যে-রকম বোধ আমাকে কবিতা লিখতে উৎসাহ দেয়, সে-রকম বোধে অনুপ্রাণিত হয়েই, দু-দশক আগে, লিখেছিলাম লাল নীল দীপাবলি। একটি দীর্ঘ কবিতার মতোই কয়েক দিনের মধ্যে লাল নীল দীপাবলি রচিত হয়ে উঠেছিলো। আজ আর আমার পক্ষে এ-বই লেখা সম্ভব নয়। এ-বইয়ের পাঠক হিসেবে আমার পরিকল্পনা ছিলো স্বপ্নকাতর সে-কিশোরকিশোরীরা তরুণতরুণীরা, যারা আছে কোমল শৈশবের শেষ রেখায়, বা যারা কৈশোর পেরিয়ে ঢুকেছে এক বিস্ময়কর আলোতে, যদের সৌরলোক ভ’রে গেছে সাহিত্যের স্বর্ণশস্যে। একদা আমি সবুজ বাল্যকাল পেরিয়ে সাহিত্যের মধ্যে মহাজগতকে দেখেছিলাম, লাল নীল দীপাবলি তাঁদেরই জন্যে যারা আজ একদা আমার মতো। তবে তারা কি আজ আছে? শুনতে পাই সময় তাদেরও নষ্ট করেছে, তারা আর সাহিত্যের স্বর্ণশস্যে বুক ভরিয়ে তোলে না। অন্য নানা সোনায় তাদের বুক পরিপূর্ণ। বাঙলা সাহিত্যের দিকে তাকালে এক সময় আমার শুধু লাল নীল প্রদীপমালার রূপ ভেসে উঠতো, দেখতে পেতাম হাজার বছর ধ’রে জ্বেলে দেয়া ঝাড়লন্ঠনের মালা। দীপ জ্বেলেছেন কাহ্নপাদ, দীপ জ্বেলেছেন বড়ু চন্ডীদাস; হাজার বছর ধ’রে দীপ জ্বেলেছেন মুকুন্দরাম, চন্ডীদাস, বিদ্যাপতি, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বিহারীলাল, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, ও আরো অনেকে। লাল নীল দীপাবলিতে আমি স্বপ্ননীল কিশোরকিশোরী তরুণতরুণীদের চোখের সামনে বাঙলা সাহিত্যের হাজার বছরকে আলোকমালার মতো জ্বেলে দিতে চেয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে আরেকটি বই লিখেছি আমিঃ কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী। এ-দুটি যুগল বই। আমি চাই এ-দুটি একসাথে থাকুক কিশোরকিশোরী তরুণতরুণীদের টেবিলে; একটি বলুক সাহিত্যের কথা, আরেকটি বলুক ভাষার কথা। লাল নীল দীপাবলির প্রথম প্রকাশের সময় বিদেশে ছিলাম, তাই রয়ে গিয়েছিলো মুদ্রণত্রুটি। সংশোধন করতে গিয়ে এবার বইটি নতুন ক’রে লিখেছি, কোন কোন পরিচ্ছেদ হয়েছে আগের থেকে অনেক বড়ো। লাল নীল দীপাবলি ১৯৭৩-এ ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিলো ‘দৈনিক বাংলা’র ‘সাতভাই চম্পা’য়। এটিকে আমি কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনীর যুগল বই ব’লে মনে করি ব’লে এবার এর নামে যোগ হল বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী। আশা করি এবারও লাল নীল দীপাবলি পাবে কিশোরতরুণদের ভালোবাসা।
হুমায়ুন আজাদ
২৭ পৌষ ১৩৯৮ঃ ১১ জানুয়ারী ১৯৯২
১৪ই ফুলার রোডঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা।
“লাল নীল দীপাবলী বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী” উপন্যাস বা প্রবন্ধ সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ প্রদীপ জ্বললো আবারঃ মঙ্গলকাব্য
♦ কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
♦ উজ্জ্বলতম আলোঃ বৈষ্ণব পদাবলি
♦ দেবতার মতো দুজন এবং কয়েকজন অনুবাদক
♦ গদ্যের জনক ও প্রধান পুরুষেরা