১৯৮৮ সালটা যে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারিনীকে নিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্রিকাগুলো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল তাঁর নাম ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তী, ডাইনি সম্রাজ্ঞী। ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্র-পত্রিকায় রঙ্গিন ও সাদা-কালো ছবির সঙ্গে যে সব প্রচ্ছদ কাহিনী ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল সে সব পড়ে পাঠক-পাঠিকারা শিহরিত হলেন। শিহরিত হলাম আমিও। জানলাম, রহস্যবিদ্যা ঈপ্সিতার মুঠো-বন্দী। থট রিডিং বা মানুষের মন বোঝার ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিকদের। নিখুঁত ভবিষ্যৎবাণী করতে সক্ষম। মারণ-উচাটন, তুকতাক সবই আয়ত্তে। ডাকিনী বিদ্যার সাহায্যে যে কোনও রোগীকে ইচ্ছে করলেই সুস্থ করে তুলতে পারেন, যে কোনও সুস্থ মানুষকে পরেন মারতে। ঈপ্সিতার দাবি, ডাইনীর এইসব অলৌকিক ক্ষমতা বিজ্ঞানসম্মত সাধনার ফল। অলৌকিক ঘটনার প্রতি চিরকালই আমার আকর্ষণটা বড় বেশি। এই ধরনের কোনও ঘটনা শুনলে সত্যানুসন্ধানে নেমে পড়ার ইচ্ছেটা প্রবলতর হয়ে ওঠে। তার মধ্যে আবার, অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপার যদি ‘বিজ্ঞানসাধনার ফল’ হয় তবে তো কথাই নেই। ঈপ্সিতার ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককে অনুরোধ করলাম আমার সঙ্গে ঈপ্সিতার পরিচয় করিয়ে দিতে। কয়েক দিনের মধ্যে খবর পেলাম, ঈপ্সিতা আমার মুখোমুখি হতে অনিচ্ছুক।
৮৮-র জুনের শেষ সপ্তাহে পড়ন্ত বিকলে ঈপ্সিতার দক্ষিণ কলকাতার লেক রোডের ছবির মত সাজান ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম ‘আজকাল’ পত্রিকার তরফ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে। ঘরের দু’পাশে দুই বেড-ল্যাম্প সৃষ্ট আলো আঁধারের মাঝে এক সময় ঈপ্সিতার আবির্ভাব ঘটলো। যথেষ্ট ও যত্ন নিয়ে নিজেকে সাজিয়েছিলেন। আমি ও আমার সঙ্গী চিত্র-সাংবাদিক তাপস দেব পরিচয় দিলাম। ঈপ্সিতা বসলেন। আমার মিথ্যে পরিচয়কেই সত্যি বলে ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। সত্যানুসন্ধানে এসে প্রথম সত্যটি আমার সামনে প্রকাশিত হল, ঈপ্সিতার থট রিডিং ক্ষমতার দাবী নেহাতেই বাতকে-বাত।
মন্ট্রিয়লে শিক্ষা ও ডাইনী দীক্ষা পাওয়া ঈপ্সিতা ইংরেজির সঙ্গে কিছু কিছু বাংলা মিশেল দিয়ে জানালেন, তাঁদের সংস্থার নাম “ওয়াল্ড উইচ ফেডারেশন”। কেন্দ্রীয় কার্যালয় মন্ট্রিয়লে। সংস্থার তরফ থেকে পৃথিবীকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিন প্রধানকে। এঁরাই সংস্থার সর্বোচ্চ পদাধিকারী। পূর্বাঞ্চলের কার্যালয় নিউ দিল্লি, প্রধানা স্বয়ং ঈপ্সিতা। তবে ঈপ্সিতা যখন তার কলকাতা ফ্ল্যাটে থাকেন তখন সেটাই হয়ে ওঠে অস্থায়ী কার্যালয়। ডাইনিপীঠের কেন্দ্রীয় সদস্য সংখ্যা মাত্র ৭৫ এবং সকলেই মহিলা। অনেক পুরুষই সদস্য হওয়ার ব্যর্থ আবেদন রেখেছিলেন।
আলোচনার মাঝে চাও বিস্কুট এল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম, “কৈশোর থেকেই ওকাল্ট বা রহস্যবিদ্যার প্রতি একটা তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেছি। এ-জন্য ডাইনি, ওঝা, গুণিন, জানগুরু, তান্ত্রিক, ভৈরবী, অবতারদের পিছনে কম ঘুরিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গাদা সময় আর গুচ্ছের অর্থনাশই সার হয়েছে। যখন বাস্তবিকই সন্দেহ করতে শুরু করেছিলাম, এ জীবনে আর বোধহয় রহস্যবিদ্যার হদিশ দেওয়ার মত কারও দেখা পেলাম না, এমনি সময় আপনার খোঁজ পেলাম। আপনাকে নিয়ে অন্তত গোটা আটেক লেখা আমার চোখে পড়েছে। সবই গোগ্রাসে গিলেছি। সব পড়ে সব জেনেও কেমন যেন বিশ্বাস করতে মন চাইছে না, তাই আমি নিজে আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাগুলোতে আপনার সম্বন্ধে যে সব আপাত অদ্ভুত খবর ছাপা হয়েছে তা সবই কি সত্যি?”
