মুখবন্ধ

এই কাহিনির একটি মুখবন্ধ লেখার ইচ্ছে হচ্ছে। লেখা না বলে টোকা বলতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার দক্ষিণেশ্বর মন্দির সংস্কারের যে রূপরেখাটি তৈরি করেছেন, তার মুখবন্ধ থেকেই কিছুটা পুরোপুরি টুকে দিলাম ।

“১৮২০ বা ১৮৩০ সালে নবজাগরণের ধারক ইয়ং বেঙ্গল’-এর চিন্তা ভাবনা বা জীবনচর্যার যে বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখি, তাতে মূল সুরটিই ছিল নাস্তিকতা। পশ্চিমী সংস্কৃতির ঝোড়ো বাতাসে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল প্রাচ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক ঐতিহ্য। পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণই সেই সময়কার অভিজাত সমাজের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। দক্ষিণেশ্বর-ই শেষ পর্যন্ত ভারতীয় ঐতিহ্যকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। অসাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, অভিজাত বাঙালি বিধবা রানি রাসমণির প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের নতুন পুরোহিত শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণপুরুষ।’ তিনি ও তাঁর ভুবনজয়ী শিষ্য বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক আদান-প্রদান ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতকে পথ দেখাল। চিন্তার জগতে যে আলোড়নের সূত্রপাত দক্ষিণেশ্বর চত্বরে, পরবর্তী পর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামও তা থেকে পুষ্টিলাভ করে।”

এই বাংলার ভোটারদের মধ্যে একটা ধারণা বাসা বেঁধে ছিল—মার্কসবাদীরা নাস্তিক। মার্কস সাহেব নাস্তিক ছিলেন বলেই এমন ভুল ধারণা গড়ে উঠেছিল।

মুখবন্ধে যা লেখা হয়েছে, তাতে কিছু ‘সত্যি’ কিন্তু সত্যিই আছে। অলৌকিক, জ্যোতিষ, ভূত, ভগবানে এ’দেশের আমজনতা একদা গভীর বিশ্বাস রাখত। এটা সত্যি। ইয়ং বেঙ্গলের নাস্তিক্যচিন্তা সেই বিশ্বাসে সূক্ষ্ম চিড় ধরিয়েছিল। এও সত্যি। ১৯৮৫ সালে ভূমিষ্ঠ যুক্তিবাদী আন্দোলন বছর পাঁচেকের মধ্যেই সূক্ষ্ম চিড়কে বৃহৎ ফাটলে পরিণত করেছিল। বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বিজেপি, কংগ্রেস ও মার্কসবাদী পার্টি সবাই চেষ্টা করছে ফাটল মেরামতের। নইলে সমাজ কাঠামোর বাঁধই যে ভেঙে পড়বে। স্বার্থ থেকে এই ঐক্য যতটা, অনৈক্যও ততটাই। প্রত্যেকেই চাইছে অন্যকে পিছনে ফেলে গদি দখল করতে। এই হল মহান ভারতের ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’।

এ দেশের হিন্দু নাগরিকদের সাধু বা অবতার হওয়ার অধিকার তার জন্মগত অধিকার। ‘সাধু’ হতে খ্রিস্টান জগতের মতো পোপের পায়ে তেল লাগাতে হয় না। ‘ভারত’ নামের এ দেশে নিজেকে ‘অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী’ বলে বিজ্ঞাপন দিলেই অবতার হওয়া যায় ৷ পাবলিক পাগলের মতো দৌড়াতে থাকে অবতারের দিকে। ছিদ্রান্বেষী যুক্তিবাদীরাও ছুটতে থাকে। তবে অন্য কারণে।

‘নেই’-এর জগতে আছেন শুধু ‘গুগি মা’

কলকাতার কাছেই নিমপীঠ। দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরে নেমে নিমপীঠে যাওয়ার ভ্যান রিকশা মিলবে। নিমপীঠ-এ আপনাদের নিয়ে যেতে চাই, কারণ এই পীঠ দুই প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গমস্থল। একদিকে আধাত্মিক ঐতিহ্যময় রামকৃষ্ণ মিশন। আর একদিকে ‘গুগি মার থান’।

রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতিমধ্যেই অনেক কিছু বলে ফেলেছি। বরং অনেক কিছু বলার আছে গুগি মা’র থান নিয়ে। বড় প্রচার মাধ্যমগুলোর এখনও নজরে পড়েনি। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগণার হতদরিদ্র রোগগ্রস্ত মানুষগুলোর কাছে গুগি মা’র থান- ই শেষ ভরসাস্থল ৷

দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন এলাকায় শতকরা অন্তত নব্বই ভাগ মানুষই গরিব। এই অঞ্চলের বাচ্চা-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই ভোর না হতেই বেরিয়ে পড়ে এক বেলা ভাত জোটাবার তাগিদে। সকাল থেকে সন্ধে চিংড়ির পোনা ধরতে বুক দিয়ে জল ঠেলে এগুতে হয়। একটা পোনা কুড়ি পয়সা। বারো ঘণ্টা খাটলে মেলে দশ থেকে কুড়ি টাকা। জলে আছে কুমির-কামোট- জলদস্যু। ডাঙায় বাঘ-সাপ-রাজনৈতিক খুনোখুনি। চিংড়ির পোনা ধরতে গিয়ে কুমির ধরে, হাজায় ধরে। তারপরও পেট ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলে। পানীয় জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই, চিকিৎসার বালাই নেই। এই ‘নেই’-এর জগতে গুগি মা’র মতো অলৌকিক চিকিৎসাই শেষ ভরসা।

গুগি থানে আমরা ক’জন

গুগি মা’র গল্প অনেক শুনেছি। অনেকে শুনিয়েছেন। এরা কেউ নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন গুগি মা’র অলৌকিক ক্ষমতা। কেউ বা মা’য়ের রোমহর্ষক শক্তির কথা শুনেছেন আত্মীয়ের মুখে

৯ সেপ্টেম্বর ২০০০। সকাল ন’টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেছি গুগি মা’র থানে। আমরা মানে শম্ভু দাস, সমীর হালদার, কল্যাণী ও যুক্তিবাদী সমিতির স্থানীয় জনাদশেক কিশোর-কিশোরী। সঙ্গে রয়েছেন ফোটোগ্রাফার ফান্টা ।

সাতসকালেই বিশাল লাইন পড়েছে। লাইনের সবাই রোগী। খালি পেটে আসতে হয় বলে ভোর থেকেই রোগীদের ভিড় শুরু হয়ে যায়। আমি আর ফান্টা ছাড়া আমাদের সঙ্গীরা সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে। ওরা এসেছে বিভিন্ন সময়ে, রোগী সেজে।

টিভি’র জন্য ছবি তোলা হচ্ছে। দেখতে আর মুখ দেখাতে আশে-পাশের বাড়ির বউ-বাচ্চা, কিশোর-কিশোরীরা ভিড় জমিয়েছে। সব মিলিয়ে জমজমাট পরিবেশ।

‘গুগি মা’ একজন বোবা বউ। ‘গুগি’ মানে বোবা। গুগি মা’র বাবা রবীন্দ্রনাথ পুরোকাইতের সঙ্গে কথা হল। পাঁচ ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে সংসার। এক সময় এই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরত। গুগি জন্ম বোবা। তাই ওকে ছোট্টবেলা থেকেই গুগি বলে ডাকত সবাই। সে নামটাই থেকে গেছে। গুগির বিয়েও দিলাম। স্বামী ছিলেন কালী-ভক্ত। তান্ত্রিক। আমার গুগি দেখতে খারাপ ছিল না। জানেন তো, তন্ত্রে আছে—সুন্দরী ছাড়া ভৈরবী করা যায় না। মা, মেয়ে, বোন, বউ যে কেউ ভৈরবী হতে পারে। কিন্তু তাকে সুন্দরী হতে হবে। গুগি ছিল একই সঙ্গে স্ত্রী আর ভৈরবী। তারপর হঠাৎ করে ওর বরটা মারা গেল। বিধবা গুগি ফিরে এলো এ বাড়িতে। তাও বছর ১৩-১৪ হল। আসার পর মা’কালী ওকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে সংসার থেকে রোগ-ভোগ দূর করার ক্ষমতা দিল। লোকে বলে অলৌকিক ক্ষমতা আছে গুগি মা’র। সত্যিই তা আছে। এই ১৩-১৪ বছরে হাজার হাজার রোগী এসেছে। প্রত্যেকেই ঠিক হয়ে গেছে। গুগি মা’র হাত দিয়ে ভক্তরোগীদের সেবা করে চলেছে স্বয়ং মা কালী। এসেছেন যখন নিজের চোখেই দেখতে পাবেন মা’র ক্ষমতা। মা’র থান মাহাত্ম্য।”

