ষোড়শ অধ্যায়

দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ

শ্লোকঃ ১-৩

শ্রীভগবানুবাচ

অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধিজ্ঞানযোগব্যবস্থিতিঃ ।

দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম ৷। ১ ।।

অহিংসা সত্যমক্রোধস্ত্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্ ।

দয়া ভূতেলোলুপ্তং মার্দবং হ্রীরচাপলম্ ।। ২।।

তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ শৌচমদ্রোহো নাতিমানিতা ।

ভবন্তি সম্পদং দৈবীমভিজাতস্য ভারত ।। ৩।।

শ্রীভগবান্ উবাচ— পরমেশ্বর ভগবান বললেন; অভয়ম্ — ভয়শূন্যতা; সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ —সত্তার পবিত্রতা; জ্ঞান — জ্ঞান; যোগ – যোগে; ব্যবস্থিতিঃ – অবস্থিতি; দানম্— দান; দমঃ— মনঃসংযোগ; চ–এবং যজ্ঞঃ-যজ্ঞ; চ এবং স্বাধ্যায়: — বৈদিক শাস্ত্ৰ অধায়ন; তপঃ—তপশ্চর্যা, আর্জ–সরলতা, অহিংসা — অহিংসা, সত্যম্- সত্যবাদিতা, অক্রোধঃ- ক্রোধশূন্যতা; ত্যাগঃ — বৈরাগ্য; শান্তিঃ – প্রশান্তি; অপৈশুনম্—অন্যের দোষ না দেখা; দয়া—দয়া; ভূতেষু — সমস্ত জীবের প্রতি, অলোলুপ্তম্‌—লোভহীনতা: মাদবম্—মৃদুতা; হ্রীঃ– লজ্জা; অচাপলম্–আচপলতা; তেজঃ–তেজ; ক্ষমা — কমা; ধৃতিঃ—ধৈর্য, শৌচন্—শুচিতা, অদ্রোহঃ মাৎসর্যহীনতা; ন–না; অভিমানিতা — অভিমানশূন্যতা; ভবস্তি হয়; সম্পদ সম্পদ: দৈনীম্‌—দিবা; অভিজাতস্য – জাত ব্যক্তির; ভারত—হে ভারত।

গীতার গান

শ্রীভগবান কহিলেনঃ

অভয় সত্ত্ব সংসিদ্ধি জ্ঞানে অবস্থান ।

দান দম যজ্ঞ আর স্বাধ্যায় তপান ।।

সরলতা সত্য আর অহিংসা অক্রোধ ।

ত্যাগ শান্তি দয়া আর পরনিন্দা রোধ ।।

অলোলুপতা মৃদুতা তেজ অচপল ।

ক্ষমা ধৃতি শৌচ বা স্ত্রী অদ্রোহ সকল ।।

অভিমান শূন্যতা সে ছাব্বিশ যে গুণ ৷

সম্পদ সে হয় তার যার দৈবীতে জনম ।।

অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে ভারত ! ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শাস্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা, অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্য শূন্যতা, অভিমান শূন্যতা—এই সমস্ত গুণগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

তাৎপর্যঃ পঞ্চদশ অধ্যায়ের শুরুতেই অশত্থ বৃক্ষবৎ এই জড় জগতের বর্ণনা করা হয়েছে। তার শাখামুলগুলিকে জীবের মঙ্গলজনক ও অমঙ্গলজনক বিভিন্ন কর্মের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নবম অধ্যায়ে দেব ও অসুরদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বৈদিক রীতি অনুসারে সাত্ত্বিক কর্মকে মুক্তিপ্রদ, মঙ্গলজনক কর্ম বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রকার কার্যকলাপকে দৈবী প্রকৃতি বলে অভিহিত করা হয়। যারা দৈবী প্রকৃতিতে অধিষ্ঠিত, তারা মুক্তির পথে অগ্রসর হন। পক্ষান্তরে, যারা রাজসিক ও তামসিক কর্ম করছে, তাদের পক্ষে মুক্তি লাভের কোনই সম্ভাবনা নেই। তারা হয় এই জড় জগতে মনুষ্যরূপে অবস্থান করবে, নয়তো অধোগামী হয়ে পশুজীবন বা আরও নিম্নতর জীবন লাভ করবে। এই ষোড়শ অধ্যায়ে ভগবান দৈবী প্রকৃতি, তার গুণাবলী এবং আসুরিক প্রবৃত্তি ও তার গুণাবলীর বর্ণনা করেছেন। এই সমস্ত গুণের সুবিধা ও অসুবিধার কথাও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

