এবারের ঘটনায় এক অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাবানের সামনে বাহান্নটা তাস মেলে ধরে সাজিয়ে রাখা হল। বিছিয়ে রাখা তাস থেকে একটা তাস তুলে দেওয়া হল যিনি টেলিপ্যাথি করবেন, তাঁর হাতে। লোকটি তাঁর বন্ধুর ফোন নম্বর ও নাম জানালেন পরীক্ষকদের। ফোনে যোগাযোগ করা হল বন্ধুটির সঙ্গে। তিনিও এক অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী, চিন্তা গ্রহণ ও প্রেরণে সক্ষম। তাঁকে বলা হল, “এখানে আপনার বন্ধুর হাতে আমরা একটা তাস তুলে দিয়েছি। আপনি বলুন তো কি তাস?”

কয়েক মিনিটের নীরবতা, দু-জনে দু-প্রান্তে মনসংযোগে ব্যস্ত। এক সময় জবাব পাওয়া গেল। ফোনের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় উত্তরটা লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে। দেখা গেল উত্তর সঠিক।

এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। (১) ফোনে যোগাযোগকারী কোনও প্যারাসাইকোলজিস্ট অথবা টেলিপ্যাথি ক্ষমতাধারী ব্যক্তিটি নন। (২) উত্তর ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো নয় স্পষ্ট।

এই ধরনের টেলিফোন টেলিপ্যাথির সফল পরীক্ষা নিজের চোখে দেখার পর কি বলবেন? নিশ্চয়ই টেলিপ্যাথির অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেবেন? কিন্তু আরও অবাক হওয়ার মতো খবর দিচ্ছি, এর মধ্যেও একটা ফাঁকি রয়ে গেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? না হওয়ারই কথা অবশ্য। তবু সবিনয়ে জানাই এই একই খেলা আমি নিজেই বিভিন্ন জায়গায় দেখিয়েছি।

ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই টেলিফোন টেলিপ্যাথির গুপ্ত কৌশল শুনে আমাকে বলেছিলেন, “তুমি কৌশলটা না বললে এটা কিন্তু টেলিপ্যাথির আশ্চর্য সফল পরীক্ষা বলে মনে হয়। এই খেলাই তোমাকে রাতারাতি বিখ্যাত Psychis (অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী) করে দিত।“

আসল রহস্যটা নিশ্চয়ই জানার আগ্রহ হচ্ছে। ভাবছেন এই ধরনের ঘটনায় বন্ধুকে সঙ্কেত পাঠাবার সুযোগ আমার কোথায়? না, আমার কোনও চেনা লোক আগের থেকে ঠিক করে রাখা তাস তুলে দেন না। সেই সুযোগ ঠিক এক ধরনের খেলায় পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এইসব ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত সবচেয়ে প্রবীণ বা সবচেয়ে নামী-দামী ব্যক্তিই সকলের অনুরোধে তাস নির্বাচন করেন।

তাস পাওয়ার পর আমি পরীক্ষকদের বন্ধুর ফোন নম্বর ও নাম বলি। যিনি ফোন করেন, তিনি নিজের অজান্তেই সঙ্কেত বহন করেন।

ফোন নম্বরটা সঠিক দিতেই হয়। এখানে কৌশলের কোনও সুযোগ নেই। কৌশল যা কিছু, তা ওই বন্ধুর নামটুকুর মধ্যে। বাহান্নটা তাসের জন্য বাহান্নটা নাম আমি ও আমার টেলিপ্যাথি পার্টনার দীপ্তেন মুখস্ত করে রেখেছি। তাস পাওয়ার পর সেই তাসের ‘কোড’ নামটাই বন্ধুর নাম হিসেবে বলি। দীপ্তেন ফোন করলে অবশ্যই বলে, দীপ্তেন বলছি।“ অন্য প্রান্ত থেকে যখন বলা হয়, “অমুকবাবুকে ডেকে দিন তো?” দীপ্তেন প্রশ্ন করে, “আপনি কে বলছেন? কি দরকার বলুন।“

টেলিপ্যাথির প্রয়োজনে ফোন করা হয়েছে শুনলে দীপ্তেন বলে, “ধরুন, ওকে ডেকে দিচ্ছি। তারপর একটু সময় নিয়ে ও নিজেই আবার ফোন ধরে। ফোনে অন্যপ্রান্তের কথাগুলো শুনে বলে, “আচ্ছা চেষ্টা করছি।“

ফোন যিনি করছেন তিনি কোন নামের লোকটিকে চাইছেন, সেই লোকটির নাম শুনলেই দীপ্তেন বুঝতে পারে আমার হাতে কি তাস আছে। যেমন ধরুন, বন্ধুর নাম অনিন্দ্য বললে ‘থ্রি ডায়মন্ড’, ‘সুপ্রিয়’-র নামে ফোন এলে দীপ্তের উত্তর দেয় ‘টু হার্টস’ বা ‘পুলক’কে ডাকলে দীপ্তেন বুঝে নেয় আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘ফোর হার্টস’। দীপ্তেন –এর বদলে ফোন বাড়ির অন্য কেউ ধরলেও কোনও অসুবিধে হয় না। ফোনে উল্টো-পাল্টা নাম শুনলে প্রয়োজনটুকু শুনে নেয়। ‘টেলিপ্যাথির জন্য ডাকা হচ্ছে শুনলে বলে, “ধরুন, ডেকে দিচ্ছি।“ তারপর দীপ্তেনই আমার ওই নামের বন্ধু হিসেবে ফোন ধরে।

