পাশ্চাত্যের থিওজফিস্টরা শুধু যে আত্মা নামানো এবং ভূতপ্রেতদের নানা উদ্ভট পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত থাকতেন তাই নয়, তাঁরা নিজেদের কাজকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানাতেন প্রেতচক্রের আসরে যোগদান করার জন্য। একবার ডারউইনের বন্ধু ও তাঁর তত্ত্বের বিশিষ্ট সমর্থক প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী টি. এইচ. হাক্সলে’র কাছে প্রেতচক্রের আসরে উপস্থিতি হওয়ার আমন্ত্রণপত্র এসে পৌঁছলে তিনি থিওজফিস্ট ভুতুরে গবেষকদের প্রতি প্রত্যুত্তরে লেখেন, “এই ভূতপ্রেতের তিনি থিওজফিস্ট ভূতুরে গবেষকদের প্রতি প্রত্যুত্তরে লেখেন, “এই ভূতপ্রেতের গবেষণার একটিমাত্র ভাল দিক আমি দেখতে পাই, তা হল এতে করে আত্মহত্যার বিপক্ষে আরও একটি জোরালো যুক্তি পাওয়া যায়। আত্মহত্যার দরুন ভূত হওয়ার পরে প্রেতচক্র-প্রতি এক গিনি হারে ভাড়া করা মিডিয়ামের মুখ দিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর করার চেয়ে রাস্তার ঝাড়ুদারগিরি করে কষ্টেসৃষ্টে কোনওমতে বেঁচে থাকাও অনেক ভাল।“

(এঙ্গেলস তাঁর ‘ডায়লেকটিকস অফ নেচার’ গ্রন্থের ‘ন্যাচারাল সায়েন্স ইন দ্যা স্পিরিট ওয়ার্ল্ড” প্রবন্ধে এটি উদ্ধৃত করেন।)

পাশ্চাত্যে থিওজফিস্টদের বুজরুকি ফাঁসে জাদুকরেরা এগিয়ে এসেছিলেন এবং বুজরুকদের চূড়ান্ত নাস্তানাবুদ করেছিলেন। ভারতবর্ষে সে সময়কার জাদুকরদের অনেকেই মাদাম ব্লাভাৎস্কি ও বেশান্তের মতই অনেক অদ্ভুতুড়ে সব কান্ড-কারখানা যদিও মঞ্চে এবং সার্কাসের এরিনায় দেখাতেন, (সে সময় সার্কাসেও খেলার মাঝে মাঝে ম্যাজিক দেখাবার চল ছিল) কিন্তু তাঁরা কখনোই মাদাম বা বেশান্তের বুজরুকির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেননি। থিওজফিস্ট মুখোশ ছিঁড়ে সর্বসমক্ষে প্রতারকের মুখটা বে-আব্রু করে দেননি। তার একটা কারণ হতে পারে লড়াকু মানসিকতার অভাব। হতে পারে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে না যাওয়ার প্রবণতা। হতে পারে, এই সুযোগে কেউ কেউ জাদুকরদের বিজ্ঞানের কৌশলকে ভূতুরে ব্যাপার বা অলৌকিক ব্যাপার ভাবলে বাড়তি কিছু নাম বা কামিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া। যাই হোক, এটা ঐতিহাসিক সত্য সেদিন প্রাচ্যের জাদুকররা থিওজফিস্টদের বুজরুকির বিরুদ্ধে আঘাত হানতে পারতেন, কিন্তু আঘাত হানেননি।

error: Content is protected !!