অভিজাতস্য শব্দটি যার এখানে অনুবাদ হচ্ছে দিব্যগুণে যার জন্ম হয়েছে, তার উল্লেখ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দিব্য পরিবেশে সন্তান উৎপাদনের পন্থা বৈদিক শাস্ত্রে ‘গর্ভাধান সংস্কার’ নামে পরিচিত। পিতামাতা যদি দিবাগুণ সমন্বিত সন্তান কামনা করেন, তা হলে তাঁদের মানব-জীবনের জন্য অনুমোদিত দশটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। ভগবদ্গীতাতে আমরা আগেই পড়েছি যে, সুসন্তান লাভের জন্য স্ত্রী-পুরুষের যে যৌন মিলন, তা শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলন যদি কৃষ্ণভাবনাময় হয়, তা হলে তা নিন্দনীয় নয়। যাঁরা কৃষ্ণভাবনাময়, তাঁদের অন্তত কুকুর-বেড়ালের মতো সন্তান উৎপাদন না করে এমন সন্তান উৎপাদন করা উচিত, জন্মের পরে যারা কৃষ্ণভাবনাময় হবে। সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনায় নিমগ্ন পিতা-মাতার সন্তানরূপে জন্ম গ্রহণ করার সৌভাগা।

বর্ণাশ্রম ধর্ম নামক সমাজ ব্যবস্থা যা সমাজকে চারটি বর্ণে ও চারটি আশ্রমে বিভক্ত করেছে—তা জন্ম অনুসারে মানব সমাজকে বিভক্ত করার জন্য নয়। এই বিভাগ হয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গুণ অনুসারে। সমাজের শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখাই হচ্ছে তার উদ্দেশ্য। এখানে যে সমস্ত গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের দিব্যগুণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা দিব্যজ্ঞান লাভের পথে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়, যার ফলে সে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে।

বর্ণাশ্রম ব্যবস্থায় সন্ন্যাসীকে সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব সমাজের সকল শ্রেণীর গুরু বলে গণ্য করা হয়েছে। ব্রাহ্মণকে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র সমাজের এই তিনটি বর্ণের গুরু বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু সন্ন্যাসী, যিনি এই সমাজের সর্বোচ্চ শীর্ষে অধিষ্ঠিত, তিনি ব্রাহ্মণদেরও গুরু। সন্ন্যাসীর প্রথম যোগ্যতা হচ্ছে ভয়শূন্যতা। কারণ সন্ন্যাসীকে সব রকম সহায় সম্বলহীন হয়ে কেবলমাত্র পরম পুরুষোত্তম ভগবানের কৃপার উপর নির্ভর করে তাঁকে একলা থাকতে হয়। সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করার পরেও যদি তিনি মনে করেন, “সম্পর্ক ছিন্ন করার পরে, কে আমায় রক্ষা করবে?” তা হলে তাঁর পক্ষে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করা উচিত নয়। তাঁকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, শ্রীকৃষ্ণ বা পরম পুরুষ ভগবান পরমাত্মারূপে সর্বদাই তাঁর হৃদয়ে রয়েছেন। তিনি সর্বদাই সব কিছু দর্শন করছেন এবং তিনি হৃদয়ের সমস্ত বাসনাগুলির কথা জানেন। এভাবেই তাকে দৃঢ় প্রতারসম্পন্ন হতে হয় যে, পরমাত্মা রূপে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শরণাগত জীবের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তাঁর অনুভব করা উচিত, “আমি কখনই নিঃসঙ্গ নই। আমি যদি অরণ্যের গভীরতম প্রদেশেও থাকি, শ্রীকৃষ্ণ তখনও আমার সঙ্গে থাকবেন এবং তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।” এই দৃঢ় বিশ্বাসকে বলা অভয়ম্ বা ভয়শূন্যতা। সন্ন্যাসীর পক্ষে এই ধরনের মনোভাব থাকা আবশ্যক।