ঈপ্সিতা পরম অবহেলায় আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের ফাঁকে এক টুকরো অবজ্ঞার হাঁসি ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন, “বাস্তবিকই প্রতিটি প্রকাশিত ঘটনাই সত্যি। এই তো গত ৬ জুন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক এসেছিলেন। নাম তারাকুমার মল্লিক। থাকেন এই কলকাতারই ৪৪ বি, রাণী হর্ষমুখী রোডে।সমস্যাটি তারাকুমারবাবুর ভাগ্নী মঞ্জু চ্যাটার্জিকে নিয়ে। মঞ্জু বাতে এবং শয্যাক্ষতে শয্যাশায়ী। ডাক্তার ও হাসপাতাল ঘুরে এখন বাড়িতেই আছেন। এঁরা প্রত্যেকেই জবাব দিয়েছেন। শয্যাক্ষতের তীব্র
যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাও হারাতে বসেছেন মঞ্জু। সঙ্গে উপসর্গ অনিদ্রা। কসমিক-রে চার্জ করা জলে ডাইনি শক্তি মিশিয়ে এক শিশি তারাকুমারকে দিয়ে মঞ্জুর শরীরে লাগাতে বলেছিলাম। এক সপ্তাহেই দারূন ফল পাওয়া গেল। ১৩ তারিখ তারাকুমার জানালেন মঞ্জুর শরীরের শয্যাক্ষতের জ্বালা-যন্ত্রণা অনেক কম।
না বুঝেও ‘বুঝেছি’ ভান করা আমার ধাতে সয় না। তাই অকপটে ঈপ্সিতাকে জানালাম, কসমিক-রে চার্জের ব্যাপারটা মাথায় ঢোকেনি।
ঈপ্সিতার যথেষ্ট যত্ন-সহকারে বিষয়টা বোঝালেন। জানালেন, তাঁদের সংস্থার তিন প্রধানের কাছে তিনটি ক্রিস্টাল বাটি আছে। ক্রিস্টালের বাটিতে জল, লাল গোলাপের পাপড়ি, কিছু বিভিন্ন ধরনের কিছু বিশেষ রত্ন পাথর, রূপোর টুকরো এবং সেন্ট ঢেলে বাটিটি রোদে রাখেন। বাটির এমনই গুন, সেটা সূর্য রশ্মি থেকে কসমিক-রে শোষণ করে জলে জমা করে। ঈপ্সিতার কথায় এটা ম্যাগনেটাইজড জল। এই ম্যাগনেটাইজড জলে হাত ডুবিয়ে ঈপ্সিতা তাঁর মানসিক শক্তি জলে মিশিয়ে দেন।
আবার ধাক্কা খেলাম, ঈপ্সিতার বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানটুকুরও অভাব দেখে। কসমিক-রে বা মহাজাগতিক রশ্মি শক্তিশালী তড়িৎকণার বিকিরণ। এই অদৃশ্য তড়িৎকণার বিকিরণ সারা পৃথিবীতে ব্যাপ্ত। সেই সময় ঈপ্সিতা আমার হাতে যে চায়ের পেয়ালা তুলে দিয়েছিলেন, তাতেও ছিল কসমিক-রে। আসলে অজ্ঞানতার দরুন ঈপ্সিতা সূর্য-রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মিকে গুলিয়ে ফেলে নিজের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে এক অদ্ভুত তথ্য তৈরি করেছিলেন। ঈপ্সিতার দৌড় আরও যতটুকু সম্ভব বোঝার তাগিদে কসমিক-রে নিয়ে তাঁর ভ্রান্ত ধারণার প্রসঙ্গ না তুলে ঈপ্সিতাকে বকবক করে যাওয়ার সুযোগ দিলাম।
ঈপ্সিতা বলে চললেন, ডাইনি বিদ্যাকে বলা হয় রহস্যবিদ্যা বা অপরসায়ন। মজা হল, আমাদের এই অলৌকিক রহস্যবিদ্যা বা অপরসায়নের তথাকথিত অবৈজ্ঞানিক কান্ড-কারখানাগুলো আমরা ঘটিয়ে চলেছি বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই। এই যে ৪৯-টি মহাজাগতিক রশ্মি সূর্যের আলো থেকে আমরা গ্রহণ করছি, এই ৪৯-টি মহাজাগতিক রশ্মির কথা তথাকথিত বিজ্ঞানের অগ্রগতির অনেক অনেক আগে ঋকবেদেই লেখা রয়েছে। এমনি ভাবেই আমরা অপরসায়নের জ্ঞান অর্জন করেছি ইহুদিদের কোবলা, মিশরীয়দের অপদেবী আইসিসের আরাধনা সংক্রান্ত বই, ‘দ্য কিং অফ সলোমন’, তিব্বতের তন্ত্র ইত্যাদি পড়ে।
