আমার বউ সীমা প্রতিদিনই প্রচুর পড়েন। বাংলা ম্যাগাজিন দেশ, সানন্দা, উনিশ-কুড়ি, আনন্দমেলা থেকে পরিচয়, কৃত্তিবাস, লোক-সংস্কৃতি গবেষণা ইত্যাদি বাড়িতে যা আসে সবই পড়েন। দিনে দুপুর বেলায় পড়েন, রাতে বই না পড়লে ঘুম আসে না। তাই পড়েন, দু’টো আড়াইটে পর্যন্ত।
পড়ে যান, কিন্তু কোনও লেখা নিয়েই নিজে গভীর বিশ্লেষণে যান না। পড়ে ফেলা লেখা নিয়ে আবার ভাবতে বসেন না। প্রবন্ধে কোনও তত্ত্বগত ভুল, স্ববিরোধিতা, যুক্তির শ্লথতা বা অতি-সরলতা রয়েছে কিনা—সেসব নিয়ে গভীর বিশ্লেষণে যান না। গল্প-উপন্যাসে চরিত্র-চিত্রণে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে কোনও ভুল বা গোঁজামিল আছে কিনা—এই নিয়ে ভাবতে বসেন না। এমন প্রচুর পড়িয়ে পাঠক-পাঠিকার সংখ্যাই গড়ে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ — অন্তত ভারতে।
এরা পড়ুয়া, এবং মস্তিষ্কচর্চা করেন—এমনটা আদৌ বলা যায় না। মস্তিষ্কচর্চা শুরু করতে চাইলে আজ থেকেই শুরু করুন। যা পরে করবেন, তা আজ শুরু করাই ভালো, যদি তা ভালো কাজ হয়।
মস্তিষ্কচর্চা মানে ভাবনার চর্চা। নতুন নতুন ভাবনার চর্চা। সেটা একই বিষয়-নির্ভর হতে পারে ; আবার বিভিন্ন বিষয়-নির্ভর হতে পারে।
চিন্তাভাবনা একটা অভ্যাস। এই অভ্যাসকে গতিশীল করতে
প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণের জন্য বই পড়তে হতে
পারে, ওয়েবসাইট ঘাঁটতে হতে পারে,
সিডি দেখার প্রয়োজন হতে পারে
আবার কোনও জনগোষ্ঠীর সঙ্গে
কিছু দিন-মাস-বছর কাটাতে
হতে পারে।
রাণা হাজরা। বয়স একুশ বছর। লম্বায় ৫ ফুট দশ ইঞ্চি। ওজন চল্লিশ কেজি। যুক্তিবাদী সমিতির একটা কাজে মোটরবাইকে অন্ডাল থেকে বাঁকুড়া শহরে যাচ্ছিল। একটা লরির সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে শিরদাঁড়ায় চোট পায়। তারপর থেকে একের পর এক শারীরিক সমস্যা চলছে। নিউরো পেসেন্ট হয়ে পড়েছে। আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে পড়তেই চলাফেরায় অনেক বাঁধন পড়লো। ট্রাকশন দিয়ে কোনও মতে খাড়া করানো রাণা এরপরও আমাদের সমিতির সবচেয়ে প্রাণবন্ত, উদ্দীপ্ত, ‘তেজ-দিমাগ’ তরুণ। যুক্তিবাদী সমিতির কাজ-কর্ম নিয়ে পরিকল্পনা ও প্রয়োগ করতে সবচেয়ে সক্রিয় মানুষটি রাণা। এমনকি সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত নানা প্রশ্ন বারবার ওর কাছ থেকেই পেয়েছি।
একবার প্রশ্ন করেছিল, “আমাদের দেশ দুর্নীতিতে পৃথিবীর প্রথম পাঁচে আছে। মন্ত্রী- -সেনা-পুলিশ- প্রশাসন থেকে সামান্য কেরানি পর্যন্ত সক্কলে গলা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ডুবে বসে আছে। আমরা যারা শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই, যারা এদেশে বিশুদ্ধ গণতন্ত্র আনার জন্য লড়াইতে সামিল, তাদেরও তো একদিন দুর্নীতির ঘূর্ণিস্রোত গ্রাস করে নেবেই। লোভ আমাদের কিনে ফেলবে-ই । আমাদের স্বপ্ন সার্থক করার কোনও পথ না থাকলে কেন এই আদর্শকে আঁকড়ে ধরে এগোবার জন্য জান লড়িয়ে দেবো?”