তারপর তাঁকে তাঁর অস্তিত্ব পবিত্র করতে হয়। সন্ন্যাস জীবনে পালনীয় বহু নিয়মকানুন আছে। সেগুলির মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোন স্ত্রীর সঙ্গে কোন রকম অন্তরঙ্গ সম্বন্ধ থাকা কোনও সন্ন্যাসীর পক্ষে সর্বতোভাবে বর্জনীয়। কোন নির্জন স্থানে কোন স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলাও তাঁর পক্ষে নিষিদ্ধ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন আদর্শ সন্ন্যাসী। তিনি যখন পুরীতে ছিলেন, তখন মহিলা ভক্তেরা তাঁকে প্রণাম করার জন্য তাঁর কাছেও আসতে পারত না, তাদের দূর থেকে তাঁকে প্রণাম জানাতে বলা হত। এটি স্ত্রীজাতির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ নয়, এটি হচ্ছে সন্ন্যাসীর প্রতি স্ত্রীসঙ্গ না করার যে কঠোর নির্দেশ আছে, তারই দৃষ্টান্ত। জীবন পবিত্র করে গড়ে তোলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ ও আশ্রমের বিধি-নিষেধগুলি মেনে চলতে হয়। সন্ন্যাসীর পক্ষে ক্রীসঙ্গ এবং ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য অর্থ সঞ্চয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজেই ছিলেন আদর্শ সন্ন্যাসী এবং তাঁর জীবন থেকে আমরা জানতে পারি যে, স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। তিনি সবচেয়ে অধঃপতিত জীবদের উদ্ধার করেছেন এবং সেই জন্য যদিও তাঁকে ভগবানের সবচেয়ে করুণাময় বা মহাবদান্য অবতার বলে গণ্য করা হয়, তবুও স্ত্রীলোকদের সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সন্ন্যাস আশ্রমের বিধি-নিষেধগুলি পালন করেছেন। ছোট হরিদাস ছিলেন তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদদের মধ্যে একজন। কিন্তু কোন কারণবশত এই ছোট হরিদাস একবার এক মহিলার প্রতি কামপূর্ণ দৃষ্টিপাত করেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এত কঠোর ছিলেন যে, তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁকে তাঁর ঘনিষ্ঠ পার্ষদমণ্ডলী থেকে পরিত্যাগ করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেন, “সন্ন্যাসী অথবা যিনি মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় প্রকৃতি ভগবৎ-ধামে ফিরে যাওয়ার প্রয়াসী, তাঁর পক্ষে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য পার্থিব সম্পদ ভোগ এবং স্ত্রীলোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয়। তাদের উপভোগ না করলেও যদি কেবল সেই প্রবৃত্তি নিয়ে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়, তা এতই নিন্দনীয় যে, এই অবৈধ বাসনাকে মনে স্থান দেওয়ার আগে আত্মহত্যা করা উচিত।” সুতরাং, এগুলিই হচ্ছে পবিত্র হওয়ার পন্থা।

