কিশোর বয়সে শেষ দেখা দিদিমা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসেন। ছোট- খাট চেহারা। টকটকে ফরসা গায়ের রঙ। সাদা কদম-ছাঁট এক মাথা ঘন চুল। বয়স হয়েছিল, কিন্তু চামড়া ছিল—মাছি বসলে পিছলে পড়ার মত। দুপুরে চোখে চশমা এঁটে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, কাপড়ে বাঁধাই সোনালী রঙে ছাপাই প্রচ্ছদের উপন্যাস পড়তেন। রাতে রামায়ণ, মহাভারত, গীতা এ’সব পড়তেন। দিদিমার কাছে প্রথম শুনি—শ্রীকৃষ্ণের নিজের মুখে বলা কথাগুলোই গীতায় লেখা আছে।

আমার সহপাঠী মহম্মদ অফতাবুদ্দিনদের বাড়িতে ঘি-জবজবে হালুয়া খেতে খেতে ওর চাচার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম, “অলৌকিক যে আছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল কোরান। কোরানে রয়েছে আল্লার বাণী।”

আমাদের স্কুলের লাহিড়ী স্যার ভূগোল আর বিজ্ঞান পড়াতেন। তিনি ঠাকুর পুজোয় বিশ্বাস করতেন না। জন্ম-সূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও উপবীত ধারণ করতেন না। বলতেন, ধর্মীয় আচার-আচরণ পুরোহিতরা তাঁদের ইচ্ছে মতো, সুবিধে মতো তৈরি করেছেন। ভগবান এসব বিধান ওঁদের কাছে দিয়ে জাননি। যাঁরা দাবি করেন, ইহকাল আর পরকালের সুখ-শান্তির উপায় ভগবান স্বয়ং এসে তাঁদের কাছে বলে গেছেন, বুঝবে তাঁরা সকলেই মিথ্যেবাদি। উদ্দেশ্য, পরের মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়া। এ জন্যেই তো এক ধর্মের ভগবানের উপদেশের সঙ্গে আর এক ধর্মের ভগবানের উপদেশে জমিন আসমান ফারাক। সৃষ্টি থাকলে স্রষ্টা থাকবেই। এই স্রষ্টাই ভগবান । ভগবানের সঙ্গে ধর্মীয় আচরণের কোনও সম্পর্ক নেই।

বাবারে বাবা; এযে দেখি যত মানুষ তত মত! কোনটা ছেড়ে কোন্টা ধরি? বিভ্রান্ত পেনসিল-খোকার সামনে তখন এটাই বড় প্রশ্ন।

error: Content is protected !!