পৃথিবীর সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে পাঁচটি মৌল শক্তি- মাটি, জল, আগুন, হাওয়া ও আকাশ বা মহাশূন্য। এই মৌল শক্তিগুলো থেকেই আমরা বিশেষ ডাইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করি। তারপর তার সঙ্গে যখন আমাদের মানসিক শক্তিকে মিলিয়ে দিই, তখন যে ক্ষমতা আমাদের মধ্যে আসে, সেটাকেই সাধারণ মানুষে বলেন অলৌকিক ক্ষমতা।
অজ্ঞানের কাছে বিজ্ঞানের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত লাগছিল। বললাম, “আপনাদের ডাইনিবিদ্যা কেমন ভাবে শেখানো হয় এই প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য বলে কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, শিক্ষাক্রমের প্রথম চার বছর বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথিপত্র পড়ে অপরসায়ন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। পরবর্তী দু’বছর আপনারা শেখেন মনকে শক্ত করে তৈরি করতে। এই সময় আপনারা বহু পুরুষকে ভালবাসেন, কিন্তু হৃদয় অর্পণ করেন না, বহু পুরুষদের সঙ্গ দেন আবার যখন ইচ্ছে তাঁদের ছেঁড়া কাগজের মতই ছুঁড়ে ফেলে দেন। এসব কি বাস্তবিকই আপনাদের ডাইনি হওয়ার শিক্ষাপদ্ধতির অঙ্গ, না কি এই ধরনের নীতিহীন, মূল্যবোধহীন, অফ বিট কিছু বলে প্রচারের মধ্যে আসতে চেয়েছিলেন?”
ঈপ্সিতার চোখ সরু হল, সম্ভবত ঘাড়টা শক্ত হল। “যা সত্য, সেটুকুই বলেছি। কার কাছে আমার বক্তব্য অফ বিট মনে হবে, কার কাছে হবে না, সেটা আমার বিবেচ্য নয়।”
“আপনার মেয়ে দীপ্তার বয়স এখন বছর দশেক। তাকে আপনি নাকি ডাইনি করে তুলছেন। আপনার কিশোরী কন্যা যখন আপনারই চোখের সামনে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করবে তখন কি তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারবেন?”
“না পারার কি আছে? ওটা তো মনকে শক্ত করে তৈরি করার একটা পরীক্ষা মাত্র,” বললেন, ঈপ্সিতা।
ঈপ্সিতার মানসিক স্বাভাবিকত্ব নিয়ে একটা সন্দেহ তীব্র হল।
বললাম, “সানন্দা’র শঙ্করলাল ভট্টাচার্যকে আপনি আপনার অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছিলেন বলে পড়েছি। আপনার অলৌকিক ক্ষমতা নিজের চোখে দেখার প্রচণ্ড ইচ্ছে নিয়ে এসেছি। একান্ত অনুরোধ, বিফল করবেন না।”
ঈপ্সিতা আমার অনুরোধে আফ্রিকার ভুডু মন্ত্রের সাহায্যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেখাতে রাজি হলেন। জানালেন, এই ধরনের অনুরোধ রেখেছিলেন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার শিখা বসু। তাঁকে ভুডু মন্ত্রে যা ঘটিয়ে দেখিয়েছিলেন তাই দেখে শিখা ও তাঁর চিত্রসাংবাদিক সঙ্গী মোনা চৌধুরী প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ঈপ্সিতা আরও বললেন, “দেখি আপনার এবং আপনার সঙ্গীর নার্ভ কত শক্ত!”
