপনার ভালবাসায় পাগল হয়ে যাবে।
ফোটো-সম্মোহন করতে পারেন, এমন দাবি যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে খ্যাতি বা কুখ্যাতির শীর্ষে আছেন হাওড়ার জানবাড়ির পাগলবাবা, লেকটাউন নিবাসী গৌতম ভারতী।
ফোটো-সম্মোহন একটি আগাপাছতলা প্রতারণা ছাড়া কিচ্ছু নয়। গৌতম ভারতীয় ফোটো সম্মোহনের বুজরুকি ফাঁস করেছিলাম। তারপর সে এক বিশাল ব্যাপার। গৌতমের মিথ্যে বিজ্ঞাপন প্রচার, বিজ্ঞাপনের মিথ্যেচারিতা ফাঁস, সাময়িক ভারসাম্য হারিয়ে গৌতমের আত্মহত্যার চেষ্টা গোটা ঘটনাটাই লিখেছি ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে।
ফোটো-সম্মোহনের বুজরুকি নিয়ে সে সময়কার জনপ্রিয় আলোকপাত’ বাংলা মাসিক পত্রিকায় আমার কিছু চাঁচাছোলা বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর একজন আমাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন। চ্যালেঞ্জারের নামঃ কাজী খোদা বক্স সিদ্দিকী। নিবাস : বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া। ‘আলোকপাত’ এর ১৯৮৮-র জানুয়ারি সংখ্যায় কাজী সাহেব ঘোষণা করলেন— “প্রবীরবাবু যদি তাঁর পরিচিত কোনো নারীকে প্রকৃতই বিয়ে করার ইচ্ছে থাকে তা হলে কোনো ছবি-টবি নয়, শুধুমাত্র কয়েকটি প্রকৃত তথ্য দিলেই হবে। তথ্যগুলো অবশ্যই অপার্থিব নয়। যদিও তিনি ফোটো-সম্মোহন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন তবুও তিনি আগ্রহী হলে তাঁর এ প্রক্রিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি।”
চ্যালেঞ্জের অর্থ মূল্য আমার তরফ থেকে তখন ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে চিঠি দিলাম। জানালাম, আমি বিবাহিত। আমার চিকিৎসক বন্ধু অনিরুদ্ধ কর অবিবাহিত। তাঁর মনের মতো মেয়েটিকে জীবনসঙ্গিনী করে দিলে হার মেনে নেব। মেয়েটির বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় এবং জানা সম্ভব, এমন সব তথ্যই দেব, এমনকি বাড়তি দেব মেয়েটির ছবি।
অনিরুদ্ধ আমাকে বলেছিলেন, “মেয়েটিকে পছন্দ করার পর কাজী সাহেব যদি সেই মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওর হাতে পায়ে ধরে আমার সঙ্গে বিয়ে ঘটিয়ে দেয়?” বলেছিলাম, “আপনার শ্রীদেবী, রেখা অথবা এদের চেয়েও দুর্লভ মেয়েকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো?”
অনিরুদ্ধ প্রাণখোলা হাসি হেসে বলেছিলেন, “কাজী সাহেব আপনার চিন্তার হদিশ পেলে চ্যালেঞ্জ জানাবার দুঃসাহস দেখাতেন না ।”
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি—সম্মোহন করে হুকুমের দাস বানানো বাস্তবে সম্ভব নয়! ওসব বিজ্ঞাপনে আর গল্পে হয় ৷
ফটো সম্মোহনই একালে
বিষয়টা একই। যাকে সম্মোহন বা বশীকরণ করতে চান, তার ছবি নিয়ে দেখা করুন
শ্রীগৌতম (এও গৌতম), শ্রী উজ্জ্বল শাস্ত্রী, শ্রী অমিত শাস্ত্রী, আচার্য্য সুব্রত শাস্ত্রী, শ্ৰী কমল শাস্ত্রী, টি. শাস্ত্রী প্রমুখদের সঙ্গে। ছবি ও মোটা টাকা খরচ করে পাবেন জমার ঘরে শূন্য।
এইসব বুজরুকদের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় প্রধানত বড় বড় দৈনিক পত্রিকায় মফস্সলের কিছু পত্রিকাও টিকে আছে এইসব বুজরুক জ্যোতিষীদের অর্থে। কলকাতার কিছু টিভি চ্যানেলও জ্যোতিষীদের ‘টাইম-স্লট’ বিক্রি করে লাভ করে। এরা প্রত্যেকেই প্রতারকদের সহযোগী। এই ধরনের বুজরুকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট ১৯৪০ অ্যামেন্ড করে। ১৯ মার্চ ২০০৯ প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ জারি করেছে। এতে শাস্তির পরিমাণ হয়েছে আজীবন কারাদণ্ড।
এখুনি কেউ কেউ বলতে পারেন – “আপনারা কিছু করছেন না কেন?” আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের, পুলিশ ও প্রশাসনের।
আমরা এই বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করার কাজ করে চলেছি। আপনারা সবাই আওয়াজ তুললে সরকার আইনের শাসন চালু করতে বাধ্য হবে।
এই প্রসঙ্গে জানাই—প্রচার মাধ্যমগুলোর এমন বে-আইনি বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে শাস্তিও অতি কঠোর, প্রচার মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সরকার ও রাজনীতিকদের সম্পর্ক অবৈধ প্রেমিকার মতো। মিডিয়াগুলো তাইতেই এতটা বেপরোয়া।
এইসব জ্যোতিষীরা মানুষদের দেখেই ভাগ্য বলে দেয়, শত্রু বিনাশ করে, বশ করে ফেলে—এমনটাই ওরা দাবি করে। বাস্তব অবস্থা জানাতে এখানে আনন্দবাজারের একটা খবর তুলে দিচ্ছি। এই নমুনা খবর থেকেই বুঝতে পারবেন ওদের ক্ষমতার দৌড়।