ছবি তুলছেন ফান্টা। গুগি মা’র থানের ছবি। আগে প্রকট দারিদ্র্য থাকলেও এখন তার চিহ্নমাত্র নেই। বিঘাখানেক জমির চৌহদ্দি ঘিরে ‘এল’ প্যাটার্নের পাকা বাড়ি। অনেক ঘর। বেড়ায় ঘেরা বাগান। গুগি মা’র থানে ঢুকতে হয় বেড়ার গেট পেরিয়ে। ঢুকলেই ডাইনে মন্দির। মন্দিরে

গুগি মা

মা কালীর মাটির বড় মূর্তি। সামনে গোলা সিঁদুর লেপা ঘট। ঘটের উপর শুকনো আমের পল্লব, ডাব আর রাশি রাশি ফুল। ফুলগুলো টাটকা। সকালেই এক দফা মা’য়ের পুজো হয়ে গেছে। জ্বলছে বড়ো একটা প্রদীপ, একগুচ্ছ ধূপকাঠি। মূর্তির গলায় জবা ও অপরাজিতার মালা। রোগ মুক্ত হয়ে কেউ কেউ মানত রাখতে সোনা-রুপোর অলংকার দিয়ে গেছে ঠাকুরকে। বাগানে রয়েছে পেয়ারা, আম, জবা, টগর, করবি, অপরাজিতা গাছ। মাচা বেয়ে উঠেছে লাউয়ের লতা। গুগি মা’র থানের কল্যাণে যৌথ পরিবার আঁটোসাঁটো। পাঁচ ছেলে সংসার পেতেছে। তাদের পরিবারের সবাই এখন গুগি মা’র সেবায়ত। দুই মেয়েও মা’য়ের সেবাকেই জীবনের লক্ষ্য করেছে। মা’য়ের সেবা নিজ-সেবা সব একাকার।

লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের সঙ্গে কথা বললাম। ওরা প্রায় সকলেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। অনেকেই এসেছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। দেখে মনে হচ্ছিল মহিলাদের বেশিরভাগই অপুষ্টিতে ভুগছেন। ওদের অসুখ বলতে পেট খারাপ, মাথায় যন্ত্রণা, বুক ধড়ফড়, অম্বলের জ্বালা, হাজা, মাথায় ব্যথা, হাত বা পায়ের অবশতা ইত্যাদি। হয়তো বা ওরা গ্যাসট্রিক, ব্লাডপ্রেসার, ব্লাডসুগার, পেটের আলসার বা স্পন্ডেলাইটিস রোগী। কিন্তু ওরা তা জানে না । স্বাস্থ্যকেন্দ্র কই, যে জানবে? ওইসব রোগের উপসর্গ যেমন পেটের অসুখ, মাথা যন্ত্রণা, দুর্বলতা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদিকে মূল রোগ বলে মনে করে ওরা। আবার এমনও হতে পারে, দারিদ্র্যের চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা থেকে মানসিক কারণে নানা অসুখ দেখা দিয়েছে ওদের শরীরে।

মানসিক কারণেও শারীরিক অসুখ হয়। আমাদের অসুখের শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগেরই কারণ মানসিক। এই ধরনের অসুখকে Psycho – Somatic Disease বলে। মানসিক কারণে অসুখের মূলে রয়েছে—দারিদ্র, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয়, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি। আর এমন মানসিক অবস্থা থেকে অনেক রোগই হতে পারে। যেমন—শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা, বুক ফড়ফড়, পেটের গোলমাল, পেটের আলসার, ব্লাডপ্রেসার, কাশি, স্পন্ডেলাইটিস, হাঁপানি, ক্লান্তি ইত্যাদি। মানসিক কারণে তৈরি হওয়া রোগ আবার মানসিক কারণে সেরেও যায়। এই ধরনের রোগী যদি গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে মাদুলি-তাবিজ-রত্ন-জলপড়া বা ওষধি-মূল্যহীন ট্যাবলেট ইত্যাদি গ্রহণ করে, তাহলেও তার রোগ সারতে পারে। বিশ্বাস-নির্ভর এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে Placebo চিকিৎসা পদ্ধতি।

