নামকরণ

যদি পুলিশের উদ্দেশ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া হতো, তাহলে গ্রন্থটির নাম হতো “১৬১ ধারায় জবানবন্দী।” যদি ম্যাজিস্ট্রেটের উদ্দেশ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া হতো, তাহলে গ্রন্থটির নাম হতো “১৬৪ ধারায় জবানবন্দী।” কিন্তু জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর কোন ধারা নেই। যেহেতু এই গ্রন্থটি জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, তাই গ্রন্থটির নাম দিয়েছি “আমার ফাঁসি চাই”। যদি বলা যায় মিস্টার X অপরাধ করেছে। মিস্টার X এর ফাঁসি চাই। তাহলে নিজে অপরাধ করলে কি বলা উচিত না আমার ফাঁসি চাই? তাই গ্রন্থটির নাম রেখেছি “আমার ফাঁসি চাই?

 

ভূমিকা

আমার বিশ্বাস অতীতের সত্য ঘটনা বা ইতিহাস জানা থাকলে ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা হয়তো আসতে পারে । শুধু আমি আছি বা জানি এমন সমস্ত ঘটনাবলীই কেবল এখানে লিখিত হলো। তবে আমার দেখা বা জানার বাইরে অন্য কিছু নেই, এটা একেবারেই ঠিক নয়। অবশ্যই আছে।

আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমাদের একটা বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, যারা রাজনীতি করেন বা দেশ চালান তারা আমাদের চাইতে খুব বেশি কিছু বোঝেন তা মোটেও নয়। আমাদের ধারণার আশপাশ দিয়েই তাদের ধারণা। আমাদের চাইতে খুব বেশি জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা রাজনীতিবিদদের আছে, এমন ভাববারও কোনই কারণ নেই । বরং কোন কোন বাস্তব বিষয়ে তাদের ধ্যানধারণা ও জ্ঞানের চাইতে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি সেই তুলনায় অনেক বেশি। অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতিক ও প্রশাসকদের বেলায় এটা ষোল আনা সত্য।

কত নীচ প্রকৃতির এবং কত লোভী ও ক্ষুদ্র মনোবৃত্তির মানুষেরা কত উপরে আসীন, সাধারণ জনতার কাছে তা তুলে ধরার জন্যই এই বই লেখার প্রয়াস আমার। বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের মানুষদের জন্য এই ধরনের বই বা পুস্তক লেখা উচিত কি- না এ নিয়ে বিস্তর চিন্তা-ভাবনা, আলাপ-আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি-রাজনীতির অন্তরালের কোন সত্য ও তথ্যকে বাধাগ্রস্ত না করে, যতটুকু জেনেছি তাই- ই জনসমক্ষে তুলে ধরব এই ভেবে যে, তা যদি বর্তমান এবং আগামী দিনের মানুষের কোন কাজে লাগে।

এই গ্রন্থ বা পুস্তক পড়ে কোন কোন পাঠক আমাদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করবেন, পারলে তার চাইতেও ভয়ানক চরম দণ্ড দেবেন। আবার কোন কোন পাঠক হয়তো সতর্ক- সাবধান হয়ে বিস্তর চিন্তা-ভাবনা করে আগামী দিনের রাজনৈতিক পথ চলবেন।

পাঠক কি করবেন, এটা একান্তই পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমরা এটাকে প্রকাশ করা আমাদের একান্তই দায়িত্ব মনে করেছি।

আমাদের সমূহ বিপদের কথা চিন্তা করে সকলেই একবাক্যে বইটি এখন প্রকাশ না করে, শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, তখন প্রকাশ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু আমরা স্বামী-স্ত্রী সম্মিলিত সকলের রায়ের সাথে একমত হইনি এই ভেবে যে, মানুষের (শেখ হাসিনার) দুর্বল মুহূর্তে তাঁর পিছনের কথা ফাঁস করে দেওয়ার মধ্যে কোন সৎ সাহস বা কৃতিত্ব থাকতে পারে না।

তাই ভবিষ্যৎ বিড়ম্বনার সম্ভাবনা জেনেও সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই এই গ্রন্থ বা পুস্তক প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জীবন মানে পরাজিত হওয়া নয়, অবিরাম যুদ্ধ করা। রাখে আল্লাহ মারে কে?

পাঠক মনে করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী ভাবে আমাদের (স্বামী-স্ত্রী) কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার জন্যই আমরা এই জাতীয় লেখা তৈরি করেছি। হ্যাঁ, এটা খুবই সত্যি কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের (স্বামী-স্ত্রী) কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চরম অকৃতজ্ঞতার পরিচয় না দিলে হয়তো আমাদের মাথায় এই গ্রন্থ লেখার বিষয়টি আসতো না।

লিশ, সিআইডি, ডিবি, আইবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ রাষ্ট্রের সকল সংস্থায় আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐ আদেশই আমাদের মাথায় এই বই বা গ্রন্থ লেখার বিষয় এনে দেয়।

এখানে যা লেখা হয়েছে তার সবটুকুই বাস্তবের ছবি। আমরা শুধু সত্য বিষয়ের উপর কথার মালা গেঁথেছি।

আমাদের চিন্তায় এই বিষয়গুলো জাগিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐ বেআইনী আদেশের প্রতি আমরা যারপর নাই কৃতজ্ঞ। কারণ সেই সূত্র থেকেই এত কিছুর বিস্তার।

রাষ্ট্রের নাগরিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা শুধু সংবিধান বিরোধী এবং বেআইনীই নয়, এটা হচ্ছে শপথ বাক্যের স্পষ্ট বরখেলাপ।

১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনের দরবার কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের সময় শেখ হাসিনা শপথ নিয়ে বলেছিলেন, আমি শেখ হাসিনা সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করিব। আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব । আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।

রাজনীতি হচ্ছে মানুষকে দেওয়ার জন্য, পাওয়ার জন্য নয় । এই বিষয়টি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরদিন থেকে ১৯৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারী পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ষোল বৎসর বিরামহীন দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের তাড়িয়ে দিলেন। আমরা পরাজিত হলাম। তবুও বোঝাতে পারলাম না, রাজনীতি মানুষকে দেওয়ার জন্য, পাওয়ার জন্য নয় । সত্যি কথা বলার প্রবল দৃঢ়তা আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কাছে বিপজ্জনক করে তুলেছিলো।

ব্যক্তিগতভাবে যিনি অসৎ, বেঈমান, নিমকহারাম এবং মুনাফেক। তিনি কী রাষ্ট্রীয় বা সমাজ জীবনে সৎ ঈমানদার হতে পারেন?

error: Content is protected !!