২২ মে ১৯৯১ ‘বর্তমান’ পত্রিকায় রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর খবরের সঙ্গেই প্রথম পৃষ্ঠাতেই যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল আরও একটি খবর। শিরোনাম ছিল- “কলকাতার জ্যোতিষী বলেছিলেন”। ভেতরের খবরটা ছিল এই রকমঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ নির্বাচনী পর্ব মেটার আগেই দেশে বিরাট ও চাঞ্চল্যকর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে যাবে। অন্তত তার যে একটা চেষ্টা হবে তা একেবারে নিশ্চিত। কলকাতার জ্যোতিষী প্রয়াগ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। গত ১২ মে স্থানীয় এক ইংরেজি দৈনিকে তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রকাশিত এই খবরটি জনগণকে বিপুলভাবে নাড়া দিয়েছিল, প্রভাবিত করেছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন প্রয়াগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভবিষ্যদ্বাণী জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততারই প্রমাণ। বাস্তব সত্য কিন্তু অন্য কথাই বলে। ১২ মে ‘১১ The Telegraph পত্রিকায় প্রয়াগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনোত্তর ভবিষ্যদ্বাণীটি প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে প্রয়াগবাবু স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন – “Rajiv Gandhi will head the country as the Prime Minister.” অর্থাৎ রাজীব গান্ধী হবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কথার মধ্যেই প্রয়াগবাবুর জ্যোতিষবিচার দিয়েছিল রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকার গ্যারান্টি । কিন্তু ২১ মে শ্রীপেবুমপুদুবের বিস্ফোরণ রাজীব গান্ধীর শরীরের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়াগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্যারান্টিকেও ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছিল।

এরপর স্বাভাবতই পাঠক-পাঠিকাদের কাছে যে প্রশ্নটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে তা হলো, তবে কেন প্রয়াগবাবুর চূড়ান্ত ভুলকে একান্ত নির্ভুল বলে প্রচার করা হয়েছিল ? কেন ? কেন ? বারবার ঘুরে-ফিরে এ প্রশ্ন আসবেই। এই মিথ্যাচারিতার পিছনে গূঢ় উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে। কী সেই উদ্দেশ্য ? এ-বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনায় যাওয়ার আগে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে চাই নামী-দামী জ্যোতিষীদের আরো দু-একটি সাড়া জাগান তথাকথিত ভবিষ্যদ্বাণী ও তাদের কৌশলগত দিকের সঙ্গে।

২৪ আগষ্ট ‘৮৮ যুগান্তর পত্রিকায় একটি জব্বর খবর প্রকাশিত হয়েছিল

ভবিষ্যৎবাণী মিলল

বিখ্যাত পণ্ডিত ও জ্যোতিষী মুরারিমোহন বেদান্ততীর্থ শাস্ত্রী আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সংস্কৃতশাস্ত্রে অধ্যাপনার জন্য জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করবেন।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে পণ্ডিত শাস্ত্রী যে ভবিষ্যৎবাণী করেন তা এবার মিলে গেছে ।

খবরটা জনমানসে এতই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে সে বছর দমদম সেন্ট মেরিজ স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, “কোন বিখ্যাত জ্যোতিষী জিয়ার মৃত্যু এবং বিহারের সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্প সম্পর্কে নিখুঁৎ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ?”

আমাদের ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ শিরোনামের বহু অনুষ্ঠানেই এই নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো সেই সময়। আমরা উত্তরে ২৬ আগস্ট যুগান্তরে পাঠান চিঠি প্রতিলিপিটি পড়ে শোনাতাম। এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর ফাঁক আর ফাঁকিটুকু কোথায় বোঝাবার জন্যে চিঠির কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছিঃ

প্রিয় সম্পাদক

‘পাঠকদের মতামত” বিভাগ

যুগান্তর

২৬ ৮.৮৮

২৪ আগস্ট যুগান্তর পত্রিকায় ‘ভবিষ্যৎ মিলিল’ শিরোনামে যে খবরটি পরিবেশিত হয়েছে, জনস্বার্থে খবরটি আরও একটু বিস্তৃতভাবে প্রকাশিত হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। পত্রিকায় স্থানাভাবের কথা মাথায় রেখেও বলছি, সংক্ষিপ্ত তথ্য পরিবেশিত হওয়ায় খবরটি পড়লে জনসাধারণের প্রাথমিকভাবে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক-জ্যোতিষী মুরারি মোহন বেদান্ততীর্থ শাস্ত্রীর এই অভ্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততারই প্রমাণ।