তাঁর নিজের ও পুত্রের ভাগ্যে কী আছে তা বুঝতে সম্ভবত ভুল হয়েছিল তাঁর। তাই সাইবার লটারিতে রাতারাতি দেড় লক্ষ ডলার জয়ের খোয়াব দেখে এখন হাত কামড়াচ্ছেন জ্যোতিষী শ্রী গৌতম। উল্টে, প্রায় সাত লক্ষ টাকা মাসুল দিয়ে তাঁর এখন নিতান্তই করুণ অবস্থা ।
দমদমের বাসিন্দা গৌতম ঘোষ ওরফে শ্রী গৌতম কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের নানা বিপদের সমাধানে কবচ-রত্ন দিয়ে থাকেন। একটি ভুয়ো লটারি কর্তৃপক্ষের ই-মেলে সাড়া দিয়ে তাঁর ছেলে গৌরব দফায় দফায় চেকে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। জ্যোতিষী নিজেও ওই মারাত্মক লটারির স্বরূপ বুঝতে পারেননি। ই-মেলের নির্দেশ অনুযায়ী হাতে- হাতে ডলারের ‘প্রাইজ মানি’ নিতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে গৌতমবাবু বিমানে সটান দিল্লিতে হাজির হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল বুঝে প্রথমে দিল্লি পুলিশ ও পরে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের শরণাপন্ন হন জ্যোতিষী। গত এপ্রিলে দমদম থানায় তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা শুরু করা হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তে একটি তদন্তকারী দল শীঘ্রই দিল্লি যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
দিল্লিতে গিয়ে কী পেয়েছিলেন শ্রী গৌতম? সিআইডি সূত্রের খবর, গৌতমবাবু তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছেন, দিল্লিতে এক ব্যক্তি তাঁদের হাতে একটি ভারী সুটকেস তুলে দেন। বলেন, ‘এ হল ব্ল্যাক ডলার। এক ধরনের রাসায়নিক মেশালে এই পদার্থটি আসল ডলার হয়ে উঠবে।’ গৌতমবাবু এ-ও দাবি করেন যে, তাঁর সামনেই একটি ভেঙে যাওয়া বোতল থেকে খানিকটা তরল মাখিয়ে ওই লোকটি ১০০ ডলারের দু’টি কালো নোটে মাখালে তা ‘আসল’ হয়ে ওঠে। তাঁদের বোঝানো হয়, ওই রাসায়নিকের বোতলটি বাক্সের মধ্যে গরমে ফেটে গিয়েছে। আর এক বোতল রাসায়নিক সুইজারল্যান্ড থেকে আসবে। তবে তার জন্য আরো লাখ চারেক টাকা দিতে হবে। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, “ডলারের দু’টি নোট হতে কোনো কারসাজি দেখিয়ে এই প্রতারকেরা জ্যোতিষী ও তাঁর পুত্রের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করে। গৌতমবাবুরা বাড়তি টাকা দিতেও রাজি হয়ে যান।” ‘ব্ল্যাক ডলার’-এর এই বাক্স বন্ধ অবস্থায় সিআইডি উদ্ধার করেছে। সেটি আদালতে পেশ করা হবে।
সিআইডি কর্তারা এই ধরনের সাইবার প্রতারণার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। স্পেশ্যাল আইজি (অপারেশনস) রাজীব কুমারের কথায়, “ই-মেল লটারির ব্যাপারটাই ফালতু। এই ধরনের লোভ মারাত্মক ক্ষতিকর। এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে অনেকের প্রতারিত হওয়ার নানা দৃষ্টান্ত আমরা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরছি। কিন্তু এখনো কিছু লোক এর ফাঁদে পা দিচ্ছেন।”
সিআইডি-র এক কর্তা বলছেন, “লোকে সাধারণত দু-একবার বোকা বনে টাকা দেয় । কিন্তু গৌতমবাবুর ছেলে বার সাতেক টাকা দিয়েছেন। তা ছাড়া, এভাবে ডলার নেওয়াটা তো বেআইনি কাজ। ”
গৌরব দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাক্তারি পড়ছেন। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি । গৌতমবাবু টেলিফোনে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
সিআইডি সূত্রের খবর, গত বছর জুলাই মাস থেকে এই ভুয়ো লটারির ই-মেল পাচ্ছেন গৌরব। এমএম ওয়ার্ড লোটো লটারি-এর তরফে ই-মেল আসছিল।
তাঁকে বলা হয়, এশিয়ার পাঁচজন এই দামি পুরস্কার জিতেছেন। বিভিন্ন দেশ ঘুরে ‘প্রাইজ মানি’ আসার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। সিআইডি-র ডিএসপি রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় ও এসআই জয়ন্ত চন্দ ওইসব ই-মেলের আইপি অ্যাড্রেস যাচাই করে জেনেছে, নাইজিরিয়ায় বসে এই জালিয়াতেরা টোপ দিচ্ছিল। গৌতমবাবুদের সঙ্গে তারা কয়েকবার ফোনেও কথা বলেছে। গৌরব টাকার লোভে ১০০টিরও বেশি ই-মেল পাঠিয়েছিলেন বলে সিআইডি জানতে পেরেছে।
পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?
পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ
অধ্যায়ঃ এক
♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ Hysterical neurosis – Conversion type
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)
পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