সম্মোহন করার আগে যাকে সম্মোহিত করব, তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেওয়াটা খুবই জরুরি। যখন কোন সভায় বা সেমিনারে সম্মোহন করি, তখন সম্মোহন নিয়ে একটা মূমামুটি আলোচনা সেরে নেই। এই আলোচনা সাধারণত চলে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। বিপুল স্রোতা ও দর্শকদের সামনে কয়েকজনকে সম্মোহন করে দেখাবার আগে এই সময়টা ব্যয় করাটা প্রয়োজনীয় বলে আমার মনে হয়। কারণ আলোচনা শেষে দর্শকদের কাছে আমি আবেদন রাখি, যারা বাস্তবিকই সততার সঙ্গে আমার কথা বা ‘সাজেশন’ গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনবেন, তাঁরা মঞ্চে উঠে আসুন।
উঠে আসাদের মধ্যে থেকেই প্রথম আসা দু-তিনজনকে প্রথম দফায় বেছে নিই। সভার সময়, দর্শকদের মুড ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে কত রকমের সম্মোহন দর্শকদের সামনে হাজির করব, তা ঠিক করি। তারপর প্রয়োজন মতো দফায় দফায় কয়েকজন করে দর্শকে মঞ্চে ডেকে নিই।
ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্যে যখন কাউকে সম্মোহন করার প্রয়োজন হয় তাঁর সঙ্গে সম্মোহন বিষয়ে কিছু আলোচনা সেরে নিই। উদ্দেশ্যঃ
(ক) সম্মোহন সম্পর্কে অলীক ভয় দূর করা।
(খ) সম্মোহনের কার্যকারীতা ও উপকারিতা।
(গ) সম্মোহনের ক্ষেত্রে রোগীর চূড়ান্ত মনোযোগ ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা।
প্রয়োজনে দু-একটি সম্মোহনের ঘটনার উল্লেখ করতে হয়। আর এই প্রয়োজনটা সাধারণভাবে হয় সেমিনার বা সভায়।
এটা গেল যাকে সম্মোহিত করব, তাকে মানসিকভাবে তৈরি করার প্রথম ধাপ। এবার আসছি দ্বিতীয় ধাপে।
রোগীর ক্ষত্রে যে’ভাবে সাজেশন দেওয়া হয়
রোগীদের সাজেশন দেওয়ার বেলায় সাধারণত তাঁকে সুন্দর ও আরামদায়ক বিছানায় শোবার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ঘরের জোরালো আলো নিভিয়ে দিয়ে জ্বেলে দেওয়া হয় নাইট ল্যাম্প। নাইট ল্যাম্প এমনভাবে লাগানো দরকার, যাতে সম্মোহিত বিছানায় শুয়ে চোখ মেলার পর বাল্বটি দেখতে না পায়। খুব লো ভলিউমে উত্তেজক নয়, মনকে আরাম দেওয়ার মতো বাজনার ক্যাসেট চালাবার ব্যবস্থা রাখতে পারলে আরও ভাল হয়।
যাকে সম্মোহিত করা হবে, তাঁকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে প্রথম ধাপ অতিক্রম করুন। দ্বিতীয় ধাপে বলুন, “আমি আপনাকে ‘সাজেশন’ দেব। অর্থাৎ কিছু কথা বলব। আপনি খুব মন দিয়ে কথাগুলো শুনতে থাকবেন। এই শোনার ফলে আপনার মধ্যে একটা আধা-ঘুম আধা-জাগরণের অবস্থা তৈরি হবে। তারপর আপনার সমস্যা মেটাতে সাজেশন দেব। সমস্যা মিটে যাবে।“
রোগী বিছানায় আরাম করে শুলেন। পুরুষ হলে ট্রাউজারে সার্ট গোঁজা থাকলে সার্টটা ট্রাউজার থেকে বের করে নিতে বলুন। কোমরে বেল্ট থাকলে খুলতে বলুন। খুলে ফেলতে বলুন ঘড়ি, চশমা ইত্যাদি। ট্রাউজার কোমরে টাইট হলে বোতাম খুলে হালকা হয়ে শুতে বলুন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার বা প্যান্ট কোমরে টাইট হলে হালকা করে পরতে বলুন। ব্রা ঢিলে করতে বলুন। ঘড়ি, চশমা ইত্যাদি একইভাবে খুলে রাখতে বলুন। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোনও পুরুষ সম্মোহিত করতে চাইলে ঝুঁকি না নিয়ে মহিলার কোনও সঙ্গীকে ঘরে বসাবার ব্যবস্থা করুন। নতুবা ভয় বা অস্বস্তির জন্য আপনার কাছে মহিলাটির স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কিছুটা কম থাকে। এছাড়াও মহিলার তরফ থেকে কোনও অভিযোগ এড়াতে সঙ্গীকে ঘরে রাখা জরুরি।
