(১)
আমরা ইছলামে জিহাদে বিশ্বাস করি। সব মুসলমানের জন্য এটা ফরজ। আমরা বিশ্বাস করি যতদিন না পৃথিবীর সমস্ত কাফের ইসলামে ঈমান আনবে, ততোদিন আমাদের জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে; জিহাদ পরম রাহমানির রাহিম আল্লাহর নির্দেশ, তা আমরা হরফে হরফে পালন করবো; নিজেদের বুকের খুন দিয়ে, কাফেরদের বুকের খুন নিয়ে। আমরা কোন ভণ্ডামোতে বিশ্বাস করি না; ভণ্ডামো হচ্ছে নাছারদের, মালাউনদের ধর্ম ও কর্ম; তবে অনেক ভন্ড আছে, যারা মুছলমানের ছদ্মবেশে প’রে আছে, তারা মহান আল্লাহর বাণীর ব্যখ্যা দেয় শয়তানের মতো,- তারা শয়তান, তারা শয়তানের ছহবতে উৎপন্ন; তারা বলে, ইছলামে আর গণতোন্ত্রে কোন বিরোধ নাই। যারা একথা বলে, তারা কাফের, তারা মুরতাদ। ইছলাম হচ্ছে আল্লাহর, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের নামে খানকিবৃত্তি হচ্ছে কাফেরদের, নাছারদের ইহুদীদের খ্রিষ্টানদের; কাফেরদের ধ্বংস করা হচ্ছে রাহমানির রাহিম আল্লাহতালার অকাট্য নির্দেশ। ধ্বংস করতে হবে নিরন্তর, নিদ্রাহীন, বিরামহীন জিহাদের মাধ্যমে।
আল্লা-রছুলের বাণী ঠিক বুঝিয়েছেন হজরত আবু আলা মওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি, বেহেশতে তাঁরা শ্রেষ্ঠ স্থান পাবেন। এক সময় আমি সাম্যবাদ ও সর্বহারা করেছি- নাউজুবিল্লা,- মাক্স-এঙ্গেলস-লেলিন-ট্রটক্সি-স্ট্যালিন-মাওসেতুং নামের কতকগুলো ইবলিশ, শয়তান, ডেবিলের, মেফিস্তোর, বই পড়েছি; মনে করেছি শ্রেণীসংগ্রামই আসল কথা, সর্বহারার একনায়কত্ব স্থাপনই ইতিহাসের বিজ্ঞান-নাউজুবিল্লা; তারপর পাক ইছলামের পবিত্র কিতাবগুলো প’ড়ে বুঝতে পারি আমি কাফের হয়ে গিয়েছিলাম, বইগুলো পরা সহজ বুঝাও সহজ; কোন কচকচি নেই, আছে চরম সত্য, চরম নির্দেশ; আমি তওবা ক’রে ইছলামে ফিরে আসি, যেমন ফিরে এসেছেন আমার অনেক নেতা, প্রায় সব নেতা, যারা সাম্যবাদের জন্য নিজেদের কোরবানি করেছিলেন, এখন তাঁরা অন্য রকমে বলি হয়ে গেছেন। ওই কুফরি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ‘জামঈ জিহাদে ইছলাম পার্টি। হজরত আবু আলা মাওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির কিতাব প’ড়ে আমি বুঝতে পারি খাঁটি ইছলামকে; আমরা দিল বদলে যায়, আমি পাক হয়ে উঠি, জিহাদি হয়ে উঠি।
আমার দিল বদলে যাচ্ছিল আগে থেকেই। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির লেখা প’ড়ে আমার দিল সৎ পথে ফিরে আসে; আমি জোশ বোধ করি, গোলগাল দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার ঘেন্না লাগে-আল্লাতালার দুনিয়ায় এখনো এত কাফের, এত নাছারা, এত মালাউন! অথচ আল্লাতালা চৌদ্দো শ বছর আগে নির্দেশ দিয়েছেন জিহাদের। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, জিহাদ সমস্ত মুছলমানদের জন্য ফরজ, শুধু ল্যাংড়া আতুর কানা খোঁড়া ছাড়া; জিহাদ ক’রে সারা দুনিয়ায় ইছলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যাতে সব দেশের সব মানুষ ইছলাম মেনে চলে। কেনো ইছলাম সারা দুনিয়া জয় করতে চায়? তা বুঝার জন্য ইছলামের কিতাব পড়তে হবে, দিলে সেগুলোকে স্থির ক’রে রাখতে হবে। জিহাদই ইছলামের মর্মবাণী; যারা ইছলামের কিছুই জানে না, তারাই বলে ইছলাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে; তাঁরা মূর্খ তাঁরা ভণ্ড, তাঁরা হারামখোর।
আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, ইছলাম বলে সব কাফেরদের কতল করো, যেমন তারা তোমাদের কতল করতে চায়। মুছলমানেরা কি ব’সে থাকবে? আর কাফেররা তাদের গিলে খাবে? ইহুদিরা তাদের গোস্ত খাবে? মালাউনরা তাদের মগজ খাবে? নাছারারা তাদের রক্ত খাবে? তা হতে পারে না। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, ইছলাম বলে তাদের কতল করো, তাদের বুকে তলোয়ার ঢুকিয়ে দাও, তাদের ছিন্নভিন্ন করো। মানুষকে তলোয়ার ছাড়া বসে আনা যায় না, তাই তলোয়ার দরকার তলোয়ার হচ্ছে বেহেশতের চাবি। মহান আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, যারা জিহাদ করতে চায় না, যারা ইছলামেরর যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়, তিনি তাদের মুখে থুথু দেন। আমি তাহেরির হোলি টেরর বইটি প’ড়ে, তাতে মহান আয়াতুল্লা রুহুল্লা খমেনির ব্যাখ্যা প’ড়ে আমি আমার ধর্মকে, পবিত্র ইছলামকে, বুঝতে পারি। জিহাদ হোলি টেরর, পবিত্র সন্ত্রাস- এটা এখন আমার জীবন।
ওই যে ডেবিল মাক্স-এঙ্গেলস-লেলিন- ট্রটক্সি-স্ট্যালিন–মাওসেতুংয়ের কিছু কাফেরি বই পড়েছিলাম, সেগুলি একদিকে আমাকে সাহায্য করেছিল। ওগুলোও টেররের বই, যদিও আনহোলি, নাপাক, অপবিত্র; তাই গণতন্ত্র নামের ধাপ্পায়, মানুষের অধিকার নামের খানকিবৃত্তিতে, বাকস্বাধীনতা নামের জেনায় আমি কখনো বিশ্বাস করি নি; তাই হোলি তেড়রে আমি খুব সস্তি বোধ করি, শান্তি পাই। আমার জীবনের একটি অংশ নষ্ট হতো না যদি আমার পশম গজানোর আগেই পেতাম আবু আলা মাওদুদি ও আয়াতুল্লার কিতাব। আমি তওবা করে আল্লাহর কাছে মাপ চাই; উদ্ধারের পথ খুঁজি। আমাকে পথ দেখায় জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টি। এই পার্টি হচ্ছে অন্ধুকারের আলোকবর্তিকা, আমানিশার পর সোবে সাদেকের শামস।
আমাদের জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ, কৌশলগত ও অত্যন্ত গোপন বৈঠক বসেছে; মাঝেমাঝেই এমন বৈঠককে আমরা বসি, দুনিয়াকে নাছার মুক্ত করি, দেশকে পাক স্তান করি। এমন বৈঠক-এ-খাসে সব জিহাদি থাকে না, থাকেন প্রধান কয়েকজন নেতা এবং আমরা কজন,- আমরা কজন থাকবো সেটা ঠিক করার কাজ আমার, আমি এই স্তানের জিহাদিদের মধ্যে এক নাম্বার। দেশটাকে আমারা তন্ন তন্ন করে কয়েকটি স্তানে ভাগ ক’রে নিয়েছি, আমরা ভাগের স্থানের নাম ‘মদিনাতুন্নবি’, এইটিই প্রধান অঞ্চল; ইছলামে মক্কার থেকে যেমন বেশী গুরুত্বপূর্ণ উতরিব, যার নাম বদলে রাখা হয়েছিল মদিনাতুন্নবি। আমাদের পাক সার জমিনও শুরু হবে এই স্থান থেকেই।
আমরা পাক পবিত্র ইছলামি খুনে, আল্লাহর নামে খুনে, যার ফলে দেশ দখল করবো আমরা, তাতে বিশ্বাস করি; আমরা জানি খুন ছাড়া মহাসত্য কখনো প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমরা বিছমিল্লা ব’লে খুন করি, বলি, ‘হে আল্লা রাহমানের রাহিম আপনার নামে খুন করিতেছি, আমাদিগকে বেহেশতে নছিব করিবেন। আর যদি ভুল খুন করি, তাহলে আমাদিগকে মাফ করিয়া দিবেন।