১৯৭৮-এর ১৬ এপ্রিল ‘সানডে’ পত্রিকায় জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়্র)-এর একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটিতে জাদুকর বলেছিলেন, ইউরি গেলারের চামচ বাঁকানোর মূলে রয়েছে দৃষ্টি-বিভ্রম (Optical illusion)। অবশ্য, এই দৃষ্টিবিভ্রম ঠিক কেমনভাবে ঘটানো হয়ে থাকে তার উল্লেখ ছিল না। স্বভাবতই অতীন্দ্রিয় শক্তিতে বিশ্বাসী অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন –ইউরি গেলারকে কেউ একজন ভন্ড বললেই তিনি ভন্ড হয়ে যাবেন না। হয় শ্রীসরকার একটা চামচ বাঁকিয়ে দেখান, অথবা কৌশলটা জানান, যাতে যে কেউ পরীক্ষা করে তাঁর সত্যতার প্রমাণ পেতে পারে।

আমি অবশ্য যে ভিডিও ক্যাসেট দেখেছি, তাতে কিন্তু এটা স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছিল, ইউরির চামচ বাঁকানোর পিছনে Optical illusion –এর কোনও ব্যাপারই ছিল না। কারণ, দর্শকরা বাঁকানো চামচটি হাতে ধরে পরীক্ষা করছিলেন। অর্থাৎ, চামচটি বাস্তবিকই বেঁকেছিল। দৃষ্টি বিভ্রম সৃষ্টি করে সোজা চামচকে বাঁকা দেখাবার চেষ্টা করেননি ইউরি।

ইউরির চামচ বাঁকানোর ক্যাসেট দেখার সঙ্গে সঙ্গে ওর মানসিক শক্তির গোপন রহস্য আমরা কাছে গোপন থাকেনি। তবে অবাক হয়েছি এই ভেবে –কত সাধারণ একটা বিজ্ঞানের সূত্রকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান পেশার মানুষদেরও ঠকিয়ে আসছিলেন।

আমি এখন যে নিয়মে চামচ বাঁকানোর কথা বলছি, তাতে দৃষ্টিবিভ্রমের ব্যাপার নেই। একটা টেবিলের একপ্রান্ত টেবিলের একপ্রান্তে থাকব আমি, অন্যপ্রান্তে একটা বেদির মতো

জেমস র‍্যান্ডি

স্ট্যান্ডের ওপরে দাঁড় করানো থাকবে একটা ছুড়ি বা চামচ। টেবিল কোনওভাবে স্পর্শ না করেই আমি বসব। টেবিলে কোনও কৌশল  নেই। সেটা থাকবে অতি সাদা-মাটা। ঠিক মতো মনঃসংযোগের জন্যে ছুরি বা চামচের ওপর তীব্র আলো ফেলা হবে, এতে দর্শকদেরও দেখতে সুবিধা হবে। আলো আমার বা দর্শকদের চোখকে যাতে পীড়া না দেয়, তাই আলকগুলো ছুরি বা চামচের ওপর খুব কাছ থেকে ফেলা হবে। অর্থাৎ, ইউরি গেলারের কায়দাতেই দেখবে।

একসময় দেখবেন, ছুরি বা চামচটা বেঁকে গেছে। নিজের হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, সত্যিই বেঁকেছে, আলোর সাহায্যে দৃষ্টিবিভ্রম ঘটানো হয়নি।

এখানে কৌশলটা কিন্তু টেবিল, রঙ্গিন আলোর কারসাজিতে নেই, রয়েছে এই ছুরি বা চামচেতে। ছুরির ফলা বা চামচের হাতলটা তৈরি করতে হবে দুটো ভিন্ন-ভিন্ন ধাতুর পাতলা পাত জুড়ে। ধরুন, লোহা ও তামার দুটো পাতলা পাত জুড়ে তৈরি করালেন। এবার দুটো জোড়া দেওয়া পাত যেন দেখা না যায় তাই প্রয়োজন গ্যালভানাইজ করে নেওয়া অর্থাৎ একটা নিকেল কোটিং দিয়ে নেওয়া।

গেলার চামচ বাঁকিয়েছেন

চামচ বাঁকাবার এই কৌশল আমি জানাবার পর পৃথিবী জুড়ে হই-হই পড়ে যায়। পৃথিবীর বহু দেশের টিভি এই কৌশলটি দেখায় এবং সঙ্গে দেখায় গেলারের বুজরুকি যে ধরেছে, সেই আমাকে। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার অস্ট্রেলিয়ার জায়েন্ট স্ক্রিনে ইউরির বুজরুকি ফাঁস ও আমাকে দেখে ফোনে অভিনন্দন জানান।

তীব্র আলোর খুব কাছে চামচ বা ছুড়িটা দাঁড় করিয়ে রাখলে এতগুলো আলোর তাপ উত্তপ্ত করবে। উত্তাপে বস্তু মাত্রেই প্রসারিত হয়। ছুড়ির ফলার বা চামচের হাতলের লোহার পাত এবং তামার পাত প্রসারিত-হতে থাকবে। একই তাপে ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের প্রসারণ ভিন্ন-ভিন্ন রকমের। তামার প্রসারণ ক্ষমতা লোহার চেয়ে বেশি। অতএব লোহার পাতের সঙ্গে জুড়ে থাকা তামার পাত লোহার আগে বাড়াতে গিয়ে লোহার পাতকে বাঁকিয়ে দেয়, ফলে ছুড়ি ধনুকের মতো বেঁকে যায় বা হ্যান্ডেল ও মাথার জোড়ার কাছটা মুচড়ে যায়।

ভূমিকা

কিছু কথা

নতুন ‘কিছু কথা’

১. অধ্যায়ঃ এক

২. অধ্যায়ঃ দুই

৩. অধ্যায়ঃ তিন

৪. অধ্যায়ঃ চার

৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ

৬. অধ্যায়ঃ ছয়

৭. অধ্যায়ঃ সাত

৮. অধ্যায়ঃ আট

৯. অধ্যায়ঃ নয়

১০. অধ্যায়ঃ দশ

১১. অধ্যায়ঃ এগারো

১২. অধ্যায়ঃ বার

১৩. অধ্যায়ঃ তেরো

১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ

১৪.১ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো

১৪.২ খড়্গপুরের সেই পীর

১৪.৩ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার

১৪.৪ সাধুজির স্টীমার খাওয়া

১৪.৫ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার

১৪.৬ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো

১৪.৭ ধাতু বাঁকার আসল রহস্য

১৪.৮ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না

১৪.৯ এক ঝলকে ইউরি

১৫. অধ্যায়ঃ পনের

১৬. অধ্যায়ঃ ষোল

১৭. অধ্যায়ঃ সতেরো

১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো

১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ

২০. অধ্যায়ঃ কুড়ি

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x