এই প্রশ্ন তো আর কেউ করেননি এতদিন? কেন করেন নি? ভাবনায় আসেনি তাই। রাণা সমাজ পরিবর্তনের নানা পদ্ধতি-প্রকরণ নিয়ে পড়াশুনা করে, মত বিনিময় করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পার্টি প্রোগ্রাম, প্রয়োগ এবং দু’য়ের মধ্যে দুরস্ত ফারাকের খবর রাখে। এই যে পার্টি প্রোগ্রামগুলোতে লেখা থাকে এক রকম, পার্টি চলে আর এক রকম—এটাই দুর্নীতি। এসব নিয়ে বিস্তর বিশ্লেষণ ও মস্তিষ্কচর্চার পরিণতিতেই উঠে আসতে পারে এমন প্রশ্ন।
দুর্নীতি বিষয়ে বাম ছাত্র রাজনীতিকদের চিন্তাভাবনা কেমন—একটু ফিরে দেখা যাক।
২০০৫ সালের মাঝামাঝি কলকাতার গায়েই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন অশান্ত ছাত্র-বিক্ষোভ চলছে, সেই সময় তারা নিউজ’ চ্যানেল দেখালো ছাত্রদের হোস্টেলের ভিতর খুলামখুল্লা মদ্যপানের দৃশ্য। ছাত্রদের এই বেআইনি ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের প্রসঙ্গ তুলে তারা’র এক সাংবাদিক এক ছাত্র নেতার কাছে জানতে চাইলেন এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য। ছাত্র নেতা জানালেন–এটা কোনও সমাজ-বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ছাত্রসমাজ আমাদের দেশের মূল সমাজের-ই অংশ। সমাজে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে—এঘটনা তারই পরিণতি ।
রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তাঁদের দলের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন তুলুন; দেখবেন তাঁদের উত্তর ছাত্র-নেতার থেকে আলাদা কিছু নয়। রাজনৈতিক দলের পোষা সমাজ বিরোধীদের কথা তুললে চট্ট্জলদি উত্তর মিলবে, সমাজ-ই ওদের সমাজবিরোধী তৈরি করছে। ওদের দোষ কোথায়? আমরা বিশ্বাস করি ‘লুম্পেনদের ও ‘প্রলেতারিয়েত’ তৈরি করা যায়। পার্টিতে এখন সেই প্রক্রিয়া-ই চলছে। অর্থাৎ সমাজবিরোধীদের শ্রমিকশ্রেণীতে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে।
কীভাবে এই প্রক্রিয়া চলছে? মস্তিষ্কচর্চা চালু থাকলে এমন নানা প্রশ্ন উঠে আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সুষ্ঠু উত্তর মিলবে কি? ওঁরা কি স্বীকার করবেন যে, এইসব আশ্রিত লুম্পেনরা শ্রমবিনিয়োগ করে প্রমোটার, বিল্ডিং মেটিরিয়াল সাপ্লায়ার, তোলাবাজ, রিগিং স্পেশালিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি হয়ে উঠছে। এতে সমাজবিপ্লব না হোক, ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স বিপ্লব হবে-ই ।
তাহলে সত্যি-ই কি এই ভয়াল দুর্নীতির থাবা থেকে বাঁচার কোনও পথ নেই ? শোষিত মানুষরা আরও শোষিত হওয়ার অনিবার্য পরিণতির জন্য অপেক্ষা করবে?
আছে। উত্তর কিন্তু আছে। দুর্নীতি দূর করার এবং গণতন্ত্রকে সার্থক করার স্পষ্ট পথ আছে। সেদিন রাণাকে যা বলেছিলাম, তার সংক্ষিপ্ত সার হলো –“আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে দুর্নীতি এমন সর্বগ্রাসী ছিল কি? ছিল না।
সমাজটা একটু একটু করে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লো। কেন?
কারণ সমাজ শুধু মানুষকে প্রভাবিত করে না, মানুষও
সমাজকে প্রভাবিত করে। মানুষ যদি একটু একটু
করে সমাজকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারে,
তবে মানুষ কেন পারবে না
সমাজকে একটু একটু করে
দুর্নীতিমুক্ত করতে?”
