সাধু-সন্তদের প্রতি আমার টান নিতান্তই শৈশব থেকে। সেই টান অবশ্য এখনও আছে। তবে সময় ও মানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকারভেদ ঘটেছে। শুরুতে যেতুম সাধু-সন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা দেখতে পাওয়ার আশায়। কৈশোর ও যৌবনে সদ্য পা রাখা সময়ে আন্দোলনের কথা, যুক্তিবাদের প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথাটা তেমনভাবে মনে দানা বাঁধেনি। রহস্যভেদের নেশায় সত্যকে জানার নেশায় মেতে ছিলাম। অধ্যাত্মবাদ ও অলৌকিকতার পুরনো লোকঠকানো

ভাঁওতাবাজি এভাবেই ক্রমশ উপলব্ধি করেছি।

যখনকার কথা বলছি, তখন কলেজে পড়ি, সালটা বোধহয় ১৯৬৩। তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিল গোরা। পুরো নাম গোরাচাঁদ দত্ত। থাকত বরাহনগরের শশিভূষণ নিয়োগী গার্ডেন লেনে। জানি না গোরা এখনও সেখানে থাকে কি না। সাধু-সন্তদের প্রতি আমার আকর্ষণের কথা গোরার অজানা ছিল না। ও একদিন বললো, ওদের পারিবারিক গুরুদেব বালক ব্রহ্মচারী বাবার অলৌকিক ক্ষমতার কথা। বালক ব্রহ্মচারীর নাম আগেই শুনেছি। এও শুনেছি বাবার নাকি ভারত জুড়ে সত্তর লক্ষ শিষ্য-শিষ্যা। গোরা বললো, ‘সেবার বরাহনগরের একটি স্কুলে গুরুদেবের জন্মদিন পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গুরুদেব আসবেন সন্ধেতে। কিন্তু বিকেল থেকেই কাতারে কাতারে লোক আসা শুরু হয়ে গেল। আমরা কিছু তরুণ শিষ্য ভলেন্টিয়ার হয়েছিলুম। বিকেলে এক ভদ্রলোক এলেন, সঙ্গে দশ-বারো বছরের দুটি ছেলে। ওঁকে খুবই অস্থির দেখাচ্ছিল। জনে জনে ভলেন্টিয়ার ধরে ধরে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন, ব্রহ্মচারীরা কখন আসবেন? আমাকেও প্রশ্ন করতে বললুম, সন্ধে নাগাদ এসে পড়বেন। কিন্তু কী ব্যাপার বলুন তো? এত অস্থির হয়ে পড়েছেন কেন?

‘ভদ্রলোক বললেন, বহু দূর থেকে এসেছি অনেক আশা নিয়ে। শুনেছি যাঁরাই বাবার কাছে দীক্ষা নিতে চান, তাঁদের বাবা সঙ্গে সঙ্গে জপ মন্ত্র দেন। এই আমার দুটি মাত্র সন্তান। বোবা-কালা নিয়ে এসেছি দীক্ষা দেওয়াতে। দেখি বাবা কেমন করে বোবা-কালাদের জপমন্ত্র শোনান!

‘দারুণ ইন্টারেস্টিং একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে পড়লুম। ভদ্রলোক ও তাঁর ছেলে দুটিকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে আমার চেনা-অচেনা অনেকের কাছেই ওঁদের আসার উদ্দেশ্য জানালুম। খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। দলে দলে ভক্তেরা ওঁদেরই দেখতে এলেন। ভক্তেরা প্রচন্ড ঔৎসুক্য ও উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন—কী হয় ! কী হয়! সত্যিই কি বাবার দেওয়া জপ-মন্ত্র ওরা শুনতে পাবে এবং জপ করতে পারবে? আজ কী গুরুদেবের এক অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশের সাক্ষ্য হয়ে জীবনকে সার্থক করার সুযোগ মিলবে? সুযোগ মিলবে গুরুদেবের লীলামাহাত্ম দেখার?

‘শেষপর্যন্ত শুভ মুহূর্তটি এল। ভদ্রলোক তাঁর দুই ছেলের হাত ধরে স্টেজে উঠে এলেন। গুরুদেবের চরণে তিনজনেই প্রণাম জানালেন। ভদ্রলোক এবার দুই ছেলেকে দীক্ষা দিতে অনুরোধ করলেন। গুরুদেব প্রশান্ত হাসি ছড়িয়ে ছেলে দুটিকে দু’হাতে কাছে টেনে নিলেন। একে একে দুজনের কানেই দিলেন জপ-মন্ত্র। তারপর বললেন, শুনতে পেয়েছিস তো?

