দ্বিতীয় পর্যায়

আমিঃ আচ্ছা শুকদেববাবু, আমি কয়েকদিন আগে আপনার কাছে গিয়েছিলাম, আমার দুই পরিচিতকে নিয়ে। তাঁদের দু’জনের আর আমার হাত আপনাকে দেখিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে একজন দীপক ভট্টাচার্য, একজন তপন চৌধুরী, আর একজন তো আমি নিজে। এঁদের প্রত্যেকের সম্বন্ধে চারটে করে প্রশ্ন রেখেছিলাম । এখন সেগুলোকে নিয়ে আমরা বরং আলোচনা করি।

দীপকবাবুর মা-বাবা দু’জনেই কি বেঁচে আছেন ?

শুকদেবঃ আমার বিচার-বিবেচনায় তাঁর পিতা মৃত বুঝায় ।

আমিঃ লেখাপড়াতে দীপকবাবু কেমন ছাত্র ছিলেন ?

শুকদেবঃ মোটামুটি ভালই ছিলেন। সাধারণত ডিগ্রি হিসাবে মাস্টার ডিগ্রির কাছাকাছি বলে হাতের রেখায় দেখা যায়।

আমিঃ ভাল ছিলেন বলতে কি ধরনের ভাল? ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশনে যাওয়ার মত? ঠিক কি ধরনের ভাল?

শুকদেবঃ না, যেমন ধরুন অতি ভাল নয়, এই মিডিয়াম যাকে বলে।

আমিঃ অতি ভাল নয়, মাঝামাঝি যাকে বলে?

শুকদেবঃ হ্যাঁ।

আমিঃ এর জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা কী বলে আপনার মনে হয়েছে?

শুকদেবঃ দেখুন, প্রশ্নটা কঠিন থাকলেও আমি বলতে বাধ্য, মানুষের জীবন অনেক ঘটনাবহুল । এই ঘটনাবহুল জীবনে কোনটা দুঃখময় ঘটনা এটা বলা জ্যোতিষশাস্ত্রে শুধু নয়, এমন কী অধ্যাত্মিকশাস্ত্রেও বলা কঠিন।

আমিঃ আচ্ছা। আমি চতুর্থ প্রশ্নে যাচ্ছি, বর্তমানে ওর মোট আয় কত বলে আপনার মনে হলো ?

শুকদেবঃ নিয়ারলি প্রায় ধরুন দু’হাজার থেকে আড়াই হাজারের মত।

আমিঃ এখানে উপস্থিত রয়েছেন দীপক ভট্টাচার্য ও তপন চৌধুরী। দীপকবাবু বয়সে তরুণ। কাজ করে স্টিল অ্যাথারিটি অফ ইন্ডিয়ার ১০ নম্বর ক্যামাক স্ট্রিট কলকাতা, ডেপুটি চীপ মার্কেটিং ম্যানেজার পদে।

দীপক, আপনি বলুন তো, আপনার মা-বাবা দু’জনেই বেঁচে আছেন?

দীপকঃ হ্যাঁ, দুজনেই বেঁচে আছেন ।

আমিঃ আপনি কী লেখাপড়ায় মোটামুটি পর্যায়ের ছাত্র ছিলেন?

দীপকঃ না, ভালই ছিলাম।

আমিঃ ভাল মনে কী ধরনের? আমি শুনেছি আপনি ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যান্ড করা ছেলে ছিলেন।

দীপকঃ হ্যাঁ।

আমিঃ আপনার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা কী?

দীপকঃ আমি ১৯৬৭ সালে এক দুর্ঘটনায় পড়ে, বি. এস. সি. পার্ট ওয়ানের পরীক্ষায় বসতে পারিনি। এটাই আমার সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।

আমিঃ বর্তমানে আপনার মোট আয় কত ?

দীপকঃ প্রায় হাজার চারেক টাকা ।

আমিঃ এবার তপন চৌধুরীর সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন রাখছি। তপন চৌধুরীর হাত তো আপনি আগেই দেখে নিয়েছেন। বর্তমানে ও কোথায় কাজ করে? মানে, ওর পেশা কি ধরনের জায়গাতে হতে পারে ?

শুকদেবঃ এই পরিচালনামূলক কাজ করেন, ফ্যাকট্টিতে; ওভারসিয়ার যাকে বলি আর কী ।

আমিঃ তপনবাবু বিয়ে করেছেন। বিয়েটা কি সম্বন্ধ করে, না প্রেম করে বলে আপনার ধারণা ?

শুকদেবঃ দেখুন, সম্বন্ধ করেই করেছেন। কিন্তু মেয়েটি পূর্ব পরিচিতই, আমরা বলব।

আমিঃ লেখাপড়া কতদূর হয়েছে?

শুকদেবঃ উচ্চ ডিগ্রিতে বিঘ্ন হবে। যেমন আই. এ. পাশ, বি. এ. পাশ বা বি. কম. পাশ করল, কিন্তু হাতের চেহারটা কিন্তু প্রাকটিক্যাল। তাই কর্মটাকে প্রাকটিক্যালই করতে হবে।

আমিঃ শেষ প্রশ্ন, বর্তমানে তপনবাবুর আয় কেমন ?