“এটা হলো তাত্ত্বিক উত্তর। এবার আসি প্রয়োগ প্রসঙ্গে। গত বছর দু’য়েক হল একটা নতুন হাওয়া এসেছে সমাজে। স্বরাজ-গ্রাম, স্বয়ম্ভর-গ্রাম, কমিউন বা সমবায়ের হাওয়া। দু’বছরে অন্তত আড়াই হাজার এমন গ্রাম গড়ে উঠেছে অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ওড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, বিহার সর্বত্র। আর তিন বছরে সংখ্যাটা পঁচিশ হাজার হলে একটুও অবাক হবো না ।
“এই স্বয়ম্ভর গ্রাম বা স্বরাজ গড়তে অংশ নেয় পাঁচ-দশ-বিশ-চল্লিশটা গ্রামের দলিত শ্রেণীর, শোষিত শ্রেণীর মানুষগুলো। তাঁরা সরকারের খাস জমি চাষের জন্য পেতে সরকারি সাহায্য নেন। গ্রামে বিদ্যুৎ আনতে সরকারি অর্থ সাহায্য নেন। যেখানেই সরকারি অর্থ সাহায্য পাওয়া যেতে পারে, সেখানেই চেষ্টা করেন। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ আনার কাজ বা সেচের কাজ তারা সরকারি কন্ট্রাক্টরদের সাহায্য ছাড়াই করেন। ওঁরা নিজেদের স্বরাজ বা স্বশাসিত অঞ্চলে অজাচিত আমলাদের আনাগোনা, রাজনৈতিক দলের দল পাকাবার চেষ্টা, রাজনৈতিক নেতাদের ‘ভোটের রাজনীতি’ একটুও পছন্দ করেন না। এঁরা নিজেরাই গ্রামের প্রতিটি কাজে এগিয়ে যান, অংশ নেন, গ্রামসভাকে সাহায্য করেন আন্তরিকতার সঙ্গে।
“এই যে সয়ম্ভর গ্রাম, কমিউন বা সমবায় গ্রাম এগুলোর অস্তিত্ব ও শ্রীবৃদ্ধি পুরোপুরিভাবে গ্রামবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর নির্ভরশীল, গ্রামবাসীদের গণতান্ত্রিক ইচ্ছের উপর নির্ভরশীল।
“এই অবস্থা মাথায় রেখে আমরা বলতেই পারি, আরও বেশি বেশি করে স্বনির্ভর গ্রাম হওয়ার অর্থ আরও বেশি বেশি করে মানুষ গণতন্ত্রের সঙ্গে জেনে না জেনে যুক্ত হয়ে যেতে থাকবে। গণতন্ত্রের সার্থক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থার বর্তমানে কোনও বিকল্প নেই–অন্তত এদেশে।
“রাণা, তুই দেখবি, যত বেশি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তত বেশি দুর্নীতি কমতে থাকবে। এইসব স্বয়ম্ভর গ্রামের শোষিত শ্রমজীবী মানুষ কেন তাদের রক্ত ঘাম ঝরানো শ্রমের উৎপাদনে দুর্নীতিবাজদের থাবা বসাতে দেবে? গ্রামসভার যে কেউ দুর্নীতি চালাবার চেষ্টা করলে সক্রিয় সমবায় শ্রমজীবীদের চোখে পড়বেই। পড়া মানেই সোজা বহিষ্কার।
“এতো সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন ‘সমবায়িকা’ বা ‘তন্তুজ’ ইত্যাদি নয়। শেয়ার যাঁরা কিনেছিলেন, তাঁরা বা তাঁদের বংশধরেরা সেই শেয়ারের কথা ভুলে বসে আছেন। নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক নেতারা স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি করে প্রতি বছর বিশাল ক্ষতি করে চলেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সমবায়গুলোয় শেয়ারহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নেই, গণতন্ত্র নেই। তাই ‘এলোমেলো করে দে মা, লুটে-পুটে খাই’, অবস্থা এতটা প্রকট। সেখানেই জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ সমবায় গড়ে ওঠে, সেখানে দুর্নীতি থাকে না, থাকতে পারে না।
“এই স্বয়ম্ভর গ্রাম বা সমবায়গুলোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও
দুর্নীতি উচ্ছেদে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে।
এইসব স্বরাজের প্রতিষ্ঠা মানেই সুষ্ঠু
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা
ও দুর্নীতির অবলুপ্তি।”