‘আমার প্রেসার তখন এক লাফে চড়ে গেছে। নিজের বুকের ঢিপ্ টিপ্ আওয়াজ একটু চেষ্টা করলেই বোধহয় নিজেই শুনতে পাব। অনুমান করতে অসুবিধে হয় না, প্রতিটি ভক্তের অবস্থাই আমার মতো।

‘ছেলে দুটি পরিষ্কার গলায় বললো, হ্যাঁ, শুনতে পেয়েছি। তার পরই ছেলেদুটি আর তাদের বাবা হাউ-মাউ করে কেঁদে লুটিয়ে পড়লেন বাবার পায়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভক্তেরা হৃদয়া- বেগ সংযত করতে পারলেন না। অনেকেরই দু চোখ বেয়ে নেমে এলো জলের ধারা। স্কুলের হল-ঘর গুরুদেবের জয়ধ্বনিতে ভরে গেল।’

গোরার কাছে এই ঘটনা শোনার পর একদিন ওর সঙ্গে গেলাম গুরুদেব বালক ব্রহ্মচারীর দর্শনে। কলকাতার এক অভিজাত এলাকায় তখন তিনি থাকতেন। একতলার একটা বড়-সড় হল-ঘরে ভক্তেরা অপেক্ষা করছিলেন। আমি আর গোরা ওই ঘরেই বসলাম। শুনলাম, গুরুদেব দোতলায় দর্শন দেন। সময় মতো আমাদের ডাকা হবে। ওখানে বসে থাকতে অনেকের সঙ্গেই আলাপ হল। এঁদের অনেকের কাছেই গুরুদেবের অনেক অলৌকিক ক্ষমতার কথা শুনলাম। একজন ভারত-বিখ্যাত শিক্ষাবেত্তা গুরুদেবের অলৌকিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যে কাহিনি বললেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। উনি একবার গুরুদেবকে খিদে পেয়েছে জানাতে গুরুদেব নাকি বলেছিলেন, ‘দাঁড়া তোর খাবার আনার ব্যবস্থা করছি।’ গুরুদেব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন, একটা আলো হয়ে গেলেন। তারপর আলোর ভিতর থেকে ভেসে এলো সোনার থালায় সাজানো নানা রকমের মিষ্টি। কী তার স্বাদ ! কী তার গন্ধ !

একসময়ে আমাদের ডাক পড়ল। সকলের সঙ্গে দোতলায় গেলাম। তলার হলটার মতই একটা বড় হল ঘরে সিল্কের গেরুয়া পোশাক পরে বাঘছালের উপর বসে ছিলেন বালক এহ্মাচারী। জানালায় ও দরজায় দামী ভারী পর্দা। ঘরে দশমীর জ্যোৎস্নার মত হালকা আলো। ভক্তেরা একে একে গুরুদেবকে প্রণাম করছিলেন। কেউ পায়ে নিবেদন করছিলেন ফুল। কেউ হাতে তুলে দিচ্ছিলেন মিষ্টির প্যাকেট। কেউবা শিশি বা বোতলে আনা জল গুরুদেবের পায়ের বুড়ো আঙুল ডুবিয়ে পবিত্র পদোদক তৈরি করে নিচ্ছিলেন।

ভক্তদের প্রণামের ব্যাপারটা দেখাশুনো করছিলেন এক ফুলটাইমার শিষ্য। তিনি একসময় আমাকে এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করতে বললেন। আমি এগিয়ে গেলাম। কিন্তু প্রণাম না জানিয়ে বালক ব্রহ্মচারীকে বললাম, ‘শ্রদ্ধার প্রকাশ প্রণামে। শ্রদ্ধাহীন প্রণামের অভিনয় আমি করতে পারব না। শুনেছি আপনি জন্মসিদ্ধ পুরুষ, অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। আমার একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে আপনার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে প্রণাম জানাব।’

বালক ব্রহ্মচারীবাবা আমাকে ঈশারায় ঘরের কোনায় দাঁড়াতে বললেন, দাঁড়ালাম। শেষ ভক্তটিও প্রণাম জানিয়ে বিদায় নেওয়ার পর বালক ব্রহ্মচারী আমার দিকে তাকালেন। আমার পাশে তখন গোরা ও ফুলটাইমার শিষ্যটি। বালক ব্রহ্মচারী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রশ্নটা কি?”