ঈপ্সিতা উঠে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন। এলেন একটি পুতুল নিয়ে। পুতুলের উচ্চতা দেড় ফুটের মত। পরনে প্যান্ট, শার্ট, টাই, হ্যাট। মুখটা কাঠের, কালো রঙ্গের পালিশ করা। ঈপ্সিতার সঙ্গী এবার মেয়ে দীপ্তা। ওর হাতে একটা ট্রে। তাতে তিনটি বেগুন। আমার সঙ্গী তাপস ছবি তোলা শুরু করল। ঈপ্সিতা তাঁর হাতের পুতুলটা তুলে ধরে বললেন, “এটাই ভুডু। জীবন্ত প্রেতাত্মা।”
ঘরের লাগোয়া ঘেরা বারান্দায় একটা টেবিল। দু’পাশে দুটো চেয়ার। টেবিলের পাশেই একটা দামী টুল। তার উপর ভুডু মূর্তিটিকে নামিয়ে রাখলেন ঈপ্সিতা। দীপ্তা তার হাতের ট্রেটা নামাল টেবিলে। ঈপ্সিতা তাঁর দু’হাতের দশ আঙ্গুলকে কাজে লাগিয়ে চুলগুলোকে এলো করে ছড়িয়ে দিলেন। দু’হাতের তালুতে গোলা সিঁদুর ঘষলেন। কপালেও লাগালেন গোলা সিঁদুরের টিপ। দীপ্তা ঘরের ভিতরে গিয়ে নিয়ে এলো দুটো মাটির ভাঁড়।
ঈপ্সিতা ভুডু মূর্তিটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিড়-বিড় করে কি সব মন্ত্র পড়তে পড়তে ঘন ঘন মাথা ঝাঁকাতে লাগলেন। এক সময় আমাকে অনুরোধ করলেন ট্রে থেকে একটা বেগুন তুলে ওঁর হাতে দিতে। দিলাম। ঈপ্সিতা একটা চেয়ারে বসলেন। ঈপ্সিতার কথা মত মুখোমুখি চেয়ারটায় বসলাম আমি। টেবিলের উপর একটা মাটির ভাঁড় বসিয়ে তার উপর বেগুনটাকে বসালেন। আর একটা মাটির ভাঁড় উপুর করলেন বেগুনটার মাথায়। এ-বার ঈপ্সিতা আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, “আপনার কোনও শত্রু আছে?”
বললাম, “থাকতে পারেন, আবার নাও থাকতে পারেন।”
ঈপ্সিতা বললেন, “এখন আমার ভুডু মন্ত্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পড়েছি। আপনার কোন শত্রু থাকলে তার নাম বলুন। জীবন্ত প্রেতাত্মাকে স্মরণ করে বেগুনটা কেটে ফেলবো, অমনি দেখতে পাবেন বেগুনের কাটা অংশে রক্তের দাগ। রক্তের দাগ যত তীব্র হবে, শত্রুর শারীরিক ক্ষতিও ততই তীব্র হবে। ভুডু মন্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেগুনের পরিবর্তে চিচিঙ্গা বা পাতিলেবুও ব্যবহৃত হয়।”
বললাম, “সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমার কোনও শত্রু নেই। আমি নির্বিরোধী ছাপোশা কলমচী মাত্র।”
“বেশ তো আমরা বরং একটি মানসিক শক্তির পরীক্ষা করে দেখি। আপনি আপনার সমস্ত মানসিক শক্তি দিয়ে ভাবতে থাকুন বেগুনটার ভেতর যেন সাদাই থাকে। আমি আমার মানসিক শক্তিকে অর্থাৎ ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভেগুনটার ভেতর মানুষের রক্ত নিয়ে আসতে চেষ্টা করব। বললেন ঈপ্সিতা।
দু’জনে কিছুক্ষণ মুখোমুখি বসে বেগুনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এক সময়
ঈপ্সিতা বললেন, “দেখি আপনার নাড়ির গতি।”
আমার নাড়ির গতি পরীক্ষা করে বললেন, “স্বাভাবিকই আছে দেখছি। আপনার নার্ভের তারিফ করতেই হবে। আপনি এক মনে ভাবতে থাকুন বেগুনের ভিতরটা সাদাই আছে। যখন আপনার মনে হবে কেবল বাস্তবিকই বেগুনটা সাদাই আছে, তখন আমাকে বলবেন। বেগুনটা কাটবো।”
আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বললাম, “এবার কাটুন।”
ঈপ্সিতা তার ডাইনী ছুড়ি ‘ড্যাগার অফ জাস্টিস’ তুলে বেগুনটা কেটে ফেললেন। ।বেগুনের ভিতরের সাদা অংশের খানিকটা জায়গা টকটকে লাল রক্তে ভেজা।
ঈপ্সিতা উত্তেজিত কন্ঠে বললেন, “দেখছেন রক্ত। এটা আপনার অজ্ঞাত শত্রুর রক্ত।”
বেগুনের টুকরো দুটো হাতে নিয়ে এক মুহূর্ত পরীক্ষা করে বিনীতভাবে জানতে চাইলাম, “আপনি কি ভাবে ঘটালেন?”
