উক্ত শিরোনামে ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন- হযরত জিবরাঈল (আঃ) নবী করীম (সাঃ)-কে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া শুনাইতেন। ইমাম বুখারী আরও বলেন- হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও মাসরূক বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন- নবী করীম (সাঃ) আমাকে গোপনে বলিয়াছেন- ‘হযরত জিবরাঈল (আঃ) প্রতি বৎসর আমাকে কুরআন মজীদ শুনাইতেন। এই বৎসর তিনি আমাকে উহা দুইবার শুনাইয়াছেন। ইহাতে আমার মনে হয়, আমার ইন্তেকাল নিকটবর্তী হইয়াছে।’ ইমাম বুখারী উপরোক্ত হাদীসটি এইস্থলে এইরূপ বিচ্ছিন্ন সনদে উল্লেখ করিয়াছেন। তবে তিনি অন্যত্র একাধিক স্থানে উহা অবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা করিয়াছেন ।
হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল্লাহ্ যুহরী, ইবরাহীম ইব্ন সা’দ, ইয়াহিয়া ইব্ন কুযাআহ ও ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ ‘নবী করীম (সাঃ) নেক কাজে লোকদের মধ্যে অধিকতর অগ্রগামী ছিলেন। আবার রমযান মাসে তিনি উহাতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিকতর অগ্রগামী ছিলেন। কারণ, রমযান মাসের প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত প্রতি রাত্রিতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতেন । নবী করীম (সাঃ) তাঁহাকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া শুনাইতেন। তাঁহার সহিত হযরত জিবরাঈল (আঃ) সাক্ষাৎ করিবার পর নেক কাজে তিনি প্রবহমান বাতাসের চাইতে অধিকতর দ্রুতগামী হইতেন।’ উক্ত হাদীস ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয় কর্তৃক বর্ণিত হইয়াছে । বুখারী শরীফের প্রথম দিকে এতদসম্বন্ধে আলোচনা করা হইয়াছে। হযরত জিবরাঈল (আঃ) কর্তৃক নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট কুরআন মজীদ আবৃত্ত হইবার হিকমত ও উদ্দেশ্য উহাতে বিবৃত হইয়াছে । আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ।
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ সালেহ, আবূ হাসীন, আবূ বকর, খালিদ ইবন ইয়াযীদ ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেনঃ ‘প্রতি বৎসর একবার কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া নবী করীম (সাঃ)-কে শুনানো হইত। তবে যে বৎসর তিনি ইন্তিকাল করেন, সেই বৎসর দুইবার তাঁহাকে উহা শুনানো হইয়াছিল। নবী করীম (সাঃ) প্রতি বৎসর দশ দিন ই’তেকাফে বসিতেন। কিন্তু যে বৎসর তিনি ইন্তেকাল করেন, সেই বৎসর বিশ দিন ই’তেকাফে বসিয়াছিলেন।’ ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম নাসাঈ এবং ইমাম ইব্ন মাজাহও উহা উপরোক্ত রাবী আবূ বকর হইতে উপরোক্ত ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং অন্যরূপ একাধিক অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। সনদের অন্যতম রাবী আবূ বকর হইতেছেন আবূ বকর ইব্ন আইয়াশ এবং উহার অন্যতম রাবী আবূ হাসীনের নাম হইতেছে— উসমান ইব্ন আসিম । হযরত জিবরাঈল (আঃ) এবং নবী করীম (সাঃ) পরস্পর পরস্পরকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিয়া শুনাইতেন। কুরআন মজীদের কোন কোন আয়াত রহিত (মানসূখ) হইয়া যাইবার পর উহা যেইরূপে বলবৎ ছিল, সেইরূপেই যেন উহা নির্ভুল ও নিশ্চিতভাবে মাহফূজ ও সংরক্ষিত থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই তাঁহারা উহা তিলাওয়াত করিয়া পরস্পরকে শুনাইতেন। এই কারণেই সর্বশেষ বৎসরে তাঁহারা উহা দুইবার তিলাওয়াত করিয়া পরস্পরকে শুনাইয়াছিলেন। হযরত উসমান (রাঃ) কুরআন মজীদের সর্বশেষ আবৃত্তি অনুযায়ী উহাকে সংকলিত করিয়াছিলেন। তিনি রমযান মাসেই উহা সম্পন্ন করিয়াছিলেন। কারণ, উক্ত মাসেই নবী করীম (সাঃ)-এর প্রতি সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হইয়াছিল । আর এই কারণেই রমযান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন মজীদ, তিলাওয়াতে কঠোর পরিশ্রম করিতেন। ইতিপূর্বে আমি এই সম্পর্কে আলোচনা করিয়াছি।