বললাম, ‘গতকাল সন্ধে সাতটার সময় আমি কোথায় ছিলাম ? ‘

বালক ব্রহ্মচারী এবার গোরাকে বললেন, ‘ও বুঝি তোর বন্ধু? তা, তুই নিচে গিয়ে বোস, আমি ওর সঙ্গে একটু কথা বলব।’

গোরা বেরিয়ে যেতেই শিষ্যটিকে বললেন, ‘তুই দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যা, কেউ যেন এখন এ-ঘরে না আসে।’

শিষ্যটি চলে যেতেই বালক ব্রহ্মচারীবাবা তাঁর মুখোমুখি আমাকে বসিয়ে অনেক গল্প-সল্প করলেন। আমার বাড়িতে কে কে আছেন? তাঁরা কে কী করেন? আমি কি করছি? এসব খবর নিলেন। সত্যি কথাই বললাম। এরই মধ্যে এক সময় ফুলটাইমার শিষ্যটি দরজা খুলে জানালেন, ‘দুই ভদ্রলোক এক ভদ্রমহিলাকে নিয়ে এসেছেন আপনার আশীর্বাদ নিতে। মহিলাটির গল-ব্লাডার অপারেশন হবে আজ। নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার আগে তাই আপনার……’

কথা শেষ করার আগেই রাগতস্বরে বাবা বললেন, ‘তোরা কি একটু শান্তিতে কথা বলতেও দিবি না! অপেক্ষা করতে বল, দেরি হবে।’

আমরা দুজনে আবার আমাদের গল্পে ফিরে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে আবার ঘরের দরজা খুলে গেল। ঘরে ঢুকলেন শিষ্যটি। ‘গুরুদেব, পেসেন্ট যন্ত্রণায় ছটফট করছে। যদি অনুমতি করেন তো….’

বিরক্ত গুরুদেব বললেন, ‘যা নিয়ে আয়।’

একটু পরেই শিষ্যটি দুই ভদ্রলোকের সাহায্যে এক মহিলাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। মহিলাটির মুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। বালক ব্রহ্মচারীর পায়ের তলায় তাঁকে সাষ্টাঙ্গ-প্রণামের ভঙ্গিতে শুইয়ে দেওয়া হল। গুরুদেব মহিলার সঙ্গী লোকদুটিকে বললেন, ‘তোরা নীচে গিয়ে অপেক্ষা কর।’ শিষ্যটিকে বললেন, ‘যা কুশীতে একটু জল নিয়ে আয়।’

শিষ্য তামার কুশীতে জল নিয়ে এলেন। তারপর গুরুদেবের আদেশে কুশীটা নামিয়ে রেখে বেরিয়ে গেলেন। বালক ব্রহ্মচারী কুশীটি মহিলাটির পিঠের উপর বসিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন মন্ত্র পড়লেন ও কুশীর জলে বার কয়েক ফুল ছিঁড়ে পাপড়ি ছুড়লেন। এটা চললো আধ মিনিটের মত সময় ধরে। তারপর আমাকে বললেন, ‘দেখো তো জলটা গরম হয়েছে কি না?’ কুশীর জলে আঙুল ডোবালাম। জল গরম। বললাম, ‘জল গরম।’

বালক ব্রহ্মচারী বললেন, ‘এবার কুশীটা ওর পিঠ থেকে নামিয়ে ওকে তুলে দাঁড় করা।’ বালক ব্রহ্মচারী এই প্রথম আমাকে ‘তুই’ সম্বোধন করলেন।

দাঁড় করালাম। বালক ব্রহ্মচারী আদেশ দিলেন, ‘এবার ওকে জোর করে দৌড় করা।’

তাই করালাম। মহিলাটি ‘পারব না, পারব না’ করে ভেঙে পড়তে পড়তেও আমার জন্যে পড়তে পারলেন না। বরং আমার জন্য দৌড়তে বাধ্য হলেন। এবং তার পরই আমার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গুরুদেবের পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে বললেন, ‘বাবা আমি ভাল হয়ে গেছি।’ গুরুদেব প্রশান্ত হাসি হেসে বললেন, “যা, আর তোকে নার্সিং হোমে যেতে হবে না । বাড়ি ফিরে যা। সত্যিই ভাল হয়ে গেছিস।’

মহিলাটি নিজেই হেঁটে চলে গেলেন। বালক ব্রহ্মচারী এবার আমাকে বললেন, ‘তুই মাঝে মাঝে এখানে এলে এমনি আরও অনেক কিছুই দেখতে পাবি। এবার আমার উপর তোর বিশ্বাস জন্মেছে তো?’