বিজ্ঞান যখন জ্যোতিষশাস্ত্রকে অপ-বিজ্ঞান বলে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, যুক্তিবাদী চিন্তাধারা প্রসারের চেষ্টায় পরাবিদ্যাগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ, তখন এই ধরনের একটি সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে বলে আমরা মনে করি ।

একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা হিসেবে আপনারাও নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে সহমত হবেন, জনস্বার্থে প্রকৃত সত্যটি একান্তভাবেই প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। আপনারা অনুগ্রহ করে জানান (১) পণ্ডিত ও জ্যোতিষী মুরারিমোহন বেদান্ততীর্থ শাস্ত্রী কবে কোথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ? (২) ভবিষ্যদ্বাণীতে কী জিয়ার মৃত্যু দিনটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করেছিলেন ? (৩) ভূমিকম্পের দিন এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোর কথা কী উল্লেখ করেছিলেন ?

কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির মৃত্যু বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পরে-পরেই অনেক জ্যোতিষী কোনও ছোটখাট পত্র-পত্রিকায় অথবা নিজস্ব কোনও পত্র- পত্রিকায় নিজের নামে ভবিষ্যদ্বাণী ছাপতে দিয়ে দেন। তবে পত্র-পত্রিকার প্রকাশকাল হিসেবে অবশ্যই ছাপা হয় ঘটনা ঘটার আগের কোনও তারিখ ৷

সত্যানুসন্ধানে উৎসাহী যুক্তিবাদী হিসেবে খোলা মনে আমরা শ্রীশাস্ত্রীর দাবির পরীক্ষা গ্রহণে আগ্রহী । শ্রীশাস্ত্রীকে প্রকাশ্যে পাঁচজনের মৃত্যু দিন ঘোষণা করতে অনুরোধ করছি। (১) তৃপ্তি মিত্র (২) সত্যজিৎ রায় (৩) রাজীব গান্ধী (8) জ্যোতি বসু (৫) বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ।

আশা রাখি শ্রীশাস্ত্রী সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়েই জনসাধারণ প্রকৃত সত্যকে জানতে পারবেন। পাঁচটি ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক হলে আমাদের সমিতি খাঁটি যুক্তিবাদী মানসিকতার পরিচয় দিয়ে জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা স্বীকার করে নিয়ে ভবিষ্যতে জ্যোতিষ-বিরোধীতা থেকে বিরত থাকবে এবং সমিতির সম্পাদক হিসেবে আমি মুরারিবাবুকে প্রণামী হিসেব দেব পঞ্চাশ হাজার টাকা ।

প্রবীর ঘোষ

সম্পাদক, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি

৭২/৮ দেবীনিবাস রোড, কলকাতা-৭৪

‘৯১-অতিক্রান্ত, পাঁচজনের দু’জন আমাদের মধ্যে নেই। তবু মুরারিমোহন শাস্ত্রী ও অন্যান্য জ্যোতিষীদের জন্য আমার এবং আমাদের সমিতির চ্যালেঞ্জ খোলাই রইল। যে- দিন মুরারিবাবু বা অন্য কোনও জ্যোতিষী আমাদের সত্যানুসন্ধানে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবেন সে-দিনই অন্য কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম এনে পাঁচের ঘাটতি পূরণ করে দেব ।

জানি, নিরেট বোকা ছাড়া কোনও জ্যোতিষীই এই চ্যালেঞ্জে সাড়া দিতে এগিয়ে আসবেন না। কারণ, বিভিন্ন আলোড়নসৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যে-সব জ্যোতিষীরা বিজ্ঞাপন দিয়ে বা প্রচার মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের নিখুঁত ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে প্রচার করেন, তাঁরা খুব ভালমতই জানেন তাঁদের দৌড় কদ্দুর। এর পরেও কোনও জ্যোতিষী যদি বাস্তবিকই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন, তবে তাঁকে পরাজয় স্বীকার করতেই হবে ।

আর, এর পরও যদি কেউ কূট প্রশ্ন তোলেন—কিন্তু কোনও জ্যোতিষী যদি পারেন ?