শুকদেবঃ দেড় হাজার থেকে দু’হাজার টাকা।

আমিঃ তপনবাবু, আপনাকে প্রশ্ন করার আগে আপনার সম্বন্ধে বলে নিই। তপনবাবু বয়সে তরুণ। কাজ করেন স্টেট ব্যাঙ্কের মেন ব্রাঞ্চে অফিসার পদে। সুতরাং শুকদেববাবুর প্রথম উত্তর ফ্যাকটারিতে কাজ করার ব্যাপারটা মেলেনি।

তপন, আপনার বিয়ে কি সামাজিক প্রথা মত হয়েছিল ?

তপনঃ না ।

আমিঃ আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ?

তপনঃ বি. কম।

আমিঃ বর্তমানে আপনার মোট আয় কেমন ?

তপনঃ তিন হাজার ।

আমিঃ আমার শেষ প্রশ্ন যার সম্পর্কে রাখছি, সে, আমিই স্বয়ং। আমি কত বছর বয়সে বিয়ে করেছি বলে আপনি দেখলেন ।

শুকদেবঃ হাতের রেখাতে আঠাশ থেকে তিরিশের মধ্যে বিয়ে করেছেন বোঝা যায়।

আমিঃ আমার মা-বাবা দু’জনেই কি জীবিত আছেন?

শুকদেবঃ পিতা মৃত। মা জীবিত।

আমিঃ কত বছর আগে মারা গেছেন?

শুকদেবঃ প্রায় আট থেকে দশ বছর আগে।

আমিঃ কবে থেকে আমার চাকরি-জীবন শুরু হয়েছে?

শুকদেবঃ পঁচিশ থেকে সাতাশ বছরের মধ্যে।

আমিঃ আমার নিজের বাড়ি আছে কী?

শুকদেবঃ হ্যাঁ, নির্ঘাৎ আছে। এটা হাত থেকেই বোঝা যায় ।

আমার বিষয়ে জানাই–আমি বিয়ে করেছি চব্বিশ বছর বয়সে। মা-বাবা দু’জনে জীবিত। চাকরি করছি একুশ বছর বয়স থেকে। আমার নিজের বাড়ি কেন, এক টুকরো জমিও নেই।

জ্যোতিষসম্রাট ভূগু-আচার্য ওরফে শুকদেব গোস্বামীকে জাতক পিছু চারটি করে প্রশ্ন অর্থাৎ মোট ৩ ×৪ =১২টি প্রশ্ন করেছিলাম। জাতকদের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে ১১টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন পুরোপুরি ভুল। তপন চৌধুবীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নটির ক্ষেত্রে তিনটি উত্তর দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ঠিক হয়েছিল। অর্থাৎ ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ১১ টির উত্তরই তিনি ভুল দিয়েছিলেন।

চারজনের জন্ম সময় অনুষ্ঠান রেকর্ডিং-এর কিছুদিন আগেই দিয়ে এসেছিলাম জ্যোতিষসম্রাট ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী এবং ‘এ-যুগের খণা’ পারমিতা’কে।

ওই চারজন জাতক পিছু চারটি করে প্রশ্ন, অর্থাৎ ৪ × ৪ = ১৬টি মোট প্রশ্ন করেছিলাম। এবার আবার আপনাদের প্রচারিত বেতার অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছি।

আমিঃ কলকাতার চারজন মানুষের জন্ম সময় এবং কিছু প্রশ্ন আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিষী অসিতকুমার চক্রবর্তী এবং পারমিতাকে।

অসিতবাবু, আপনাকে চারজন জাতকের জন্ম সময় এবং জন্ম স্থান জানিয়েছিলাম । এঁদের সম্বন্ধে চারটি করে প্রশ্ন রেখেছিলাম । উত্তরগুলো তো আপনি নিয়ে এসেছেন দেখছি ।

প্রথম জাতকের জন্ম সময় ১৯৫৩ সালের ১৩ জুন, সকাল ৫টা ৫৩ মিনিটে কলকাতায়। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, জাতক জীবিত? না মৃত?

অসিতকুমারঃ জন্মসময়ে গ্রহদেব অবস্থান দেখে মনে হয় এর মৃত হওযার সম্ভবনাই খুব বেশি ।

আমিঃ দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, লেখাপড়ায় কেমন ছিলেন?

অসিতকুমারঃ স্নাতকমান হওয়ার সম্ভবনা আছে।

আমিঃ মোটামুটি? না ভাল?

অসিতকুমারঃ মোটামুটি, একেবারেই মোটামুটি।

আমিঃ কর্মজীবন কেমন ছিল?

অসিতকুমারঃ কর্মজীবন ভাল বা স্থায়ী ছিল না।

আমিঃ বিয়ে করেছিলেন কী ?

