খোঁজ

আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে খড়গপুরে। থাকতাম ট্রাফিক সেটেলমেন্টের রেল কোয়ার্টারে। পাঁচমিশেলি শহর। গোটা ভারতের একটা ছোট সংস্করণ বললে বোধহয় ঠিক হয় । সন্ধে হলে মা সামনের জাফরি ঘেরা বারান্দায় বসে গান গাইতেন, ‘ভব সাগর….’। ঈশ্বর আরাধনা। আমি আর বোনেরা মা’র সঙ্গে গলা মেলাতাম । আমাদের কোয়ার্টারে একটা পুজোর ঘর ছিল। ওটা স্টোর রুমেরও কাজ করতো। বৃহস্পতিবার মা সুর করে লক্ষ্মীর ব্রত পড়তেন। পুজো শেষে বাতাসা বা গুঁজিয়া পেতাম ।

পামেলা ছিলেন প্রতিবেশী। বয়সে আমার চেয়ে সামান্য বড়। সুঠাম চেহারা। গায়ের রঙ কালো হলেও চক্‌চকে। মুখে সব সময় লেগে থাকতো হাসি। কেরালিয়ান খ্রিস্টান। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তেন। স্কুল বাসে পড়তে যেতেন। বড়দিনের অনেক আগে থেকেই ঘর সাজাবার ধুম পড়ে যেত। বড়দিনে আমরা পাড়ার অনেকেই ওদের কোয়ার্টারে সারারাত ধরে হইহই করতাম। গ্রামোফোনের ইংরেজি গানের সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা, বড়রা সবাই নাচতাম, খেতাম। এক বড়দিনে পামেলাদি আমাকে প্রথম মদ খাইয়েছিলেন।

আমাদের আর এক প্রতিবেশী ছিলেন প্রণয় বড়ুয়া। আমি যখন ফাইভে বড়ুয়াদা তখন নাইনে। দারুণ ফুটবল খেলতেন। আমাদের স্কুলের ছাত্রদের তিন হিরো ছিলেন বড়ুয়া-পুলক-ছোট্‌কা । তিনজনেই ফুটবল হিরো। পরে একসঙ্গে বি এন আর ফুটবল টিমে দাপিয়ে খেলেছেন ওঁরা। বড়ুয়াদা টিপটপ বাবু। টকটকে গায়ের রঙ। আমার সেরা হিরো। ওঁর কোয়ার্টারের ঠাকুর ঘরে হাতখানেক লম্বা একটা পিতলের বুদ্ধমূর্তি ছিল। সন্ধের সময় অনেকগুলো মোম জ্বলতো বুদ্ধমূর্তির সামনে। ওই ঘরে গেলে মনে হতো, বড় বেশি থমথমে পরিবেশ। নীলতারার মূর্তি ও-বাড়িতেই প্ৰথম দেখি।

বৌদ্ধরা নাকি তান্ত্রিক? তুক্-তাক করতে জানে। পাড়ার লোকেরা ওঁদের কোয়ার্টারে

ঢুকতে ভয় পেতো।

বিপ্লব গাঙ্গুলি আমার সহপাঠী আর খেলার সঙ্গী ছিল। আমাদের লাগোয়া ওদের কোয়ার্টার। সেদিন আমাদের বাড়ি ইলিশ এসেছে। ইলিশ ভাপা আর ইলিশের ঝোলের গন্ধে ঘর ম-ম। খড়গপুরে ইলিশ তেমন মেলে না। এই রুপোলি ইলিশ এসেছে কোলাঘাট থেকে। ঘণ্টা কয়েক আগে ধরা। সন্ধেয় বিপ্লব এসে ইলিশের গন্ধ পেয়ে বায়না ধরলো মাছ ভাত খেয়ে যাবে। আমার মা-বাবা ভীষণ রকমের অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। বামুনের ছেলেকে ভাত খাওয়ানোটা কতটা গর্হিত কাজ হবে ভেবে পীড়িত হচ্ছিলেন। বিপ্লবের জ্যাঠা পুরোহিতগিরি করতেন। তাই সেদিন আমাদের বাড়ি বিপ্লবের ভাত-মাছ খাওয়া হয়নি। আমরা হিন্দু, বিপ্লবও হিন্দু। তারপরও একজনের রান্না আর একজন খেতে পারবে না। হিন্দু ভগবানের এই বিধান সেদিন একটুও ভাল লাগেনি আমার ।