বললাম, ‘আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি। আর তা পেলেই বিশ্বাস জন্মাবে।

বালক ব্রহ্মচারীবাবার একটু আগের কার্যকলাপগুলো সাজানো ব্যাপার হতেই পারে। রাস্তার কবজ বিক্রেতা থেকে স্টেজের জাদুকরেরা যেমন দর্শকদের মধ্যে নিজেদের সাজানো লোক রেখে সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে দর্শকদের অবাক করে দেন, অনেক গুরুদেবই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে এই ধরনের নানা রকমের সাজানো ঘটনা দেখিয়ে চ্যালেঞ্জকারীকে তাক্ লাগিয়ে দেবার চেষ্টা করতেই পারেন।

আমি নিজেও ওই বয়সে কিছু ম্যাজিকের খেলা জানতাম। সেই মুহূর্তে আমাকে দিয়ে বিচার করে দেখলাম, এই ঘটনা আমিও দেখাতে পারি আমার সাজানো লোকদের সাহায্যে। কুশীতে আমি যে জল গরম হতে দেখেছি, সেটা কেমনভাবে ঘটাব, এটা অনেকেই হয়তো ভাবছেন। সেই দিনের সেই মুহূর্তগুলোতে আমি ভেবেছিলাম, বালক ব্রহ্মচারীকে কুশীতে জল আনতে বলেছিলেন। জল এসেছিল। কুশীটা ব্রহ্মচারী নিজেই মহিলার পিঠের উপর বসিয়ে ছিলেন । আমাকে যখন বলেছিলেন, ‘দেখ তো জলটা গরম হয়েছে কিনা?’ আমি দেখেছিলাম জল গরম। ব্রহ্মচারীর কথায় সাধারণভাবে শতকরা প্রায় একশ জনেরই মনে হওয়া স্বাভাবিক, জলটা ঠান্ডা ছিল। এখন গরম কি না দেখতে হবে। কিন্তু জলটা যে ঠান্ডাই আনা হয়েছিল তার প্রমাণ কী? এই ঘটনা কৌশলে ঘটাতে আমি কুশীতে গরমজল আনিয়ে একইভাবে কারুকে জলটা গরম হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনিও ভুল করতেন এবং আমাকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে ধরে নিতেন।

এই ধরনের একটা জব্বর হতভম্বকর ঘটনা দেখানোর পরও আমার কাছ থেকে এই ধরনের উত্তর নিশ্চয়ই বালক ব্রহ্মচারীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। অন্তত তাঁর আচরণে আমার তাই মনে হয়েছিল। হয় তো বা ছিল কিছুটা দ্বিধাও।

এক সময় দ্বিধা কাটিয়ে বললেন, “যা দরজাটা ভেজিয়ে দে।’ দিয়ে এলাম।

বৃহ্মচারী বাবা এবার নিজেই উঠে গিয়ে দেওয়াল-আলমারি খুলে একটা রাইটিং প্যাড ও পেনসিল নিয়ে এলেন। প্যাড আর পেনসিলটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “আমাকে না দেখিয়ে এতে লেখ, কাল সন্ধে সাতটার সময় কোথায় ছিলি।’

লিখলাম মধুগ্রামে বিপুলদের বাড়িতে।

বালক ব্রহ্মচারী বললেন, প্যাডের কাগজটা ছিঁড়ে তোর হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখ।

ধরে রাখলাম। তবে শক্ত করে নয়, আলতো করে। ব্রহ্মচারী বাবা বললেন, ‘এবার প্যাডটা নামিয়ে রেখে আমার দিকে পেছন ফিরে চোখ বুজে বোস।’

