প্রদীপ আগরওয়াল নিজস্ব স্টাইলে সম্মোহন করেন। প্রায়ই ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন স্টার হোটেলগুলোয়। ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করতে লাগে হাজার দুয়েক টাকা।

১৯৯৫ এর ১৭ নভেম্বর। The Telegraph পত্রিকার প্রথম পাতার অ্যাঙ্কারে ৬ কলম জুড়ে প্রকাশিত হল প্রদীপ আগরওয়ালকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল দু-লাইনে। প্রথম লাইনে লেখা Self-Styled hypnotist ducks challenge to prove claims as rationalist emultes feats । দ্বিতীয় লাইনে লেখা – City freed from mesmeric speel দু-কলম জুড়ে আমার ও প্রদীপ আগরওয়ালের ছবি। বেশ বড় খবর।

আগের সপ্তাহের শনিবার প্রদীপ একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছিল কলকাতার পাঁচতারা হোটেল ‘হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল’-এ। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে হাজির ছিলাম। সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক সৌম্য ভট্টাচার্য ও চিত্র-সাংবাদিক কিশোর রায়চৌধুরী।

৫৫ জন টাকা দিয়ে ওয়ার্কশপে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। নথিভুক্তির বিনিময় মূল্য ১৯৭৫ টাকা।

বাঁদিকে প্রদীপ আগরওয়াল

সম্মোহনের সাহায্যে কি কি করা সম্ভব, তার একটা তালিকা প্রদীপ প্রায়ই বিজ্ঞাপিত করে থাকেন। সম্মোহনে ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধি, যে কোনও রোগ থেকে মুক্তি, অন্যের হৃদয় জয়, নিজের শ্রণেীর মনকে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে যে কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া, মনকে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া—এমন অনেক কিছুই করা সম্ভব বলে প্রদীপ বিজ্ঞাপনে দাবি করে থাকেন।

ওয়ার্কশপে অংশ নিতে এসেছেন এমন অনেকের সঙ্গেই আলাপ করলাম। বেশিরভাগই ধনী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একজিকিউটিভ, কোম্পানির ডিরেক্টর ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পেলাম চারজন। একজন কলেজে পড়ান। কলকাতার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী দু-জন। একজন রিসার্চ-স্কলার। কথা বলে মনে হল এঁরা প্রত্যেকেই প্রদীপ আগরওয়ালের বিজ্ঞাপন পড়ে এবং প্রদীপ-কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে খুবই উঁচু ধারণা পোষণ করেন। প্রদীপের বিজ্ঞাপনের কথায় বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন এক্সট্রা সেনসেটিভ পাওয়ার পাওয়া সম্ভব। সম্ভব পূর্বজন্মে ফিরে যাওয়া।

সে সময় দূরদর্শনে একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হত—‘প্রবাহ’। নিউজ ফিচার তৈরি করতো ‘প্রবাহ’। আমাদের হাজির হওয়ার একটু পরেই পুরো টিম নিয়ে হাজির হলেন ‘প্রবাহ’-এর পরিচালক সুজিত চ্যাটার্জি।

প্রদীপ আগরওয়াল সব সময় মাপা হাসি ঝুলিয়ে রাখা চল্লিশের নীচের তরুণ। এক সময় কলকাতার বড়বাজারে পৈত্রিক সোনার ব্যবসায় বসতেন। এখন সম্মোহন শেখাবার অফিস খুলেছেন বড়বাজারে। জনা কয়েক কর্মচারী অফিসের দেখভাল করেন। সম্মোহন শেখাবার আসর বসে শুধু হোটেলে। ভারতেই সব বড় শহরেই ঘুরে ঘুরে ওয়ার্কশপ করেন। সম্মোহনের বেশ কিছু অডিও ক্যাসেট করেছেন। ওয়ার্কশপে সে-সব বিক্রি হয়। দাম একশ টাকার ওপর। এক একটা ক্যাসেটে নাকি এক এক রকম কাজ হয়। কোনটায় ব্যক্তিত্ব বাড়ে। কোনওটায় শুনে আপনি মনকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন যে কোনও জায়গায়। কোনওটায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন পূর্বজন্মে।