মুমতাজ আমাদের প্রতিবেশী। আমার বন্ধু। উর্দুভাষী মুসলমান। ওর বাবা মেল গাড়ির গার্ড। মুমতাজ আর ওর মা-বাবা ভাঙা বাংলা বলতে পারতেন। কোয়ার্টারে রেডিওগ্রাম ছিল, সোফা ছিল। ওদের বাড়িতে গেলে গান শুনতাম বেশি, আড্ডা হতো কম। গজল, খেয়াল শোনার কানেখড়ি ওখানেই। মুমতাজ সকালে পামেলাদির স্কুল বাসে স্কুল যেত। ওকে দেখলে মনে হতো নায়িকা নুতন-এর কিশোরী বেলা। ওদের কোয়ার্টারেই প্রথম গরুর মাংস খেলাম। মুমতাজের মা আমাকে বার কয়েক শিখিয়ে-পড়িয়ে দিলেন, “কাউকে বোলো না গরুর মাংস খেয়েছো। আর আমরা খাইয়েছি, এটাও বোলো না।”

সেদিনই মাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, হিন্দুরা গরুর মাংস খেলে জাত যায় ৷ –“জাত যায় মানে ? ”

-“মানে তুই আর হিন্দু থাকবি না।”

আমি হিন্দু হলাম-ই বা কবে? হিন্দুত্ব চলে যাওয়ার পর আমি এখন কোন ধর্মের মানুষ? তবে কী আর প্রতি সন্ধ্যায় মা-বোনেদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দেবতার উদ্দেশে উপাসনা গান করা চলবে না?

আমাদের পাড়াতেই একটি পরিবার থাকতেন। তাঁরা সন্ধে বেলায় সমবেত উপাসনা গান গাইতেন। একটু বেশির পরিশীলিত গান। রবিবাবুর গান। ওঁদের সঙ্গে তেমন পরিচয় ছিল না। শুনেছিলাম, ওঁরা ব্রাহ্ম। গরু, শুয়োর সবই খান। আবার ভগবানের উপাসনা গান করেন। গরু, শুয়োর খেলে ওদের ভগবান রাগ করেন না, আমাদের ভগবান কেন ত্যাজ্যপুত্র করে দেন? গরুর মাংস খাওয়ার পরও আমি শরীরে মনে আমিই আছি, কিন্তু আমি নাকি আর হিন্দু নেই? আমি যদি গরু খাবার খবরটা কাউকে না বলি? আমি আমাদের ঠাকুরঘরে লক্ষ্মীকে ছুঁয়ে দিই? লক্ষ্মী কি মুসলমান হয়ে যাবেন? একদিন ছুঁয়েও দিলাম, তারপরও দেখি লক্ষ্মী দিব্বি পুজো নিয়ে যাচ্ছেন।

একদিন মুমতাজকে জিজ্ঞেস করলাম, “হ্যাঁরে আমি কি মুসলিম হয়ে গেছি?” মুমতাজ বলেছিল, “মুসলিম হওয়া অতো সোজা নয়। মসজিদে গিয়ে অনেক কিছু করতে হয়।”

এই সময় আমাকে একটা প্রশ্ন মাঝে মাঝে খোঁচা দিচ্ছিল—এখন আমার ধর্ম কী? আমার মা-বাবা হিন্দু বলে আমি হিন্দু হয়েই জন্মেছি। আমাকে হিন্দু দেবতারই পুজো করতে হবে? আমার ইচ্ছের কোন দাম নেই?