মানলাম গুগি মা’র কাছে যারা আসে তাদের মোটামুটি অর্ধেক রোগী ভালো হয়ে যায় । এও মানলাম গরিব মানুষরা, বিশেষত দরিদ্রশ্রেণির নারীরা শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগই মানসিক কারণে শারীরিক অসুখে ভোগে। অতএব আসল রোগীদের কেউ-ই গুগি মা’র ক্ষমতার জোরে আরোগ্যলাভ করে না। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়—গুগিমা এমন কী দেখান, যা দেখে মানুষরা গভীরে বিশ্বাসে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে?

গুগি মা’র চমৎকার

গুগি মা যা দেখাচ্ছিলেন, তাকে আপাতদৃষ্টিতে অলৌকিক ছাড়া আর কী-ই বা বলি? একজন করে রোগীর ডাক পড়ছে। তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা ছোট্ট পিতলের ঘট। মা’র সাহায্যকারী বলে দিচ্ছে, সামনে পুকুর থেকে ঘট ভরে জল আনতে। জল আনার পর তাকে মন্দিরের সিমেন্ট বাঁধানো চাতালে শুয়ে পড়তে বলছে। শোবার আগে গুগি মা ঘটটা রোগীর হাত থেকে নিজের হাতে নিচ্ছেন। শোবার পর রোগীর পেটে বসিয়ে দিচ্ছেন ঘট।

গুগি মা’র যৌথ পরিবারের সকলেই মা’য়ের সেবায় লেগে পড়েছে। ঘটটা পেটে বসানোর পর মা’র সহকারী একজন রোগীকে বলছে, ডান হাতের তালু দিয়ে ঘটের মাথাটা চেপে ধরতে।

এ’বার শুরু হচ্ছে গুগি মা’র ঠোঁট নাড়ানো। মা নাকি মনে মনে মন্ত্র পড়ছেন। মনে মনে ভাবতে ঠোঁট নাড়াতে হয় নাকি? বোৱা ঠোঁট নাড়লে মন্ত্র উচ্চারিত হয় কীভাবে? – এ সব কূট প্রশ্নে আদৌ যাচ্ছি না। যা শুনেছি, যা দেখেছি, তাই লিখছি।

মিনিট তিনেকে মন্ত্র পড়া শেষ। মা’র সহকারী রোগীকে বলছে—ঘটিটা এবার হাতে নিয়ে উঠে পড়ুন। সাবধানে উঠবেন, যাতে ঘটির জল না পড়ে যায়।

রোগী বা রোগিণী উঠে দাঁড়াবার পর বলা হচ্ছে ঘটের জল চাতালের একপ্রান্তে ঢালতে । জল ঢালতেই অবাক কাণ্ড! জলের সঙ্গে বেরিয়ে আসছে গাছের শিকড় বা ছোট্ট একদলা ময়লা । মায়ের সেবাইত মুখস্ত আওড়ে চলেছে—“আপনাকে কেউ তুক করেছিল। তুক করে যা খাইয়েছিল, মায়ের কৃপায় তা সবই বেরিয়ে গেল। যান, ভালো হয়ে যাবেন। ভালো হয়ে যাবার পনেরো দিনের মধ্যে যে কোনো সন্ধের সময় পুজো দিয়ে যাবেন।”

প্রণামীর পনেরো টাকা মা কালীর সামনের রেকাবিতে রেখে বিস্মিত রোগী বা রোগিণী গুগি মা আর মা কালীকে প্রণাম করে নেমে যাচ্ছে।

মন্দিরের ঘরের দরজা খোলা। খালি ঘট চলে যাচ্ছে মন্দিরের ভিতরে। মা’য়ের মৃণ্ময়ী মূর্তির পায়ে খালি ঘট তলায় নামিয়ে রাখছেন মা’র পরিবারের একজন। দশ বাই বারো সাইজে মন্দিরের তিন ফুট চওড়া দরজা। দরজা দিয়ে ঘরের পুরোটা নজরে আসে না। এই সুযোগ নিয়ে খালি ঘটে কিছু ফেলে দেওয়া হচ্ছে না তো?

