ভেকের কাছে “ডোবা”ই তার দেশ কৃষকের ‘দেশ’ তার পল্লী, এবং রাষ্ট্র-নেতার কাছে “দেশ” তার তাঁর গোটা রাষ্ট্র। আমার “দেশ-সেবা” মানে “রাষ্ট্র সেবা” নয়, পল্লী-সেবা।
এককালে পৃথিবীর যাবতীয় মানুষই ছিল – ভবঘুরে, যাযাবর, পেশাদার শিকারী। সেই ভবঘুরে যাযাবরত্ব ঘুচিয়ে কৃষকরাই হল প্রথম গৃহবাসী। আর সেই গৃহের আসে পাশে ফল-ফসলাদি রোপীয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ পেয়ে স্থানু হয়ে বসল তারা এক জায়গায় পুরুষানুক্রমে। সে যুগে এটা ছিল তাদের গৌরবের বিষ্য। আর আজকালকার কৃষকরা শুধু স্থানু নয় কুনোও। এমন কি “কুনো ব্যাং” বললেও সেটা দোষের হয় না। কেননা কৃষকরা কোন দেশ ভ্রমন করে না, এক জিলার কৃষক আর এক জিলায় বড় একটা যায় না। এমনকি কেহবা নিজ জেলার সদর পর্যন্ত চেনে না। প্রকৃত ফসলদরদী কৃষক পশু পাখীর অত্যাচারে ফসল নষ্ট হবার ভয়ে এবং গরু-বাছুর উপোষ রেখে দিনমানের জন্যও গ্রামান্তরে যায় না, অনেকে শশুরালয়ে বেড়ায় না। তাদের কাছে নিজ পল্লীই মাতৃভূমি, পল্লীই দেশ, আমার কাছে তাই। আর তারই জন্য আমি আমার সামান্য শক্তিটুকু নিয়ে কৃষি-কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেশ-সেবার নামে কিছু কিছু পল্লী সেবার চেষ্টা করেছি।
কৃষক মাত্রেই জানেন না, কোন ব্যক্তির পক্ষে একক ভাবে কৃষি কাজ সম্পন্ন করা কতটুকু কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। আমার কৃষি কাজ আজীবন আমাকে একাই সম্পন্ন করতে হয়েছে। কেননা-আমাকে কৃষি কাজে কিছু মাত্র সাহায্য করতে পারে, এমন কোন লোক ছিল না আমার পরিবারের মধ্যে। ছেলেরা ছিল কেউ ছোট, কেউ বা স্কুলে পাঠ্যাবস্থায়ে। গ্রাম্য সালিশী বিচারের কাজ ছিল আমার দৈনন্দিন ব্যাপার। তদুপরি দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজ সমাধা করতে গিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে দিনের কাজগুলো রাতে করতে হয়েছে অনেক। তথাপি নিম্ন লিখিত পল্লী সেবার কাজ সমূহ সমাধা করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড
♦ চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)
♦ উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড
♦ মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)
♦ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড
♦ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা
♦ অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড
“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