‘ খুনে, ধর্মে, ও একটি মহৎ কর্মে- যাকে নাছারা ‘দুর্নীতি’ বলে, তাতে আমরা এখন আমরা দুনিয়া এক নাম্বর আসন অধিকার ক’রে আছি। তবে আসল কথা হচ্ছে স্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে, শরিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশ মুরতাদ ও ইহুদিতে ভ’রে গেছে, দেশ নাপাক হয়ে গেছে, একে আবার পাক করে তুলতে হবে। পাক পবিত্র স্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্থান নেই ব’লে আমাদের দিলে শান্তি নেই; আমরা সব সময় স্তানের স্বপ্ন দেখি; স্তান থেকে খেজুর, বাশমতি চাউল এনে খাই, তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলি, আমাদের লকলকে যুবতীগুলো তাদের দাড়িঅলা দাড়িছাড়া খেলোয়াড়দের চুমো খাওয়ার, দেহ দেয়ার জন্যে পাগল হয়, তাদের হোটলে গিয়ে চিৎ হয়। তাদের দুই চারটি মেজর-লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসে মাসে ছফরে না এলে আমরা দিলে সুখ পাই না। এভাবে আমরা একটু পাকের পরশ পাই। নাপাক ওয়াতানে বাস করা শুয়োরের গোস্ত খাওয়ার থেকেও হারাম। নাউজুবিল্লা।
আমরা একলা নই; আমাদের ভাইয়েরা আছে দুনিয়া জুড়ে, তাদের কাজ ক’রে চলেছে; কোথাও যদি কোন দালানের ওপর এরোপ্লেন ঝাঁপিয়ে পরে। যদি কোন গাড়ি হাসপাতালে হোটেলে ঢুকে সব কিছু চুরমাচুর ক’রে দেয়, যদি কোন প্রমোদকেন্দ্রে বোমায় ৩০০ জন মরে, তখন বুঝি সেটা আমাদের ভাইদের কাজ। এক অর্থে আমাদেরই কাজ। এটা জিহাদ। আমরা আমাদের কাজ ক’রে চলেছি; দেশ এক রকম দখলই করে ফেলেছি, পুরোপুরি করতে বাকি নেই। আমরা মেইন পার্টির সঙ্গে আছি, মেইন পার্টিতে আমাদের লোক আছে, মেইন পার্টিতে এখন আমাদের লোকই বেশী; তারা কাজ ক’রে যাচ্ছে; বেশী দিন নেই আমরা দেশটিকে আমাদের নিশানের নিচে, আমাদের পায়ের নিচে নিয়ে আসবো। আমাদের জিহাদ চলছে চলবে।
নেতা, আলহজ মওলানা করিম আলি ইছলামপুরি, এসেছেন।
এতেই বোঝা যায় আমার স্তানটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, আমার কর্মকাণ্ড কতোটা সুদূরপ্রসারী, কতোটা সম্ভাবনাময়। তিনি মনে করেন। এখান থেকেই শুরু হবে নতুন ইছলামের, নতুন পাক স্থানের, পাক জমিন সাদ বাদের।
তিনি বললেন, ‘মনে কইরো তোমরা হইলা ইছলামের আনসার, ইছলামের রাজাকার, তোমরা হইলা আল্লার তালেবান, এইখন আমরিকার ইবলিশ ইহুদিরা আপগানিস্থান দখল করছে, তয় আমরা মরি নাই, জিহাদ আমাগো চালাই যাইতে হইব, আমরা এই দ্যাশে আপগানিস্থান হাছিল করুম, এইডা হইব আল্লার দ্যাশ। সারা দুনিয়াই হইব আল্লার রাইজ্য।‘
দু-নম্বর নেতা, আলহজ মওলানা রহিমুদিন রছুলপুরি, বললেন, ‘আই চ্যাডের না সোনার বাংলা গানডাও বন্দ করতে অইব, অইডা শোনলে আমার কইলজা থিকা খুন বাইর হয়, মালাউনদের গান অইডা, অইডারে বদলাইতে হইব, সেইখানে আল্লার রহমতে আবর আসব ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’।
পাক সার জমিন গানটা আমি ইস্কুলে গেয়েছি, এই লাইনটাই মনে আছে আমার, এর পরে কী আছে বা নেই, তা আমার মনে নেই; আমার সঙ্গে যারা নওজোয়ান জিহাদি তারা এই গান শোনেই নি। তারা এদিক ওদিক তাকায়, ব্যাপারটি বুঝতে পারে না।
এক নওজোয়ান জিহাদি জানতে চায়, ‘হুজুর, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ কী, এইডা কি আল্লাপাকের বাণী?’