 

‘ডেইলি মেল’ ও ‘রিভিউ অফ রিভিউজ’ এর টেলিপ্যাথির পরীক্ষা

১৯৮৫-র আগস্ট মাসে ‘পরিবর্তন’ সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে আমার আলোচনা হচ্ছিল ‘র‍্যশানালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ এবং র‍্যাশানালিস্ট আন্দোলন নিয়ে। ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায় কথা প্রসঙ্গে আমাকে জানালেন, এবার রাশিয়ায় তিনি যে ধরনের অদ্ভুত টেলিপ্যাথি দেখেছেন, তার কাছে অমুকের (এক বিখ্যাত জাদুকরের নাম বললেন) এক্স-রে আইয়ের খেলাকেও জোলো মনে হয়। একটি মেয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটির সহকারী হিসেবে একজন লোক দর্শকদের মধ্যে নেমে এসে দর্শকদের সম্বন্ধে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন। মেয়েটি প্রতিটি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রশ্নগুলো ছিল এই ধরনের-

ইনি পুরুষ না মহিলা?

-এঁর কোটের রং কি?

-কি রঙ্গের প্যান্ট পরেছেন?

-এঁর পকেটে কি?

এঁর হাতে কি রয়েছে?

দর্শকদের পকেট থেকে পাসপোর্ট তুলে জিজ্ঞেস করলেন- এটা কি নিলাম?

“এই ধরনের নানা রকম প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়েটি। লোকটা যা দেখছে চিন্তার ওয়েভ ছুঁড়ে তাই জানিয়ে দিচ্ছে মেয়েটিকে। এটাকে এ-ছাড়া আর কি ব্যাখ্যা দেবে তুমি?” ডঃ চট্টোপাধ্যায় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

আমি বলেছিলাম, “এই খেলাটা আমি আর পিংকি দেখাতে পারি এবং অবশ্যই তা লৌকিক উপায়ে।“

হ্যাঁ, দেখিয়েছিলাম ‘পরিবর্তন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে। সে কথা আগেই বলেছি।

গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে লন্ডনের আলহামব্রা হলে জ্যাগনিস দম্পতি এই ধরনের টেলিপ্যাথির খেলা দেখিয়ে বুদ্ধিজীবি মহলকে তাক লাগিয়ে দিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ডেইলি মেল’ পত্রিকার মালিক লর্ড নর্থক্লিফ এবং আর এক বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা, ‘রিভিউ অফ রিভিউজ’ –এর সম্পাদক উইকহ্যাম স্টেড।

মিস্টার জুলিয়াস দর্শকদের দেওয়া এক একটি জিনিস হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে চিন্তার তরঙ্গ ছড়িয়ে দেন। দূরে চোখ বাঁধা অবস্থায় মিসেস অ্যাগ্নিস গভীর মনসংযোগের সাহায্যে ধরে নেন জুলিয়াসের চিন্তা তরঙ্গ। ফলে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই জিনিসের নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে চলেন অ্যাগ্নিস।

জ্যাগনিস দম্পতির ‘টেলিপ্যাথি’ ক্ষমতা পরীক্ষা করে ডেইলী মেল-এর মালিক লর্ড নর্থক্লিফ অফ রিভিউজ-এর সম্পাদক উইকহ্যাম স্টেড নিশ্চিত হলেন, এর মধ্যে কোনও ফাঁকি নেই। জুলিয়াস ও অ্যাগ্নিস সত্যিই ‘Psychic’ অর্থাৎ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী। এঁরা অলৌকিক ক্ষমতা বলে একজনের চিন্তা আর একজন ধরে ফেলছেন।

দুটি পত্রিকাতেই ফলাও করে জ্যাগনিস দম্পতির টেলিপ্যাথির খবর প্রচারিত হতে ওরা রাতারতি বিশ্বখ্যাতি পেয়ে গেলেন। মাত্র কয়েকটা বছরের মধ্যে জ্যাগনিস দম্পতি হয়ে উঠলেন প্রচন্ড ধনী। আমেরিকার ছেলে জুলিয়াস ও ডেনমার্কের বিকলাঙ্গ মেয়ে অ্যাগ্নিস বিয়ের পর ‘জ্যাগনিস দম্পতি’ নামেই বিখ্যাত হয়েছিলেন।

ভূমিকা

কিছু কথা

নতুন ‘কিছু কথা’

১. অধ্যায়ঃ এক

২. অধ্যায়ঃ দুই

৩. অধ্যায়ঃ তিন

৪. অধ্যায়ঃ চার

৫. অধ্যায়ঃ পাঁচ

৬. অধ্যায়ঃ ছয়

৭. অধ্যায়ঃ সাত

৮. অধ্যায়ঃ আট

৯. অধ্যায়ঃ নয়

১০. অধ্যায়ঃ দশ

১১. অধ্যায়ঃ এগারো

১১.১ দূরচিন্তা

১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা

১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা

১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’

১১.৫ পরীক্ষক হিসেবে কারা ছিল

১১.৬ পরীক্ষা কেমন হল

১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা

১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি

১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট

১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে

১২. অধ্যায়ঃ বার

১৩. অধ্যায়ঃ তেরো

১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ

১৫. অধ্যায়ঃ পনের

১৬. অধ্যায়ঃ ষোল

১৭. অধ্যায়ঃ সতেরো

১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো

১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ

২০. অধ্যায়ঃ কুড়ি

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x