প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরাজিতের বান্দা হয়ে থাকব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রণামী তো রইলই। আমাদের সমিতিও জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে রা-টি কাটবে না—এ আমাদের কার্যকারী সমিতির সিদ্ধান্ত। কী, সব মন-পসন্দ তো ? পাঠক-পাঠিকার প্রতি একটি বিনীত আন্তরিক অনুরোধ—বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস করে যাঁদের আপনি বিখ্যাত কোনও ঘটনার বা বিখ্যাত কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর নিখুঁত ভবিষ্যদ্বত্তা বলে মনে করছেন, তাঁকেই আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অনুরোধ করুন, দাবি জানান বা বাধ্য করুন— দেখতেই পাবেন ওঁরা এক একটি কী ধুরন্ধর প্রতারক। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে যত বেশি সংখ্যক নামী- দামী জ্যোতিষীরা এগিয়ে আসবেন, ততই এই বক্তব্যের সত্যতা বেশি করে প্রমাণিত হবেই।

‘৯১-এ ভারতবর্ষের সাধারণ নির্বাচন এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন হয়ে গেল । তারপরই অমৃতলাল হৈ হৈ করে প্রচারের ময়দানে নেমে পড়লেন। অমৃতলাল কে ? না, অমৃতলাল এমনই একজন জ্যোতিষী, যিনি প্রচারে তামাম পূর্ব-ভারতের যে কোনও জ্যোতিষীর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। অমৃতলালের বহু বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় নামী- দামী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার পুরো পাতা জুড়ে। শহর কলকাতার বুকে বহু হোডিং দাঁড়িয়ে আছে অমৃতলালের বিজ্ঞাপন ধারণ করে

“সব জ্যোতিষী বারবার

অমৃতলাল একবার

করতে গ্রহের প্রতিকার

Metal Tabletএর জুড়ি ভার ।”

অমৃতলালের আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি জনপ্রিয় ইংরেজি সাপ্তাহিক “The Sunday”-তে সাপ্তাহিক রাশিফল লেখেন।

নির্বাচন নিয়ে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম বিজ্ঞাপনের বোমাটি অমৃতলাল ফাটালেন ২২ জুন, ১৯৯১-এর আনন্দবাজার পত্রিকায়। “প: বঙ্গের ক্ষেত্রে অমৃতলালের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল একশভাগ” শিরোনামে ঢাউস বিজ্ঞাপন দিলেন। আর সেই বিজ্ঞাপনের ঠেলা সামলাতে আমাদের জেরবার অবস্থা । ইতিমধ্যে যেখানেই ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ শিরোনামে অনুষ্ঠান করতে আমাদের সমিতি গিয়েছে, সেখানেই কিছু কিছু শ্রোতা ও দর্শক আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন—“নির্বাচন নিয়ে অমৃতলালের ভবিষ্যদ্বাণী যে একশ ভাগ খেটে গেল, সে বিষয়ে আপনারা কী বলেন ?” অনেকে তো বিজ্ঞাপনটি পর্যন্ত হাজির করেছেন আমাদের সামনে । বিজ্ঞাপনটি কী বিপুলভাবে জনগণকে প্রভাবিত করেছে—ভাবুন তো?

১৮ মে ১৯৯১ ‘সাপ্তাহিক বর্তমান’ পত্রিকায় অমৃতলালের নির্বাচনী ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হযেছিল, সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষই বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছিল । অতএব, ভবিষ্যদ্বাণীটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, এবং পত্রিকার প্রকাশ কাল হিসেবে ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগের তারিখ ছাপা হয়েছিল—এই যুক্তি অমৃতলালের এই ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে খাটে না। খুবই সত্যি কথা। কিন্তু, ভবিষ্যদ্বাণীর কোন অংশ মিলল ? মিলল, সি. পি. এম. পশ্চিমবঙ্গে শাসনক্ষমতায় আসবে, এবং জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হবেন—এই অংশটুকু।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বহু কাগজে নানা বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মতামত। প্রতিদিনই বেশ কয়েকটি পত্র- পত্রিকা পড়ি। মনে পড়ে না, এমন কেউ মত প্রকাশ করেছেন—পশ্চিমবঙ্গে সি. পি. এম. ক্ষমতায় আসতে পারবে না ? আর সি. পি. এম. ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে জ্যোতি বসুকে সরিয়ে অন্য কাউকে আনা হবে—এমন উদ্ভট মতামতও কেউই প্রকাশ করেননি। জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্য না নিয়ে, মুখ থেকে দুধের গন্ধ না যাওয়া পশ্চিমবাংলার বালক- বালিকারাও জানত সি. পি. এম. ক্ষমতায় আসছে। যে কথা সক্কলেরই জানা, সে কথাটাই ‘ বলে অমৃতলাল আহলাদে আটখানা হয়ে ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে জানাতে লাগলেন— কী বিস্ময়কর তাঁর নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী।