পুকুরে জল ভরতে যাবার আগে চারজন রোগীর ঘটের ছবি তোলালাম। আসলে ছবি তোলা অজুহাতে ঘটের ভিতর আলো ফেলে একবার দেখে নেওয়া। না, কোনও কারচুপি নেই। আমি কিছু পাইনি বুঝে, আমাদের সমিতির অনেকেই বোধহয় একটু দমেই গেল। শত হলেও তারা আমাদের জয় দেখতে অভ্যস্ত। আমাদের জয় দেখতে চায়। এই অবস্থায় এ কী বিপত্তি?

ডাক পড়লো লাইনে দাঁড়ানো কল্যাণীর। আমাদের সমিতির মেয়ে। উচ্চ-মাধ্যমিক ছাত্রী। চট্‌পটে। কিছুটা ছটফটেও। ওর হাতে একটা পিতলের ঘট দিয়ে গুগি মা’র এক ভাই বললো, “যাও পুকুর থেকে জল ভরে আন।” ঘটে জল ভরে মন্দিরের বারান্দায় উঠলো কল্যাণী। নির্দেশ মতো শুয়ে পড়ল। ওর পরনে সালোয়ার কামিজ। কামিজটা পেটের উপর তুলে পেটে ঘটটা বসিয়ে দিয়ে হাতটা সবে তুলেছেন গুগি মা, ওমনি কল্যাণী চেঁচিয়ে উঠলো, “আমার ঘটের ভিতর কী সব রয়েছে দেখছি।” কল্যাণীর হাতের আঙুল ঘটের ভিতরে।

মুহূর্তে হুলুস্থুল বেঁধে গেল। গুগি মা’র পরিবারের লোকেরা কল্যাণীর হাত থেকে ঘটটা ছিনিয়ে নিতে চাইছে। কল্যাণীও নাছোড়। কল্যাণী মেয়ে বলে বে-কায়দায় পড়ে গেছে গুগি শিবির। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কল্যাণীর পক্ষ নিয়েছে। ওরা দেখতে চায়, মন্ত্র পড়ার আগেই ঘটের জলে কিছু রাখা হয়েছিল কি না? ঘটের জল ঢাললে শিকড়-টিকড় কিছু বেরিয়ে এলে এটাই প্রমাণ হবে যে—মন্ত্র শক্তিতে পেট থেকে শিকড় বের হয়নি। মন্ত্র পড়ার আগেই ঘটের জলে শিকড় বা নোংরা ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত আমিই হস্তক্ষেপ করলাম। আমার কথায় দু-পক্ষই কিছুটা থামলো। তবে উত্তেজনা যে সবার মধ্যেই ছাড়িয়েছে, বুঝলাম। আমার কথা মতো কল্যাণী সিমেন্টের চাতালে ঘটের জল উপুড় করে দিল। আমাদের সবার অবাক হওয়ার পালা। জলের সঙ্গে বেরিয়ে এলো একটা শিকড়ের টুকরো ও একদলা ময়লা।

“এটা কী করে হল? আপনারা তবে কী আগে থেকেই ঘটের ভিতর শিকড় ও ময়লা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম গুগি মা’কে। গুগি মা তো নিজের বোবা রোগ সারাতে পারেননি, তাই তাঁর হয়ে এক বোন ঝাঁঝিয়ে উঠল, “ওই মেয়েটাই ও’সব ফেলেছে। আমাদের বদনাম দিতে চাইছে। ফাঁকা ঘটে রোগীরাই জল ভরে আনছে। ঘটে নোংরা ফেলার সুযোগ কোথায় আমাদের?