বড় লাইট বন্ধ করে নাইট ল্যাম্প জ্বেলে দিন। বাজিয়ে দিন খুব লো ভলিউমে মনকে প্রশান্ত করার মতো বাজনা। তারপর শুরু করুন সাজেশন দেওয়া। প্রতিটি বাক্য চার-পাঁচ বার করে ধীরে, সামান্য টেনে, গভীর ব্যক্তিত্বপূর্ণ গলায় বলে যেতে থাকুন।
সাজেশনের বাক্যগুলো এই ধরনেরঃ
“একমনে এবার আপনি আমার কথাগুলো শুনতে থাকুন। আপনার ঘুম পাচ্ছে। ঘু…ম। চোখের পাতায় নেমে আসছে ঘুম। চোখের পাতাগুলো ভারী হয়ে আসছে। আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। এ’ভাবে চিন্তা-শূন্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে আপনার ভাল লাগছে। আপনার কপালের চিন্তার রেখাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে। কপালের পেশীগুলো নরম, শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আপনার গালের পেশী নরম, শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আপনার চোয়ালের পেশী নরম, শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। ঘু…ম।“
“আপনার চোখের পাতা ভারী হয়ে গেছে। দু’চোখের পাতায় নেমে আসছে ঘুম। আপনার ডান কাঁধটা নিয়ে ভাবুন। ডান কাঁধের পেশী শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। আপনার ডান কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। ডান হাতের কনুই থেকে কনুই কব্জি পর্যন্ত ভাবুন। কনুই থেকেই কব্জি পর্যন্ত পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। হাতের তালুও আঙ্গুলগুলোর পেশী শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। ডান হাতটা ভারী হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ডান হাতটা ভারী হয়ে গেছে।“
একইভাবে বাঁ কাঁধ থেকে সাজেশন দেওয়া শুরু করে হাত ভারীতে শেষ করুন।
“আপনার বুকের কথা ভাবুন। বুকের পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে।“
“আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ ধীরে ও গভীরভাবে হচ্ছে। আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। এভাবে চিন্তা-শূন্য হয়ে ঘুমোতে আপনার ভাল লাগছে।“
“আপনার পেটের পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে।“
“ডান পায়ের থাইয়ের পেশী নিয়ে ভাবতে থাকুন। থাইয়ের পেশী শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। ডান পায়ের কাফের পেশী নিয়ে ভাবুন। পেশীগুলো শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। ডান পায়ের পাতা ও আঙ্গুলগুলোর পেশী শিথিল, নরম হয়ে যাচ্ছে। ডান পা’টা ভারী হয়ে যাচ্ছে। ভারী হয়ে বিছানার উপর পড়ে আছে।“
একইভাবে বাঁ পা নিয়ে সাজেশন দিতে থাকুন।
সাজেশন শেষে বাস্তবিকই যদি পরীক্ষা করতে চান –সম্মোহন করতে পেরেছেন কি না, তবে এই ধরনের সাজেশন দিনঃ
“আপনার ডান হাতটায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিরাট একটা গ্যাসবেলুন। গ্যাসবেলুনের টানে আপনার ডান হাতটা হালকা মনে হচ্ছে। ডান হাতটা একটু একটু করে ওপরে উঠছে।“
দেখতে পাবেন –সাজেশনের সঙ্গেসঙ্গে সম্মোহিতের ডান হাত বিছানা ছেড়ে একটু একটু করে উপরে উঠে যাচ্ছে।
এ’বার আমরা আসব বিভিন্ন রোগ বা সমস্যায় সাজেশনের রকম-ফের প্রসঙ্গে।
সাজেশনের রকম- ফের
সম্মোহিত করা তো শেখানো গেল। কিন্তু কেন সম্মোহিত করা? কোনও সমস্যা সমাধানের জন্যে? তাহলে সম্মোহিতকে প্রয়োজনীয় ‘সাজেশন’ দিতে হবে। নাকি শুধুই সম্মোহন নিয়ে খেলা? খেলা হলে, কিছুক্ষণ সম্মোহিতের অবস্থায় রাখার পর সাজেশন দিতে থাকুন –“আপনার ঘুম ভাঙ্গছে।“
সাজেশনে ঘুম না ভাঙ্গলে বুঝবেন ঘুমটা একটু কড়া হয়ে গেছে। তালি বাজান বাঁ দু’আঙ্গুলে চুটকি বাজান এবং সঙ্গে ঘুম ভাঙ্গার সাজেশন দিন। সম্মোহন অবস্থা থেকে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