রহিমুদিন রছুলপুরি একটু অবাক হন, জিহাদিরা আসল কথাটিই জানে না!
তিনি বলেন, ‘এইডা হইল দুনিয়ার সেরা সঙ্গীত, কোরানহাদিছের পরই এইডা, এইডা আমাগো পাকিস্থানের কওমিসঙ্গীত, এইডা আমরা ১৯৭১-এ হারাই ফেলছি, এইডা আমাগো ফিরাই আনতে হইব, আবার দ্যাশটারে পাকিস্থান বানাইতে হইব, হুকুমতে ইছলাম করতে হইব। তোমাগো লিগা আমি ১,০০০ পাক সার জমিনের ক্যাছেট লইয়া আইছি, আমাগো পাকিস্তানের মুরুব্বিরা দিছে, আরো দিব, তোমরা সব্বাই ফজরে জহুরে এশার পর অই ক্যাছেট বাজাইয়া শোনবা, দ্যাকবা তোমাগো মইদ্যে জোশ জাইগ্যা ওঠতেছে। ওই ক্যাছেট শোনালে ছওয়াব হইব।’
মওলানা নিয়ামত আলি বললেন, ‘এইর লিগা খুন করতে অইব, আমাগো পেয়ারা রচুলুল্লাও (দঃ) খুন করতে কইছেন, উতরিবের ইহুদিগো তিনি খুন না করলে ইছলাম টিকত না, উতরিব মদিনাতুন্নবি হইত না, ইছলামের জইন্য এইখন আমাগো দ্যাশের ইহুদিদিগকে খুন করতে হইব।’
জিহাদি মোঃ পিয়ার আলি জিজ্ঞেস করলো, ‘হুজুর, আমাগো দ্যাশে ত ইহুদি নাই, ইহুদি কই পাম, ইহুদি দেখতে কোমুন?’
রহিমুদ্দিন রছুলপুরি দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, ‘নাউজুবিল্লা, আস্তাগফেরুল্লা, পোলাপানরা অখনও খাডি মুছলমান অয় নাই, এলেম শিখে নাই, দ্বিন শিখে নাই, ইহুদি চিনে নাই; ইছলামের এক নম্বর শক্ৰ হইল অই ইহুদিরা, শুরু থিকাই তারা আমাগো শত্রু।‘
মওলানা নিয়ামত আলি একটি পান মুখে দিতে দিতে, চিলমচিতে থো থো করে পিক ফেলতে ফেলতে বললেন, ‘হজরত রছুলপুরি ছাহেব, আপনে অল্পেতেই বেচইন হইয়া যান, আপনের মতন হইলে আমাদের পেয়ার রছুলুল্লাও (দঃ) ইছলাম কায়েম করিতে পারিতেন না; এইরা পোলাপান, এইগো বুঝাইত হইব দ্যাশে ইহুদি কারা।‘
আমরা একদল পোলাপান ইছলাম আর পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের জন্য জান দিতে প্ৰস্তুত, আমি অবশ্য পোলাপানের পর্যায়ে পড়ি না। আমার অঞ্চলের হাফেজিয়া ফোরকানিয়া ও নানা রকম মাদ্ৰাছার–দারছই নিজামি কওমি মাদ্ৰাছা, সাধারণ মাদ্ৰাছার তালেবানে আমার ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম পাটি’ পরিপূর্ণ। তারা আমার সৈনিক, তারা জিহাদের জন্যে তৈরি।
এক নওজোয়ান জিহাদি জিজ্ঞেস করলো, ‘হুজুর, আমাগো বুজাই দ্যান এই দ্যাশে ইহুদি কারা, তারা দ্যাকতে কোমুন?’