অসিতকুমারঃ বিয়ে সম্ভবত হয়নি। কিন্তু ১৯৮৪ সনে যোগ ছিল।

আমিঃ পারমিতাদেবী, প্রথম জাতকের জন্ম সময় তো আপনাকে ওটাই দিয়েছি। অর্থাৎ ১৩/৬/১৯৫৩ সালের সকাল ৫টা ৫৩ মিনিটে কলকাতায় ।

আমার প্রথম প্রশ্ন, এই জাতকের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন বলে আপনার মনে হল?

পারমিতাঃ এর তেমন কিছু শিক্ষাগত বিশেষ যোগ্যতা নেই ।

আমিঃ পেশা কী ?

পারমিতাঃ পৈতৃক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসা করেন ।

আমিঃ আর্থিক অবস্থা কেমন ?

পারমিতাঃ আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল। আয়ের অবস্থা কোনও মাসেই স্থির নয়। বার্ষিক আয় মোটামুটি ৫০ হাজার টাকার ওপরে।

আমিঃ কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন বলে মনে হয়?

পারমিতাঃ অনেক সময় দেখা যায়, হাতে বা ছকে বিবাহের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায়, বিয়ে হয়নি। একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন, এই জাতক বিয়ে না করলেও কোনও মহিলার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।

প্রথম জন্ম তারিখটি ডঃ সুভাষ সান্যালের। চাকরি করেন আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্রে। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। স্থায়ী চাকুরে।

আমিঃ সুভাষ, আপনি কোন বিষয়ে ডক্টরেট ?

সুভাষঃ আমার বিষয় ছিল ফিজিওলজি।

আমিঃ আপনার বার্ষিক আযের মোটামুটি অংকটা কী ?

সুভাষঃ এখনও পর্যন্ত ইনকাম ট্যাক্সের রেঞ্জে পৌঁছতে পারিনি। (অর্থাৎ বার্ষিক ২০ হাজার টাকার মত। এবং আয় স্থায়ী ।)

আমিঃ বিয়ে করেছেন তো ?

সুভাষঃ নিশ্চয়ই ?

আমিঃ কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন ?

সুভাষঃ আমার বিয়ে হয়েছিল ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে ।

আমিঃ দু’নম্বর জাতকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৩ মে, সকাল ১১টা ১ মিনিটে কলকাতায়,

আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, লেখাপড়ায় কেমন ছিলেন ?

আসিতকুমারঃ বিদ্যাস্থান উত্তম। ডক্টরেটও হতে পারেন ।

আমিঃ দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, কর্মজীবন কেমন?

আসিতকুমারঃ কর্মজীবন খুব ভাল। উচ্চ এবং সম্মানজনক পদে, শিক্ষামূলক এবং সাহিত্যমূলক হতে পারে ৷

আমিঃ তৃতীয় প্রশ্ন, জাতক কি বিদেশে গিয়েছিলেন ?

আসিতকুমারঃ একাধিকবার ।

আমিঃ ‘বিদেশ’ বলতে এখানে আমি কিন্তু বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটানকে বোঝাতে চাইছি না ।

আসিতকুমারঃ দূরদেশেই একাধিকবার।

আমিঃ কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন ?

আসিতকুমারঃ মার্চ ১৯৬৪ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৬৮-র মধ্যে বিবাহ হয়েছে। কিন্তু আগস্ট ১৯৬৬ থেকে আগস্ট ১৯৬৭-র মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা বিয়ে হওয়ার ।

আমিঃ পারমিতা, আপনার কি মত?

পারমিতাঃ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ মার্চ পর্যন্ত ওনার বিশেষ শারীরিক অসুস্থতা মারকভাবে দেখছি।

আমিঃ পেশা কী ?

পারমিতাঃ শিল্পী মনে হয়। সংগীত-জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এছাড়া অ্যাডমিনস্ট্রেটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

আমিঃ দ্বিতীয় প্রশ্ন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন দেখলেন ?

পারমিতাঃ উচ্চ শিক্ষিত। সম্ভবত ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনের কোনও শিক্ষায় ডিগ্রি পেয়েছেন ।

আমিঃ বিয়ে করেছিলেন কী ?

পারমিতাঃ বিবাহিত-জীবন সুখের হয়নি।

আমিঃ তার মানে, আপনি বলছেন, বিয়ে করেছিলেন; কিন্তু সুখের হয়নি। তাই তো ?

পারমিতাঃ হ্যাঁ।

আমিঃ দ্বিতীয় জন্ম তারিখটি অরুণ মুখোপাধ্যায়ের। অরুণবাবু, আপনি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনো করেছেন ?

অরুণ মুখোঃ আমি বি. এ. পাশ করেছি।

আমিঃ কোথায়, কি পোস্টে কাজ করছেন ?