কথাগুলো উড়িয়ে দেবার মতো নয়। কথায় দম আছে। সত্যি-ই সুযোগ কোথায় ওই জল আনার পর ঘট স্পর্শ করছেন মাত্র একজন। গুগি মা। তাহলে তাঁকেই ও’সব ফেলতে হয়। আমি কড়া নজর রেখেছি। তার মধ্যেই কী গুগি মার হাতের কৌশল আমার নজরকে বারবার ফাঁকি দিয়েছেন? তত্ত্বগতভাবে যদি ধরে নিই যে, প্রতিবারই আমার নজরকে ফাঁকি দিয়েছেন, তবু প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি এ’সব শিকড়-নোংরা কোথা থেকে হাতে নিচ্ছেন? পরনে শাড়ি ব্লাউজ। কোমরের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে রাখেননি। আমি নিশ্চিত। কারণ তাহলে তাঁকে কোমরে মাঝে মাঝেই হাত নিয়ে যেতে হবে। না, তা তিনি নিয়ে যাননি। অতএব? অন্তত আরও একটিবার গোটা ব্যাপারটা দেখার সুযোগ আমাকে নিতেই হবে।

ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম। “আমরা এই মুহূর্তে একটা বিতর্কের মুখোমুখি। তোমার নাম কী?” জিজ্ঞেস করলাম কল্যাণীকে।

“কল্যাণী”।

আবার ক্যামেরার দিকে ঘুরলাম। কল্যাণী দাবি করছে, শিকড় ও ময়লা আগে থেকেই ঘটে ছিল। আমরা দেখেছি, গুগি মা মন্ত্র শুরু করার আগেই কল্যাণী জানিয়েছে—ঘটে কিছু আছে। ঘটে জল ঢালার পর জলের সঙ্গে আমরা শিকড় ও ময়লা পড়তে দেখেছি। অর্থাৎ সত্যিই ঘটে আগে থেকেই শিকড়-ময়লা ছিল। কিন্তু কে রেখেছিল? কল্যাণী? নাকি গুগি মা? গুগি মা’র বোন আঙুল তুলেছেন কল্যাণীর দিকে। কল্যাণী সে’ভাবে সরাসরি কারও দিকে আঙুল তোলেনি। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছে, গুগি মা বা তার পরিবারের কেউ এই কাজটি করেছেন। কল্যাণীর অভিযোগ সত্যি হলে আমাদের স্বীকার করতেই হয় যে গুগি মা ও তাঁর পরিবারের লোকজন প্রতারণা চালিয়ে আসছেন। অভিযোগ ও পালটা অভিযোগের চক্করে পড়ে থাকলে আমরা কখনই সত্যতে পৌঁছতে পারব না। সত্যতে পৌঁছতে আমরা একটা কাজ করব। আরও একজন রোগীকে এখন ডেকে নেবো। তার পেট থেকে মন্ত্র পড়ে শিকড় তুলে দিলেই প্রমাণ হয়ে যাবে, মেয়েটির অভিযোগ মিথ্যে। গুগি মা সত্যি।’

জনতার দিকে তাকিয়ে হেঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনারা কী বলেন ?”

জবাবে জনা পঞ্চাশেক রোগীর প্রায় সকলেই সায় দিল। লাইনে এখন যিনি প্রথমে দাঁড়িয়ে তাঁকেই ডেকে নিলাম। মধ্যবয়স্কা রোগিণী এগিয়ে এলেন চাতালের কাছে। চেহারায় অপুষ্টির ছাপ। জিজ্ঞেস করলাম, “নাম কী?”

—“ফতেমা বিবি।’

-“থাকেন কোথায় ? ”

—“লক্ষ্মীকান্তপুরে।”

—“কী অসুখ?”

—“বুক জ্বালা করে।”

—“ডাক্তার দেখিয়েছেন ?”

—“না।”

-“কার সঙ্গে এলেন ?”