আলহজ মওলানা করিম আলি ইছলামপুরি বললেন, ‘বাজানরা, বুজলা না? আমাগো দ্যাশে ইহুদি হইছে মুরতাদরা, কয়েকটা কবি, ল্যাখ্যক আর বুদ্ধিজীবীরা, ওই ইবলিশগুলি, আর মালাউনরা, আর মালাউনগো দালাল পার্টির ইবলিশরা; অগো আগে শ্যাষ করতে হইব, তাইলেই আমরা আরব পাক সার জমিন সাদ বাদ আর ইছলাম ফিইর্যা পাইব, তার আগে আমরা থামুম না।’
‘মনে রাইখ্য তাগো দয়া করন যাইব না, পেয়ারা রাছুলুল্লা (দঃ) নিজের চাচা আবু লাহাব আবদুল উজ্জারেও মাফ করেন নাই; এইখনও আমরা সালাতে বলি, ‘আবু লাহাবের দুই হস্ত ধ্বংস হউক, এবং ধ্বংস হউক সে নিজেও—তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিও ওয়া তাব্বা।’
তাঁরা এক এক করে দীক্ষা দিতে লাগলেন।
দীক্ষার ব্যাপারটি আমি বেশ জানি, বারবার আমি দীক্ষিত হয়েছি, দীক্ষা মাদকের থেকেও শক্তিশালী; দীক্ষা দিতে হ’লে একই কথা বারবার শোনাতে হয়, মাথা ধুয়েমুছে সেখানে দীক্ষা ঢুকিয়ে দিতে হয়, যাতে অন্য কিছু আর সেখানে ঢুকতে না পারে।
‘বোজলা, ইছলামের নামে খুন করলে পাপ নাই, আর ইহা খুন না, ইহা হইল কাফের সরাইয়া আল্লার রাইজ্য স্থাপন; তাইলে জান্নতুল ফেরদাউছ পাওয়া যাইব, যেইখানে হুরদের লগে দিনরাইত ছহবত করতে পারবো। ইছলামের জইন্য একেকটা কাফের মারবা একেকটা হুর পাইবা, সোভানাল্লা।’
‘মুরতাদগো খুন করলে জান্নতুন ফেরদাউছ পাইবাম সেইখানে হুরদের সঙ্গে শরাবন তহুরা খাইয়া রাইত দিন কাটাইবা, সেইখানে ছহবত আর ছহবত করবা, দুনিয়ার ছহবতের থিকা অই ছহবত ৭০ কোটি গুণ মিঠা, সোভানাল্লা।’
‘সেইখানে তোমাগো জইন্য আছে গেলমান, কচি পোলা, তাগোও তোমরা পাইবা, কচি পোলার স্বাদের কোন তুলনা নাই, সোভানাল্লা।’
‘এই দুনিয়ায় মালাউন মাইয়াগো জেনা করলে দোষ নাই, গুনাহ নাই, তারা হইল গনিমতের মাল, এই বয়সে তোমাগো ছহবত করনের দরকার, মালাউনগো মাইয়াগো লগে করবা, তাইতে গুনাহ নাই, সোভানাল্লা।’
মালাউনগো দ্যাশ থিকা খ্যাদাই দিতে হইব, মুরতাদগো জান কবজ করতে হইব, তা হইলেই ইছলাম আসব—তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিও ওয়া তাব্বা।‘
‘মাইয়ালোকগো, ঘর থিকা বাইর হইতে দেওয়ন যাইব না।’
‘মাইয়ালোক হইল শয়তান, ফিৎনা, গোলমাল, মাইয়ালোক আদমরে গন্দম খাওয়াইছিল, নাইলে আমরা এইখনে ভেস্তে থাকতাম, মাইয়ালোকের জন্যেই আমাগো পতন ঘটছে; এইখন হেরা পরপুরুষ দ্যাকলেই ছহবত করতে চায়, ছহবত ছাড়া তাগো দেহ আর কিছু চায় না, তাগো বিশ্বাস করব না, বোরকা পইর্যা স্বামীর পাশে বইস্যা ফাঁক পাইলেই তারা অন্য পুরুষগো দিকে চায়, দিলের জিন্না করে, আস্তাগফেরুল্লা।’