অরুণ মুখোঃ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মেন ব্রাণ্ডে এ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে আমি কাজ করি। হেড ক্লার্ক।

আমিঃ আপনি গান করেন ? মানে ফ্যাংশনে কখনও গেয়েছেন ?

অরুণ মুখোঃ না, কখনও না ।

আমিঃ দূর বিদেশে গিয়েছেন ?

অরুণ মুখোঃ দূর বিদেশে কেন ? ভারতবর্ষের বাইরেই যাইনি।

আমিঃ আপনি কোন বছর বিয়ে করেছেন ?

অরুণ মুখোঃ আমি বিয়ে করিনি ।

আমিঃ আমরা তৃতীয় ছকে চলে যাচ্ছি। তৃতীয় ছকের জাতকের জন্ম সময় ২৩ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে, সকাল ৮টা ৩০ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড হুগলী জেলার ‘জঙ্গলপাড়া’ গ্রামে !

প্রথম প্রশ্ন হল-লেখাপড়ায় কেমন ?

অসিতকুমারঃ বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত।

আমিঃ ওর পেশা কী ?

অসিতকুমারঃ চিকিৎসক হওয়ার সম্ভবনা।

আমিঃ দূর দেশে গিয়েছেন কী ?

অসিতকুমারঃ বিদেশে ভ্রমণ-যোগ আছে ।

আমিঃ বিয়ে করেছেন কী ? করলে কবে নাগাদ ?

অসিতকুমারঃ বিয়ে হওয়ার যোগ হলো জুন ১৯৮১ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৮৩-র মধ্যে ৷ কিন্তু ১মে ১৯৮২ থেকে নভেম্বর ১৯৮৩-র মধ্যে হওয়ার সম্ভবনাই খুব বেশি।

পারমিতাঃ এও তো দেখছি শিল্পীর ছক দিয়েছেন। এবং উনি সম্ভবত চিত্রশিল্প পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত।

আমিঃ উনি কোনও আন্তজার্তিক-সম্মান পেয়েছেন ?

পারমিতাঃ পেয়েছেন, বিদেশে বিশেষ সম্মানিত হয়েছেন।

আমিঃ শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন ?

পারমিতাঃ কমার্স নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি অথবা সমপর্যায়ের কোনও ডিগ্রি পেয়েছেন।

আমিঃ বিয়ে হয়েছে কী ?

পারমিতাঃ এই সময় থেকে দু’বছরের মধ্যে বিয়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।

আমিঃ তৃতীয় জন্ম তারিখটি আর এক অরুণবাবুর। অরুণ চ্যাটার্জির। ভাই অরুণ, তুমি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনো করেছ ?

অরুণ চ্যাটার্জিঃ বি. এ. পাস ।

আমিঃ কোথায়, কি পোস্টে কাজ করছ ?

অরুণ চ্যাটার্জিঃ আমি এখন স্টেট ব্যাঙ্কের ক্যালকাটা মেন ব্ৰাণ্ডে আছি।

আমিঃ কি পোস্টে ?

অরুণ চ্যাটার্জিঃ ক্ল্যারিকেল পোস্টেই আছি।

আমিঃ দূর বিদেশে কখনও গিয়েছ ?

অরুণ চ্যাটার্জিঃ না, বিদেশে কখনও যাইনি।

আমিঃ সিনেমাশিল্পের সঙ্গে তোমার কোনও যোগাযোগ আছে ?

অরুণ চ্যাটার্জিঃ হ্যাঁ। দর্শক হিসেবে যোগাযোগ আছে।

আমিঃ চতুর্থ আর শেষ ছক নিয়ে এবার বলছি। জাতকের জন্ম ১৯৫১ সালের ২০ আগস্ট দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে কলকাতায়। অসিতবাবু, প্রথম প্রশ্ন, বিয়ে করেছেন কী?

করলে কবে?

অসিতকুমারঃ না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে জুন ১৯৮৪ থেকে জুন ‘৮৭-র মধ্যে বিয়ে হওয়ার যোগ রয়েছে। কিন্তু এইটি ফাইভেই হতে পারে।

আমিঃ আয় কেমন?

অসিতকুমারঃ হাজার থেকে দেড় হাজারের মধ্যে হতে পারে ।

আমিঃ শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন?

অসিতকুমারঃ স্নাতক মান পর্যন্ত আশা করা যায়।

আমিঃ পেশা কী?

অসিতকুমারঃ চাকরি হবে।

আমিঃ পারমিতা, এর ছকে কি দেখলেন?

পারমিতাঃ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জননেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ।

আমিঃ আয় কেমন ?

পারমিতাঃ বহুভাবে প্রচুর আয় দেখা যায়।

আমিঃ বিদেশে গিয়েছেন।

পারমিতাঃ বিদেশে গেছেন?

আমিঃ এর সম্পর্কে আর কিছু বলবেন?

পারমিতাঃ এর সম্পর্কে আমি বলছি; বক্তা হিসেবে উনি খুবই জনপ্রিয়।

আমিঃ চতুর্থ জন্ম তারিখটি রাজীব নিয়োগীর। রাজীব আপনি কবে বিয়ে করেছেন?