স্কুলের মাস্টারমশাই শুভেন্দু রায় একদিন খড়েগশ্বর মন্দিরের বাগানে বসে আমার মাথার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বললেন, “ধুর বোকা, কোনও কিছু খেলে ধর্ম পাল্টে যায় না। আই মিন ‘প্রপার্টি’ বা গুণ পাল্টে যায় না। ধর্ম বলতে যদি ‘রিলিজিয়নের’ কথা বলো, তবে বলবো রিলিজিয়ান নিজেই তো হাজার হাজার বছর ধরে পাল্টাতে পাল্টাতে আসছে। ধর্মগুলো মানুষেরই তৈরি, তাই ধর্মে ধর্মে এত নিয়ম কানুনের পার্থক্য। গোমাংস খাওয়া অধর্ম হলে সব ধর্মবিশ্বাসীদের কাছেই অধর্ম হওয়া উচিত ছিল। বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলিম ইত্যাদি ধর্মগুলো এসেছে দেড় থেকে আড়াই হাজার বছর আগে। তার আগে রিলিজিয়ান চিন্তা কোথায় ছিল? আদিম মানুষদের কোনও রিলিজিয়নই ছিল না, কোনও ঈশ্বর বিশ্বাসও ছিল না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে—এমনটা ভাবার মত চিন্তার উন্নতি এক সময়ের আদিম মানুষদের মধ্যে ছিল না। রিলিজিয়নের ধারণা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখনও সেই চাপিয়ে দেওয়া চিন্তার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারিনি আমরা। তাই গোরুর মাংস খেলে তোমার জাত যায়, শুয়োরের মাংস খেলে মুমতাজের। ওইসব চিন্তার জঞ্জাল মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”

ঝেড়েই ফেললাম। আর তাইতো চেপে বসলো উপাসনা ধর্মের উৎপত্তি খোঁজার ইচ্ছে।

 

‘ধর্ম’ : সংজ্ঞায় গোলমাল

বাংলা ভাষায় ‘ধর্ম’ শব্দটির অর্থ আদৌ প্রাঞ্জল নয়। বরং সত্যি বলতে কী, বেশ তালগোল পাকানো। অভিধানে শব্দার্থ খুঁজতে গেলে দেখবেন ‘ধর্ম’ শব্দটি নানারকম অর্থ বহন করে। ‘ধর্ম’ অর্থে গুণ, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব। উদাহরণও মিলবে। যেমন আগুনের ধর্ম দহন, তরোয়ালের ধর্ম তীক্ষ্ণতা। আবার ‘ধর্ম’ মানে—সাম্প্রদায়িক ঈশ্বর উপাসনা রীতিনীতি, ঈশ্বর ও পরলোকের অস্তিত্বে বিশ্বাস। উদাহরণ রয়েছে। যেমন—হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, বৈষ্ণব ইত্যাদি ঈশ্বর উপাসনা পদ্ধতি ও পরকাল বিষয়ে বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠা সম্প্রদায় ।

তাহলে মানুষের ধর্ম কী? আমরা কি মানুষের গুণ বা বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘মানবতা’ বলব? নাকি ঈশ্বর উপাসনা নির্ভর বিভাজন মেনে হিন্দু, মুসলিম ইত্যাদিকে মানুষের ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করব? যেসব মানুষ আত্মা-পরমাত্মা-পরলোক ইত্যাদির অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, সে’সব মানুষের বিলকুল ‘ধর্ম’ই নেই বলাটা কি ঠিক হবে? প্রত্যেক বস্তু ও প্রাণীর যখন ‘ধর্ম’ রয়েছে, তখন মানুষের ধর্ম নেই—ভাবাটা কি

ঠিক হবে?