প্রদীপ ওয়ার্কশপ শুরু করলেন। একটা মিউজিক বাজছিল মৃদু ভলিউমে। প্রদীপ বক্তব্য রাখছিলেন। সম্মোহন করে কী কী করা সম্ভব এই নিয়ে বক্তব্য। এক সময় ‘সাজেশন’ দিতে শুরু করলেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে একটি ধারণাকে সঞ্চারিত করতে শুরু করলেন। বলতে লাগলেন—আপনারা প্রত্যেকে যে যার চেয়ারে যতটা সম্ভব রিল্যাক্স মুডে বসুন । চোখ বুজুন, ভাবতে শুরু করুন আপনার কোনও এক প্রিয় বন্ধুর কথা। ভাবতে শুরু করুন। এক মনে ভাবতে শুরু করুন। এবার ভাবতে শুরু করুন আপনার বন্ধুর ড্রইং রুমের কথা। ড্রইং রুমের কার্পেটটার ছবি ভাবতে থাকুন। একটু একটু করে ছবিটা স্পষ্ট হচ্ছে। কার্পেটের ওপরে একটা টেবিল। টেবিলটা এখন দেখতে পাচ্ছেন। টেবিলে কয়েকটা ম্যাগাজিন পড়ে রয়েছে। সোফাগুলোর দিকে এবার তাকান। সোফা দেখতে পাচ্ছেন। নরম গদির সোফা। দৃষ্টি ফেরান ঘরের সেই কোনায় যেখানে পেতলের টবে সবুজ গাছ। ঘরের দেওয়ালে ঝোলান পেনটিংটার দিকে তাকিয়ে থাকুন। ভাল লাগছে। পেলমেট থেকে ভারী পর্দা ঝুলছে। পর্দা প্রায় মেঝে ছুঁয়েছে।

আপনি এবার চলুন টয়লেটে। সুন্দর একটা মৃদু গন্ধ। স্টোনের ঝকমকে মেঝে। দেওয়ালে টাইলস বসানো বেসিন। র‍্যাকে নরম তোয়ালে।

চলুন এবার অন্য ঘরে। বন্ধু পত্নী কারো সঙ্গে কথা বলছেন।

আমি এই মুহূর্তে আমার ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনকে নিয়ে গেছি আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। মানেরও চোখ আছে। সেই চোখ দিয়ে সব কিছু দেখা যাচ্ছে। একদম স্পষ্ট। 

আমি যখন সব কিছু দেখতে পাচ্ছি, তখন আপনারাও দেখতে পাবেন। কারণ বিজ্ঞানের প্রয়োগে সব জায়গায় একই ফল পাওয়া যায়। আপনারা নিশ্চয়ই অনেকেই আমার সাজেশন শুনে মনকে বন্ধুর ফ্ল্যাটে পাঠাতে পেরেছেন। এখন আপনারা চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকান। সময়টা দেখে মনে করে রাখুন। আজই ফোনে জেনে নেবেন এই সময় আপনার বন্ধুর বাড়িতে কে কে ছিলেন, তাঁরা কি করছিলেন, দেখবেন, সম্মোহিত অবস্থায় আপনারা মনকে নিয়ে গিয়ে যা যা দেখলেন তা সবই মিলে যাচ্ছে। এটা হল সম্মোহনের সাহায্যে এক্সট্রা সেনসেটিভ পাওয়ার-কে জাগিয়ে তোলা। এ-ভাবে আমি আমার প্রয়োজনমত মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে নিজের মনকে নিয়ে যাই। যা আমি পারি, তা আপনারাও পারবেন। নিশ্চয়ই পারবেন। অবাক কান্ড! কয়েকজন উৎসাহের সঙ্গে জানালেন, তাঁরা মনকে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যেতে পেরেছেন।

এ-বার শুরু হল নতুন ধরনের সম্মোহন। জনা পনেরো মানুষকে বেছে নিলেন প্রদীপ। সামনে অনেকটা খোলা জায়গা। সেখানে প্রত্যেককে গোল করে দাঁড় করালেন। শুরু হল প্রদীপের সাজেশন দেওয়ার পালা। এ-বারের সাজেশন এইরকম—আপনারা চোখ বুজে এক মনে ভাবতে থাকুন কুড়ি বছর বয়েসে পৌঁছে গেছেন। ভাবতে থাকুন। সেই বয়সের স্মৃতি আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। দেখুন, আপনার সামনে কুড়ি বছরের দিনগুলো, আপনি এখন কুড়ি বছরের যৌবনে ফিরে গেছেন ।