‘আপগানিস্থানে মাইয়ালোকগো যা করছিলেন মহান তালেবানরা, তা-ই হইল আসল ইছলামি নিয়ম, আমরা সেই নিয়ম করুম; অখনও আমাগো মুরুব্বি পাক সৈদি আরবে মাইয়ালোকগো বোরকা ছাড়া বাইর অইতে দেয় না, গাড়ি চালাইতে দেয় না, ইহাই সাচ্চা ইছলাম, আমরা অই আসল সাচ্চা খাডি ইছলাম কায়েম কারুম। ইছলামে মাইয়ালোক স্বাদিন থাকিব পুরুষের অধীনে থাইক্কা, আলহামদুলিল্লা, আল্লা রাহমানির রাহিম।’
‘এইখন দ্যাশ মাইয়ালোকে চালায়, এক মাইয়ালোক যায়, আবার আরেকটা মাইয়ালোক আসে, নাউজুবিল্লা, মাইয়ালোকের অধীনে থাকা হাবিয়া দোজগে৷ থাকার থিকাও কষ্টের, এইটা হারাম; মাইয়ালোক নিচে থাকিব, ওপরে থাকতে পারব না; তয় মাইয়ালোকের রুল আমরা মাইন্যা নিয়াছি ট্যাক্ট কইর্যা, ট্যাক্ট ছাড়া কাম হয় না, ইছলামের শুরুর সোমও ট্যাক্ট করতে হইছিল ইহুদিগো লগে, পরে আমরা ইহুদিগো কচুকাডা করছিলাম, অগো গদে হালাইয়া মাডি চাপা দিছিলাম, অগো মাইয়া ও মাইয়ালোকগুলিরে বান্দী বানাইছিলাম, অগো ঘরবাড়ি জমিজায়গা দখল করছিলাম, এইখন আমরা সেই রকম ট্যাক্ট করছি; সময় আসলে আমরাই দ্যাশ দখল করুম, দিন দিন দখল করতে আছি, ট্যাক্ট ছাড়া হইব না; একদিন ঘরে ঢুকাই দিমু, তোবা করামু।’
‘মনে রাইখ্য ইছলাম হইতেছে একমাত্র সলিশন, ইছলাম ছাড়া আর সলিশন নাই; আমরা কম্যুনিস্টগো কবর দিছি, ডামোক্ৰেছিরেও কবর দিমু, কবর খোড়তে হইব তোমাগোই। তোমরা হইতেছে তার সিপাহি, তার জেনারেল, তার মুহাম্মদ বিন কাশিম, বকতিয়ার খিলজি, মুসা, তারিক।’
‘এই আন্দোলনটা দিয়া দ্যাশ কাপাই দিতে হইব তোমাগো, ইছলামের দিকে আমরা দশ কদম আগাই যাইব, পাক স্থানের দিকে বিশ কদম আগাইব, আমরা আবর পাক সার জমিন সাদ বাদ গাইতে পারুম। অনেক বছর না গাইতে গাইতে এই মহান গানডার দুই নম্বর লাইনডা আমিও ভুলিয়া গেছি।’
আমি বলি, ‘তুনিশানে আজমে আলিশান…’
তিনি বলেন, ‘হ, হ, মাশাল্লা, সোভানাল্লা, তুমি হইলা আসল জিহাদি, এইর লিগাই ত শ্রেইষ্ঠ স্তানের ভার তোমারে দিয়াছি।’
মওলানা নিয়ামত আলি বললেন, ‘দ্যাখ, দ্যাশে আরও অনেক জিহাদি ইছলামি পার্টি আছে, ধরো জঙ্গি আলি খিদমতরা, জঙ্গি জামতুল পার্টি, হিযবুত পার্টি, হিযবুত তৌহিদ পার্টি, ইছলামুন পার্টি, তেলায়াতে আল কুরআন পার্টি, বেরাদারানে ইছলাম পার্টি, এমুন আরও নানা পার্টি আছে, ওইগুলির মইদ্যে দুই চাইরটা ভণ্ড আছে, তয় ওইগুলির অনেকগুলিই আমাগো, নানা নামে আমরা দ্যাশে তাগো ছাইর্যা দিছি, তারা আমাগো কামই করতেছে। সময় আসলে ওইগুলির দুই-তিনডোরে শ্যাষ কইর্যা দিতে হইব, আসল কয়ডারে আমাগো মইদ্যে মার্জ কইর্যা লইতে হইব, যারা আসল জিহাদি।’