বাংলা ‘ধর্ম’ শব্দটির প্রচলিত সংজ্ঞাটি ঈশ্বরে বিশ্বাসী, অধ্যাত্মবাদীদের সৃষ্টি। একসময় মানুষ তো বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। আজও কি আমরা সেই ভুল আঁকড়ে বসে আছি? ভুল শুধরে এগোনোটাই প্রগতির ধর্ম। আসুন না, ‘ধর্ম’ শব্দের প্রচলিত সংজ্ঞা নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক।

কোনও কিছুর সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় সেই সমাজে সেই সময়কার মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার ওপর ভিত্তি করে।

আমরা পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পাব, সংজ্ঞা ঠিক করে দিত সেই সময়কার চিন্তায় এগিয়ে থাকা মানুষরা। অন্যরা তা মেনে নিত ।

সংজ্ঞা অপরিবর্তনীয় নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে

মানুষের চিন্তা পাল্টেছে, সমাজ পাল্টেছে,

সেইসঙ্গে পাল্টে গেছে অনেক

কিছুর সংজ্ঞা।

‘সৎ’ ও ‘সতী’র সংজ্ঞা পাল্টাতে দেখেছি আমরা। যুধিষ্টির ‘সত্যবাদী’, ‘ধর্মরাজ’ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। জানি না, ইন্দ্রপ্রস্থের বিপুল বৈভবের উৎসমুখ কোথায় পঞ্চপাণ্ডব গোশালার গোধনদের পরিচর্যা করে বা জমিতে হাল চাষ করে এই সম্পদ আহরণ করেছিলেন, এমনটা আমরা কোনও কাহিনীতে পাইনি। তবে কি আর পাঁচজন রাজার মতই প্রজাদের শ্রমের উৎপাদনে থাবা বসিয়ে এই সম্পত্তি সৃষ্টি? তারপরও যুধিষ্ঠির সৎ? দ্রোণকে অস্ত্রত্যাগ করিয়ে হত্যা করতে ছলনার আশ্রয় নেওয়ার পরও তিনি সৎ? জতুগৃহে পাঁচ নিষাদ ও এক নিষাদীকে আশ্রয় দিয়ে, নিশ্চিন্ত ঘুমের কালে তাদের জীবন্ত দগ্ধ করার জন্য ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েও তিনি সৎ? দ্রৌপদীকে সম্পত্তি ধরে নিয়ে তাঁকে পণ রেখে জুয়া খেলার পরও তিনি সৎ? আজকের এগিয়ে থাকা সমাজের কাছে এগুলো উঠে আসা প্রশ্ন।

‘সতী’ কারা? এ বিষয়ে মনুর বিধান বলছে, “স্বামী দুঃশীল, পরনারীতে উপগত হয়, বিদ্যাদি গুণবর্জিত হলেও সতী স্ত্রীর কর্তব্য সেই স্বামীকে উপেক্ষা না করে দেবতার মত সেবা করা (মনুসংহিতা, ৫ম অধ্যায়, শ্লোক ১৫৪)।” এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, মনুর বিধানই আমাদের সনাতন হিন্দুধর্মের বিধান। এবং যে স্ত্রী এই বিধান একটুও অমান্য করত সে ‘অসতী’ বলে সমাজে নিন্দিত হত।

‘সতী”র মনু-সংজ্ঞা জানার পর আজকের সমাজের এগিয়ে থাকা মানুষদের মনে হতেই পারে, মেরুদণ্ডহীন, ব্যক্তিত্ব শূন্য, ক্রীতদাসী মানসিকতা সম্পন্ন, অন্যায়কে প্রশ্রয়দানকারী এক কলঙ্কিতা বিবাহিতাকে একসময় ‘সতী’ বলা হত। বউয়ের প্রতি একইভাবে ক্রীতদাস মানসিকতার পুরুষকে কেন ‘সৎ’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হল না? কেন তাদের ‘স্ত্রৈণ’ বলে নিন্দা করা হয়?