“ভুডু মন্ত্রে। এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের শত্রুকেই বধ করতে পারি আমরা।”
বললাম, ঈপ্সিতা, ট্রে থেকে যে কোনও একটা বেগুন আমার হাতে তুলে দিন। তারপর আপনি আপনার সমস্ত ইচ্ছে শক্তি দিয়ে চেষ্টা করুন বেগুনটার ভিতর সাদা রাখতে। আমি কোন মন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই বেগুনটা কেটে রক্ত বের করে দেবো, যেমনটি আপনি করলেন।”
আমার কথা শুনে ঈপ্সিতার মুখের চেহারা গেল পাল্টে। তবু প্রাণপণ শক্তিতে নিজেকে শক্ত মাটিতে শেষ বারের মত দাঁড় করাতে চাইলেন। বললেন, “ওইসব ছেলে-মানুষী চিন্তা মাথায় রাখবেন না। ভুডু মন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানাবার ফল প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভয়াবহ।”
বললাম, কোনও ভয় নেই আপনার। আমার কোন ক্ষতির জন্য আপনাকে সামান্যতম দোষারোপ করব না। আপনি আমার হাতে একটা বেগুন তুলে দিন।”
উত্তেজিত, শঙ্কিত ঈপ্সিতা দীপ্তার হাতে ট্রেটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “এটা ভেতরে নিয়ে যাও।”
দীপ্তাকেও যথেষ্ট নার্ভাস মনে হচ্ছিল। ও দ্রুত আদেশ পালন করলো। আমি নিশ্চিত হলাম, প্রতিটি বেগুনেই লাল তরল ঢোকানো আছেদ। অথবা ছুড়িতে মাখানো আছেদ রসায়ন। ঈপ্সিতাকে আরও একটা চমক দিতে বললাম, “আমারও কিছু ক্ষমতা আছে।”
ঈপ্সিতা সন্দেহজনক চোখে তাকালেন। লৌকিক কৌশলে তথাকথিত কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে দেখানোতে ঈপ্সিতা ভাবাবেগে আপ্লুত হলেন, উচ্ছসিত হলেন। বললেন, “আপনি জানে না, ঠিক বুঝতে পারছেন না, আপনার কি প্রচণ্ড রকম অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতাকে ঠিকমত ব্যবহার করতে পারলে দুনিয়া জুড়ে হৈ-চৈ পড়ে যাবে। ওয়ার্ল্ড উইচ একজিকিউটিভ কমিটির সভ্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনিই হলেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ যিনি এই আমন্ত্রণ পেলেন। আপনাকে এই দুর্লভ সম্মান জানাবার কারণ, আপনার কাছে আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে।”
ঈপ্সিতার উচ্ছ্বাস আমার মধ্যে সংক্রমিত না হওয়ায়, তাঁর মত রমণীয় রমণীর আমন্ত্রণ গ্রহণ না করায় তিনি যেমন অবাক হয়েছিলেন তেমনই নিরাশ। শেষ চেষ্টা হিসেবে আমন্ত্রণ জানালেন শনিবার দুপুরের আগে আসার। আরও কিছু না কি বলার আছে। শনিবার গিয়েছিলাম তাপসকে নিয়েই। নিষ্ফল কিছু কথাবার্তার মধ্যে আমার সফলতা ছিল একটিই। ঈপ্সিতা পরম ভালবেসে একটি সুন্দর আধারে দিলেন ম্যাগনেটাইজড জল।
৮ জুলাই বিকেলে গিয়েছিলাম মঞ্জু চ্যাটার্জির বাড়িতে। মধ্য-বয়সী মঞ্জুকে দেখলাম শয্যাক্ষতে শয্যাশায়ী। শয্যাক্ষতের তীব্র গন্ধে বাতাস ভারি। কথা বললাম মঞ্জুর মা শান্তি সেন এবং সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত মীরা দাসের সঙ্গে। তিনজনই জানালেন, বাস্তবিকই দীর্ঘ চিকিৎসার পর ঈপ্সিতার কসমিক-রে চার্জ করা অলৌকিক জল প্রতিদিন শরীরে বুলিয়ে ভালই ফল পাচ্ছিলেন। শরীরের জ্বালা যন্ত্রণা কিছুটা কম ছিল। শেষ শনিবার মন্ত্রঃপুত জল না নিয়েই ফিরেছিলেন। তারপর থেকে যন্ত্রনাটা আবার তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঘুম আসছে না। মঞ্জু কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন। আমি ঈপ্সিতার কাছ থেকে আসছি শুনে মঞ্জু অনুরোধ করলেন, “আপনি একটা কিছু করুন। এই যন্ত্রণা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
মঞ্জুর উপর একটা পরীক্ষা চালাতে চাইলাম। মঞ্জুকে বললাম, “আমি কিছু কথা বলবো, কথাগুলো আপনি চোখ বুজে মন দিয়ে শুনুন। আপনার যন্ত্রণা কমে যাবে, ভালো লাগবে, ঘুম হবে।” শান্তি দেবী ও মীরার উপস্থিতিতেই ‘হিপনোটিক সাজেশন’ দিলাম। মিনিট দশ-পনেরো সাজেশন দেওয়ার পর মঞ্জুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন লাগছে?”
