হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ ইয়াস, শু’বা, আদম ইব্‌ন আবূ ইয়াস ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন মুগাফ্ফাল বলেন- ‘আমি নবী করীম (সাঃ)-কে স্বীয় চলন্ত উষ্ট্রের পৃষ্ঠে আরূঢ় অবস্থায় সূরা ফাত্হ অথবা উহা অংশ বিশেষ মধুর ও বিনীত সুরে তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি। তিলাওয়াতের মধ্যে তিনি কুরআন মজীদের শব্দের বহির্ভূত অতিরিক্ত স্বর একাধিকবার সংযোজন করিতেছিলেন।’ উক্ত হাদীস ‘বাহনারূঢ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে ইতিপূর্বে বর্ণিত হইয়াছে। সেখানে ইহাও উল্লেখ করা হইয়াছে যে, উক্ত হাদীস ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ই বর্ণনা করিয়াছেন। ইতিপূর্বে বর্ণিত সেই হাদীসে ইহাও উল্লেখিত রহিয়াছে যে, নবী করীম (সাঃ) কর্তৃক সেইরূপে কুরআন মজীদ পঠিত হইবার ঘটনা মক্কা বিজয়ের দিন ঘটিয়াছিল। আলোচ্য হাদীসে নবী করীম (সাঃ)-এর তারজী’র (القتر جيع) কথা বর্ণিত হইয়াছে। উহার অর্থ হইতেছে কোন স্বরকে স্বরনালীতে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া উচ্চারণ করা।

বুখারী শরীফে বর্ণিত হইয়াছেঃ নবী করীম (সাঃ) পড়িতেছিলেন, ‘আ-আ-আ।’ উক্ত স্বরটি নবী করীম (সাঃ)-এর কুরআন তিলাওয়াত করিবার কালে উটের গতির কারণে তাঁহার পবিত্র কণ্ঠে উৎপন্ন হইয়াছিল। উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যানবাহনে আরূঢ় অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতে গেলে যদি যানবাহনের গতির কারণে তিলাওয়াতকারীর কণ্ঠে ঐরূপ ধ্বনি বা স্বর উৎপন্ন হয়, তথাপি যানবাহনে আরূঢ অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা জায়েয ও শরীআতসম্মত। এইরূপ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর কণ্ঠে যেহেতু তাহার অনিচ্ছায় এইরূপ ধ্বনি বা স্বর উৎপন্ন হয়, তাই উহা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমার্হ। উপরোক্ত ক্ষমার্হ বিষয়টি নিম্নোক্ত ক্ষমনীয় বিষয়টির সমান। যেমন কোন ব্যক্তির বাহনে আরূঢ় থাকা অবস্থায় উহা যেদিকেই চলমান থাকুক না কেন, সেই দিকেই মুখ করিয়া নামায আদায় করা তাহার জন্যে জায়েয ও অনুমোদিত। এইরূপ ব্যক্তি নামায বিলম্বিত করিলে পরবর্তী সময়ে উহা কিবলামুখী হইয়া আদায় করার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পশুপৃষ্ঠে যে কোন দিকে মুখ করিয়া নামায পড়িলে তা আদায় হইবে। আল্লাহ্ই সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ জ্ঞানী।

error: Content is protected !!