পরবর্তী বিষয়টি হচ্ছে জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি—জ্ঞানের অনুশীলনে নিযুক্ত হওয়া। সন্ন্যাস-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে গৃহস্থ ও অন্যেরা, যারা তাদের পারমার্থিক জীবনের কথা ভুলে গেছে, তাদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করা। সন্ন্যাসীকে জীবন ধারণের জন্য দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সে ভিখারী। দিবাস্তরে অধিষ্ঠিত পুরুষের একটি গুণ হচ্ছে দৈন্য এবং সেই দীনতার বশবর্তী হয়েই সন্ন্যাসী দ্বারে দ্বারে গমন করেন, ঠিক ভিক্ষার উদ্দেশ্যে নয়, গৃহস্থদের কাছে গিয়ে তাদের কৃষ্ণচেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য। সেটিই হচ্ছে সন্ন্যাসীর ধর্ম। তিনি যদি যথার্থই উন্নত হন এবং তাঁর গুরুর দ্বারা আদিষ্ট হন, তা হলে যুক্তি ও উপলব্ধির মাধ্যমে তাঁর কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করা উচিত এবং তিনি যদি তত উন্নত না হন, তা হলে তাঁর পক্ষে সন্ন্যাস গ্রহণ করা উচিত নয়। কিন্তু যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করে থাকেন, তা হলে জ্ঞান লাভ করার জন্য তাঁর উচিত সদগুরুর কাছ থেকে সর্বক্ষণ কৃষ্ণ কথা শ্রবণ করা। সন্ন্যাসীর উচিত অভয় হয়ে সত্ত্বসংশুদ্ধি (পবিত্রতা) লাভ করে জ্ঞানযোগে অধিষ্ঠিত হওয়া।

তার পরের বিষয়টি হচ্ছে দান। দান করা গৃহস্থের কর্তব্য। গৃহস্থদের কর্তব্য হচ্ছে সদুপায়ে অর্থোপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা এবং আয়ের অর্ধাংশ সমস্ত বিশ্ব জুড়ে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের জন্য দান করা। গৃহস্থদের কর্তব্য হচ্ছে সেই ধরনের সংস্থাকে দান করা, যারা এই ধরনের কাজে নিযুক্ত আছে। দান যথাযোগ্য পাত্রে অর্পণ করা উচিত। দান নানা রকমের আছে, তা পরে ব্যাখ্যা করা হবে, যেমন সত্ত্বগুণে দান, রজোগুণে দান ও তমোগুণে দান। শাস্ত্রে সত্ত্বগুণে দান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু রজ ও তমোগুণে দান করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি, কারণ সেই ধরনের দানের ফলে কেবল অর্থেরই অপচয় হয়। পৃথিবী জুড়ে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করার উদ্দেশেই কেবল দান করা উচিত। সেটিই হচ্ছে সত্ত্বগুণে দান।

দম বা আত্মসংযম ধার্মিক সমাজের অন্য আশ্রমভুক্ত ব্যক্তিদের জন্যই কেবল নির্দিষ্ট হয়নি, গৃহস্থদের জন্য তা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট হয়েছে। গৃহস্থ আশ্রমে মানুষ যদিও স্ত্রীর পাণিগ্রহণ করেন, তবু অনর্থক যৌন জীবন যাপনে ইন্দ্রিয়গুলিকে নিযুক্ত করা গৃহস্থের উচিত নয়। গৃহস্থের যৌন জীবনও বিধি-নিষেধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা কেবল সন্তান উৎপাদনের জন্যই অনুষ্ঠিত হয়। সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্য ব্যতীত স্ত্রীসঙ্গে যৌনসুখ ভোগ করা উচিত নয়। আধুনিক সমাজ সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব এড়াবার জন্য গর্ভনিরোধক প্রণালী এবং আরও সমস্ত অতি জঘন্য উপায়ে যৌন জীবন করছে। এই ধরনের কার্যকলাপ দিব্যগুণের পর্যায়ভুক্ত নয়। এগুলি আসুরিক কার্যকলাপ। কেউ যদি গৃহস্থত হন এবং পারমার্থিক জীবনে অগ্রসর হতে চান, তবে তাঁকে অবশ্যই সংযত হতে হবে এবং কৃষ্ণসেবার উদ্দেশ্য ব্যতীত সন্তান উৎপাদন করা থেকে বিরত হতে হবে। তিনি যদি এমন সন্তান উৎপাদন করতে পারেন, যারা কৃষ্ণচেতনাময় হবে, তা হলে তিনি শত শত সন্তান উৎপাদন করতে পারেন। কিন্তু সেই সামর্থ্য না থাকলে কেবল মাত্র ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য সেই কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া উচিত নয়।