মঞ্জু বললেন, “ভাল লাগছে। ব্যথা যন্ত্রণা অনেক কমে গেছে। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
বললাম, “ঘুমোন। আমি আবার পরশু সকালে এগারোটা নাগাদ এসে খবর নেব, কেমন ছিলেন।”
রবিবার সাড়ে বারোটা নাগাদ গিয়েছিলাম। গিয়েই একটা আশ্চর্য খবর শুনলাম। ঈপ্সিতা এসেছিলেন। সাড়ে দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত মঞ্জুর ঘরে ছিলেন।
ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা হঠাৎ প্রথা ভেঙ্গে বৈভব ছেড়ে গরীবের ভাঙ্গা ঘরে এসেছিলেন কি শুধুই আর্তের সেবায়? তারাকুমারের কথাতেই আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম। শনিবার তারাকুমারের কাছে আমার আগমন বার্তা ও মঞ্জুর অবস্থার পরিবর্তনের কথা ঈপ্সিতা শুনেছেন। আরও জেনেছিলেন আমি রবিবার এগারোটা নাগাদ আবার আসবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
মঞ্জু, শান্তি দেবী, মীরা এবং তারাকুমার বাবুর সঙ্গে মঞ্জুর বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হল। চারজনই জানালেন আমার কথাগুলো শোনার পর মঞ্জু দেবীর যন্ত্রণা অনেক কম অনুভূত হচ্ছে। ঘুমও ভাল হচ্ছে। এ-বাড়ির প্রত্যেকের কথাগুলো ধরে রাখলাম টেপ রেকর্ডারে। বিদায় নেওয়ার সময় ওঁরা আবার আসার আমন্ত্রণ জানালেন।
মঞ্জুর উপর পরীক্ষা চালিয়ে আমি যা জানতে চেয়েছিলাম, তা জানতে পেরে খুশি হলাম। ঈপ্সিতা মঞ্জুর বিশ্বাসবোধকে কাজে লাগিয়েই মঞ্জুর যন্ত্রণা সাময়িকভাবে কিছুটা
কমাতে পারেন। এই ধরনের যন্ত্রণা কমার কারণ কখনোই ঈপ্সিতার অলৌকিক ক্ষমতা নয়, এর কারণ রয়ে গেছে লৌকিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যে। বিশ্বাস নির্ভর এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলে ‘প্ল্যাসিবো’ (Placebo) চিকিৎসা পদ্ধতি। এ বিষয়ে, আগে বিস্তৃতই আলোচনা করেছি। যারা এইসব অলৌকিক উপায়ে রোগমুক্ত হয়েছেন খোঁজ নিলেই দেখতে পাবেন তাঁরা প্রত্যেকেই সেইসব অসুখেই ভুগছিলেন, যেসব অসুখ বিশ্বাসে সারে। ঈপ্সিতা কাদের রোগমুক্ত করবেন তা ছিল সম্পূর্ণই ঈপ্সিতার ইচ্ছাধীন। নিজের ইচ্ছামত রোগী নির্বাচনের দায়িত্ব রাখার কারণ তিনি সেইসব রোগীদেরই বাছতেন যাদের প্ল্যাসিবো চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঈপ্সিতার কাছ থেকে আমি যে অলৌকিক জল সংগ্রহ করেছিলাম, তা পরীক্ষার জন্য তুলে দিয়েছিলাম রসায়ন বিজ্ঞানী ডঃ শ্যামল রায় চৌধুরীর হাতে। ডঃ রায়চৌধুরী কিন্তু ওই অপার্থিব জলে পার্থিব স্টেরয়েড-এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিলেন। এরপর এই সত্যটুকু আবিষ্কার করে আরও এক দফা বিস্মিত হলাম। ঈপ্সিতার নিজের ওপরই নিজের ভরসা নেই, তাই তাঁকে নির্ভর করতে হয়েছে স্টেরয়েডের উপর।
১২ আগস্ট ‘আজকাল’ পত্রিকায় ঈপ্সিতাকে নিয়ে আমার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে এই ঘটনারই সংক্ষিপ্তসার প্রকাশিত হয়েছিল। শেষ অনুচ্ছেদে লিখেছিলাম, “ঈপ্সিতা কি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখতে আমার হাজির করা পাঁচজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে রাজী আছেন? তিনি জিতলে আমি দেব পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রণামী, সেই সঙ্গে থাকব চিরকাল তাঁর গোলাম হয়ে।”
১৩ আগস্টের আর একটি ঘটনার উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। সে-রাতের লালগোলা প্যাসেঞ্জার বহরমপুর যেতে হয়েছিল পুলিশ দেহরক্ষী নিয়ে। কারণ- ‘আজকাল’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী অলোক দাশগুপ্তের কাছে একটি খবর এসেছিল- সে রাতে আমার কম্পার্টমেন্টে ডাকাত পড়বে। ডাকাতির আসল উদ্দেশ্য আমাকে হত্যা করা। অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্য গোপন রাখতে ডাকাতির অভিনয় হবে। খবর ছিল ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ মিস্টার সুফির কাছেও। তাঁরই পরিপ্রেক্ষিতে দেহরক্ষীর ব্যবস্থা।