সত্যিই বিস্ময়কর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অমৃতলাল। অমৃতলাল ১৮মে সংখ্যার ‘সাপ্তাহিক বর্তমান’ পত্রিকায় দীপ্ত ঘোষণা রেখেছিলেন, (১) “রাজীব গান্ধীর পক্ষে সময়টা শুভ।” (২) “শনি পঞ্চমে, বৃহস্পতি একাদশে। ফলে, রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ প্রবল । তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেনই।” (৩) “কংগ্রেস নির্বাচনে দলগতভাবে প্রথম স্থানে থাকবে। আসন পাবে ২৭০টিরও বেশি।” (৪) “বি. জে. পি. গতবারের তুলনায় তেমন খারাপ ফল করবে না। আসন সংখ্যা অবশ্য কিছুটা কমতে পারে।” (৫) “জনতা পার্টির কন্যা রাশি। বর্তমানে দলটির বৃহস্পতি একাদশে ও শনি পঞ্চমে অবস্থান করছে। ফলে আগের তুলনায় দলের আসন সংখ্যা কিছুটা বাড়তেও পারে।”

এইসব ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বাস্তবে যে রূপ পেল, তা হল—(১) রাজীব গান্ধীর পক্ষে সময়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ। কারণ, নির্বাচন চলাকালীন তাঁর মৃত্যু ঘটে। (২) রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হননি। হওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ সে সময় তিনি মৃত। (৩) কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২৭০-এর বেশি না হয়ে হয়েছে ২০০-টিরও কম। (৪) বি. জে. পি-র লোকসভার আসন সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেক বেড়েছে। (৫) জনতা পার্টির আসন সংখ্যা প্রচণ্ড রকম কমেছে।

এই পাঁচটি ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিটি চূড়ান্তভাবে মিথ্যে প্রমাণিত
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অমৃতলালের জ্যোতিষবিদ্যার গ্যাস
বেলুনটি গেছে ফেটে। প্রমাণিত হয়ে গেছে, আরও পাঁচটা
জ্যোতিষীর মতনই তাঁর জ্যোতিষ-বিদ্যাও বুজরুকিতে ভরা।

এর পরেও কেউ কেউ বলতে পারেন—১৯৯১-এর নির্বাচনের ব্যাপারে অমৃতলালের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হয়েছে, এ কথা সত্যি, কিন্তু একবারের ব্যর্থতা চূড়ান্ত ব্যর্থতার প্রমাণ নয় । তাঁদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই ১৯৮৯-এর ভারতবর্ষের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে অমৃতলালের ভবিষ্যদ্বাণীর দিকে।

২৪-৩০ নভেম্বর ১৯৮৯ সংখ্যার সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘পরিবর্তন’-এ অমৃতলালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে অমৃতলাল জানিয়েছিলেন, “বিরোধী দলগুলির বিশেষত বি. জে. পি-র অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক হবে। ভোটে তাদের আসন দারুণভাবে কমবে। সুতরাং বিরোধী জোট যেখানে মন্ত্রিসভা গড়তেই পারবে না সেখানে সেই মন্ত্রিসভার আয়ু নিয়ে কোন প্রশ্নই আসে না।”

কিন্তু বাস্তবে শাসকদল কংগ্রেসেরই ভরাডুবি হয়েছিল। বি. জে. পি-র আসন সংখ্যা বেড়েছিল অভূতপূর্ব ; বেড়ে ছিল ভোটও। আর শাসকদলকে হারিয়ে বিরোধী দলই মন্ত্রীসভা গড়েছিল।

অমৃতলাল এও জানিয়েছিলেন “কংগ্রেস (আই)-এর আগামী লোকসভায় সদস্য সংখ্যা ৩৫০-৪০০ হতে পারে।”