এ তো গেলো নির্মাণের কথা। এরপর আরও একটি কথা বাকি থেকে যায়। সংঘর্ষের কথা বিহারের শব্দগাঁও ঘিরে বেশ কিছু গ্রামে সমবায় পরিকল্পনাকে বিস্তৃত করেছিলেন মহেশও সরিতা। শোষিত মানুষদের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিতে কাতর হলো কেউ কেউ। তাদের হাতে মারা পরলেন মহেশসরিতা। হত্যাকারীরা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ‘বাহুবলী’। ‘বাহুবলী’ তাদের বলে ‘যারা’ শক্তের ভক্ত নরমের যম ‘ রাজনীতিক যারা গরীব ও দুর্বলশ্রেণীর উপর বলপ্রয়োগ করে নানাভাবে। যথা—ধর্ষণ-হত্যা- লুঠ-অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি। যারা চায় অসাম্যের সমাজব্যবস্থা
বজায় রাখতে, তারা তো স্বয়ম্ভর গ্রাম পরিকল্পনাকে ছিন্নভিন্ন করতে চাইবেই । একথা মাথায় রাখাটা যে জরুরি ছিল, সেটাই আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন মহেশ ও সরিতা। আত্মরক্ষার জন্য হত্যার আইনি অধিকার এদেশের সংবিধানই আমাদের দিয়েছে। এই অধিকার প্রয়োগের জন্য আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল।
আঘাত করতে গেলে প্রত্যাঘাত আসবেই—এ বিশ্বাসই
যদি নেকড়েদের মনে গাঁথা থাকতো
তাহলে মহেশ-সরিতার উপর থাবা
বসাবার সাহস পেত না।
“রাণা তুই ভাব, ২০০৩-এর বিহার, ঝাড়খণ্ড ও আশেপাশের এলাকার কথা। বিশাল অরণ্য সম্পদে ঘেরা অঞ্চল। এই সম্পদ চুরির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রয়েছে বিশাল সশস্ত্র রক্ষীবাহিনী। তবু অরণ্য-মাফিয়াদের নেতৃত্বে গাছ কাটা হচ্ছে প্রতিদিন। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রক্ষীরা অবশ্য নীরব দর্শক নয়। ওরা হিসেব রাখে বিভিন্ন মাফিয়াদের কে কত গাছ কাটল। পাওনা কত হল। হিসেব কষে পাওনা আদায় করে। এই সব চোরাই গাছ প্রকাশ্যে বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়। সেখান থেকে লরিতে চেপে গাছগুলো যায় করাত কলে। চোরাই গাছের কল্যাণে করাত কলের সংখ্যাও রমরম করে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মন্ত্রী-সচিব-পুলিশ- প্রশাসন-পরিবেশ দপ্তর সব্বাই এসব খবর সুদীর্ঘ বছর ধরে জানেন। রাজ্যের মানচিত্র পাল্টেছে, সরকার পাল্টেছে, কিন্তু জঙ্গল মাফিয়া-রাজ পাল্টায়নি। ওয়াকিবহাল মহল বলে, এএক বিরাট চক্র, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ সব্বাই। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কাঠ লুঠ হয়ে যাচ্ছে, করার কিচ্ছু নেই।
“সম্প্রতি কিছু লড়াকু ভূমিপুত্র এই চুরি প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা আদেশ জারি করেছেন—বেআইনিভাবে গাছ কেটে যারা অরণ্য উজাড় করছে, তাদের এবার কেটে উজাড় করা হবে। রেহাই পাবে না এদের সঙ্গে যুক্ত অরণ্যরক্ষী থেকে করাত মালিক কেই-ই। ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। মাফিয়া-রক্ষী-কাঠ ব্যবসায়ীদের সুদীর্ঘকালের আঁতাত শিকেয় তুলে ত্রিমূর্তি এখন ‘ধোয়া তুলসী পাতা’। গাছ কাটা, গাছের বাজার রাতারাতি বন্ধ
“মাফিয়া-রক্ষী-পুলিশ-প্রশাসকদের শক্তিশালী আঁতাতও বোঝে কোনটা ফাঁকা আওয়াজ, কোনটা সারগর্ভ।
“রাণা তুই তো জানিস, বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত বিহার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে ট্রেনে ডাকাতি শীলতাহানির ঘটনা আকছার ঘটতো। বছর দুয়েক আগে এক ভয়ঙ্কর ও বড় রকমের ট্রেন ডাকাতি ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। মিডিয়ায় বিশাল হইচই হয় । এ পর্যন্তই। রাজনীতির ছাতার তলায় থাকা বাহুবলীদের চুলটি ছোঁয়ার সাধ্য নেই পুলিশের। ইচ্ছেও নেই। কারণ লুটের বখরা আসে। মাঝে মধ্যে শ্লীলতাহানী বা ধর্ষনের ভাগও মেলে। অপরাধীরা এতটাই বে-পরোয়া যে অপরাধের পর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। অপরাধের মুখরোচক অশ্লীল গল্প বলে বুক বাজিয়ে। কয়েক মাস আগে একটা ট্রেন ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘযনা ঘটলো। অপরাধী ছিল পাঁচ জন । ওদের দিনের বেলায় প্রকাশ্যে গুলি করে মারলেন কোনও আদিবাসী জনগোষ্ঠী । এই নিহত অপরাধীদের মধ্যে পুলিশও ছিল। তারপর অদ্ভুত কাণ্ড! ঝাড়খণ্ডে ট্রেন ডাকাতি, ট্রেনে শ্লীলতাহানী ভ্যানিশ।