করিম আলি ইছলামপুরি বললেন, ‘পাওয়ার আমাগো দখল করতেই হইব। এইখন আমরা পাওয়ারের লগে আছি, মেইন পার্টির সহিত আছি, এক সোম পাওয়ার আমাগো হইব, আমরাই হইব মেইন পার্টি, সবখানে আমরা ঢোকতেছি, ইছলাম হইব, পাকিস্থান হইব, দ্যাশে মুরতাদ থাকিব না, মালাউন থাকব না, মুছলমানের চেহারা লইয়া মালাউন ইহুদি থাকব না, ইনভার্ছিটি থাকব না, ইনভাৰ্ছিটি হইতেছে জিনাখানা, অইখানে পোলা-মাইয়ারা একলগে বসে, হাডে, ফিরে, শয়তান তাগো মাজখানে থাকে, আস্তাগফেরুল্লা।’
তিনি আরো বলেন, ‘তয় ইনভাৰ্ছিটি, ইনজিনিয়ারিং ইনভাৰ্ছিটি, মেডিকেল ইনভাৰ্ছিটি এইসব এইখন আমাদের দখলে, সব জায়গায়ই আমাগো লোক৷’
‘ইনভাৰ্ছিটির দিকে চাইয়া দেখ, কি দেখ–মাইয়ালোকরাও আমাগো লগে, মাসে মাসে ওইখানে বোরখা দিতে হয়, হিজাব দিতে হয়; আগে স্কুল কলেজ ইনভাৰ্ছিটিগুলিতে আমরা বছরে দশ হাজার বোরকা হিজাব দিতাম, মারহাবা, এই বছর দশলাখ বোরকা হিজাব দিছি। বোরকা হিজাবের ডিমান্ড থিকাই আমরা বুজতে পারতেছি আমরা পাক স্তানের দিকে আগাইতে আছি, আলহামদুলিল্লা, সোভানাল্ল।‘
তিনি আরো বলেন, ‘টেলিভিশনেও আমরাই আছি, চাইয়া দেখ, ফজর থিকা এশা পর্যন্ত আমরাই ওয়াজ করতেছি, মাজ রাইতেও ওয়াজ করতেছি, আর মারহাবা, আমাগো বিবিজানরাও, আওরতরাও, কি সোন্দর ওয়াজ শিখছে, মাশাল্লা, হিজাব পইরা ঠোডে রাঙ্গা লিপিসিন্টক মাইখ্যা ভুরু প্যালাক কইর্যা, মারহাবা, মাছকারা মাইখ্যা, দুই চোকে প্যালাসটিকের পাপড়ি লাগাইয়া তারা ইংরাজি বাঙলা আরবি উর্দু মিলাইয়া মিশাইয়া ওয়াজ করতেছে। তাগো ওয়াজ দেইখ্যা শুইন্যা আমিই নতুন কত মছলা শিখতে আছি, সোভানাল্লা।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেই মাইয়াগুলি আগে দুদ ফুলাইয়া পাছা দুলাইয়া কোমর নাচাইয়া মার্কেটিংয়ে যাইত, তারা এইখন বোরখা হিজাব ছাড়া বাহির হয় না। মমিনরা বল, মাইয়ালোক উচা দুদ ফুলাইয়া আর চওরা পাছা দুলাইয়া রাস্তায় বাহির হইলে কোন মমিন না পাগল আয়? মমিনের পক্ষে তখন জেনা না কইর্যা উপায় থাকে না। অহন আর সেই অবস্তা নাই।‘