রাজীবঃ আমি ১৯৭৮ সালে নভেম্বর মাসে বিয়ে করেছি।

আমিঃ আপনার পেশা কী?

রাজীবঃ স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের ডেপুটি চীফ মার্কেটিং ম্যানেজার । কলকাতা অফিসেই আছি। (সঙ্গে কলকাতার দুটি বিখ্যাত কোম্পানীর অংশীদার।)

একটি এ. মুখার্জী অন্ড কোম্পানী প্রা. লি. পুস্তক প্রকাশনী সংস্থা, দ্বিতীয়টি “গিরিশ”—ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্ৰ ।

আমিঃ রাজনীতি করেন?

রাজীবঃ না।

আমিঃ আয় কেমন?

রাজীবঃ আমার চাকরি থেকে বছরে আয় প্রায ছত্রিশ হাজার টাকার মতন ।

আমিঃ কতদূর লেখাপড়া করেছেন ?

রাজীবঃ আমি পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে।

আমিঃ দূর বিদেশে গিয়েছেন ?

রাজীবঃ না।

আমিঃ বক্তৃতা দিতে পারেন ।

রাজীবঃ বক্তৃতা দেওয়া আমার পেশা নয়; আমি পরিও না।

পারমিতা ও অসিত চক্রবর্তীকে জাতক পিছু চারটি করে অর্থাৎ মোট ৪ ×৪ = ১৬টি প্রশ্ন করেছিলাম। এরা দুজনই ১৬টি প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছিলেন। আশ্চর্যের কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও আশ্চর্যের কথা এই যে দু’জনে একই জন্ম সময় নিয়ে গণনা করা সত্ত্বেও ১৬টি উত্তরের মধ্যে একটি মাত্র ক্ষেত্রে দু’জনের উত্তরে মিল ছিল। উত্তর না মিললে জ্যোতিষীরা সঠিক জন্ম সময় নিয়ে কূট প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একই জন্ম সময় নিয়ে গণনা করা সত্ত্বেও দু’জনের দু’রকম উত্তরের কি অজুহাত তাঁরা দেবেন ?

উত্তর বেতার অনুষ্ঠান থেকেই তুলে দিচ্ছি।

ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তীঃ তার কারণ, কখনও আমাদের অক্ষমতা, আবার কখনও শাস্ত্রের অপূর্ণতা ।

পারমিতাঃ দেখুন, সমস্ত উত্তর হানড্রেড পারসেন্ট নির্ভুল হওয়া কখনই সম্ভব নয় ।

যাক । আলোচনা শেষে লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্যে হলেও অন্তত একবারের জন্য জ্যোতিষসম্রাট স্বীকার করলেন জ্যোতিষশাস্ত্রের অপূর্ণতার কথা। কিন্তু এ কি কথা শোনালেন ‘এ-যুগেব খণা’ ? “সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ”। এখানে হানড্রেড পারসেন্ট ভুল উত্তর দিয়েও ম্যাডাম ‘খণা’ যে গলাবাজি করলেন, সেটা জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র একটি চমৎকার দৃষ্টাস্ত।

এবার বলি ওদের ফেল করাবার গোপন রহস্য। দু-একটি উদাহরণ দিলেই চলবে। কারণ ‘সমাজদারকে লিয়ে ইশারাই কাফি।

দীপক ভট্টাচার্যকে বুঝিয়ে-পড়িয়ে নিয়েই হাজির করেছিলাম। ওর নিজস্ব গাড়িটি ব্যবহার করতে দিইনি। কথায় কথায় শুকদেববাবুকে দীপক বলেও দিয়েছিলেন, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ায় কাজ করেন। কিন্তু পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে, কথাবার্তা শুনে শুকদেববাবু দীপককে অতি সাধারণের একটুও ওপরে স্থান দেননি।

তপন চৌধুবীকে পরিয়ে ছিলাম ফুটপাথ থেকে কেনা সেকেন্ডহ্যান্ড স্ট্রেচলনের পঁয়তিরিশ টাকা দামের প্যান্ট। গায়ে ছিল পুরোন বুশ-শার্ট যার তলার সেলাই গেছে খুলে। ক্ষয়ে যাওয়া ধুলো-মাখা চটি। রিয়ারসল মাফিক তপন জ্যোতিষীর সামনে কথা বলেছিলেন চড়া গলায়, ভুল ইংরেজিতে। ফলে জ্যোতিষীর চোখে ব্যাঙ্ক অফিসার হয়ে পড়েছিল ফ্যাকট্টির কর্মী। আর এই মোক্ষম ভুলের ফলেই বাকি সব ক্যালকুলেশনই গোলমাল হয়ে গিয়েছিল।

