Physics for entertainment; Ya. Perelman; Vol. l. Mir Publishers, Moscow 1975 –এ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থানের এক সুন্দর অপকৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরের এক বিখ্যাত ধর্মস্থান একটি বিশেষ অলৌকিকত্বের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। দেবালয়ের মূল কক্ষের দরজা ছিল দুটি। একটি ছিল প্রধান দরজা, ,যার বাইরে অগণিত ভক্ত অপেক্ষা করতেন দেব-মাহাত্ম্যে দরজা খুলে যাওয়ার অপেক্ষায়।
দ্বিতীয় ছোট দরজাটি ছিল পুরোহিতদের যাতায়াতের জন্য। নির্ধারিত সময়ে পুরোহিত মূল কক্ষে প্রবেশ করে একটা যজ্ঞবেদিতে অগ্নিসংযোগ করতেন। মঞ্চের আগুনে ফেলতেন সুগন্ধি ধূপ, সঙ্গে চলত মন্ত্রপাঠ। কক্ষের বাইরে অপেক্ষমান ভক্তেরা শুনতেন সেই অলৌকিক মন্ত্রোচ্চারণ। কিছুক্ষণ চলার পরে ভক্তেরা সবিস্ময়ে দেখতেন দরজা একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে। অথচ না, দরজার দু’পাশে কেউ কোথাও নেই। দরজায় নেই কোন দড়ি বাঁধা, যে দড়ি টেনে থিয়েটারের স্ক্রিন টানার মত করে কেউ দরজা খুলবে। কক্ষে একমাত্র লোক পুরোহিত, তিনি গভীর মনোযোগের সঙ্গে যজ্ঞের আগুনে ধূপ ফেলে মন্ত্র পড়ে চলেছেন। যজ্ঞবেদিতে আগুন জ্বলছে দাউ-দাউ করে। না, কোন কৌশল নেই। সবটাই অলৌকিক!
প্রাচীন মিশরের এই অলৌকিকত্বময় ধর্মস্থানের আসল রহস্য জানতে পারি প্রাচীন গ্রীসের গণিতজ্ঞ ও যন্ত্রবিদ আলেকজান্দ্রিয়া হেরোর উল্লিখিত যান্ত্রিক কৌশল থেকে।
ধর্মস্থানের মূল কক্ষের যজ্ঞবেদিটি ফাঁপা ও ধাতুর তৈরি। বাঁকি কলাকৌশল ছিল পাথরের মেঝের তলায়। ফাঁপা যজ্ঞবেদি থেকে একটা নল যেত ঝুলন্ত একটা বালতির মুখে। প্রধান দরজার পাল্লার নিচে পাল্লার সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় মেঝের তলায় লুকোনো থাকত দুটি খুঁটি। এই খুঁটি দুটির সঙ্গে দড়ি বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হতো বালতিটা।
বেদিতে আগুন জ্বললে বেদির ভিতরের বাতাস গরম হয়ে আয়তনে বেড়ে ক্রমাগত চাপ বাড়াতে থাকবে বেদির নিচে রাখা জল-পাত্রের ওপরে। জলের মধ্যে সেই চাপ সঞ্চারিত হয়ে নল দিয়ে একটু একটু করে জল বের করে এনে ঝুলন্ত বালতিতে ফেলবে। বালতিতে বাঁধা দড়িতে টান পড়বে। ঘুরবে দড়িতে বাঁধা খুঁটি, সেইসঙ্গে ঘুরবে দরজার পাল্লা।
এমনি করেই বারবার বিজ্ঞানের জ্ঞান ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে প্রবঞ্চক পুরোহিত ও গুরুরা অলৌকিক ক্ষমতাবান বলে নিজেদের প্রচারিত করে অথবা নিজের মন্দিরকে অলৌকিকত্ব আরোপ করে জনসাধারণকে ঠকিয়ে শুধু দোহনই করেছে। সাধারণের কাছ থেকে ঘৃণার পরিবর্তে আদায় করেছে অন্ধ ভক্তি, অন্ধ-বিশ্বাস, ভয় ও অর্থসম্পদ।