‘আরও মাশাল্লা, আর কয়দিন পর তারা কাবিনও চাইব না, একটা লোয়ার আংটি হইলেই হইব; স্বামীগো চাইরটা বিবি রাখতে দিব। স্বামীরা আবার তালাক দেওনের ক্ষমতা ফিইর্যা পাইব, যার তালাক দেওনের ক্ষমতা নাই, সে পুরুষ না, যার দুই তিনডো বিবি নাই, সে খাটি মুছলমান না, আলহামদুলিল্লা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হিশাব নিয়া দেখছি বিশ বচ্ছর আগে ইনভার্ছিটি কলেজের বিশজনও মছজিদে যাইত না, এইখন শতকরা নব্বইজন ছাত্র আর মাস্টার মছজিদে যায়, শুকুরবার দৌড়াদৌড়ি পইর্যা যায়, আমরা খবর নিছি আগে ইনভাৰ্ছিটি কলেজের শতকরা ৯৯ জন ছাত্ৰমাস্টার খাড়াইয়া মুততো, এখন ৯৯জন বইস্যা মোতে, ঢিলা কুলুপ লইয়া চল্লিশ কদম হাডে; ইনভাৰ্ছিটিগুলির মুতাগারে এইখনে আমরাই ঢ়িলা কুলুপ সাপ্লাই করি, বচ্ছরে ষাইট টন টিলা কুলুপ সাপ্লাই করি। ইনফেকশন ফ্রি ঢিলা কুলুপ। আমরা সাকসেকফুল হইতেছি, পুরা সাকসেসফুল হইতে বাকি নাই, ইনশাল্লা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আস্তাগাফেরুল্লা, আগে আয়জানের সোমও মুরতাদরা গানবাইদ্য করত, পাছা দুলাইয়া ঢেমনি মাইয়াগুলি নাচত, সোভানাদুল্লা, এইখন কি দেকাতেছি, আয়জন দিলে সব চোপ অইয়া যায়, নাচ বন্দ হয়, গান বন্দ অয়, এমুন্ন কি যেই বেলেহাজ মাইয়াগুলি মগরবের সোম নানান ইনভাৰ্ছিটির সামনে বইস্যা ছ্যামরাগে লগে পীরিত করে, ডলাডলি করে, কাপোড় নাপাক কইর্যা ফালায়, হেরাও এইখন আয়জন শোনলে মাতায় কাপোড় তুইল্যা দেয়, ডলাডলি বন্দ কইর্যা দেয়, মজনুগো হাত সরাইয়া দ্যায়, সোবাহাল্লা, আমরা আগাই যাইতেছি, বেশি দেরি নাই পাক স্তান কায়েমের।’
‘সোভানাল্লা, এককালের কম্যুনিস্টরাও আমাগো লগে জয়েন করছে, হেরা অহন পাক স্তান আর ইছলাম ছাড়া কিছু বোজে না, আলহামদুলিল্লা, গত কয় মাসে আমি দশগণ্ডী কম্যুনিস্টরে তোবা পড়াইছি। কম্যুনিস্টরাও জিহাদে বিশ্বাস করতো, শ্রেণীসংগ্রামের জিহাদ, ক্যালাশস্ট্রাগলের জিহাদ, এইখনে তারা নিজেগো ভুল বুজতে পারছে, খাডি জিহাদে ফির্যা আইছে। দ্যাহ নাই, ১৯৭১-এ একদল কম্যুনিস্ট আমাগো লগে কাম করছে, সোভানাল্লা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডাক্তারগো ক্লিনিকে আর চেম্বারে গেলে এইখন মানুষ কি দ্যাকতে পায়? নাছারাগো কোনো বই দোকতে পায় না, দেখে আমাগো পরম মুরব্বি সৌদি রাজার উপহার দেওয়া আল কুরআন। ইঞ্জিনিয়ারগো অফিশে গ্যালে কি দেখে, দেখে আমাগো পরম মুরব্বি সৌদি রাজার উপহার দেওয়া আল কুরআন। আল্লার রহমতে নাজাতের আর দেরি নাই, আলহামদুলিল্লা।’
“পাক সার জমিন সাদ বাদ” উপন্যাস বা কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