আপনি এ-বার আপনার মনকে নিয়ে চলুন দশ বছরের দিনগুলোতে। সেই দশ বছরের কৈশোরে। গভীরভাবে এক মনে আপনার দশ বছরের কথা ভাবতে থাকুন। আপনি এখন দশ বছর বয়েসে ফিরে যাচ্ছেন। আপনি ফিরে গেছেন কৈশোরে।

এবার আপনার শিশু বয়েসে ফেরার পালা। আপনি একমনে ভাবতে থাকুন আপনি আপনার একবছর বয়সে ফিরে যাচ্ছেন, যখন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতেন না। আপনি এখন এক বছর বয়েসে ফিরে গেছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না। টলমল পায়ে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছেন। হামা দিচ্ছেন।

এই সময় দেখা গেল কেউ কেউ টলমল পায়ে সত্যিই পড়ে গেলেন। এবং তারপর হামাও দিতে লাগলেন।

এক সময় নতুন করে সাজেশন দেওয়া শুরু করলেন প্রদীপ। এবার আগের জন্মে ফেরার সাজেশন। আগের জন্মের শৈশব, কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে এনে ফেললেন।

একসময় জন্মান্তরে নিয়ে যাওয়ার পালা শেষ হল। শুরু হল সম্মোহিতদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শোনার পালা। হামা দেওয়া মানুষগুলো একে একে শোনালেন তাঁদের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। শোনালেন তাদের শিশু অবস্থা থেকে পূর্বজন্মে ফিরে যাওয়ার কথা। পূর্বজন্মে কি ছিলেন, তা নিজের মধ্যে অনুভবের কথা। ওঁদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে আপ্লুত হলেন, আক্ষেপ করলেন, সম্মোহনে অংশ না নিতে পারা ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করা মানুষরা। প্রদীপ ওঁদের আক্ষেপে মলম লাগালেন, বললেন—আপনারা পূর্বজন্মে ফিরে যাওয়ার সম্মোহন প্রক্রিয়া দেখলেন। বাড়ি গিয়ে এই পদ্ধতিতে নিজেকে নিজে সাজেশন দিন, একই ফল পাবেন। নিজেকে নিজে সাজেশন দেওয়ার ব্যাপারে কারও প্রাথমিক কোনও জড়তা থাকলে ক্যাসেট কিনে তা বাজিয়ে সাজেশন নিন। অনেক ধরনের সাজেশনই আপনারা আমাদের কাউন্টার থেকে কিনতে পাবেন।

একটি তরুণীকে এবার ডাকলেন প্রদীপ। দুটি চেয়ার পাতলেন সামান্য দূরত্ব রেখে। একটি চেয়ারে মাথা ও আর একটি চেয়ারে দু-পা রেখে শুতে বললেন তরুণটিকে। কাঁধের নিচে থেকে পায়ের কিছুটা অংশ শূন্যে ঝুলে থাকার দরুন ছেলেটি ঠিকমত শুতে পারছিলেন না। প্রদীপের দুই সহকারী ছেলেটির শূন্যে ঝুলে থাকা শরীরের নিচে হাত রেখে ওর পতন রোধ করলেন । এবার প্রদীপ ছেলেটিকে চোখ বুজে তার দেওয়া সাজেশন শুনতে বললেন। সাজেশনের মোদ্দা কথা—আপনার শরীরটা শক্ত হয়ে যাচ্ছে ।

সাজেশন কিছুক্ষণ চলার পর প্রদীপের ইশারায় তাঁর দুই সহকারী তাঁদের হাতের সাপোর্ট তুলে নিলেন। ছেলেটি এবার আর পড়ছেন না। শক্ত হয়ে শুয়ে আছেন। প্রদীপের ঈশারায় তার এক সঙ্গী সম্মোহিত হয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটির বুকের ওপর দু পা রেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে নেমে এলেন। ছেলেটি আর একজনের দেহভার নিজের শরীরে নিয়েই শক্ত হয়েই শুয়ে রইলেন।

এবার প্রদীপ ছেলেটিকে সম্মোহিত অবস্থা থেকে তুললেন। তারপর ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের বললেন—এভাবেই সম্মোহনের সাহায্যে শরীরকে শক্ত করে জাদুকররা একটা মাত্র তলোয়ারের ওপর ভার রেখে শূন্যে ভাসিয়ে রাখেন ।

সাজেশন দিয়ে হাতকে অবশ করে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ফোটালেন প্রদীপ। সম্মোহিত টেরই পেলেন না।

সম্মোহনের ওয়ার্কশপ শেষে প্রদীপ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন লাগল ওয়ার্কশপ? কোন প্রশ্ন আছে এই প্রসঙ্গে?”