হায় অমৃতলাল । হায় আপনার ভবিষ্যদ্বাণী ।

অমৃতলাল আবার ঐ সাক্ষাৎকারে ভি. পি. সিং, চন্দ্রশেখর, হেগড়ে, এন টি রামা রাও, জ্যোতি বসু ও রাজীব গান্ধীর জন্ম বিচার করে শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেছেন, “আগামী কেন্দ্ৰীয় সরকারের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন রাজীব গান্ধী।”

জ্যোতিষ বিচার’কে হাস্যকর প্রমাণ করে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ভি. পি. সিং। আর একজনের প্রচারও সম্প্রতি বহু মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি হলেন ‘রাজজ্যোতিষী আচার্য নরোত্তম সেন’ বহু পত্র-পত্রিকায় বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপনে নিজের ছবি ছেপে তাব পাশে বিশাল বিশাল হরফে ঘোষণা রাখছেন “রাজীব ও সোনিয়া গান্ধীর সঠিক ভাগ্যের গণক।”

নরোত্তম সেন-এর প্যাডে যে পরিচয় ছাপা হয়েছে তা যথেষ্ট দীর্ঘ। লেখা আছে “ইনস্টিউট অফ অ্যাস্ট্রোলজি’-র অধ্যক্ষ ; জোতিষসাগর’ (স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত) ; জ্যোতিষ- সিদ্ধান্ত শিরোমণি (স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত) ; জ্যোতিষ-সিদ্ধান্ত শাস্ত্রী (স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত) ; রত্নাচার্য ; সামুদ্রিক রত্ন, আয়ুর্বেদ জ্যোতিষরত্ন (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত) ; সংখ্যাতত্ত্ব শিরোমণি ; মন্ত্ৰ জ্যোতিষাচার্য ; লেখক এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বীকৃত নবযুগসৃষ্টিকারী জ্যোতিষী।”

আসুন দেখা যাক তিন তিনটি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এবং বহু উপাধিলাভে সম্মানিত, পৃথিবী কাঁপানো জ্যোতিষী নরোত্তম সেন রাজীব গান্ধীর সম্বন্ধে কী সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ?

২৪-৩০ নভেম্বর ১৯৮৯ সংখ্যা ‘পরিবর্তন’ পত্রিকায় “জ্যোতিষীদের চোখে নির্বাচন” শিরোনামের এক সাক্ষাৎকারে নরোত্তম সেন ‘৮৯-এর ভারতবর্ষের সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, “রাজীব গান্ধী সহ অন্যান্য নেতাদের জন্মচক্র বিচার করে দেখেছি যে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস (আই) খুব বড় মাপের ধাক্কা খেলেও কেন্দ্রে পুনরায় তারাই সরকার গঠন করবে।”

কিন্তু নরোত্তম সেনের এই ভবিষ্যদ্বাণীকে পরিহাসে পরিণত
করে কংগ্রেস (আই) ’৮৯-এর নির্বাচনে হেরেছিল। ভি.
পি’-র নেতৃত্বে বিরোধী মোর্চা গদী দখল করেছিল।

রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর অনেক জ্যোতিষী ও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা দাবি করতে শুরু করেছেন, তাঁরা রাজীব গান্ধীর মৃত্যু বিষয়ে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তাঁদের পরিচিতজনেদের কাছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর আগেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। জ্যোতিষীর হাজির করা স্বাক্ষীর কথা নিশ্চয়ই অভ্রান্ত সত্যের প্রমাণ নয়—এটা যুক্তিবাদী মাত্রেই স্বীকার করবেন। বিভ্রান্তি দেখা দেয় ২১ মে-র আগে প্রকাশিত কোনও পত্রিকায় ভবিষ্যদ্বাণীটি প্রকাশিত হতে দেখলে । এমন উৎসাহী পাঠক-পাঠিকারা অনুসন্ধান চালালেই দেখতে পাবেন পত্রিকাটির প্রকাশকাল পরিবর্তনের পরিপূর্ণ সুযোগ জ্যোতিষীদের ছিল।

