‘পক্ষিতীর্থম’ দক্ষিণ ভারতের একটি প্রখ্যাত ধর্মস্থান। মাদ্রাজ থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে থিরুকালিকণ্ডুম নামে একটা জায়গায় পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পক্ষিতীর্থ মন্দির। প্রতিদিন বেলা এগারোটা থেকে বারোটা নাগাদ একটি বা দুটি পাখি উড়ে আসে পক্ষিতীর্থে। পুরোহিতের নিবেদন করা ভাত, ময়দা, ঘি ও চিনিতে তৈরি খাবার খেয়ে আবার ওরা উড়ে চলে যায়। পুরোহিত বলেন, প্রতিদিন এই পক্ষিদেবতা বা দেবতারা উড়ে আসেন সুদূর বারাণসী থেকে, নিবেদিত খাদ্য গ্রহণের পর আবার ফিরে যান বারাণসীতে। পুরোহিতেরা আরও বলেন, এই পক্ষিদেবতারা অমর। যুগ-যুগান্ত ধরে তাঁরা এমনি করেই প্রতিদিন উড়ে এসে পুজো গ্রহণ করে আবার ফিরে যান। এরা নাকি পৌরাণিক যুগের পাখি। দীর্ঘকাল আগেই নাকি এই জাতীয় পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জীব মাত্রেই মরণশীল—এই তত্ত্ব পক্ষিদেবতাদের বেলাতে খাটে না। পুরোহিতদের প্রতিটি কথাকে অভ্রান্ত সত্য বলে ধরে নেওয়ার মতো ভক্তের অভাব নেই আমাদের দেশে। তারা পক্ষিতীর্থের পক্ষিদেবতার অলোকিকত্বকে স্বীকার করে নিয়ে পরম ভক্তির সঙ্গে পুজো দিতে যায়।

অনেক মানুষই অলৌকিক কোনও কিছুকে দেখতে আগ্রহী,
অলৌকিকে বিশ্বাস করতে আগ্রহী। তাই, অস্বাভাবিক
কোন কিছু দেখলেই অন্ধ বিশ্বাসে তাকেই
অলৌকিক বলে ধরে নেয়।

পাখিদের ঠিক একই সময়ে উড়ে আসা এবং খাবার খাওয়ার মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা থাকলেও অসম্ভব কিছু নয়। আপনার বাড়ির আশপাশের কাকদের নিয়ম করে কিছুদিন দিনের যে কোনও একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিতে থাকুন, কয়েকদিন পরেই দেখবেন, ঠিক খাবার দেওয়ার সময় কাকেরা এসে হাজির হচ্ছে।

আমার স্ত্রী এক সময় প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে ন’টার মধ্যে একটা কাক ও একটা চড়ুইকে নিজের হাতে খাওয়াতো। প্রতিদিন ঠিক ওই সময়ে পাখি দুটো এসে হাজির হত এবং ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি শুরু করে দিত। বেশি চেঁচামেচি করলে আমার স্ত্রী ধমক দিত। ওরাও বকুনি খেলে দিব্যি বুঝদারের মতো চুপ করে যেত। পাখিদের এই ধরনের ব্যবহারের কারণ হলো অভ্যাস বা ট্রেনিং। এই পাখি দুটির ব্যবহার অন্য পাখিদের তুলনায় কিছুটা অস্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়।

অনেকের মনে হতে পারে, খাবার খেতে শুধু দুটি মাত্র পাখি আসে কেন? কেন অন্য পাখিরাও আসে না?

আমার স্ত্রী সীমাকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখেছি চারদিকে খাবার ছিটিয়ে অনেক পাখিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা না করে, একটা বা দুটো পাখিকে আলাদা করে খাওয়াবার চেষ্টা করলে শুধু তারাই খাবার দেবার নির্দিষ্ট সময়ে এসে হাজির হয়। আমি একবার প্রায় এক বছর ধরে সামনের বারান্দায় বসে সকালের চা খেতাম এবং আমার বিস্কুট থেকে একটা টুকরো একটা কাককে দিতাম। প্রতিদিনই কাকটা বিস্কুটের টুকরোর লোভে আমার সকালের চা খাওয়ার সময়ে এসে হাজির হতো।

তাহলে এটুকু নিশ্চয়ই বোঝা গেল যে, পক্ষিতীর্থের পাখিদের নির্দিষ্ট সময়ে খেতে আসার মধ্যে কোনও অলৌকিক নেই। এবার দেখা যাক, পাখি দুটো সত্যিই প্রতিদিন ১৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কাশী থেকে উড়ে আসে এবং তাদের নিবেদিত ভোগ গ্রহণ করে আবার কাশীতেই ফিরে যায় কি না?