‘প্রশ্ন তো আছেই।’ বললাম আমি। আমার সাংবাদিক বন্ধু সৌম্য আপনার সঙ্গে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করবে। আপনি কি ওকে ওঁর গতজন্মে নিয়ে যেতে পারবেন ?”

‘মনে হচ্ছে সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়েই আপনাদের সন্দেহ আছে । এই যে ওঁরা গেলেন, ওঁরা কি মিথ্যে কথা বলেছেন?” বললেন প্রদীপ।

‘না, সরাসরিভাবে ওঁদের মিথ্যেবাদি বলার মত প্রমাণ আমার হাতে নেই। কিন্তু ওঁরা আপনার সাজানো লোকও তো হতে পারেন। ঠিক আছে এই নিয়ে আর বিতর্কে না গিয়েও আপনার সম্মোহন ক্ষমতার প্রমাণ নেওয়ার সুযোগ যখন আমাদের আছে, তখন আসুন আমরা সেই সুযোগটাই নিই। আপনি আমার এই সাংবাদিক বন্ধুর বেডরুমে আপনার মনকে সম্মোহিত করে নিয়ে যান এবং ফিরে এসে বেডরুমের বিস্তৃত বর্ণনা দিন।’

উত্তরে প্রদীপ বললেন, ‘এখন আমি খুবই ক্লান্ত। তাই আপনার দুটি প্রস্তাবই এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।’

‘ক্লান্ত থাকতেই পারেন। কিন্তু আগামী তিন দিনের মধ্যে এই সাংবাদিক বন্ধুর বেডরুমের ডিটেলে বর্ণনা দিয়ে আপনার দাবিমত সম্মোহনের সাহায্যে তৈরি এক্সট্রা সেনসেটিভ পাওয়ারের প্রমাণ দিতে রাজি আছেন?’

প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে আমাদের কথা শুনছেন এক হল মানুষ। অপ্রস্তুত প্রদীপ কোটের বুক পকেট থেকে রুমাল বের করে কপাল মুছলেন। বললেন, “ঠিক আছে, আপনারা আসুন, আমি বলে দেব।

কবে, কখন, কোথায় আমাদের যেতে হবে বলুন। সঙ্গে বাড়িতে যাবে ‘প্রবাহ’ টিম।’

এখুনি বলতে পারছি না, ফোন করে নেবেন।’

আমাদের অনেক চাপা-চুপি সত্ত্বেও তিনি ‘কবে-কখন-কোথায়’ আমাদের যেতে হবে তা নিয়ে মুখ খুললেন না।

বললাম, ‘আপনি দাবি করেছেন, যে কোনও রোগ এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হিপনোটিক সাজেশন দিয়ে সারিয়ে তুলতে পারেন। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার তরফ থেকে কয়েকজন রোগী আপনার হাতে তুলে দেব। আপনি রোগী দেখে জানিয়ে দেবেন কত দিনের মধ্যে ওদের সারিয়ে দেবেন।’

‘দয়া করে তাই করবেন। আমি ওদের দেখ-ভালের সুযোগ পেলে খুশিই হবো। আমি ওদের সারিয়ে দেব, এমন গ্যারান্টি দিচ্ছি না। কিন্তু ওদের হিপনোটিক সাজেশন দেব। ওরা যদি ঠিক মত সহযোগিতা করে, তবে নিশ্চয়ই ওরা রোগমুক্ত হবে।’

‘রোগীদের নিয়ে কবের মধ্যে যোগাযোগ করব?’ আমি, সৌম্য ও প্রবাহের পরিচালক সুজিত চ্যাটার্জি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার এই প্রশ্ন করেও উত্তর পেলাম না। কোণঠাসা প্রদীপ পুরোপুরিভাবে এই প্রসঙ্গ নিয়ে কানে তুলো ও মুখে লুকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

চাপ বাড়ছিল ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে। শেষপর্যন্ত বিদ্ধস্ত প্রদীপ বললেন, ‘আমি আপনার কোনও চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করছি না। আমি আমার দাবির যথার্থতা কারো কাছেই প্রমাণ করতে বাধ্য নই।’