উদাহরণ হিসেবে এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। দক্ষিণ ভারত থেকে প্রকাশিত ‘অ্যাসট্রোলজিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ নাকি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল নির্বাচন চলাকালীন রাজীব গান্ধীর জীবন সংশয় অনিবার্য। ম্যাগাজিনটি নাকি প্রকাশিত হয়েছিল ১০ মে ১৯৯১-এ। এই খবরটি ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্রিকাই যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করেছিল। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে অ্যাসট্রোলজিক্যাল ম্যাগাজিনের জুন সংখ্যায় ভবিষ্যদ্বাণীটি প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটির অ্যাসোসিয়েট এডিটর গায়ত্রী দেবী বাসুদেব অবশ্য দাবি করেছেন, ভবিষ্যদ্বাণীটি পত্রিকাটির জুন সংখ্যায় প্রকাশিত হলেও জুন সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১০ মে। জুন মাস শুরু হওয়ায় ২১ দিন আগেই তাঁরা জুন সংখ্যাটি প্রকাশ করেছিলেন, এমন অদ্ভুত দাবি কী আদৌ গ্রহণযোগ্য ? এর পরও কেউ কোনও কূট প্রশ্ন তুললে তাঁকে অনুরোধ জানাব গায়ত্রী দেবীকে আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অনরোধ করুন। বাস্তব সত্য প্রকাশিত হবে ।

প্রতি বছরই পঞ্জিকা এবং ছোট-বড় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রাষ্ট্রীয় রাশিফল প্রকাশিত হয় । ফল গণনা করেন কয়েক শত জ্যোতিষী। অক্টোবর ৯১-এ উত্তর ভারতে বিশাল এলাকা নিয়ে ভূমিকম্প হলো। মারা গেল হাজারের ওপর মানুষ। আহত হলেন হাজাব হাজার । গৃহহীনের সংখ্যা আরো বহুগুণ। কিন্তু ১৯৯১-এর কোনও পঞ্জিকাতেই তো লেখা ছিল না অক্টোবরে উত্তর ভারতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ার কোনও হদিশ। জানি, এর পর কিছু কিছু জ্যোতিষী-নামধারী প্রতারকের আবির্ভাব হবে বিজ্ঞাপনে, যারা জানাবে–উত্তর ভারতের ওই ভূমিকম্প নিয়ে তাদের নিখুঁত গণনার ‘গুল গপ্পো’।

ভূপালে শোচনীয় গ্যাস দূর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিলেন। কয়েক লক্ষ মানুষ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন। অথচ এমন একটা শোচনীয় দূর্ঘটনার সামান্যতম উল্লেখ ছিল না কোনও জ্যোতিষীদের বিচার করা ‘রাষ্ট্রীয় ফল’-এ। আর মজাটা হলো এই, দূর্ঘটনার পর বহু জ্যোতিষীই সাধারণ মানুষদের স্রেফ প্রতারিত করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন কারণ অনুসন্ধানে। আবিষ্কারও করে ফেললেন- কোন কোন গ্রহ অবস্থানের জন্য এমন মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটেছে। তারপর তাঁদের অনেকে এও ঘোষণা করলেন—এই ভূপাল দূর্ঘটনার খবরও নাকি ওই সব জ্যোতিষীদের অজানা ছিল না। জ্যোতিষীরা যদি দূর্ঘটনার খবরটা জ্যোতিষ গণনার দৌলতে আগাম জানতেনই, তবে ভূপালবাসীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী তাঁদের কণ্ঠ থেকে আগে কেন উচ্চারিত হয়নি ? জেনেশুনেও নীরব ছিলেন বলে আজ যে সব জ্যোতিষী দাবী করছেন, তাঁরা স্পষ্টতই হয় নির্ভেজাল মিথ্যাচারি, নতুবা ভূপাল দূর্ঘটনায় নিহত ও পঙ্গু জীবনগুলোর জন্য নীতিগতভাবে পুরোপুরি দায়ী।

একইভাবে জ্যোতিষীরা রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় ফল জানাতে গিয়ে জানাতে পারেননি রাশিয়ার চেরনোবাইল পারমাণবিক কেন্দ্রের সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর, যার ভয়াবহ পরিণতি হিরোশিমা, নাগাসাকির চেয়ে কম ধ্বংসকারী নয়। জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎ গণনা করার সত্যিই কোনও ক্ষমতা বাস্তবে থাকলে তাঁরা সে বছরের রাশিয়ার রাশিফল বিচার করতে গিয়ে এত বড় ঘটনার হদিশ পেলেন না কেন ?

