মাতৃগর্ভে অন্ধকারে ছিলে; এখন তথাকথিত
আলোতে এসেছো। ভাবছো চারদিক আলোকখচিত।
অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যা, শিশু পুত্র আমি বারেবারে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এক কূট অন্ধকারে
আসলে পৌঁচেছো। এ-সূর্য, বিদ্যুৎ, নিঅন টিউব
বড়ো বড়ো বেশি প্রবঞ্চক : পৃথিবীতে অন্ধকার খুব।
পথ দেখানোর ছলে এরা কোনো ভয়াবহ খাদে
পৌঁছে দেবে তোমাদের; বিপজ্জনক সব ফাঁদে
আটকে যাবে। চারদিকে ধ্বনিত হবে আর্ত চিৎকার,
নিজেদের ঘিরে দেখবে থাবা-মেলা ক্রূর অন্ধকার।
তথাকথিত এ-আলো ঠাণ্ডা, দুষ্ট, কদর্য, কুটিল,
চক্রান্তপরায়ণ, অন্ধকারের চেয়েও অশ্লীল।
আর ওই সমাজরাক্ষস, তোমরা যে-দিকেই যাবে
সে-দিকেই মেলে দেবে হিংস্র হাত ধরে গিলে খাবে
সুযোগ পেলেই। তাই সাবধান, একটু ফসকালে
পৌঁছে যাবে উদ্ধাররহিত কোনো নিস্তল পাতালে।
আমি শুধু জন্মদাতা, পিতা নই; জনক যদিও–
এ-বাস্তবে, অন্ধকারে আমি নই অনুসরণীয়।
আমি গেছি যেই পথে সেটা ভুল পথ; গেছে যারা
সরল সঠিক পুণ্য পথে পথপ্রদর্শক তারা
তোমাদের। সামাজিক পিতাদের পদাংক মুখস্থ
কোরো দিনরাত; অক্ষয় ধৈর্যে জেনে নিয়ে সমস্ত
পবিত্র গন্তব্য। কারণ তারাই এই অন্ধকারে
মোক্ষধামে পৌঁছোনোর ঠিক পথ বলে দিতে পারে।
হে পুত্র, তুমি কিছুতেই বিশ্বাস রেখো না। ইস্কুলে
শেখাবে যে-সব মস্ত মিথ্যা, তাতে কখনোও ভুলে
বিশ্বাস কোরো না। তোমার সামনে খোলা যে-পুস্তক
জেনো তা প্রচণ্ড ভণ্ড, মিথ্যাভাষী, আর প্রতারক।
মনে রেখো যারা গলে ওই সব মুদ্রিত মিথ্যায়,
পরাজয় নিয়তি তাদের, তারা ধ্বংস হয়ে যায়।
ঘৃণা কোরো সতোকে সামাজিক পিতাদের মতো
প্রত্যেক মুহূর্তে, অসত্যকে জপ কোরো অবিরত।
সুনীতি বর্জন কোরো, মহত্ত্বের মুখে ছুঁড়ো থুতু,
মনুষ্যত্বকে মাড়াতে দ্বিধাহীন হয় যেনো জুতো
তোমার পায়ের। দুর্বলকে নিশ্চিন্তে পদাঘাত কোরো
পায়ের আভাস পেলে সবলের নত হয়ে পোড়ো
তার দিকে, চিরকাল সবলের থেকো পদানত,
তার পদযুগলের চকচকে পাদুকার মতো।
শত্রু হোয়ো মানুষের, দানবের পক্ষে চিরদিন
দিয়ো জয়ধ্বনি; প্রতিক্রিয়াশীলতার নিশান উড্ডীন
রেখো গৃহে ও গাড়িতে; নিয়ো তুমি প্রত্যহ উদ্যোগ
যাতে পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসে মধ্যযুগ।
যা কিছুই মানবিক তার শিরে, হে আমার পুত্র,
সকালে দুপুরে রাত্রে ঢেলো তুমি মল আর মূত্র।
তুমি তো জানো না কন্যা, শ্যামলাঙ্গী, অমৃত হৃদয়া,
চলছে আজ উজ্জ্বল পতিতাবৃত্তি, এবং মৃগয়া
এ-গ্রহে, পৃথিবীতে পতিতারাই প্রসিদ্ধ এখন।
জেনো প্রতিভা-সৌন্দর্য নয় শুধু যৌন আবেদন
তোমার সম্পদ। শিখে নিয়ে তুমি তার নিপুণ প্রয়োগ,
চিত্ত নয়, দেহ দিয়ে পৃথিবীকে কোরো উপভোগ।
তোমাকে সম্ভোগ করতে দিয়ো না কাউকে; প্রীতি-স্নেহ
থেকে দূরে থেকো; যাকে ইচ্ছে হয় তাকে দিয়ে দেহ,
কিন্তু কক্ষণো কাউকে হৃদয় দিয়ো না। তুমি তবে
পরিণত হবে লাশে; আমন্ত্রিত হবে না উৎসবে।
পুত্র তুমি জপ কোরো দিনরাত–টাকা, টাকা, টাকা,
টাকা, টাকা। একমাত্র ওই বস্তু ইন্দ্রজাল মাখা
পৃথিবীতে; সব কিছু নষ্ট হয়, সবই নশ্বর;
টিকে থাকে শুধু টাকা–শক্তিমান, মেধাবী, অমর।
জেনো পুত্র মহত্ত্বে গৌরব নেই, কালোবাজারিতে
নিহিত গৌরব; অমর্ত্য গীতাঞ্জলির থেকে পৃথিবীতে
জুতোও অনেক দামি, অমরত্বের চেয়ে শোনো প্রিয়,
বহুগুণে মনোরম শীততাপনিয়ন্ত্রিত গৃহ।
ভুল পথে, আমার মতোন, যেয়ো নাকো; অবিকল
হয়ো তুমি সামাজিক পিতাদের মতোই গাড়ল।
মাতৃগর্ভে অন্ধকারে ছিলে; এখন তথাকথিত
আলোতে এসেছো। ভাবছো চারদিক আলোকখচিত।
অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যা, শিশু পুত্র আমি বারেবারে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এক কূট অন্ধকারে
আসলে পৌঁচেছে। এ-সূর্য, বিদ্যুৎ, নিঅন টিউব
বড়ো বেশি প্রবঞ্চক : পৃথিবীতে অন্ধকার খুব।
“যতোই গভীরে যাই মধু, যতোই ওপরে যাই নীল” কবিতা সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ নষ্ট হৃৎপিণ্ডের মতো বাংলাদেশ
♦ পুত্রকন্যাদের প্রতি, মনে মনে
♦ যদি ওর মতো আমারও সব কিছু ভালো লাগতো