১১ ডিসেম্বর ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতাকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণ করার জন্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলাম ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষে। ঈপ্সিতা চিঠিটা স্বয়ং গ্রহণ করলেও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মত সততা , সাহসিকতা বা ধৃষ্টতা দেখাননি। যদি দেখাতেন তবে অবশ্যই তাঁর মাথা যুক্তিবাদী আন্দোলনের কাছে, বিজ্ঞানের কাছে নতজানু হতই। তিনি অবশ্যই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে চূড়ান্তভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার চেয়ে উপস্থিত না হওয়াকেই শ্রেয় ও কম-অপমানজনক মনে করেছিলেন।
ডাইনী সম্রাজ্ঞীর কাছে সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির প্যাডে যে চিঠি পাঠিয়েছিলাম আপনাদের কৌতূহল মেটাতে তা এখানে তুলে দিলামঃ
ঈপ্সিতা রায় চক্রবর্তী
৬৪, লেক রোড,
ফ্ল্যাট ২ এম, ডব্লিউ, ‘বলাকা বিল্ডিং’, ৫.১২.৮৮
ক্লকাতা-৭০০ ০২৯
মহাশয়া,
সাম্প্রতিককালে আপনিই সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে প্রচার পাওয়া মানুষ। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী পত্র-পত্রিকায় আপনার অলৌকিক ক্ষমতার বিষয়ে পড়েছি। কয়েক মাস আগের এক সন্ধ্যায় আপনারই ফ্ল্যাটে বসে আপনি আপনার অলৌকিক ক্ষমতার বিষয়ে অনেক কিছুই আমাকে বলেছিলেন। পড়েছি এবং শুনেছি, আপনি যে কোনও রোগীকে আপনার অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার দ্বারা রোগ মুক্ত করতে পারেন। যে কোনও অপরিচিত মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন।
আমি অলৌকিক ক্ষমতা বিষয়ে জানতে আগ্রহী এক সত্যানুসন্ধানী। দীর্ঘ দিন ধরে বহু অনুসন্ধান চালিয়েও আজ পর্যন্ত একজনও অলৌকিক ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা একটিও অলৌকিক ঘটনার সন্ধান পাইনি। আমার এই ধরনের সত্যানুসন্ধানের প্রয়াসকে প্রতিটি সৎ মানুষের মতই আপনিও স্বাগত জানাবেন আশা রাখি। সেই সঙ্গে এও আশা রাখি, আপনার অলৌকিক ক্ষমতার বিষয়ে অনুসন্ধানে আপনি আমার সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করবেন।
আগামী এক মাসের মধ্যে আপনার সঙ্গে ঠিক করে নেয়া কোনও একটি দিনে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে আপনার সামনে হাজির করব পাঁচজন মানুষ ও পাঁচজন রোগীকে। পাঁচজন মানুষের অতীত সম্পর্কে সে-দিনই আপনাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পাঁচজন রোগীকে আপনার অলৌকিক ক্ষমতায় রোগমুক্ত করার জন্য দেব ছয়মাস সময়। পরীক্ষা দুটিতে আপনি কৃতকার্য হলে আপনার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নেব আমি এবং ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি।’ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রইলাম, আপনার অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ পেলে দেব পঞ্চাশ হাজার টাকা।
আমার সঙ্গে এই অনুসন্ধান বিষয়ে সহযোগিতা না করলে অবশ্যই ধরে নেব, আপনার সম্বন্ধে প্রচলিত প্রতিটি অলৌকিক কাহিনীই মিথ্যা।
আগামী ১১ ডিসেম্বর ৮৮ রবিবার বিকেল চারটার সময় আমাদের ময়দান তাঁবুতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আহ্বান করেছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি। সে-দিন আপনাকে ওই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
শুভেচ্ছাসহ-
প্রবীর ঘোষ
ঈপ্সিতার এই পলায়নী মনোবৃত্তিকে পরাজয়েরই নামান্তর ধরে নিয়ে শহর কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রতিটি নামী-দামী, বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা প্রচণ্ড গুরুত্ব দিয়ে বিশাল আকারে খবরটি পরিবেশন করেন। একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত হয় দীর্ঘ সম্পাদকীয়। বহু পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে সমিতির দামাল ছেলেদের ঘটানো অনেক অলৌকিক ঘটনার ছবি।
১১ ডিসেম্বর ৮৮-র ঐতিহাসিক সাংবাদিক সম্মেলনে ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা ছাড়াও আহ্বান জানানো হয়েছিল আরও দু’জনকে। তাঁরা হলেন, ‘শিক্ষা আশ্রম ইন্টারন্যাশনাল’-এর সাঁই শিষ্য উপাচার্য ও হস্তরেখাবিদ নরেন্দ্রনাথ মাহাতোকে।