যজ্ঞ হচ্ছে আর একটি বিষয়, যা গৃহস্থদের অনুষ্ঠান করা উচিত, কারণ যজ্ঞ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। জীবনের অন্য আশ্রমগুলিতে, যেমন ব্রহ্মচর্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস আশ্রমে মানুষের ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ থাকে না। তাঁরা ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করেন। সুতরাং, বিভিন্ন ধরনের যজ্ঞ অনুষ্ঠান করা গৃহস্থদের কর্ম। তাদের উচিত অগ্নিহোত্ৰ আদি যে সমস্ত যজ্ঞ করার নির্দেশ বৈদিক শাস্ত্রে দেওয়া হয়েছে, তার অনুষ্ঠান করা। কিন্তু আজকালকার যুগে এই ধরনের যজ্ঞ করা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ এবং কোন গৃহস্থের পক্ষে তা অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। এই যুগের জন্য শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ হচ্ছে সংকীর্তন যজ্ঞ। এই সংকীর্তন যজ্ঞ, অর্থাৎ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে—কীর্তন করাই হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং কম খরচের যজ্ঞ। যে কেউ এই যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে পারেন এবং তার সুফল লাভ করতে পারেন। দান, দম ও যজ্ঞ- এই তিনটি অনুষ্ঠান গৃহস্থের জন্য।

সুতরাং তারপর স্বাধ্যায় বা বেদপাঠ ‘ব্রহ্মচর্য’ বা ছাত্র-জীবনের জন্য। স্ত্রীলোকের সঙ্গে ব্রহ্মাচারীদের কোন রকম সংস্রব থাকা উচিত নয়, কৌমার্য অবলম্বন করে দিব্যজ্ঞান। লাভের জন্য বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করে তাদের জীবন যাপন করা উচিত। তাকে বলা হয় স্বাধ্যায়।

তপঃ বা তপশ্চর্যা বিশেষ করে বানপ্রস্থ আশ্রমের জন্য। সারা জীবন গৃহস্থ- জীবনে থাকা উচিত নয়। মানুষের সব সময় মনে রাখা উচিত যে, মানব-জীবনে চারটি আশ্রম আছে—ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থা, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। সুতরাং গার্হস্থ্য আশ্রমের পরে অবসর গ্রহণ করা উচিত। কেউ যদি একশ বছর বেঁচে থাকে, তা হলে তার উচিত পঁচিশ বছর ব্রহ্মচারী-জীবনে, পঁচিশ বছর গৃহস্থ-জীবনে, পঁচিশ বছর বানপ্রস্থ জীবনে এবং পঁচিশ বছর সন্ন্যাস আশ্রমে অতিবাহিত করা। এগুলি হচ্ছে বৈদিক ধর্ম আচরণের নিয়মানুবর্তিতার নির্দেশ। বানপ্রস্থ আশ্রমে অবশ্যই দেহ, মন ও জিহ্বার তপশ্চর্যার অনুশীলন করতে হয়। সেটিই হচ্ছে তপস্যা। সমস্ত বর্ণাশ্রম ধর্মপরায়ণ সমাজ তপস্যা করার জন্য। তপস্যা ছাড়া কোন মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে না। তপস্যা করার কোন প্রয়োজন নেই, নিজের ইচ্ছামতো এক-একটি পথ বার করলেই সিদ্ধি লাভ করা যাবে এই মতবাদ বৈদিক শাস্ত্রে কিংবা ভগবদ্গীতায় কোথাও অনুমোদন করা হয়নি। এই ধরনের মতবাদগুলি আবিষ্কার করেছে কতকগুলি ভণ্ড অধ্যাত্মবাদী, যারা কেবল লোক ঠকিয়ে দল ভারি করার ব্যাপারে ব্যস্ত। যদি বিধি-নিষেধ থাকে, নিয়মকানুন থাকে, তা হলে মানুষ আকৃষ্ট হবে না। তাই, ধর্মের নামে যারা শিষা বাড়াতে চায় কেবল লোক দেখানোর জন্য, তারা তাদের শিষ্যদের সংযত জীবন যাপন করার উপদেশ দেয় না এবং নিজেরাও সংযত জীবন যাপন করে না। কিন্তু বেদে সেই পন্থার অনুমোদন করা হয়নি।