স্টেট ব্যাঙ্কের হেড ক্লার্ক অরুণ মুখার্জিকে জ্যোতিষসম্রাট অসিতবাবু দেখেছিলেন নিপাট – ধুতি পাঞ্জাবিতে। হাতে মোটা ঢাউস চামড়ার একটা ব্যাগ। ব্যাগের হ্যান্ডেলের তলায় প্লাসটিকের খাপে গোঁজা ছিল একটি ভিজিটিং কার্ড ডঃ অরুণ মুখার্জি পি. এচ. ডি., প্রফেসর, কমপারিজিন লিটারেচন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা। অ্যাডভাইজার, ল্যাঙ্গোয়েজ-সেল (ইউ.এন.ও)।

অসিতবাবু অরুণ মুখার্জির জন্ম সময়ের চেয়ে সম্ভবত অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন অরুণ মুখার্জির পোশাক, চোখে দামি চশমাকে। এবং সম্ভবত তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ব্যাগে সাঁটা ভিজিটিং কার্ডটা এড়াতে পারেনি। সদ্য ছাপা এই ভিজিটিং কার্ডটাই যে সব হিসেব ওলট- পালট করে দেবে, এ বিষয়ে আমি অতিমাত্রায় নিশ্চিন্ত ছিলাম ।

জাতকদের আমি যে ভাবে, যে রূপে জ্যোতিষীদের কাছে হাজির করেছি, সেই রূপটিকে মাথায় রেখেই জ্যোতিষীরা তাদের নিদান এঁকেছেন এবং মুখ থুবড়ে পড়েছেন

যুক্তির দিক থেকে নয় ধরেই নিলাম, জাতকদের জন্ম সময় ভুল ছিল। কিন্তু একই জন্ম সময় নিয়ে জ্যোতিষীরা একটি ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন ভিন্নতর মত দিলেন ? আসলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন; দিতে বাধ্য করেছিলাম আমি। ওরা জাতকের জন্ম সময় আর জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর সামান্যতম নির্ভর করলে একই শাস্ত্র বিচারে ভিন্ন বা বিপরীত ফল নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসত না ।

ওরা জাতকদের পোশাক-আশাক কথাবার্তায় নির্ভর করাতেই জ্যোতিষীদের শাস্ত্রের বুলি কপচানো মুখোশটি খুলে পড়ে আসল চেহারাটাই বেরিয়ে পড়েছিল।

আপনারা একই ভাবে নিজেকে আমূল পাল্টে হাজির হন, যে কোনও জ্যোতিষসম্রাট বা ওই জাতীয় কারও কাছে। দেখবেন, আপনি যে সং সেজে নিজেকে হাজির করেছেন, সেটাকে সত্যি ধরে জ্যোতিষী শুধু ভুলই বলে চলেছে। প্রতিটি জ্যোতিষীর ক্ষেত্রেই এই ঘটনাই ঘটবে। এই ঘটনা ঘটতে বাধ্য। আপনি নিজেই হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখুন না ।

পাগলাবাবা জ্যোতিষীর চেয়ে বেশি কিছু

পাগলাবাবা ব্রাকেটে ‘বারাণসী’ কথার ওপর বিজ্ঞাপনে যে চুল দাড়ি, গোঁফ শোভিত পাগল-গাপল একটি প্রৌঢ়ের ছবি ছাপা হয় সেই ছবির ওপরে লেখা থাকে ‘আপনি কি বিশ্বাস হারিয়েছেন’। পাগলাবাবার দাবি, যে কোনও প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন । তাঁর সেই দাবি পরীক্ষার জন্যেই মুখোমুখি হয়েছিলাম বেতার অনুষ্ঠানে। পাগলাবাবা বেতার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। এর পর তাঁর ডেরায় গিয়েছিলাম, কিঞ্চিৎ মোলাকাৎ করতে। কারণ, সত্যি বলতে কী অজানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসেছিল। শর্ত অনুসারে বেতার অনুষ্ঠানে আমি মাত্র তিনটে প্রশ্ন করতে পারব, তাঁর দাবীর পরীক্ষা নিতে । হয়তো এমন হলো, প্রথম প্রশ্নটি হাজির করলাম, পাগলাবাবা সঠিক উত্তর দিয়ে দিলেন, যেমনি হাজার হাজার মানুষকে আজ পর্যন্ত দিয়ে এসেছেন, এবং আমি এই সঠিক উত্তর দিতে পারার কারণটি ধরতে পারলাম না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হাজির করলাম। পাগলাবাবা সঠিক উত্তর দিলেন। সঠিক উত্তর দিতে পারার কারণটি এবার আমি ধরতে পাবলাম। ফলে, তৃতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাগলাবাবা ভুল উত্তর দিতে বাধ্য হলেন। এত করেও কিন্তু পাগলাবাবার এই সঠিক উত্তর দানের কৌশলটি ধরার সমস্ত গৌরব, সমস্ত প্ৰয়াসই

