ভারতের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র ও শারীরবিদ্যার আলোচনা করা হয়েছে আংশিকভাবে অথর্ববেদে ও পরিপূর্ণভাবে আয়ুর্বেদে। আয়ুর্বেদের আলোচনা আটভাগে বিভক্ত। তারই একটার নাম ‘ভূতবিদ্যা’। যা আসলে মানসিক রোগ নিয়ে আলোচনা। অথর্ববেদ ও আয়ুর্বেদে অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভেষজের পাশাপাশি মন্ত্র-তন্ত্র ও তাবিজের ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই ৷
এই সময়ে ও তার পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে সে সময়কার জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোতেও মনোবিকারকে অশুভ শক্তির প্রভাব বলে মনে করা হত। গ্রিক, মিশর, চীন ও ভারতের মতো উন্নত দেশগুলোর জনগণ ধরে নিয়েছিল, ‘মনোবিকার’ আসলে ভূত, জিন, ডেভিল ইত্যাদির ভরগ্রস্ত অবস্থা। মানসিক রোগীকে আনা হত পুরোহিতের কাছে।
পুরোহিত জানিয়ে দিত রোগিণীর উপর অশুভ আত্মা ভর করেছে। ওই আত্মাকে তাড়াতে রোগিণীর উপর নানারকম শারীরিক অত্যাচার চালান হত। চাবুক মারা, গরম লোহার ছ্যাকা দেওয়া, গু খাওয়ানো, অঙ্গচ্ছেদ, মাথার খুলিতে ফুটো করে ভর করা অশুভ আত্মার বেরিয়ে যাওয়ার পথ করে দেওয়া—সবই চলত। তাতেও ভালো না হলে অশুভ আত্মাকে শেষ করার নামে রোগিণীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত।
গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রাটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭) প্রথম বললেন, মানসিক রোগ আর পাঁচটা রোগের মতোই একটা রোগ। এর সঙ্গে ভূত বা অশুভ শক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। মস্তিষ্কই আমাদের চিন্তা করায়। বুদ্ধির উন্নতি ঘটায়। মস্তিষ্কের বিকারের ফলেই মানসিক রোগ হয়।
তিনি অবশ্য মনে করতেন যে কোনো রোগের কারণ রক্ত, পিত্ত, কফ। ভারতীয় চরক সংহিতাতেও বলা হয়েছে আমাদের রোগের কারণ বায়ু-পিত্ত-কফ এই তিনটি সমস্যা। ২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ থেকে ইউরোপে ডাকিনীতত্ত্ব বা আইনিতত্ত্বের রমরমা শুরু হয় এবং দ্রুত ব্যাপকতা পায় ৷
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে রেজিনাল্ড স্কট একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন “The Discovery of Witchcraft’। বইয়ের মূল বক্তব্য ছিল—মানসিক রোগীদের সমাজ ‘ডাইনি’ বলে ঘোষণা করে মিথ্যেই অত্যাচার করছে।
স্কটের বক্তব্য প্রায় সর্বত্রই ধিকৃত হয়েছিল।
১৪৮৬ সালে পোপের নির্দেশমতো একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ‘The Witche’s Hammer’। গ্রন্থটিতে মানসিক রোগীদের ‘ডাইনি’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল ডাইনিরা ব্ল্যাক ম্যাজিকের সাহায্যে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসুখ সৃষ্টি করে, রক্ত শুষে নেয়, স্তনের দুগ্ধ টেনে নেয়, পুরুষকে ধ্বজভঙ্গ করে দেয় ইত্যাদি। ডাইনিদের ‘ব্ল্যাক–ম্যাজিক’ থেকে বাঁচার একটাই পথ—ডাইনিদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা। এই গ্রন্থটির ফল হিসেবেই রেজিনাল্ড স্কট ধিকৃত হয়েছিলেন। আজ তিনি প্রণম্য ।
তারপর দেড়শ বছর ধরে মানসিক রোগীদের উপর প্রচণ্ড অত্যাচারের পর তাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যাকে পোড়ান হয়েছে, তার নিকট আত্মীয়রাও কুসংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ করে ডাইনি হত্যায় অংশ নিয়েছে।
ইউরোপে ডাইনি পোড়ান এখন হয় না। কিন্তু ভারতে ‘ডাইনি’ বলে চিহ্নিত করে অত্যাচার এবং হত্যা বন্ধ হয়নি। ‘ডাইনি’ সমস্যাটা আদিবাসী সমাজে শিকড় গেড়ে আজো রয়েছে। আদিবাসী আবেগকে আঘাত করে ভোট হারাতে চায় না সরকার থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল। এটা অবশ্যই দুর্নীতি। জানিনা সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ভারতে কবে সুনীতি আসবে। কবে ডাইনি হত্যা বন্ধ হবে?
আশা রাখি সুনীতি আসবেই। আনবে আগস্ট বিপ্লবে সামিল ভারতের লক্ষ-কোটি মানুষের ‘বিবেক’ আন্নার আহ্বানে।
ভোরের আলো ফোটার আগে গাঢ় অন্ধকার দেশ জুড়ে।
পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?
পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ
অধ্যায়ঃ এক
♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ Hysterical neurosis – Conversion type
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)
পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