‘ব্যভিচারিণী’ বলতে মনু ছয়টি ব্যাভিচার দোষের নারীকে চিহ্নিত করেছেন। দোষ ছ’টি হল—স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানো, অসময়ে ঘুমনো, নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে দীর্ঘদিন থাকা, মদ্যপান, খারাপ পুরুষের সংসর্গ (মনুসংহিতা, অধ্যায় ৯, শ্লোক ১৩)।

অর্থাৎ যাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে, যাঁরা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, নাটক বা চলচ্চিত্রের পরিচালিকা বা অভিনেত্রী অথবা টপ একজিকিউটিভ, জীবিকার স্বার্থে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা সনাতন হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা মত ‘ব্যভিচারিণী’। যাঁদের পেশাগত কারণে ঘুমোবার সময়টা রাতের চেয়ে দিনেই বেশি প্রশস্ত, অথবা যাঁরা পড়াশুনো বা গবেষণার কাজে বিদেশে আত্মীয়-পরিচিতের বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন, সেই … প্রত্যেকটি নারীই ‘ব্যভিচারিণী’, নিন্দনীয় চরিত্র। এই ব্যভিচারিণীর সংজ্ঞা কি বর্তমান সমাজজীবনের প্রেক্ষিতে মেনে নেওয়া যায় ?

মদ্যপান দোষণীয় হলে তা নারী-পুরুষ নির্বিশেষেই দোষণীয় হওয়া উচিত। খারাপ পুরুষের সঙ্গ, নারী-পুরুষ দুয়ের বেলাতেই খারাপ বলে চিহ্নিত হওয়া উচিত । এখানে কিছু খঙ্কা রয়েছে। পুরুষ সঙ্গ বলতে মনু যদি দেহমিলন বোঝাতে চেয়ে থাকেন, তবে খারাপ বরটির সঙ্গে বউ কোন নীতিতে দেবতাজ্ঞানে মিলিত হবে?

ছেলেবেলায় পড়েছি, হর্ষবর্ধন বিশাল মাপের ‘দানবীর’ ছিলেন। চার বছর

অন্তর কনৌজের ধর্মমেলায় যেতেন। সেখানে রাজকোষ উজাড় করে

দান করতেন। শেষে পরিধানের পোশাকটি দান করে, বোনের

দেওয়া বস্ত্র পরে প্রাসাদে ফিরতেন। চার বছরের মধ্যে

আবার তাঁর শূন্য রাজকোষ ভরে উঠত কোন

ম্যাজিকে? যাদের দারিদ্র ঘোচাতে দান

করা, তাদের শুষেই কী আবার

রাজকোষ পূর্ণ করার খেলা

খেলতেন না ‘দানবীর’

সম্রাট ?

আজকের এগিয়ে থাকা মানুষদের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্ঘাতে ‘দানবীর’-এর সংজ্ঞা বিপন্ন বোধ করছে।

অনেকদিন আগে কে যেন প্রশ্ন তুলেছিলেন, “হুজুরের প্রতি প্রেমময় ভারতরত্নরা যদি ‘দেশপ্রেমিক’ হন, তাহলে ‘দেশদ্রোহী’ কারা?’ ‘শুদ্ধতাবাদী’রা রে-রে করে উঠেছিলেন।

চলচ্চিত্রে, সাহিত্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বার-বার উঠে এসেছে নৈরাশ্যতাড়িত, বিকারগ্রস্ত, যৌন-উচ্ছৃঙ্খল, খুনি-মানসিকতার চরিত্র হিসেবে। শোষণযুক্ত রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংগ্রামে জান বাজি রাখা জনগোষ্ঠীকে যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’র সম্মান জানানো উচিত, সমাজবিজ্ঞান-ই আমাদের তা শিখিয়েছে।

‘ধর্ম’ শব্দের যে সংজ্ঞা অধ্যাত্মবাদী দর্শন ঠিক করে দিয়েছিল, সেই সংজ্ঞা কি এখনও আমাদের মেনে নেওয়া উচিত? প্রশ্নটা উঠেছে এখানেই যে, অধ্যাত্মবাদ কি আদৌ দর্শন? দর্শন না হলে অধ্যাত্মবাদী দর্শনের চোখে আমরা ‘ধর্ম’কে সংজ্ঞায় বাঁধব কীভাবে?

error: Content is protected !!