বললাম, “ঠিক আছে, আপনার যখন আপত্তি আছে, তখন রোগীদের হাজির করার ব্যাপারটা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু সৌমের বেডরুমের ডিটেল বর্ণনা দেবেন বলে যে কথা দিয়েছেন, তার থেকে আপনি এখন নিশ্চয়ই পিছু হটবেন না? এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পর পিছু হটার একটিই অর্থ হয়, তা হল আপনি মিথ্যে দাবি করে, প্রতারণা করে লোক ঠকাচ্ছেন।’

অপ্রত্যাশিতভাবে প্রদীপ বললেন, ‘এমন কোনও কথা দিয়েছি বলে তো মনে পড়ছে না।’ প্রকাশ্যে এক হল মানুষ ও টিভি ক্যামেরার সামনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করেও সরাসরি পরাজয় থেকে বাঁচতে একটি বিশ্রি রকমের ডিগবাজি খেলেন।

টাকা দিয়ে শিখতে আসা অনেকেই প্রদীপের ওপর যথেষ্ট ক্ষিপ্ত হলেন। হৈ-হৈ চেঁচামেচি। প্রদীপ আগরওয়ালের একটি পেশিবাহিনী খারাপ পরিস্থিতি সামলাবার জন্য তৈরি থাকে বুঝলাম । শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে মাসলম্যানরাই প্রদীপকে বাঁচাচ্ছিল।

এরই মধ্যে আমি এক হল লোকের সামনে একটা ছোটখাট বক্তৃতা দিয়ে ফেললাম : জানালাম, দুই চেয়ারের মাঝে শেয়ান ছেলেটির শরীর সম্মোহনে শক্ত হয়নি। জাদুকররাও সম্মোহনের সাহায্যে কাউকে শক্ত করে তলোয়ারের ওপর শোয়ান না। জাদুকরের ওই সম্মোহন শুধুই অভিনয়। তাদের শরীর শক্ত করার পিছনে থাকে কৌশল। এখানেও মিস্টার আগরওয়ালের ডেকে নেওয়া ছেলেটির শরীর সম্মোহনে শক্ত হয়নি। ছেলেটি মিস্টার আগরওয়ালের দলের। ও শরীর শক্ত করেছে সামান্য অভ্যেসের সাহায্যে। আপনারা যে কেউ একটু অভ্যেস করলেই এমনটা করতে পারবেন ।

১৩ নভেম্বর ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর সাংবাদিক সৌম্য ভট্টাচার্য ও ‘প্রবাহ’ টিমের সামনে আমাকে সত্যিকারের সম্মোহন, তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে বলতে হয়েছে। সম্মোহনের প্রয়োগ অন্যের ওপর করে দেখাতে হয়েছে। সে সবই ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিবেদন- টিতে এও প্রকাশিত হয়েছে—আমি কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে মিস্টার আগরওয়ালের গ্রেফতার দাবি করেছি।

কলকাতা দূরদর্শনের প্রবাহ অনুষ্ঠানে দেখান হয়েছে প্রদীপের সম্মোহনের নামে বুজরুকি ফাসের নিউজ ফিচার এবং নিউজ ফিচারটি সপ্তাহের সেরা নিউজ ফিচার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্যাডে প্রদীপ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি কলকাতা পুলিশের কমিশনারের কাছে। জানিয়েছি, প্রদীপ সম্মোহনের সাহায্যে যে অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা ঘটিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে দাবি করেছেন তার তালিকা। জানিয়েছি, এইসব দাবি করে প্রদীপ ‘The Drugs and Magic Remedies (Objectional Advertisement) Act 1954 লঙ্ঘন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। শুধু তাই নয়, প্ৰদীপ মিথ্যে দাবি করে ওয়ার্কশপের নামে আর্থিক প্রতারণা করছে—যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সঙ্গে প্রদীপের অদ্ভুতুড়ে দাবির প্রচারপত্র পাঠিয়েছি। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন, এমনটা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি প্রদীপ বেশ কিছুদিনের জন্য কলকাতা ছেড়েছিলেন। প্রদীপের ব্যাপারে পুলিশের নীরবতা এটাই আরও একবার পরম সত্যকে উদ্ঘাটিত করে—এদেশে আইন- ভঙ্গকারীদের সঙ্গে আইনরক্ষকদের প্রেম বড়ই গভীর।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!