ব্যর্থ হবে । শ্রোতারা কি শুনবেন ? কি ধারণা তাঁদের মধ্যে সৃষ্টি হবে ? তাঁরা শুনবেন, বিজ্ঞানের তরফ থেকে হাজির করা তিনটি প্রশ্নের মধ্যে দুটির ক্ষেত্রেই অলৌকিকক্ষমতা জয়ী। অতএব এই জন্যই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অলৌকিকক্ষমতার জয়ের প্রতীক হয়ে উঠবে; তখন এই জয় আর প্রবীর ঘোষের বিরুদ্ধে পাগলাবাবার জয় বলে গণ্য হবে না ।

যারা জাদু-শিল্পী তাঁরা জানেন, কোনও একটা নতুন জাদু দেখার সঙ্গে সঙ্গে কোনও একজন দর্শক-জাদুকরের পক্ষে তার কৌশল বুঝে ওঠা সম্ভব নাও হতে পারে; এমন কি সেই দর্শক-জাদুকরটি ভারতশ্রেষ্ঠ জাদুকর না হয়ে বিশ্বশ্রেষ্ঠ জাদুকর হলেও। আরও একটা কথা এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, সাধারণ মানুষ জাদু-জগতের সেরা শিরোপা যাঁদের মাথা চাপান, তারাই কিন্তু জাদু সংক্রান্ত জ্ঞানের সবচেয়ে সেরাটি নন। আমাদের দেশেও এমন কিছু জাদুকরদের জাদুকর আছেন, যাঁরা জাদুকরদের পরম শ্রদ্ধার পাত্র, এবং তাঁরা কিন্তু জনপ্রিয়তার বিপুল আকর্ষণ এড়িয়ে, সাধারণ মানুষদের দৃষ্টির আড়ালে সৃষ্টির আপন সাধনা চালিয়ে চলেছেন। এমন জাদুকরদের জাদুকরের পক্ষেও সব সময় সম্ভব হয় না কোনও একটি কৌশল দেখার সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলার, এখানে নতুন জাদুর স্রষ্টা যিনি, তিনিও হয়তো এমনই সব জাদুকরদেরই জাদুকর। আর এই কারণেই বিভিন্ন তথাকথিত অলৌকিক রটনা ফাঁস করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেনদের দলে রয়েছেন অনেক জাদুসম্রাট, জাদুর সুলতান, বাস্তবিকই বিশ্বখ্যাতি আছে এমন জাদুকর, বিজ্ঞানী, অলৌকিকক্ষমতার দাবিদারদের পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থার প্রধান থেকে শুরু করে গাদা গাদা ছোট-বড় বহু সাইন্স ক্লাব, বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান, আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান আকাদেমি পর্যন্ত। (এমনই বহু বিখ্যাতদের চ্যালেঞ্জ হেরে যাবার এবং তাদের সেই হারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আমাদের সমিতির জেতার বহু অলিখিত কাহিনী নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সামনে হাজির হবার ইচ্ছে আছে। এতে থাকবে আমাদের সমিতির নিরবিছিন্ন জয়ের এমন অনেক রোমাঞ্চকর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, অভিজ্ঞতা ও নেপথ্য প্রস্তুতির কথা যা কল্পনাকে অবশ্য‍ই বার বার হার মানাবে।)

প্রোগ্রাম রেকর্ডিং-এর আগে পাগলাবাবার ক্ষমতাটা একবার দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম প্রচণ্ড রকম। গেলাম। পাগলাবাবা অনেক খাওয়ালেন। অনেক গল্প করলেন। ওই সময় তাঁর কোনও ক্লায়েন্টকেই আমাদের সামনে হাজির হতে দিলেন না। আমার নানা কায়দার অনুরোধকেই পরম অবহেলায় নাক থেকে মাছি তাড়াবার মত করেই সরিয়ে দিলেন। তাঁর সঙ্গে শুধু এ-টুকুই ঠিক হলো, রেকর্ডিং-এর দিন কি কি প্রশ্ন হাজির করব। একঃ আমার এক বন্ধু জিজ্ঞেস করবেন, তাঁর সিগারেটের প্যাকেটে কটা সিগারেট আছে। দুইঃ একটা ক্যামেরা হাজির করে জিজ্ঞেস করা হবে এই ক্যামেরায় কটা ফিল্ম তোলা হয়েছে। তিনঃ এক বন্ধু তাঁর মানিব্যাগ বার করবেন। বলতে হবে কত টাকা আছে (খুচরো পয়সা বাদ)।

ব্যর্থ আমি প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়েই ফিরেছিলাম সেদিন। শুধু এ-কথাই বার বার ঘুরে ফিরে আমাকে তাড়িত করছিল রেকর্ডিং-এর আগেই আমাকে এই রহস্যের সূত্র খুঁজে বের করতেই হবে। নতুবা প্রথাগত পদ্ধতিতে প্রশ্ন করলে আমাকে হারতেই হবে; কারণ পাগলাবাবা অবশ্যই ঠিক উত্তর দেবেন এবং অবশ্যই কৌশলের সাহায্যেই।

ওই একই ধরনের ক্ষমতার দাবিদার আচার্য গৌরাঙ্গ ভারতীর সঙ্গে দেখা করলাম। গৌরাঙ্গ ভারতী এই বেতার অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এবং আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। গৌতম ভারতীর সঙ্গে গল্পে গল্পে জমিয়ে নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল। “আমি কি বিবাহিত?”