হদিশ জ্যোতিষীরা পান। তবে একটু দেরিতে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। তারপর কে না কূট কচকচালি-কোন গ্রহ-নক্ষত্রের কেমন কেমন অবস্থানের জন্য এমনটি ঘটল ! আবার কিছু কিছু জ্যোতিষী ঘটনাটির বিষয়ে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বলে দাবি করে কিভাবে জনসাধারণকে প্রতারিত করেই চলেছে সে নিয়ে আগেই আলোচনা করেছি।

ভাবলে অবাক হতে হয়, এই সব প্রতারকেরা কি নিশ্চিন্তে
সমাজের বুকে জাঁকিয়ে বসে প্রতারণা চালিয়েই যাচ্ছে, এবং
সরকার (তা সে যতই সংগ্রামী ও প্রগতিবাদী বলে
স্বঘোষিতই হোক না কেন) এই বিষয়ে অদ্ভূত রকম
উদাসীন ও নীরব থাকছে। কখনও কোনও জ্যোতিষীর
বিরুদ্ধে কোনও রাজ্য সরকার আদালতে প্রতারণার
অভিযোগ এনেছে এমন কথা আমাদের জানা নেই। আবার
এই সব সরকারের মন্ত্রীরাই যখন প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়াবার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান,
তখন এইসব নেতাদের স্বভাবতই মনে হয় সং অথবা
শয়তানের দোসর ।

এইসব রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই নিজেদের নীরবতার পক্ষে যে অকাট্য যুক্তিটি দেখান তা হলো—জনসাধারণের ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে জ্যোতিষ-বিশ্বাস মিলেমিশে এমনই একাকার হয়ে গেছে যে, জ্যোতিষীদের আঘাত করতে গেলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের বিশ্বাসকেই আঘাত করতে হয়। আর এমন আঘাত করার অর্থ সাধারণ মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

এমন যুক্তির অবতারণা যাঁরা করে থাকেন তাঁদের সিংহভাগই তথাকথিত মার্কসবাদী ৷ একটি মার্কসাবাদী দল পশ্চিমবঙ্গে ব-কলমে একটি বিজ্ঞান সংস্থা চালায়। সেই বিজ্ঞান সংস্থা তো সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে আছে—কোনও জ্যোতিষী বা অবতারদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও বক্তব্য তারা রাখবে না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কতটা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ভোটার তোষণের জন্য, কতটা নির্বাচনের পিছনে তহবিল ভরিয়ে দেওয়া বেনিয়া বা হুজুর শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার্থে, সে কূট কচকচানিতে না গিয়েও এই সিদ্ধান্তে আমরা অবশ্যই নির্দ্বিধায় পৌঁছতে পারি—এইসব বহুরূপীরা মুখে কুসংস্কার মুক্তির কথা যতই বলুক, বাস্তবে সাধারণ মানুষকে অদৃষ্টবাদী করে রাখতে চায়। এরা অবশ্যই চায়, সাধারণ মানুষ তাদের বঞ্চনার কারণ হিসেবে দায়ী করুক পূর্বজন্মের কর্মফলকে, ঈশ্বরের কৃপা না পাওয়াকে

আমাদের দেশে ধর্মবিশ্বাসে চালিত হয়ে নরবলি ছিল, ছিল সতীদাহ প্রথা। এগুলোর বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের সময় কিছু মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে নিশ্চয়ই আঘাত করা হয়েছিল । সেই আঘাত হানা যদি যুক্তিগ্রাহ্য হয়ে থাকে, তবে নিপীড়িত মানুষদের স্বার্থে, কুসংস্কারমুক্ত স্বচ্ছ চেতনার মানুষ গড়ার স্বার্থে কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত হানার বিরুদ্ধে কোনও যুক্তিই আদৌ ধোপে টেকে না, টিকতে পারে না। অবশ্য সাধারণ মানুষের চেতনাকে বেশিদূর পর্যন্ত এগোতে দেওয়া বিপজ্জনক মনে করে যদি এই যুক্তি হাজির করা হয়ে থাকে, তবে অন্য কথা, কারণ এই সত্যটা তাঁদের অজানা নয়—

যুক্তি আনে

চেতনা

চেতনা আনে

সমাজ-পরিবর্তন ।

error: Content is protected !!