বসলাম ।

ব্রহ্মচারীবাবা বললেন, “ভাবতে থাক, একটা সমুদ্রের পারে দাঁড়িয়ে আছিস। একটু একটু করে সূর্য-উঠছে। গোটা আকাশ আর জলে প্রতিটি মুহূর্তে রঙের বৈচিত্র্য।’

আমি ভাবতে লাগলাম ।

ব্রহ্মচারীবাবার একটি হাত আমার মাথার উপর দিয়ে এসে কপাল ছুঁল। কিছুক্ষণ পরে বাবা বলতে শুরু করলেন, ‘দেখতে পাচ্ছি, তুই ছিলি একটা গ্রামগ্রাম জায়গায়। জায়গাটা মধ্যমগ্রাম । বাড়িটাও দেখতে পাচ্ছি। ঠাণ্ডা, শান্ত, খুব সুন্দর পরিবেশ।

বললাম, ‘সত্যিই সুন্দর, সত্যিই সুন্দর। মুলিবাঁশের দেওয়াল, মাটির মেঝে, টালির চাল। অদ্ভুত রকমের শীতল-শান্ত পরিবেশ।’

বাবাজী বললেন, ‘হ্যাঁ, তাই দেখতে পাচ্ছি। একটা লাউ না কুমড়ো গাছ যেন ওদের বাঁশের দেওয়াল বেয়ে উঠেছে।’

আরও অনেক কিছুই বলে গেলেন উনি। কিন্তু ততক্ষণে গোরার গুরুর দৌড় আমার জানা হয়ে গেছে। কারণ, গতকাল দুপুর দুটো থেকে সন্ধে আটটা পর্যন্ত ছিলাম কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে। তারপর বাস ধরে নিজেদের দমদম পার্কের বাড়িতে। সে-বাড়িও বাবাজীর বর্ণনার ধারে-কাছে যায় না।

আমি কী লিখেছি বাবাজীর তা জানা ছিল না। তাইতেই খুব সতর্কতার সঙ্গে একটু একটু করে বর্ণনা দিয়ে লক্ষ্য করছিলেন। কারণ জানা কথা, বর্ণনার সঙ্গে সামান্য মিলে গেলেই আমি আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠব এবং হুড়মুড় করে আরও অনেক তথ্যই তাঁকে যুগিয়ে যাব, যেমন জ্যোতিষীদের কাছে ভাগ্য জানতে আসা মানুষেরা করেন।

অনেকে হয় তো ভাবছেন, আমি কী লিখেছি, সেটা জানতে পারাও অলৌকিক ক্ষমতারই পরিচয়। না, আদৌ তা নয়। জাদুকরেরা অনেক সময় কার্বন পেস্টেড কাগজের প্যাডে দর্শকদের দিয়ে কিছু লিখিয়ে তলার কাগজে কার্বনের ছাপ দেখে বলে দেন কী লেখা হয়েছিল। আবার অনেক সময় সাধারণ প্যাডে হার্ড পেন্সিল দিয়ে কিছু লিখিয়ে তলার পাতাটায় পেন্সিলের সীসের গুঁড়ো ঘষেও বলে দেওয়া হয়, কী লেখা হয়েছিল। এ ছাড়াও আছে অনেক পদ্ধতি ।

আমি কফি হাউসে থেকেও ইচ্ছে করে লিখেছিলাম, মধ্যমগ্রামে; বিপুলদের বাড়িতে। কারণ, অলৌকিক ক্ষমতার বদলে কৌশলের আশ্রয় নিতে গেলে গুরুদেব ভুল করতে বাধ্য। আমার ফাঁদে পড়ে ভুল করতে বাধ্য হলেনও। আমি সামান্য একটু চালাকির আশ্রয় নিয়ে বিপুলদের বাড়ির যে বর্ণনা দিলাম, বালক ব্রহ্মচারীবাবাও সেই বর্ণনাতেই সায় দিয়ে গেলেন। অথচ বিপুলদের বাড়ি দস্তুরমতো পেল্লাই পাকা বাড়ি। সে সময়কার প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ দেবজ্যোতি বর্মণের বাড়ির খুব কাছেই ছিল ওদের বাড়ি। অতএব বালক ব্রহ্মচারীবাবা যে কতবড় সিদ্ধপুরুষ এটুকু বুঝতে সেদিন আমার একটুও অসুবিধে হয়নি।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!