ব্রাহ্মণের গুণ ‘সরলতা’ জীবনের কোন বিশেষ আশ্রমে মানুষদের অনুশীলনের জনাই কেবল নয়, সকলেরই জন্য, তা সে ব্রহ্মচারী হোক, গৃহস্থ হোক, বানপ্রস্থী হোক অথবা সন্ন্যাসীই হোক না কেন। সকলেরই উচিত সরল জীবন যাপন করা।

অহিংসা তঅর্থ হচ্ছে কোন জীবের জীবনের ক্রমোন্নতি রোধ না করা। কারও এটি মনে করা উচিত নয় যে, দেহকে হত্যা করলেও যখন আত্মার বিনাশ হয় না, তখন ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য পশুহত্যা করলেও কোন ক্ষতি নেই। যথেষ্ট পরিমাণে শস্য, ফল এবং দুধ থাকা সত্ত্বেও এখনকার মানুষেরা পশুমাংস আহারে আসক্ত। পশুহত্যা করার কোনই প্রয়োজন নেই। এই নির্দেশ সকলেরই জন্য। যখন আর কোন বিকল্প উপায় থাকে না, তখন মানুষ পশুহত্যা করতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সেই পশুকে যজ্ঞের বলি হিসাবে নিবেদন করতে হয়। সে যাই হোক, মানুষের জন্য যথেষ্ট খাদ্য রয়েছে, যারা আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান লাভের পথে উন্নতি সাধন করতে চান, তাঁদের পক্ষে পশুহত্যা করা উচিত নয়। যথার্থ অহিংসা হচ্ছে কারওই জীবনের প্রগতি রোধ না করা। বিবর্তনের মাধ্যমে পশুরাও এক পশুদেহ থেকে অন্য পশুদেহে দেহান্তরিত হয়ে এগিয়ে চলেছে। যদি কোনও এক বিশেষ পশুকে হত্যা করা হয়, তবে তার প্রগতি বাধা প্রাপ্ত হয়। কোন পশুর যখন কোন নির্দিষ্ট শরীরে কোন নির্দিষ্ট কাল অবস্থানের মেয়াদ থাকে, তখন যদি তাকে অপরিণত অবস্থায় হত্যা করা হয়, তা হলে তাকে বাকি সময়টি পূর্ণ করে উন্নততর প্রজাতিতে উন্নীত হওয়ার জন্য আবার সেই শরীর প্রাপ্ত হতে হয়। সুতরাং, কেবলমাত্র জিহ্বার তৃপ্তির জন্য ওদের প্রগতি রোধ করা উচিত নয়। একেই বলা হয় অহিংসা।

সত্যম্ শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সত্যের বিকৃত করা উচিত নয়। বৈদিক শাস্ত্রে কতকগুলি অতি কঠিন অধ্যায় আছে। কিন্তু তার অর্থ বা উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করতে হবে সদগুরুর কাছ থেকে। বেদ উপলব্ধি করবার এটিই হচ্ছে পন্থা। শ্রুতির অর্থ হচ্ছে যে, তা নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে শ্রবণ করতে হবে। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তার কতকগুলি আক্ষরিক ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। ভগবদ্গীতার বহু ব্যাখ্যা আছে, যা ভগবদ্গীতার মূল বিষয়-বস্ত্রকে বিকৃত করেছে। গীতার বাণীর যথার্থ অর্থ প্রকাশ করতে হবে এবং তা শিখতে হবে সদ্গুরুর কাছ থেকে।