“বছর তিনেক আগের ঘটনা। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নবাগত ছাত্রদের উপর র্যাগিং হলো। পরিণতিতে হাসপাতাল-মামলা—জনা পাঁচেক ছাত্রকে বহিষ্কার। ফল—তীব্র ছাত্র আন্দোলন। কলেজ কর্তৃপক্ষের নতিস্বীকার। বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে আনা। পরিণতিতে পরের বছর র্যাগিং আরও জোরদার হবে—প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু কোথায় কী? ২০০৩-এ নতুন ছাত্রদের নতুন আস্তানায় রাখা হলো। নো র্যাগিং সিন! কেন এমন আমূল পরিবর্তন? শুনেছি, কোনও তথাকথিত উগ্রপন্থীরা নাকি একাধিক ছাত্রনেতার কপালে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে চমকেছেন—একটা র্যাগিং মানেই একটা ছাত্র নেতার লাশ পড়বে। তাইতেই নাকি পরিবেশ পাল্টে গেছে।
“গত শতকের ছয়ের দশকের শেষে এবং সাতের দশকের শুরুতে নকশালদের আদেশ মেনে ডাক্তাররা ফি কমিয়ে দিয়েছিলেন চুপচাপ
“বিহার কা যমরাজ, মাফিয়া সর্দার সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ। তাঁর নিজের রাজত্বে একটা অপরাধ ঘটে না। পুলিশ থেকে সেলসট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের সব্বাই ধোয়া তুলসি পাতা। কেন? সাহাবুদ্দিন চায় না তাঁর নির্বাচনি এলাকায় কেউ দুর্নীতি করুক। সবার ঘাড়ে একটা মাথা, তাই দুর্নীতি হয় না।
“ভাই রাণা, এসব কথা বললাম এজন্যে যে, দুর্নীতি আটকাতে মাঝেমধ্যে বলপ্রয়োগের দরকার হয়। এজন্য নিজেদের শক্তি রাখার প্রয়োজন হয়।
“একই সঙ্গে দেশের কিছু অঞ্চলের মানুষকে গণতন্ত্রমুখী করতে
সমবায় চিন্তাকে প্রয়োগ করবো এবং প্রয়োজনে সীমিত
শক্তি প্রয়োগ করবো। এই শক্তি প্রয়োগ কখনই
সশস্ত্র সংগ্রাম নয়। আত্মরক্ষার জন্য শক্তি
প্রয়োগ। দুর্নীতিবাজদের মধ্যে
ভয়ের সঞ্চার করতে
শক্তিপ্রয়োগ।
“দুর্নীতি তাড়িয়ে সুনীতি আনতে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতি দলিত সম্প্রদায়ের আগ্রহ বাড়াতেই হবে। এই গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতি আগ্রহ-ই স্বয়ম্ভর গ্রাম পরিকল্পনাকে সার্থক করতে পারে। সমবায় প্রকল্পকে দুর্নীতি উচ্ছেদের হাতিয়ার করতে পারে। দলিতশ্রেণীর আর্থিক সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নতি ও সাম্য আনতে পারে। মানুষ হিসেবে শির তুলে বাঁচার চেতনা তৈরি করতে পারে। এ হলো নির্মাণের অংশ।
“প্রয়োজনে সংঘর্ষে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি চাই। হ্যাঁ, শুধু প্রয়োজনে । সন্ত্রাসের শিকার হয়ে সাম্য-চিন্তা, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার চিন্তাকে বিসর্জন দেওয়া নয়। সন্ত্রাসকে উৎখাত করতে সংঘর্ষে যেতেই হবে—সে সন্ত্রাস রাজনৈতিক দলের তৈরি হোক বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হোক। দুর্নীতিবাজদের ভয় দেখাতে কখনও সখনও একটু আধটু শিক্ষা তো দিতে-ই হবে। শিক্ষা কতটা কঠিন হবে, তা অপরাধ বিচার করে ধার্য করবে গ্রামের কমিউনের বা সমবায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। যেখানে আইন অচল, দুঃশাসন চলছে, সেখানে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা মুর্খতা।”
এই যে উঠে আসা প্রশ্ন, ও তার ফলে উত্তর খোঁজা, দুই-ই মস্তিষ্ক চর্চার ফল।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