সত্যিই যদি কাশী থেকেও পাখিরা আসছে বলে ধরে নিই, তবুও তাকে অলৌকিক কিছু বলা যায় না, ১৩০০ কিলোমিটার কেন, কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে যাযাবর পাখিরা জায়গা চিনে এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশের নির্দিষ্ট কোনও চিড়িয়াখানায় বা জলাশয়ে বিশেষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে হাজির হয়।

কিন্তু পক্ষিবিশেষজ্ঞদের মনেও বিস্ময় জাগে, যখন শোনা যায় পক্ষিদেবতা প্রতিদিনই ১৩০০ কিলোমিটার পথ উড়ে আসে এবং ১৩০০ কিলোমিটার উড়ে ফিরে যায়।

সত্যিই যে ওরা বারাণসী (কাশী) থেকে আসে তার কোনও প্রমাণ নেই। অবশ্য কিছু পক্ষিবিশেষজ্ঞের মতে পাখি দুটি উৎসর্গীকৃত ভোগ গ্রহণের পর একটু দূরের একটা ছোট পাহাড়ে তাদের বাসায় চলে যায়। আবার সেখান থেকে পরের দিন ফিরে আসে।

বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু মন্দিরের পুরোহিতরা ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তি সোসাইটির গবেষকদের অনুসন্ধান চালাতে দেননি। ফলে, পক্ষিবিশেষজ্ঞদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা ধরে নিতে পারি, বিশেষ শিক্ষাপ্রাপ্ত পাখিরা সুদীর্ঘকাল ধরে এমনি করেই কিছুটা দূরের বাসা থেকে উড়ে এসে ভোগ খেয়ে যাচ্ছে। পাখিদের অমর বলে চালানোর জন্য প্রয়োজনমতো বৃদ্ধ বা আহত পাখি বদল করা হচ্ছে।

এখন দেখা যাক, পাখি দুটি কোন জাতীয় পাখি? পুরোহিতদের কথামতো পাখি দুটি এতই প্রাচীন আমলের যে, এই জাতীয় পাখি বর্তমান বিশ্বে আর নেই। পৌরাণিক যুগের পাখি হলে অবশ্য বিলুপ্ত প্রাণী হওয়াই স্বাভাবিক। ওই জাতীয় পাখির বংশধরদের রূপান্তর ঘটতে ঘটতে আজ সম্পূর্ণভাবে অন্য জাতের পাখিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সাধারণ ভক্ত-দর্শকরা অবশ্য বিশ্বাস করেন এ ধরনের পাখি আগে তাঁরা কখনও দেখেননি। তাঁদের কাছে এই অচেনা পাখির রহস্যময় চালচলন পুরোহিতদের কাহিনির প্রতি বিশ্বাস এনে দেয়।

সকলেই পক্ষিতত্ত্ববিদ নন। তাই বিরল শ্রেণির পাখি চিনতে না পারাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, এই বিষয়ে পক্ষিতত্ত্ববিদদের মতামতটা কী, তা একবার দেখা যাক।

প্রখ্যাত পক্ষিতত্ত্ববিদ শ্রী অজয় হোম ১৯৬৫ সালে পক্ষিতীর্থমে গিয়েছিলেন। তিনি বেলা সওয়া এগারোটা নাগাদ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঈগলের চেয়ে ছোট, প্রায় চিলের মতো দুটি পাখিকে উড়ে আসতে দেখেন। পাখিরা এসে নামল ভোগের থালা থেকে হাত পাঁচেক দূরে। তারপর অজয় হোমের ভাষায়, “ও হরি, এ যে আমার অত্যন্ত চেনা পাখি। গিরিডিতে হাটের পাশে ডাঁই করা জঞ্জালের উপরে, পাশে কত দেখেছি। এ তো গিন্নি শকুন (নিওফ্রন পেবনোপটেরাস) ইং, স্ক্যাভেঞ্জার ভালচার।” (আজকাল, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮২ সাল)

তামিলনাড়ু সরকারের একটি রঙিন প্রচারপত্রে পক্ষিতীর্থমের পাখির ছবি ছাপা হয়েছে। সেই ছবি দেখে আরও পক্ষিতত্ত্ববিদ মত প্রকাশ করেছেন, এটা শ্বেত-শকুন (Neophron Vulture)। শ্বেত-শকুন বিরল হলেও আফ্রিকা ও ভারতবর্ষের অনেক অঞ্চলে এই জাতীয় শকুনের দেখা মেলে, অর্থাৎ এরা অবলুপ্ত নয়।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!