অক্রোধ কথাটির অর্থ হচ্ছে ক্রোধ দমন করা। ক্রোধের উদ্রেক হলেও সহিষ্ণু হয়ে তা দমন করতে হবে, কারণ একবার ক্রুদ্ধ হলে সমস্ত শরীর কলুষিত হয়ে যায়। ক্রোধ হচ্ছে রজোগুণ ও কামের পরিণতি। সুতরাং যিনি অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত, তাঁর পক্ষে ক্রোধ দমন করা অবশ্য কর্তব্য। অপৈনম্ অর্থ হচ্ছে অনর্থক অপরের দোষ দর্শন না করা অথবা তাদের সংশোধন করা থেকে বিরত থাকা। অবশ্য একটি চোরকে চোর বলা পরনিন্দা নয়, কিন্তু একজন সাধুকে চোর বলা মস্ত বড় অপরাধ, বিশেষ করে যিনি পারমার্থিক জীবনে অগ্রসর হচ্ছেন তাঁর পক্ষে। স্ত্রী অর্থ বিনয়ী হওয়া এবং কোন অবস্থাতেই কোন জঘন্য কর্ম না করা। অচাপলম্ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোন প্রচেষ্টাতেই উত্তেজিত বা নিরাশ না হওয়া। কোন কোন প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা আসতে পারে, কিন্তু সেই জন্য দুঃখিত হওয়া উচিত নয়। ধৈর্য ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

এখানে তেজ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষত্রিয়দের জন্য। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম হচ্ছে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে দুর্বলকে রক্ষা করা। তাদের তথাকথিত অহিংসার নীতি অবলম্বন করা উচিত নয়। যদি হিংসার প্রয়োজন হয়, তা হলে তাদের তা প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু শত্রুকে দমন করতে পারলে কোন কোন ক্ষেত্রে দয়া প্রদর্শন করাও চলতে পারে। সামান্য দোষত্রুটি ক্ষমা করা যেতে পারে।

শৌচম্ অর্থ শুচিতা কেবল দেহ বা মনেরই নয়, আচরণেও মানুষকে শুচি হতে হবে। এটি বিশেষ করে বৈশ্যদের জন্য। তাদের কালোবাজারী করে অর্থ উপার্জন করা উচিত নয়। নাতিমানিতা অর্থাৎ অভিমান শূন্যতা বা সম্মানের আকাঙ্ক্ষা না করা শুদ্রদের বেলায় প্রযোজ্য, যারা বৈদিক নির্দেশ অনুসারে চতুর্বর্ণের সর্বনিম্ন। অনর্থক দত্ত বা অভিমানে তাদের মত্ত হওয়া উচিত নয়, তাদের উচিত তাদের নিজস্ব স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। শূদ্রের কর্তব্য হচ্ছে সামাজিক অবস্থা বজায় রাখার জন্য উচ্চতর বর্ণগুলিকে সম্মান প্রদর্শন করা।

যে ছাব্বিশটি গুণের কথা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে, তার সব কয়টিই হচ্ছে দিব্য গুণাবলী। বর্ণাশ্রম ধর্ম পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে তাদের অনুশীলন করা উচিত। এর তাৎপর্য হচ্ছে, যদিও জড় জগতের অবস্থা অত্যন্ত দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ, তবুও সমাজের সর্বশ্রেণীর লোকদের যদি অনুশীলনের মাধ্যমে এই গুণগুলি অর্জন করার শিক্ষা দেওয়া যায়, তা হলে সমস্ত সমাজ ধীরে ধীরে তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধির সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হতে পারে।

শ্লোকঃ ৪

দন্তো দর্পোঽভিমানশ্চ ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ ।

অজ্ঞানং চাভিজাতস্য পার্থ সম্পদমাসুরীম্ ।। ৪ ।।

দত্তঃ—দম্ভ, দর্পঃ—দর্প, অভিমান — নিজেকে পূজ্যত্ব বুদ্ধি; চ–এবং ক্রোধঃ —ক্রোধ; পারুয়াম্—রূঢ়তা; এব—অবশ্যই; চ–এবং অজ্ঞানম্ — অজ্ঞান চ—এবং; অভিজাতস্য—যার জন্ম হয়েছে তার; পার্থ- হে পৃথাপুত্র; সম্পদ- সম্পদ, আসুরীম্‌ — আসুরী।

গীতার গান

দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, নিষ্ঠুরতা ।

সম্পদ আসুরী হয় যথা অজ্ঞানতা ।।

অনুবাদঃ হে পার্থ। দত্ত, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রূঢ়তা ও অবিবেক – এই সমস্ত সম্পদ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের লাভ হয়।