একটা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে তাতে উত্তর লিখে কলমটা নামিয়ে রেখে বলেছিলেন, “আপনি কি বিয়ে করেছেন?”

বলেছিলাম, “হ্যা”, করেছি।”

প্যাডটা আমার সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল ‘বিবাহিত’। আমি এরপর দ্বিতীয় প্রশ্ন রেখেছিলাম, “বলুন তো আমার প্রথম সন্তান ছেলে না মেয়ে?”

রাইটিং প্যাডে আবার উত্তরটা লিখে নামিয়ে রাখলেন কলমটা। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার প্রথম সন্তান কী?”

বললাম, “ছেলে।”

“দেখুন তো কি লিখেছি ?” প্যাডটা মেলে ধরলেন আমার চোখের সামনে। স্পষ্ট লেখা “ছেলে।”

তৃতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে উত্তর এবং রহস্যভেদ একই সঙ্গে হলো। (কিভাবে এমন সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখে দেওয়া যায়, তাঁর প্রয়োগ-কৌশল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে বইটির প্রথম খণ্ডে।)

পাগলাবাবা রেকর্ডিং-এর দিন আকাশবাণী ভবনে এলেন কয়েকটা গাড়ি বোঝাই বহু বিশিষ্ট শিষ্য-সাবুদদের নিয়ে। পরনে রক্তলাল ধুতি ও রক্তলাল হাফ হাতার ফতুয়া বা পাঞ্জাবি জাতীয় কিছু। আকণ্ঠ পান করে দরদর করে ঘামছেন, তবে মাতাল নন। আকাশবাণী ভবনেও দেখলাম তার ভক্তের অভাব নেই। পাগলাবাবা বিজ্ঞান প্রযোজকের ঘরে দাঁড়িয়েই অনেকের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন। অনেকের সম্বন্ধে অতীতের কথা বলে চমক সৃষ্টি করছিলেন (আমাদের সমিতির বেশ কিছু সদস্যই মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে এমন অনেক কথা বলে থাকেন, এমন কি বিভিন্ন ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ শিরোনামের অনুষ্ঠানেও বলে থাকেন; আর এই বলতে পারার ক্ষমতাটা অনেক ক্ষেত্রেই তা বড় জ্যোতিষীদের চেয়েও অনেক বেশি নির্ভুল।) একজনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাগলাবাবা রাইটিং প্যাড বের করলেন, এবং সক্কলকে প্রচণ্ড রকম আশ্চর্য করে (আমাকে বাদে) প্রশ্নের উত্তরটা মিলিয়েও দিলেন। তারপর যা শুরু হলো, তাকে বলা চলতে পারে দন্তুর মত পাগলাবাবাকে ঘিরে অন্ধভক্তদের পাগলামী। একজন সরাসরি দাবি করলেন, “এখানেই পাগলাবাবার ক্ষমতার পরীক্ষার রেকর্ডিং করতে অসুবিধে কোথায়? এখানেই রেকর্ডিং হোক।” এই দাবির সুরে অনেকেই সুর মেলালেন ।

অবস্থাটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে বিজ্ঞান প্রযোজক অমিত চক্রবর্তীকে বললাম, “আপনি বাস্তবিকই প্রোগ্রামটার রেকর্ডিং করতে চাইলে আর একটুও দেরি না করে ওঁকে নিয়ে স্টুডিওতে চলুন। আমার একটা জরুরি কাজ আছে। রেকর্ডিং শেষ হলেই আমায় সেখানে যেতে হবে। আর একটুও দেরি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমার তরফ থেকে প্রশ্ন করার জন্য হাজির করেছিলোম আমার তিন বন্ধু চিত্র-সাংবাদিক কল্যাণ চক্রবর্তী, প্রকাশক ময়ুখ বসু এবং একাধারে চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকাশক রঞ্জন সেনগুপ্তকে। পাগলাবাবার এমন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা দর্শনে আমার সাজান ব্যাপারটা তাঁরা না গোলমাল করে ফেলেন, এ-বিষয়েও নজর রাখতে হচ্ছিল।

তারপর আমরা স্টুডিওতে ঢুকলাম। রেকর্ডিং শুরু হলো। প্রশ্নত্তোরের পর্ব চুকতে পাগলাবাবার দাবি পরীক্ষার সময় তাঁকে লিখে উত্তর দিতে দিইনি। এবার আসুন, আপনাদের নিয়ে যাই সেই অতি বিখ্যাত বেতার অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্যায়ে, এখানে অবশ্য জ্যোতিষশাস্ত্র সরাসরি নেই, তবু আছে অদৃষ্টবাদের কথা।

error: Content is protected !!