“মেজ ছেলের সঙ্গে।”

“ওর হাতে একটা ঘট দাও বোন। গুগি মা’র বোনকে বললাম। মন্দিরের ভিতর থেকে একটা ঘট এগিয়ে দিল একটি মেয়ে। গুগি মা’র ভাই ঘটটা রোগিণীর হাতে তুলে দিল। রোগিণীকে বললাম, ‘ঘটটা একটু দেবেন বোন, দেখবো।”

গুগি মা’র বোন চিৎকার করে উঠলো, “দেখুন, ভালো করে দেখুন।

বললাম, “তুমি একটুও রাগবে না। রাগ দেখালে লোকে ভাববে —বুজরুকি ধরা পড়ে যাবার ভয়ে রাগ করছ। আমি ঘটের ভিতরটা দেখলে তোমাদের উপরই লোকের বিশ্বাস বাড়বে।”

ঘটের ভিতর নজর দিলাম। ঘটটা উপুড় করলাম। কিছুই নেই। এ’বার সবার দৃষ্টির সামনে আমার ডান হাতের তালুর দিকটা মেলে ধরলাম। আঙুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে দিলাম। বোঝাতে চাইলাম হাতে কিছুই লুকিয়ে রাখিনি। তালুর দিকটা এবার ফেরালাম আমার দিকে। জনতা বুঝে গেছেন আমি কী বোঝাতে চাইছি।

কয়েকজন চেঁচালো—ঠিক আছে। ঠিক আছে।

ঘরের ভিতর যন্ত্রম-এর ছবি

এ’বার ডান হাতের মধ্যমা আঙুলটি ঘটের ভিতরের দিকে ঘাড়ের কাছে ঘোরাতেই, আঙুলের ডগায় আঠালো কী যে একটা ঠেকলো। সামান্য চেষ্টাতেই সেটা বেরিয়ে এলো আঙুলের ডগায়। কালো রং-এর ছোট্ট একটা মাখা আটার দলা। সঙ্গে একটা শিকড়। ক্যামেরা আর একগাদা উৎসুক মানুষের নজর এ’দিকে। হাত তুলে দেখালাম। বললাম, ‘এই মাখা আটার টুকরো দিয়ে ঘটের ভিতরে চেপে বসান ছিল শিকড়টা। ঘটের ভিতরে গলার নীচে আটকে রাখায় আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম না। ঘটটা পেটে বসাবার সময় গুগি মা’র একটা আঙুল আটার দলাটা খুলে দিচ্ছিল। ফলে শিকড় ও কালো ময়লা আটার দলা জলে পড়ে যাচ্ছিল। এ’বার আমরা দেখবো, অন্য ঘটগুলোতেও একই রকম কারচুপি করা আছে কি না?”

আমার কথা শেষ হতেই ফান্টা ক্যামেরা কাঁধে এক লাফে বারান্দায়। আমি মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়েছি। মন্দিরের চাতালে উঠে পড়তে শুরু করেছে রোগী, পড়শি ও যুক্তিবাদী সমিতির ছেলে-মেয়েরা। চার-পাঁচটা ঘট বের করে জনতা আর ক্যামেরার সামনে রাখলাম। একে একে প্রতিটি ঘটে আঙুল ঢোকালাম। প্রতিটি ঘট থেকেই বের হলো কালো আটার দলায় আটকানো শিকড়। মন্দিরের ভিতর কালো রং মিশিয়ে টাটকা মাখা আটাও মিললো একটা রেকাবিতে। গুগি মা’র বিরুদ্ধে জনতার তীব্র ক্ষোভ সামাল দিতে হল আমাদেরই। নইলে গণপ্রহারে হত্যার হ্যাপা সামলাতে হত আমাদের।

পরিশেষে বাড়ছি আমৱাই

সবজান্তা মধ্যবিত্ত-মানসিকতার লোকগুলোর অস্বীকৃতিকে একটুও পাত্তা না দিয়ে আমরা যুক্তিবাদীরা সংখ্যায় বাড়ছি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে বাড়ছি। আঠেরো-কুড়ি বছর আগে বিশ্বে যুক্তিবাদী-মানবতাবাদী-নিরীশ্বরবাদীর সংখ্যা ছিল শতকরা দু’ভাগেরও কম। আজ আমরা শতকরা কুড়ি ভাগেরই বেশি। খ্রিস্টান ও মুসলিমদের পরেই আমরা সংখ্যাধিক্য। হিন্দুদের চেয়েও আমরা সংখ্যায় বেশি।

সবজান্তারা মানুক বা না মানুক এ’কথা মানে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যালমানাক, ‘২০০২’ যাকে মান্যতা দেয় ইউ এন ও’ থেকে ‘মনোরমা ইয়ারবুক’।

শেষ পর্যন্ত আমরা বাড়ছি, বাড়ব।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!