তাৎপর্যঃ এই শ্লোকে নরকে যাওয়ার প্রশস্ত রাজপথটির বর্ণনা করা হয়েছে। অসুরেরা মহা আড়ম্বরের সঙ্গে ধর্ম ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উন্নতি প্রদর্শন করতে চায়, যদিও তারা নিজেরা সেই সমস্ত নীতিগুলি অনুশীলন করে না। তারা সর্বদাই কোন বিশেষ ধরনের শিক্ষা অথবা অত্যধিক সম্পদের গর্বে অত্যন্ত গর্বিত। তারা চায় যে, সকলেই তাদের পূজা করবে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা সব সময় সকলের কাছ থেকে সম্মান দাবি করে, যদিও সম্মান পাবার কোন যোগ্যতাই তাদের নেই। খুব তুচ্ছ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয় এবং কঠোর স্বরে কথা বলে। তাদের মধ্যে কোন রকম নম্রতা নেই। তারা জানে না তাদের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়। তারা সকলেই তাদের নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে খামখেয়ালীর বশে কাজকর্ম করে এবং তারা কারও কর্তৃত্ব মানে না। এই সমস্ত আসুরিক গুণগুলি তারা মাতৃগর্ভে তাদের শরীর গঠনের সময়েই গ্রহণ করে থাকে এবং তারা যতই বড় হয়, এই সমস্ত অশুভ গুণগুলি ততই তাদের মধ্যে প্রকাশিত হতে থাকে।

শ্লোকঃ ৫

দৈবী সম্পদ বিমোক্ষায় নিবন্ধায়াসুরী মতা ৷

মা শুচঃ সম্পদং দৈবীমভিজাতোঽসি পাণ্ডব ।। ৫ ।।

দৈবী—নিব্য; সম্পৎ—সম্পদ, বিমোক্ষায়—মুক্তির নিমিত্ত; নিবন্ধায় — বন্ধনের কারণ; আসুরী—আসুরিক সম্পদ, মতা- বিবেচিত হয়, মা – করো না; শুচঃ— শোক; সম্পদ—সম্পদ; দৈবীম্‌ — দেবী; অভিজাতঃ – জাত; অসি — হয়েছ; পাণ্ডব—হে পাণ্ডুপুত্র।

গীতার গান

দৈবী সম্পদ যে তার মুক্তির কারণ ।

আসুরী সম্পদ হয় সংসার বন্ধন ।।

তোমার চিন্তার কথা নাহি হে পাণ্ডব ।

দৈবী সম্পদে তোমার হয়েছে জনম ।।

অনুবাদঃ দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল, আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ বলে বিবেচিত হয়। হে পাণ্ডুপুত্র! তুমি শোক করো না, কেন না তুমি দৈবী সম্পদ সহ জন্মগ্রহণ করেছ।

তাৎপর্যঃ আসুরিক গুণে যে অর্জুনের জন্ম হয়নি, সেই কথা বলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে এখানে উৎসাহিত করছেন। সেই যুদ্ধে তাঁর জড়িয়ে পড়ার কারণ আসুরিক ছিল না। কারণ, তিনি স্বপক্ষ ও বিপক্ষ যুক্তিগুলির বিবেচনা করে দেখছিলেন। তিনি বিবেচনা করছিলেন, ভীষ্ম ও দ্রোণের মতো সম্মানীয় পুরুষদের হত্যা করা ঠিক হবে কি না। সুতরাং তিনি ক্রোধ, দণ্ড অথবা নিষ্ঠুরতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কর্ম করছিলেন। না। তাই, তিনি আসুরিক গুণসম্পন্ন ছিলেন না। শত্রুর উদ্দেশ্যে বাণ নিক্ষেপ করা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম এবং তার এই কর্ম থেকে নিরস্ত হওয়াকে আসুরিক বলে মনে করা হবে। সুতরাং, অর্জুনের শোক করার কোনই কারণ ছিল না। যিনি জীবনের বিভিন্ন বর্ণ ও আশ্রমোচিত আচরণ করেন, তিনি দিব্যস্তরে অধিষ্ঠিত।

error: Content is protected !!