উপাচার্য ও শ্রীমাহাতো সরাসরি আমাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে সেই চ্যালেঞ্জ সানন্দে গ্রহণ করে চিঠি দিই ও তাঁদের ওই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানাই।
উপাচার্যের চ্যালেঞ্জটি ছিল খুবই কৌতূহল জাগানো। তিনি জানিয়েছিলেন, স্রেফ সাঁইবাবার বিভূতি খাইয়ে সাঁইবাবার অপার অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দেবেন। বিভূতি খাওয়ার তিন দিনের মধ্যে আমার পেটে তৈরি হবে ছয় থেকে এগারোটি স্বর্ণমুদ্রা। চতুর্থ দিন অপারেশন করলেই ওগুলো পেট থেকে হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
তারপর যা যা ঘটেছিল, সে এক রোমাঞ্চকর কাহিনী। কিন্তু সে কাহিনী এখানে আনলে ‘ধান ভানতে শিবের গান’ গাওয়া হয়ে যাবে। এমনি আরও অনেক চ্যালেঞ্জারদের চ্যালেঞ্জে বহু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, হয়েই চলেছি। কিন্তু সে-সব অভিজ্ঞতার কাহিনী ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইতে আনা প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। যে-গুলো প্রাসঙ্গিকভাবে হয়তো আসতে পারত, ,সে সব চ্যালেঞ্জারদের অনেকেরই মুখোমুখি হয়েছি প্রথম খন্ডটি প্রকাশিত হবার পর। উৎসাহী পাঠক-পাঠিকাদের পিপাসা মেটাতে তাঁদেরই জন্য যুক্তিবাদী চ্যালেঞ্জাররা শিরোনামে একটা বই লেখায় মন দিয়েছি।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ২য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ কিছু কথাঃ যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে
একঃ ভূতের ভর
♦ ভূতের ভরঃ বিভিন্ন ধরন ও ব্যাখ্যা
♦ গুরুর আত্মার খপ্পরে জনৈকা শিক্ষিকা
♦ প্রেমিকের আত্মা ও এক অধ্যাপিকা
ভূতে পাওয়া যখন ম্যানিয়াস ডিপ্রেসিভ
♦ সবার সামনে ভূত শাড়ি করে ফালা
♦ গ্রামে ফিরলেই ফিরে আসে ভূতটা
♦ একটি আত্মার অভিশাপ ও ক্যারেটে মাস্টার
দুইঃ পত্র পত্রিকার খবরে ভূত
♦ ট্যাক্সিতে ভূতের একটি সত্যি কাহিনী ও এক সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
♦ এক সত্যি ভূতের কাহিনী ও এক বিজ্ঞানী
♦ বেলঘরিয়ার গ্রীন পার্কে ভূতুরে বাড়িতে ঘড়ি ভেসে বেড়ায় শূন্যে
♦ দমদমের কাচ-ভাঙ্গা হল্লাবাজ-ভূত
তিনঃ যে ভূতুরে চ্যালেঞ্জের মুখে বিপদে পড়েছিলাম
চারঃ ভূতুরে চিকিৎসা
♦ ফিলিপিনো ফেইথ হিলার ও ভূতুরে অস্ত্রোপচার
♦ ফেইথ হিলার ও জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)
♦ পরকাল থেকে আসা বিদেহী ডাক্তার
♦ বিদেহী ডাক্তার দ্বারা আরোগ্য লাভ
♦ ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতার ভূতুরে চিকিৎসা
পাঁচঃ ভূতুরে তান্ত্রিক
♦ গৌতম ভারতী ও তাঁর ভূতুরে ফটোসম্মোহন
♦ ভূতুরে সম্মোহনে মনের মত বিয়েঃ কাজী সিদ্দীকির চ্যালেঞ্জ
ছয়ঃ ডাইনি ও আদিবাসী সমাজ
বাঁকুড়া জেলা হ্যান্ডবুক, ১৯৫১ থেকে
♦ ডাইনি, জানগুরু প্রথার বিরুদ্ধে কি করা উচিৎ
♦ ডাইনি হত্যা বন্ধে যে সব পরিকল্পনা এখুনি সরকারের গ্রহণ করা উচিৎ
♦ জানগুরুদের অলৌকিক ক্ষমতার রহস্য সন্ধানে
সাতঃ আদিবাসী সমাজের তুক-তাক, ঝাড়- ফুঁক
♦ ‘বিষ-পাথর’ ও ‘হাত চালান’এ বিষ নামান
আটঃ ঈশ্বরের ভর
♦ ঈশ্বরের ভর কখনো মানসিক রোগ, কখনো অভিনয়
♦ কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’ইয়ের মেলায় ভর
♦ হাড়োয়ার উমা সতীমার মন্দিরে গণ-ভর
♦ আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
♦ একই অঙ্গে সোম-শুক্কুর ‘বাবা’ ও মা’য়ের ভর
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমী’র মধ্যে সরস্বতীর অধিষ্ঠান (?) ও প্রডিজি প্রসঙ্গঃ
♦ প্রডিজি কি? ও কিছু বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা
♦ বংশগতি বা জিন প্রসঙ্গে কিছু কথা
♦ বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথা
♦ দুর্বল স্মৃতি বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে
♦ মানবগুণ বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব জীবনে সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমীর রহস্য সন্ধানে
♦ বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মহম্মদ আলি শূন্যে ভাসেন আল্লা-বিশ্বাসে!